করমুক্ত ও নগদ প্রণোদনার সুযোগ নিয়ে বিদেশ থেকে এক ব্যবসায়ী ৭৩০ কোটি টাকা রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় হিসেবে দেশে এনেছেন। গত সোমবার এক অনুষ্ঠানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান এমন চমকপ্রদ তথ্য দেওয়ার পর বেশ আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। তবে কে এই ব্যবসায়ী, কীভাবে এত টাকা আনলেরন—এসব কিছুই বলেননি এনবিআর চেয়ারম্যান।

এনবিআর চেয়ারম্যানের ওই বক্তব্যের পর এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘটনাটি চার বছর আগের। ৭৩০ কোটি টাকা নয়, ৭২১ কোটি টাকা টাকা চীন থেকে প্রবাসী আয় আনা হয়েছে। ওই ব্যবসায়ী ঢাকার কর অঞ্চল-৫–এর একজন করদাতা। ছোট ব্যবসায়ী তিনি। ওই ব্যবসায়ী এই বিপুল অর্থ ওয়েজ আর্নাস হিসেবে তাঁর কর নথিতে দেখিয়েছেন। প্রবাসী আয়ের ওপর কর না থাকায় তিনি বিদেশ থেকে আনা ওই অর্থের ওপর কোনো কর দেননি। উল্টো নগদ প্রণোদনা নিয়েছেন। বিষয়টি এখানেই শেষ হয়ে গেলে ভালো হতো। কিন্তু সেটি হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রবাসী আয়ের নামে বিদেশি থেকে বিপুল অর্থ এনেছেন প্রতীক গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ ফারুকী হাসান। দেশে এই গ্রুপের আবাসন, সেবাসহ বিভিন্ন খাতের ব্যবসা আছে।

মূলত কালোটাকা সাদা করতেই ওই ব্যবসায়ী প্রবাসী আয়ের নাটক সাজিয়েছেন। দেশ থেকে পাচার করা ও কমিশন–বাণিজ্যের অর্থ আনা হতে পারে বলে মনে করছেন কর কর্মকর্তারা। আবার পুরো টাকাই যে ফারুকী হাসানের, তা–ও নয়। এই অর্থ তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রভাবশালীদের হতে পারে বলে ধারণা করছেন কর গোয়েন্দারা। ইতিমধ্যে ফারুকী হাসান ও তাঁর প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা হিসাব জব্দ করা হয়েছে।

নরিনকো ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশন, চায়না শিপবিল্ডিং ও অফসোর ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি—এ তিন চীনা প্রতিষ্ঠান থেকে ৯ বছর ধরে বিপুল এই অর্থ প্রবাসী আয় হিসেবে দেশে এসেছে।

কর অঞ্চল-৫–এর তথ্য অনুসারে, ২০২১-২২ অর্থবছরেই ২৬৯ কোটি টাকা দেশে আসে। তার আগের ২ বছরে যথাক্রমে ৭৭ কোটি ও ৮১ কোটি টাকা এসেছে। এ ছাড়া অতীতের আরও ৪ বছরে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা স্থানান্তর করা হয়েছে। কর নথিতে পুরোটাই প্রবাসী আয় হিসেবে দেখানো হয়। এই সময়ে কর কর্মকর্তাদের যোগসাজশে তা করা হয়। এ বিপুল পরিমাণ অর্থ কেন প্রবাসী আয়ের আওতায় করমুক্ত রেখে ছেড়ে দেওয়া হলো, তা নিয়ে এনবিআরের কর গোয়েন্দা ইউনিট এখন তদন্ত করছে। এ ছাড়া এই অর্থ আসলে কার, তা–ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনবিআরের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, মূলত দুর্নীতি–অনিয়মের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ বিদেশে পাঠিয়ে পরে নগদ প্রণোদনার সুযোগ নিতে দেশে আনা হয়ে থাকতে পারে। একদিকে প্রবাসী আয় দেশে আনলে তা করমুক্ত থাকে এবং এ নিয়ে তেমন কোনো প্রশ্ন ওঠে না, তাই এ সুযোগ নেওয়া হয়েছে। আবার বিদেশি কোম্পানির কমিশন–বাণিজ্যের অর্থও আসতে পারে। তবে যে শিল্পগোষ্ঠীর কথা বলা হচ্ছে, তার ব্যবসার পরিসর এত বড় নয়, তাই ওই ব্যবসায়ীর বিদেশ থেকে আনা বিপুল অর্থ আনার বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

যেভাবে কালোটাকা সাদা হতে পারে

পাচার করা টাকা দেশে আনতে ‘প্রবাসী আয়’ হিসেবে তা দেখানোর সুযোগ রয়েছে। এ ব্যবস্থায় বাণিজ্যের আড়ালে পাচার করা অর্থ কিংবা হুন্ডি করা অর্থ দেশের বাইরে পাঠিয়ে পরে তা প্রবাসী আয় হিসেবে দেশে আনা যায়। তখন কর দিতে হয় না। কর নথিতে বৈধ হয়ে যায় এই টাকা। আবার দেশে কাজ পাইয়ে দিয়ে বড় বড় কোম্পানির কাছ থেকে কমিশন নিতে পারেন প্রভাবশালীরা। সেই টাকা বিদেশে লেনদেন হয়। কিন্তু ওই অর্থ দেশে এনে বৈধ করতে চাইলে করমুক্ত সুবিধায় প্রবাসী আয় হিসেবে আনতে পারেন। তখন তা বৈধ হয়ে যায়। এমনকি প্রবাসী আয় হিসেবে অর্থ দেশে আনলে সরকারের কাছ থেকে নগদ সহায়তাও পাওয়া যায়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আয় হ স ব করম ক ত প রব স

এছাড়াও পড়ুন:

তুলসীর কথা কি শুধু কথার কথা

কথা বড় বিচিত্র জিনিস। একই কথা—সকালে যার ওজন পাঁচ মণ, বিকেলে তার ওজন পাঁচ ছটাক না–ও থাকতে পারে। যে কথার দাম খাটের তলায় এক শ টাকা, আগরতলায় সে কথার দাম দশ পয়সা না–ও থাকতে পারে। যে কথা হাবলা হাবার মা–বাবা বললে কেউ গা করবে না; সেই একই কথা ওবামার মা–বাবা বললে তামাম দুনিয়ায় নিউজ হয়ে যাবে।

স্থান–কাল–পাত্রভেদে একই কথার ওজন যে একেক রকম, তা আমেরিকার গোয়েন্দাপ্রধান তুলসী গ্যাবার্ডের সামান্য কথা অসামান্যভাবে আবার প্রমাণ করল।

আদতে তুলসী গ্যাবার্ড খুব নতুন কিছু বলেননি। কিন্তু তাঁর কথা নিয়ে ভারতের মিডিয়ায় বিরাট চাঞ্চল্য হয়েছে। বাংলাদেশে হোয়াটসঅ্যাপ–মেসেঞ্জারে লিংক চালাচালি হচ্ছে। এত উথালিপালাথির কারণ হলো স্থান–কাল–পাত্র—তিনটি অনুষঙ্গই এত লাগসই ভূমিকা রেখেছে যে তুলসীর সাধারণ কথাগুলো বিরাট হয়ে উঠেছে।

গত সোমবার (১৭ মার্চ) এনডিটিভিকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় সঞ্চালক বিষ্ণু সোম তুলসীকে বলেছিলেন, ‘ভারতের প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে আমরা অনেক পটপরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি। সেখানে সংখ্যালঘুদের ওপর ব্যাপক সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। যুক্তরাষ্ট্র কি সেখানকার পরিস্থিতিকে আমলে নিচ্ছে এবং রাজনীতির বাইরেও সব পর্যায়ে স্থিতিশীলতা রাখতে তৎপর আছে?’

এর জবাবে তুলসী বলেছেন, ‘হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর অনেক দিন ধরে নিপীড়ন, হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটে আসছে এবং এটি আমেরিকান সরকার এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তাঁর প্রশাসনের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয় হিসেবে রয়ে গেছে।’ তিনি বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসন বিশ্বব্যাপী ইসলামপন্থী সন্ত্রাসবাদ দমন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং সে লক্ষ্যেই তারা কাজ করছে। ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন নতুন ক্যাবিনেট ইতিমধ্যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।’

তুলসীর এই কথাগুলো সরকারি কর্মকর্তা বা কূটনীতিকদের ব্যবহার্য ফরম্যাট করা কথা। এখানে দৃশ্যত উত্তেজিত হওয়ার মতো কিছু নেই। বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে এই কথা আমরা বহু শুনেছি। এগুলো আমাদের কাছে জলভাত ছিল। কিন্তু তিনি বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন ইস্যুতে কথা বলতে গিয়ে বললেন, ‘ইসলামপন্থী সন্ত্রাসীদের হুমকি এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বৈশ্বিক তৎপরতা একই মতাদর্শ ও উদ্দেশ্যকে অনুসরণ করে—এটি মূলত একটি ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠার চেষ্টা।’ মূলত তিনি এই ‘ইসলামি খেলাফত’ টার্মটি বাংলাদেশ ইস্যুতে ব্যবহার করায় আবহ গরম হয়েছে।

তুলসীর জায়গায় আজ যদি একজন শ্বেতাঙ্গ ক্যাথলিক আমেরিকান থাকতেন এবং তিনি ঠিক এই কথাগুলোই বলতেন, তাহলে সেই কথাগুলোও হয়তো চাঞ্চল্য তৈরি করত, কিন্তু তার প্রভাবের ধরন হতো অন্য রকম। সেই কথাগুলো ইউনূস সরকারবিরোধীদের জন্য সম্ভবত এতটা ‘মৃতসঞ্জীবনী সুধা’ হিসেবে ধরা হতো না। পতিত ফ্যাসিবাদী সরকারের অন্ধ অনুসারীদের হয়তো ‘শিগগিরই কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে’ মার্কা স্ট্যাটাস দিয়ে ফেসবুক গরম করতে দেখা যেত না।

তুলসী বলেছেন, ‘এটি স্পষ্ট, অন্য যেকোনো ধর্মের অনুসারীরা ইসলামপন্থীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়, যদি না তারা সেই [চরমপন্থী] গোষ্ঠীর গ্রহণযোগ্য ধর্ম অনুসরণ করে। তারা সন্ত্রাস ও চরম সহিংসতার মাধ্যমে এ মতবাদ বাস্তবায়ন করতে চায়।...প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই মতাদর্শ চিহ্নিত ও পরাজিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। একে তিনি [প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প] “কট্টর ইসলামি সন্ত্রাসবাদ” বলে অভিহিত করেন এবং এর উত্থানের সমাপ্তি ঘটাতে চান।’

প্রথমত, কথাগুলো যিনি বলেছেন, তিনি যে শুধু বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশটির গোয়েন্দাপ্রধান, তা–ই নয়; এর বাইরেও তাঁর এমন ব্যক্তি পরিচয় আছে, যা এই কথাগুলো কারও জন্য উদ্বেগ–জাগানিয়া আবার কারও জন্য ‘মৃতসঞ্জীবনী সুধা’ হিসেবে কাজ করছে।

ইংরেজি সাহিত্যের ক্লাসে কোনো কবির কবিতা বা লেখকের গল্প, গদ্য বা নাটক পড়ানোর আগে সাহিত্যের মাস্টাররা ছাত্রছাত্রীদের আগে সেই কবি বা ঔপন্যাসিক বা নাট্যকারের জীবন সম্পর্কে ধারণা দেন। সংশ্লিষ্ট কবি বা ঔপন্যাসিকের ব্যক্তিগত জীবন কেমন, তাঁর ধর্ম বা সমাজসংক্রান্ত দর্শন কী, তা সম্পর্কে আলোচনা করেন। এতে ব্যক্তি হিসেবে কবি বা লেখকের মনস্তত্ত্ব বোঝা যায়। কোন কোন বিষয়ে তাঁর পক্ষপাত আছে, তা বোঝা যায়। এসব জানা গেলে তাঁর কাব্য বা গল্প বা উপন্যাসের মর্মার্থ ধরা সহজ হয়।

আরও পড়ুনবাংলাদেশে গুতেরেস এবং আমাদের সংস্কার ১০ ঘণ্টা আগে

সেই নিরিখে তুলসী গ্যাবার্ডের বাংলাদেশে ‘ইসলামি খেলাফত’ প্রতিষ্ঠাবিষয়ক উদ্বেগকে যদি বিচার করি, তাহলে তাঁর ব্যক্তি ও পেশাদারি জীবনে ঢুঁ মারা দরকার হয়ে পড়ে।

তুলসী গ্যাবার্ড ফৌজি মানুষ। মার্কিন সেনা হিসেবে তিনি ইরাক ও কুয়েত যুদ্ধে সরাসরি অংশ নিয়েছেন। পরবর্তী সময়ে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদমর্যাদায় এসেছেন। চাকরি শেষে ডেমোক্রেটিক দলের রাজনীতি করলেও পরে রিপাবলিকান দলে ভেড়েন।

তুলসীর বাবা মাইক গ্যাবার্ড একজন ক্যাথলিক খ্রিষ্টান ছিলেন। তাঁর মা ক্যারল গ্যাবার্ড প্রথমে খ্রিষ্টান ছিলেন, পরে হিন্দুধর্ম গ্রহণ করেন। তাঁদের পরিবার মূলত ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস (ইসকন) বা ‘হরে কৃষ্ণ’ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। মূলত এ সি ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদের শিক্ষায় অনুপ্রাণিত হয়ে তাঁরা কৃষ্ণভক্তিতে আকৃষ্ট হন। ভক্তি, জয়, আরিয়ান ও বৃন্দাবন নামে তুলসীর আরও চার ভাইবোন আছে।

তুলসী গ্যাবার্ড যদিও নিজেকে ইসকনের সদস্য হিসেবে পরিচয় দেন না, তবে তিনি স্পষ্টতই ইসকনের ভাবাদর্শ দ্বারা প্রভাবিত। ব্যক্তিজীবনে তিনি প্রসাদভোজী। মাছ–মাংস খান না।

২০১৯ সালে তিনি ভারতের নাগপুরে আরএসএসের সদর দপ্তর পরিদর্শন করে আরএসএসের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন এবং সংগঠনের কার্যক্রম সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েছিলেন।

মা–বাবা—দুজনের কেউই ভারতীয় বংশোদ্ভূত না হওয়ার পরও হিন্দুস্তান টাইমসকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে তুলসী বলেছেন, যখনই তিনি ভারতে এসেছেন, তখনই তাঁর মনে হয়েছে, তিনি যেন তাঁর জন্মভূমিতে এসেছেন। শুধু ধর্মীয় কারণে তিনি ভারতের সঙ্গে একাত্মতা বোধ করেন। এবার ভারতে আসার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁকে উপহার হিসেবে একটি ‘গঙ্গাজল কুম্ভ’ দিয়েছেন।

এ পর্যন্ত তুলসী গ্যাবার্ডের ক্যারিয়ারে দেখা যায়, তিনি ‘উগ্র ইসলামপন্থা’র ঘোর বিরোধী। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অন্য দেশে হস্তক্ষেপ করে সরকার পরিবর্তনের নীতিরও তিনি ঘোর বিরোধী হিসেবে পরিচিত।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দাপ্রধানদের একটি সম্মেলনে যোগ দিতে নয়াদিল্লিতে এসেছেন তুলসী। তবে তুলসীকে মোদি সরকার শুধু একজন মার্কিন গোয়েন্দাপ্রধান হিসেবে দেখেনি; এর বাইরেও তার চেয়ে ‘আপন কেউ’ একজন হিসেবে দেখেছে। তুলসীও সেই অভ্যর্থনাকে সেভাবেই গ্রহণ করেছেন। তিনি ‘বাংলাদেশের হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ও অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে চলমান দুর্ভাগ্যজনক নিপীড়ন, হত্যা ও অন্যান্য নির্যাতনকে’ যুক্তরাষ্ট্র সরকার, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তাঁর প্রশাসনের ‘উদ্বেগের একটি প্রধান ক্ষেত্র’ হিসেবে দেখেছেন।

বাংলাদেশ সম্পর্কে তুলসীর এই দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে ভারতের ক্ষমতাসীন মোদি সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির স্পষ্ট মিল দেখা গেছে।

এসব কারণে তুলসী গ্যাবার্ডের এই মন্তব্য খুব অপ্রত্যাশিত ছিল, তা বলা যাবে না। তিনি যে মুহূর্তে ভারতে অবস্থান করছেন, সেই মুহূর্তে ভারতে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের হাতে কীভাবে সংখ্যালঘু মুসলিম নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, তা তিনি বলেননি। এটিকেও অপ্রত্যাশিত বলে ভাবার সুযোগ কম।

তুলসীর জায়গায় আজ যদি একজন শ্বেতাঙ্গ ক্যাথলিক আমেরিকান থাকতেন এবং তিনি ঠিক এই কথাগুলোই বলতেন, তাহলে সেই কথাগুলোও হয়তো চাঞ্চল্য তৈরি করত, কিন্তু তার প্রভাবের ধরন হতো অন্য রকম। সেই কথাগুলো ইউনূস সরকারবিরোধীদের জন্য সম্ভবত এতটা ‘মৃতসঞ্জীবনী সুধা’ হিসেবে ধরা হতো না। পতিত ফ্যাসিবাদী সরকারের অন্ধ অনুসারীদের হয়তো ‘শিগগিরই কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে’ মার্কা স্ট্যাটাস দিয়ে ফেসবুক গরম করতে দেখা যেত না।

তুলসী গ্যাবার্ড বলেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘খুব ভালো বন্ধু’ এবং তাঁরা অভিন্ন লক্ষ্যসমূহ অর্জনের ওপর আলোকপাত করছেন। বিশ্বব্যাপী ইসলামপন্থী সন্ত্রাসকে পরাজিত করা তাঁদের লক্ষ্যের মধ্যে রয়েছে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।

অনেকে বলছেন, তুলসী গ্যাবার্ড স্রেফ একজন গোয়েন্দাপ্রধান। তাঁর এই বক্তব্যের প্রভাব ততটা নেই, যতটা ভাবা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, তাঁর বক্তব্যের সম্ভাব্য প্রভাবকে খাটো করে দেখার সুযোগ কম।

ইতিমধ্যেই তুলসীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের সরকারের দিক থেকে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। সেখানে যথেষ্ট শক্ত ভাষায় তুলসীর বক্তব্যকে ‘অন্যায্য’, ‘বিভ্রান্তিকর’, ‘বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ও সুনামের জন্য ক্ষতিকর’ বলে খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। ইতিপূর্বে আনুষ্ঠানিকভাবে এত কঠোরভাবে বাংলাদেশের কোনো সরকারকে কোনো মার্কিন কর্মকর্তার বক্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করতে দেখা যায়নি। ফলে এটি যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের কূটনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

অনেকে বলছেন, তুলসী গ্যাবার্ডের বক্তব্য থেকে বোঝা যায় না যে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ নিয়ে বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন। তিনি আসলে কোনো নতুন কথা বলেননি, শুধু তার আগের অবস্থান এবং ট্রাম্প প্রশাসনের ইসলামপন্থী জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কঠোর নীতির কথাই পুনর্ব্যক্ত করেছেন। আর সেটিকেই ভারতীয় মিডিয়া সেনসেশন দিয়ে প্রচার করেছে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে একটি জঙ্গিকবলিত রাষ্ট্র এবং ইউনূস সরকারকে জঙ্গি তোষণকারী সরকার হিসেবে দেখানোর একটা সূক্ষ্ম চেষ্টা রয়েছে। সে ধরনের যেকোনো চেষ্টাকে নস্যাৎ করার সক্ষমতা বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন সরকারের আছে—আপাতত এই আস্থা রাখতে চাই।

সারফুদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক

[email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রূপগঞ্জের চনপাড়ায় মাদক কারবার নিয়ে যুবদলের দুই পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত
  • সৌদি আরবে গিয়ে কেন নারী গৃহকর্মীরা লাশ হয়ে ফিরছেন
  • মুগ্ধতায় শুদ্ধতা
  • গাজায় হামলায় চার শতাধিক মানুষ নিহতের পর নেতানিয়াহু বললেন, ‘এটা কেবল শুরু’
  • মৃত ম্যারাডোনার কক্ষে ‘চিকিৎসার সরঞ্জাম ছিল না’
  • খিলগাঁওয়ে যাত্রী বেশে গাড়িতে দুজন, এসি ছাড়তে বলে ছিনতাই: পুলিশ
  • মাদারীপুরে প্রতিপক্ষের হামলায় তিন ভাইয়ের পর মারা গেলেন আরও একজন
  • বিআইসিএম নিয়োগ কমিটির ৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ
  • তুলসীর কথা কি শুধু কথার কথা