উইনস্টন চার্চিলের নাতি লর্ড নিকোলাস সোয়েমস ব্রিটিশ সরকারের প্রতি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ব্রিটেনের রাজনীতিতে মধ্যপ্রাচ্য প্রসঙ্গ নিয়ে চলমান বিতর্কে তাঁর এই আহ্বানকে গুরুত্বপূর্ণ হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

সাবেক কনজারভেটিভ এমপি লর্ড নিকোলাস সোয়েমস ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জন মেজরের সরকারে মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। গত শুক্রবার দেশটির আইনসভার উচ্চকক্ষ হাউস অব লর্ডসে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ব্রিটিশ স্বীকৃতি সমর্থন করে তোলা একটি বিলের পক্ষে বক্তব্য দেন তিনি।

এ সময় লর্ড নিকোলাস বলেন, ইসরায়েল অবৈধভাবে যে ভূখণ্ড দখল করেছে, সেখানে ১৯৬৭ সালের সীমান্তরেখা অনুযায়ী ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে হবে। এটা করলে ব্রিটিশ সরকার আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি তাদের ন্যায্য প্রতিশ্রুতি, দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের প্রতি প্রতিশ্রুতি এবং ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের প্রতি প্রতিশ্রুতি তুলে ধরতে পারবে।

৭৭ বছর বয়সী নিকোলাসের নিজ দল কনজারভেটিভ পার্টি ইসরায়েলের প্রতি দ্ব্যর্থহীন সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু তিনি দলের বিপরীতে গিয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছেন।

একতরফাভাবে নয়, বরং ‘সঠিক সময়ে’ একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের ধারণাকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন করে ব্রিটেনের লেবার পার্টির সরকার।

লর্ড নিকোলাসের কথার যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। কেবল রাজনীতিতে দীর্ঘ অভিজ্ঞতার কারণেই নয়, বরং পারিবারিক ইতিহাসের কারণেও তিনি ব্রিটিশ রাজনীতিতে একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। তাঁর দাদা উইনস্টন চার্চিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসিদের বিরুদ্ধে দেশকে বিজয় এনে দিয়েছিলেন। চার্চিল সম্ভবত ব্রিটেনের রাজনৈতিক ইতিহাসে সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তিত্ব।

গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দ্য ব্রিটেন প্যালেস্টাইন প্রকল্পের সংসদীয় উদ্বোধন অনুষ্ঠানে লর্ড নিকোলাস ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়াকে ‘দৃঢ়ভাবে জাতীয় স্বার্থে এবং নৈতিকভাবে সঠিক’ বলে বর্ণনা করেন। দ্য ব্রিটেন প্যালেস্টাইন প্রকল্পের আগের নাম ছিল বেলফোর প্রকল্প। লর্ড নিকোলাস এই প্রকল্পের একজন পৃষ্ঠপোষক।

লর্ড নিকোলাসের মতে, দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান প্রায় অসম্ভব। শান্তি আলোচনাও ঝিমিয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাজ্য ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিলে তা কূটনীতিকে আরও শক্তিশালী করবে। এ ধরনের পদক্ষেপ সংঘাত নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এটা সুস্পষ্ট বার্তা দেবে যে বর্তমান পরিস্থিতি একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। দীর্ঘদিনের প্রতিশ্রুত ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য ব্রিটেনকে তার কূটনৈতিক প্রভাব এবং ক্ষমতা ব্যবহার করতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

এই রাজনীতিক বলেন, জাতিসংঘ সদস্যপদের জন্য ফিলিস্তিনের দাবিকে সমর্থন করতে যুক্তরাজ্যের ব্যর্থতা নীতিগতভাবে ভুল। সেটা ওই অঞ্চলে ব্রিটেনের বিশ্বাসযোগ্যতা ও প্রভাবকে ক্ষুণ্ন করেছে। তিনি ওই অঞ্চলে ব্রিটেনের ঐতিহাসিক ভূমিকার দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, দ্বিরাষ্ট্র সমাধানে ব্রিটেনের ওপর বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে।

লর্ড নিকোলাস যুক্তরাজ্যকে ‘ইসরায়েলের জন্মের সময় ধাত্রী’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

১৯১৭ সালের ২ নভেম্বর জারি করা বেলফোর ঘোষণাপত্রে ব্রিটিশ সরকার ফিলিস্তিনে ইহুদি জনগণের জন্য একটি দেশ প্রতিষ্ঠাকে সমর্থন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। ওই দেশে যাঁরা ইহুদি নন, তাঁদের নাগরিক ও ধর্মীয় অধিকার রক্ষার কথাও বলা হয়েছিল ওই ঘোষণাপত্রে।

আরও পড়ুনফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি যেসব প্রশ্নে আটকে আছে২৪ মে ২০২৪

ঔপনিবেশিক সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ১৯২১ সালে উইনস্টন চার্চিলের বিরুদ্ধে বেলফোর ঘোষণা বাস্তবায়নের অভিযোগ আনা হয়েছিল। পরে যুদ্ধের সময় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি ইসরায়েল সৃষ্টির পক্ষে ছিলেন। ১৯৫১ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ফিরে আসার পর তিনি দৃঢ়ভাবে ইসরায়েলপন্থী পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করেছিলেন।

চার্চিলের নাতি লর্ড নিকোলাস গত বৃহস্পতিবার বলেছেন, বেলফোর ঘোষণায় বর্ণিত ফিলিস্তিনের অ-ইহুদি সম্প্রদায়ের অধিকার স্পষ্টতই সমুন্নত রাখা হয়নি। এটি একটি ঐতিহাসিক অবিচার, যার ভার ব্রিটেনের ওপর এসে পড়বে। তিনি আরও বলেন, ‘যুক্তরাজ্যকে দ্বিমুখী নয়; বরং সমান অবস্থান বজায় রাখতে হবে। আমরা ফিলিস্তিনিদের একই অধিকার অস্বীকার করে ইউক্রেনের জনগণের জন্য আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং রাষ্ট্রীয় মর্যাদা রক্ষা করতে পারি না।’

আরও পড়ুনফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে রিয়াদে আরব বিশ্বের নেতারা১১ নভেম্বর ২০২৪.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব র ট শ সরক র প রকল প ইসর য় ল র জন ত র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

হার্ভে উইনস্টেইনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও যৌন অপরাধের মামলার বিচার আবার শুরু হচ্ছে

যুক্তরাষ্ট্রের প্রযোজক হার্ভে উইনস্টেইনের বিরুদ্ধে করা ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের মামলার বিচারকাজ আবার শুরু হতে যাচ্ছে। নিউইয়র্কের একটি আদালতে আগামী মঙ্গলবার এ বিচারকাজ শুরু হবে।

ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের অভিযোগে হওয়া মামলায় যুক্তরাষ্ট্রের এই মিডিয়া মোগলকে দোষী সাব্যস্ত করে সাজা ঘোষণা করা হয়েছিল।

জোডি ক্যানটর ও মেগান টুহে নামের নিউইয়র্ক টাইমসের ২ প্রতিবেদক ২০১৭ সালের ৫ অক্টোবর হার্ভে উইনস্টেইনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলে প্রতিবেদন লিখে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন। তাঁদের প্রতিবেদনের সূত্র ধরে সে সময় সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছিল ‘হ্যাশট্যাগ মি টু’ আন্দোলন।

উইনস্টেইনের বিরুদ্ধে তাঁর সাবেক প্রযোজনা সহকারী মিমি হ্যালেইকে যৌন নির্যাতন (২০০৬ সালে) এবং অভিনেত্রী জেসিকা মানকে ধর্ষণের (২০১৩ সালে) অভিযোগে মামলা হয়েছে।

২০২০ সালে নিউইয়র্কের একটি জুরিবোর্ড মিমি হ্যালেইকে যৌন নির্যাতন এবং অভিনেত্রী জেসিকা মানকে ধর্ষণসহ উইনস্টেইনের বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগের দুটিতে তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করেন। তখন উইনস্টেইনকে ২৩ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন উইনস্টেইনের আইনজীবীরা। ২০২৪ সালের এপ্রিলে একটি আপিল আদালত নিউইয়র্ক জুরিবোর্ডের ওই আদেশ বাতিল করে দেন।

আপিল আদালত থেকে বলা হয়, উইনস্টেইনের বিচারের সময় আদালতে যেভাবে সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে, তা যথাযথ আইন মেনে হয়নি। আদালত থেকে বিচারকাজ আবার শুরু করার আদেশও দেওয়া হয়।

আগামী মঙ্গলবার ম্যানহাটন ফৌজদারি আদালতে উইনস্টেইনের বিচারকাজ শুরু হবে। ছয় সপ্তাহের মধ্যে বিচারকাজ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

উইনস্টেইনের বয়স এখন ৭৩ বছর। তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের নতুন করে তদন্ত করা হবে বলে আশা করেন তিনি।

আরও পড়ুন'মি টু' আন্দোলনের জয়, দোষী সাব্যস্ত উইনস্টেইন২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০

উইনস্টেইন তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের অভিযোগ কখনো স্বীকার করেননি; বরং দাবি করেন যে তিনি কোনো ভুল করেননি। যা কিছু হয়েছে, তা পারস্পরিক সম্মতিতে।

ক্যালিফোর্নিয়ায় অন্য একটি ধর্ষণের মামলায় ২০২৩ সালে আদালত উইনস্টেইনকে দোষী সাব্যস্ত করে ১৬ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন।

আরও পড়ুনজোলি আর গিনেথকেও কুপ্রস্তাব দিয়েছিলেন হার্ভে১১ অক্টোবর ২০১৭

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হার্ভে উইনস্টেইনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও যৌন অপরাধের মামলার বিচার আবার শুরু হচ্ছে