বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকালে মো. সায়েম হোসেন নামের এক ব্যক্তিকে হত্যার অভিযোগে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় দায়ের করা মামলায় পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
বুধবার (১৯ মার্চ) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শাহিন রেজা শুনানি শেষে রিমান্ডের আদেশ দেন।
পরে চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন তার আইনজীবীর ওপর বিরক্তি প্রকাশ করে বলেছেন, “বেশি কথা বলতে নেই। বেশি কথা বলায় রিমান্ড বাড়ছে।”
গত ৩ সেপ্টেম্বর রাতে রাজধানী থেকে চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এর পর দফায় দফায় তাকে রিমান্ডে নেওয়া হয়। এর আগে বিভিন্ন মামলায় তার ৮৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। আজ আরো চার দিনের রিমান্ড দেওয়া হলো।
চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। এদিন শুনানিকালে তাকে আদালতে হাজির করা হয়।
রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন। চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের পক্ষে তার আইনজীবী মো.
শুনানিতে মো. আব্বাস বলেন, “চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন পুলিশের সর্বোচ্চ দায়িত্বে ছিলেন। তিনি নির্দেশমতো দায়িত্ব পালন করেছেন। ইতোমধ্যে তিনি ৮৫ দিন রিমান্ডে ছিলেন। বয়স্ক ও অসুস্থ মানুষ। তার রিমান্ড বাতিলেন প্রার্থনা করছি।” পরে আদালত তার চার দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।
এদিকে, বুধবার চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে যাত্রাবাড়ী থানার আরো চার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ১৯ জুলাই মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের টোল প্লাজার সামনে আন্দোলনে অংশ নেন মো. সায়েম হোসেন। এ সময় পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গুলিতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন তিনি। এ ঘটনায় তার মা শিউলি আক্তার গত ২৭ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
ঢাকা/মামুন/রফিক
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
শেয়ার জালিয়াতির অভিযোগ তদন্ত করে ৯০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ
‘কে টেলিকমের’ শেয়ার হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় জালিয়াতির অভিযোগ তদন্ত করে ৯০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ও পুলিশ অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রতি এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার রুলসহ এ আদেশ দেন।
‘সরকারের পাওনা ১২৬ কোটি টাকা, ফাঁকি দিতে অভাবনীয় জালিয়াতি ওসমান পরিবারের’ শিরোনামে গত ১৪ জানুয়ারি প্রথম আলোতে প্রতিবেদন ছাপা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানীর ফকিরাপুলের ডিআইটি রোডের একটি ভবনে ছোট একটি কক্ষে সাখাওয়াত হোসেনের ট্রাভেল এজেন্সির কার্যালয়। সাখাওয়াত ফকিরাপুলেই একটি মেসে থাকেন। যদিও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) নথিপত্রে সাখাওয়াত কে টেলিকম নামের (পরে ইন্টারন্যাশনাল ভয়েস টেল লিমিটেড নামকরণ হয়) একটি ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে বা আইজিডব্লিউ কোম্পানির অংশীদার ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)। কে টেলিকমের কাছে বিটিআরসির পাওনা ১২৬ কোটি টাকার বেশি। কে টেলিকমের মালিক ছিল নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের পরিবার।
বিটিআরসি ও সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারের পাওনা টাকার দায় এড়াতে তড়িঘড়ি করে ওসমান পরিবার কে টেলিকমের মালিকানা ওই তিন ব্যক্তির কাছে হস্তান্তর করে। এ ক্ষেত্রে জালিয়াতি করা হয়েছে। ভুয়া ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থা ওসমান পরিবারের এই কারসাজির সহযোগী ছিল। নথিপত্রে দেখা যায়, ২০১৩ সালের ৪ আগস্ট ওসমান পরিবার কে টেলিকমের মালিকানা সাখাওয়াত হোসেন, সিলেটের স্কুলশিক্ষক দেবব্রত চৌধুরী ও বগুড়ার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অফিস সহকারী রাকিবুল ইসলামের নামে হস্তান্তর করে। তাঁরা তিনজন প্রথম আলোকে বলেছেন, তাঁরা কেউই এ বিষয়ে জানতেন না। জালিয়াতি করে তাঁদের মালিক দেখানো হয়েছে।
প্রথম আলোতে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদন যুক্ত করে সাখাওয়াত হোসেন ওই রিট করেন। আদালতে রিটের পক্ষে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির শুনানি করেন, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আখতার হোসেন মো. আব্দুল ওয়াহাব এবং সৈয়দা সাজিয়া শারমিন।
পরে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির প্রথম আলোকে বলেন, ‘যার নাম ব্যবহার করা হয়েছে, অথচ এ বিষয়ে জানতেন না—সাখাওয়াত হোসেন রিটটি করেন। প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিটিআরসি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সাখাওয়াত আবেদন করেন। কিন্তু কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। জালিয়াতির ওই অভিযোগ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে নিষ্ক্রিয়তা বা ব্যর্থতা কেন অবৈধ হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। আর জালিয়াতির অভিযোগ তদন্ত করে ৯০ দিনের বিটিআরসি ও সিআইডিকে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।’
আরও পড়ুনসরকারের পাওনা ১২৬ কোটি টাকা, ফাঁকি দিতে অভাবনীয় জালিয়াতি ওসমান পরিবারের১৪ জানুয়ারি ২০২৫ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আখতার হোসেন মো. আব্দুল ওয়াহাব প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওসমান পরিবার মূলত কে টেলিকম চালানোর পর একটা পর্যায়ে শেয়ার তিনজনের কাছে হস্তান্তর করে। তিনজন বলছেন তাঁরা কোনোভাবেই ওই কোম্পানি–সম্পৃক্ত কেউ নন এবং তাঁরা জানেনও না কীভাবে তাঁদের নামে শেয়ার এল। কে টেলিকমের শেয়ার কীভাবে হস্তান্তর হলো এবং হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় জালিয়াতির অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।’