দুদকের মামলায় হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে মুহাম্মদ ইউনূসের আপিলের ওপর শুনানি শেষ, রায় ২৩ এপ্রিল
Published: 19th, March 2025 GMT
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি মামলা বাতিলের আবেদন খারিজের রায়ের বিরুদ্ধে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসসহ সাত ব্যক্তির করা আপিলের ওপর রায়ের জন্য আগামী ২৩ এপ্রিল তারিখ ধার্য করেছেন আপিল বিভাগ।
আপিলের ওপর শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগ আজ বুধবার রায়ের এই তারিখ ধার্য করেন।
মুহাম্মদ ইউনূস বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। আদালতে আপিলকারীদের পক্ষ জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবদুল্লাহ-আল-মামুন শুনানি করেন। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী খাজা তানভীর আহমেদ। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো.
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মুহাম্মদ ইউনূস ও গ্রামীণ টেলিকমের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলাটি হয়।
মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলে মামলাটির কার্যধারা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে মুহাম্মদ ইউনূস ও গ্রামীণ টেলিকমের তৎকালীন শীর্ষ ছয় কর্মকর্তা গত বছরের ৮ জুলাই আবেদন করেন। শুনানি নিয়ে গত ২৪ জুলাই হাইকোর্ট আবেদনটি খারিজ করে আদেশ দেন। অন্য ছয় আবেদনকারী হলেন গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল ইসলাম, পরিচালক আশরাফুল হাসান, নাজনীন সুলতানা, শাহজাহান, নূরজাহান বেগম (বর্তমানে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা) ও এস এম হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফী।
হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল (আপিল করার অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন মুহাম্মদ ইউনূস ও গ্রামীণ টেলিকমের শীর্ষ কর্মকর্তারা। এদিকে এরই মধ্যে রাষ্ট্র বা দুদকের পক্ষে পিপি মামলাটি প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করেন। গত বছরের ১১ আগস্ট সেই আবেদন মঞ্জুর করেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক।
লিভ টু আপিল মঞ্জুর করে গত বছরের ২১ অক্টোবর আপিল বিভাগ আদেশ দেন। পাশাপাশি কনসাইজ স্টেটমেন্ট (আপিলের সারসংক্ষেপ) জমা দিতে সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় আপিলের ওপর শুনানি হয়।
আপিলকারীদের আইনজীবীর ভাষ্য, মামলাটি শুনানির জন্য বিচারিক আদালতে গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর তারিখ ধার্য থাকা অবস্থায় এর আগেই তাদের (আপিলকারীদের) না জানিয়ে গত বছরের ১১ আগস্ট মামলাটি প্রত্যাহার করা হয়, যাতে আইনের লঙ্ঘন হয়েছে।
দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে ২০২৩ সালের ৩০ মে মামলাটি করেছিলেন। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, আসামিরা ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। অবৈধভাবে অর্থ স্থানান্তর করা হয়েছে, যা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে অপরাধ।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ র ম ণ ট ল কম র গত বছর র আইনজ ব
এছাড়াও পড়ুন:
শেয়ার জালিয়াতির অভিযোগ তদন্ত করে ৯০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ
‘কে টেলিকমের’ শেয়ার হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় জালিয়াতির অভিযোগ তদন্ত করে ৯০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ও পুলিশ অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রতি এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার রুলসহ এ আদেশ দেন।
‘সরকারের পাওনা ১২৬ কোটি টাকা, ফাঁকি দিতে অভাবনীয় জালিয়াতি ওসমান পরিবারের’ শিরোনামে গত ১৪ জানুয়ারি প্রথম আলোতে প্রতিবেদন ছাপা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানীর ফকিরাপুলের ডিআইটি রোডের একটি ভবনে ছোট একটি কক্ষে সাখাওয়াত হোসেনের ট্রাভেল এজেন্সির কার্যালয়। সাখাওয়াত ফকিরাপুলেই একটি মেসে থাকেন। যদিও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) নথিপত্রে সাখাওয়াত কে টেলিকম নামের (পরে ইন্টারন্যাশনাল ভয়েস টেল লিমিটেড নামকরণ হয়) একটি ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে বা আইজিডব্লিউ কোম্পানির অংশীদার ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)। কে টেলিকমের কাছে বিটিআরসির পাওনা ১২৬ কোটি টাকার বেশি। কে টেলিকমের মালিক ছিল নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের পরিবার।
বিটিআরসি ও সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারের পাওনা টাকার দায় এড়াতে তড়িঘড়ি করে ওসমান পরিবার কে টেলিকমের মালিকানা ওই তিন ব্যক্তির কাছে হস্তান্তর করে। এ ক্ষেত্রে জালিয়াতি করা হয়েছে। ভুয়া ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থা ওসমান পরিবারের এই কারসাজির সহযোগী ছিল। নথিপত্রে দেখা যায়, ২০১৩ সালের ৪ আগস্ট ওসমান পরিবার কে টেলিকমের মালিকানা সাখাওয়াত হোসেন, সিলেটের স্কুলশিক্ষক দেবব্রত চৌধুরী ও বগুড়ার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অফিস সহকারী রাকিবুল ইসলামের নামে হস্তান্তর করে। তাঁরা তিনজন প্রথম আলোকে বলেছেন, তাঁরা কেউই এ বিষয়ে জানতেন না। জালিয়াতি করে তাঁদের মালিক দেখানো হয়েছে।
প্রথম আলোতে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদন যুক্ত করে সাখাওয়াত হোসেন ওই রিট করেন। আদালতে রিটের পক্ষে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির শুনানি করেন, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আখতার হোসেন মো. আব্দুল ওয়াহাব এবং সৈয়দা সাজিয়া শারমিন।
পরে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির প্রথম আলোকে বলেন, ‘যার নাম ব্যবহার করা হয়েছে, অথচ এ বিষয়ে জানতেন না—সাখাওয়াত হোসেন রিটটি করেন। প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিটিআরসি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সাখাওয়াত আবেদন করেন। কিন্তু কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। জালিয়াতির ওই অভিযোগ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে নিষ্ক্রিয়তা বা ব্যর্থতা কেন অবৈধ হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। আর জালিয়াতির অভিযোগ তদন্ত করে ৯০ দিনের বিটিআরসি ও সিআইডিকে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।’
আরও পড়ুনসরকারের পাওনা ১২৬ কোটি টাকা, ফাঁকি দিতে অভাবনীয় জালিয়াতি ওসমান পরিবারের১৪ জানুয়ারি ২০২৫ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আখতার হোসেন মো. আব্দুল ওয়াহাব প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওসমান পরিবার মূলত কে টেলিকম চালানোর পর একটা পর্যায়ে শেয়ার তিনজনের কাছে হস্তান্তর করে। তিনজন বলছেন তাঁরা কোনোভাবেই ওই কোম্পানি–সম্পৃক্ত কেউ নন এবং তাঁরা জানেনও না কীভাবে তাঁদের নামে শেয়ার এল। কে টেলিকমের শেয়ার কীভাবে হস্তান্তর হলো এবং হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় জালিয়াতির অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।’