যদি কখনো কেউ এমন অসুস্থ হয়ে পড়েন, যাতে তাঁর পক্ষে রোজা রাখা কঠিন হয় অথবা কেউ যদি সফর বা ভ্রমণরত থাকেন এবং যাঁরা রোজা পালনে সক্ষম নন, তাঁদের জন্য ইসলামি শরিয়তে বিকল্প ব্যবস্থা রয়েছে। মাজুর বা অক্ষম ব্যক্তিদের জন্যও রয়েছে বিশেষ ছাড়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সিয়াম বা রোজা নির্দিষ্ট কয়েক দিন। তবে তোমাদের যারা পীড়িত থাকবে বা ভ্রমণে থাকবে, তারা অন্য সময়ে এর সমপরিমাণ সংখ্যায় পূর্ণ করবে। আর যাদের রোজা পালনের সক্ষমতা নেই, তারা এর পরিবর্তে ফিদিয়া দেবে (প্রতি রোজার জন্য) একজন মিসকিনকে (এক দিনের নিজের) খাবার দেবে। অনন্তর যে ব্যক্তি অধিক দান করবে, তবে তা তার জন্য অতি উত্তম। আর যদি তোমরা পুনরায় রোজা পালন করো, তবে তা তোমাদের জন্য উত্তম।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৪)

সফর বা ভ্রমণে থাকা অবস্থায়ও যদি রোজা পালন করেন, তবে তা–ই উত্তম। আর বেশি কষ্ট হলে বা ইচ্ছা করলে রোজা ছাড়তে পারবেন। এই রোজা পরে সুবিধামতো নিকটতম সময়ে কাজা আদায় করে নিতে হবে। ‘রাসুলুল্লাহ (সা.

) এক রমজানে রোজা অবস্থায় মক্কা শরিফের পথে যাত্রা করলেন। কাদিদ নামক স্থানে পৌঁছার পর তিনি রোজা ছেড়ে দিলে লোকেরা সবাই রোজা ছেড়ে দিলেন।’ (বুখারি: ১৮২০)

ফিদিয়া ও সদকা পণ্যদ্রব্য দিয়েও আদায় করা যায় এবং এর মূল্য দ্বারাও আদায় করা যায়। তবে গ্রহীতার জন্য যেটা বেশি উপকারী, তা দ্বারা আদায় করা শ্রেয়।

অনুরূপ মুসাফির বা ভ্রমণকারীর জন্য নামাজেও ছাড় রয়েছে। চার রাকাত ফরজ নামাজগুলো কসর অর্থাৎ দুই রাকাত আদায় করবেন। তখন সুন্নতগুলো নফলের পর্যায়ে চলে যাবে। তবে আদায় করলে সুন্নতের সওয়াব পাবেন। ফিদিয়া শব্দের অর্থ বিনিময়, মূল্য, পণ বা মুক্তিপণ; বিকল্প বা স্থলাভিষিক্ত; সম্মানজনক প্রতিদান ইত্যাদি। পরিভাষায় ফিদিয়া হলো রোজা পালনে অক্ষম ব্যক্তি রোজার পরিবর্তে যা দান করেন। কোনো প্রাপ্তবয়স্ক সাধারণ জ্ঞানসম্পন্ন মুসলমান বার্ধক্যের কারণে বা অসুস্থতা অথবা অন্য যেকোনো কারণে রোজা পালনে অক্ষম বা অসমর্থ হলে এবং পুনরায় সুস্থ হয়ে বা সক্ষমতা ফিরে পেয়ে রোজার কাজা আদায় করার মতো সম্ভাবনা না থাকলে, প্রতিটি রোজার জন্য একটি সাদাকাতুল ফিতরের সমপরিমাণ ফিদিয়া প্রদান করবেন।

রোজা পালনে সক্ষম ব্যক্তি ফিদিয়া দিয়ে রোজার দায়মুক্ত হতে পারবেন না। ফিদিয়া শুধু যথাযথ ওজরের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, স্বাভাবিক অবস্থায় নয়। ফিদিয়া প্রদান করার পর যদি পরবর্তী রমজানের আগে ওই ব্যক্তি রোজা পালনে সক্ষমতা লাভ করেন, তবে ওই রোজাগুলো কাজা আদায় করতে হবে। ফিদিয়া দেওয়া রোজার কাজা কোনোভাবেই পরের রমাদান বা তার পরবর্তী সময়ের জন্য প্রযোজ্য হবে না।

এক দিনের ফিদিয়া একাধিক ব্যক্তির মধ্যে বণ্টন করে দেওয়া যাবে, আবার একাধিক দিনের ফিদিয়া এক ব্যক্তিকে দেওয়া যাবে। একাধিক দিনের রোজার ফিদিয়া একত্রেও আদায় করা যায় এবং অগ্রিমও প্রদান করা যায়। এক ব্যক্তির ফিদিয়া একাধিক ব্যক্তিকে এবং একাধিক ব্যক্তির ফিদিয়া এক ব্যক্তিকে প্রদান করা যাবে।

ফিদিয়া হলো রোজার অক্ষমতায় তার পরিবর্তে আর্থিক দান বা সদকা। ফিদিয়া হলো রোজার পরিবর্তে খাদ্য বা তার মূল্য প্রদান করা। একজনের রোজা আরেকজন রাখতে পারে না, ফিদিয়া রোজার পরিবর্তে রোজা নয়; তাই যাকে ফিদিয়া দেওয়া হলো তাঁর রোজাদার হওয়াও জরুরি নয়, যেমন নাবালেগ মিসকিন শিশু বা অতিবৃদ্ধ দুর্বল অক্ষম অসুস্থ অসহায় গরিব ব্যক্তি, যিনি নিজেও রোজা পালনে অক্ষম।

একেকটি রোজার ফিদিয়ার পরিমাণ হলো এক ফিতরা সমান। ফিতরার পরিমাণ সম্পর্কে হাদিস শরিফে রয়েছে, সাদাকাতুল ফিতর হলো ‘এক সা’ (৩০০ কেজি ৩০০ গ্রাম) খাদ্যদ্রব্য। আবু সায়িদ খুদরি (রা.) বলেন, ‘আমাদের খাদ্যখাবার ছিল খেজুর, কিশমিশ, পনির ও যব।’ (বুখারি, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ২০৪-২০৫)

ফিদিয়া ও সদকা পণ্যদ্রব্য দিয়েও আদায় করা যায় এবং এর মূল্য দ্বারাও আদায় করা যায়। তবে গ্রহীতার জন্য যেটা বেশি উপকারী, তা দ্বারা আদায় করা শ্রেয়।

ফিদিয়া প্রদান করা যায় ওই সব লোকদের, যাঁরা জাকাত ও সদকার হকদার।

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

[email protected]

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এক ধ ক দ ন কর র জন য পর ম ণ

এছাড়াও পড়ুন:

নতুন টাকা এখন গলার কাঁটা

ঈদের আগে বিশেষ কাউন্টার খুলে নতুন নোট বিনিময় না করার সিদ্ধান্তের পর উভয় সংকট তৈরি হয়েছে। ঢাকায় বিভিন্ন ব্যাংকের ৮০টি শাখার ভল্টে ৫, ২০ ও ৫০ টাকার ফ্রেশ নোটের বিশাল ভান্ডার থাকলেও তা কোনো কাজে আসছে না। আবার এসব নোট ফেরতও নিচ্ছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে  শাখার ভল্টের বড় একটি অংশ জুড়ে রয়েছে নোটগুলো। আরেক দিকে প্রতিটি শাখার উল্লেখযোগ্য পরিমাণের টাকা আটকা পড়েছে। এ তালিকায় সংকটে থাকা ব্যাংকের ১৯টি শাখাও রয়েছে। ব্যাংকগুলোর জন্য এসব নতুন টাকা যেন এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ব্যাংকাররা জানান, প্রতিটি শাখার ভল্টের ধারণ ক্ষমতার ভিত্তিতে সর্বোচ্চ একটি সীমা নির্ধারিত আছে। কোথাও ওই সীমার বেশি টাকা জমা হলে তা পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশ ব্যাংক কিংবা সোনালী ব্যাংকের ‘চেস্ট’ শাখায় জমা দিতে হয়। প্রতিটি ব্যাংকে সাধারণত ৫০০ ও ১ হাজার টাকার নোট থাকে বেশি। এতে জায়গা লাগে কম। ঈদ উপলক্ষে আজ বুধবার থেকে আগামী ২৫ মার্চ মঙ্গলবার পর্যন্ত নতুন নোট বিতরণ করার কথা ছিল। ঈদের আগে ছোট ছোট এসব নোট খালি হবে, সে আশায় ছিল ব্যাংকগুলো। নতুন নোট বিতরণ স্থগিত করার সিদ্ধান্তে ব্যাংকগুলো পড়েছে বিপাকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, প্রতিবছরের মতো এবার ঈদের আগে নতুন নোট বিনিময়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। তারই অংশ হিসেবে নির্ধারিত শাখাগুলোতে ৬৫ লাখ টাকার সমপরিমাণ নোট পাঠানো হয়। এসব নোটে বঙ্গবন্ধুর ছবি থাকায় বিতর্কের কারণে আপাতত বিতরণ স্থগিত রাখা হয়েছে। পরবর্তী করণীয় নির্ধারিত না হওয়ায় এখনই ফেরত নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেন, ব্যাংকের ভল্টে নোট পাঠানোর জন্য একটি খরচ আছে। আবার নোট ফেরত আনতেও খরচ আছে। যে কারণে কিছুটা সময় নেওয়া হচ্ছে।
নতুন নোট বিনিময়ের জন্য নির্ধারিত একটি শাখার ব্যবস্থাপক সমকালকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সমপরিমাণ টাকা দিয়ে এর পর নতুন নোট নিতে হয়। আবার স্থান সংকুলান বিবেচনায় ঈদের আগেই এসব নোট ছেড়ে ভল্টের জায়গা বের করা হয়। এবার ব্যাংকের ভল্টে নোট থাকলেও তা বিনিময় স্থগিত করায় এখন বিপদে পড়েছেন তারা। বিশেষ করে ঈদের পর যখন টাকা ফেরত আসতে শুরু করবে, তখন চরম সংকট দেখা দেবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সব মিলিয়ে ২০ লাখ কোটি টাকার মতো সঞ্চয় থাকলেও সব ছাপানো নোট নয়। সারাদেশে দৈনিক লেনদেনের প্রয়োজনে সব মিলিয়ে ছাপানো টাকা রয়েছে সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকার মতো। এর মধ্যে সাধারণ সময়ে ২ লাখ ৬০ হাজার থেকে ২ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা থাকে মানুষের হাতে। আর ঈদ উৎসবকে কেন্দ্র করে মানুষের হাতে টাকার পরিমাণ বেড়ে ৩ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা ১৫ হাজার কোটি টাকা হয়। সাধারণভাবে প্রতি বছরের এই সময়েই নতুন টাকা বাজারে আসে বেশি। দেশের প্রচিলত অধিকাংশ নোটেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি রয়েছে।
ব্যাংকাররা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক গত ১৬ ফেব্রুয়ারি কোন কোন শাখার মাধ্যমে নতুন নোট বিনিময় করা যাবে, তা জানিয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। রোজা শুরুর আগেই এসব শাখায় ৫, ২০ ও ৫০ টাকা মূল্যমানের ৬৫ লাখ টাকা করে পৌঁছে দেওয়া হয়। এর বিপরীতে এসব ব্যাংক থেকে সমপরিমাণ টাকা নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সরকার বদলের এতদিন পরও বঙ্গবন্ধুর ছবিযুক্ত নোট ছাড়া নিয়ে বিতর্কের মুখে গত ১০ মার্চ নোট বিতরণ স্থগিতের সিদ্ধান্ত হয়েছে। যদিও নোট ফেরত নেওয়া হয়নি। কবে ফেরত নেবে, তা নিয়ে শাখাগুলো রয়েছে অন্ধকারে।

বেশি সমস্যায় পড়েছে দুর্বল ব্যাংক
নতুন নোটের বিপরীতে টাকা আটকে যাওয়ায় বেশি বিপদে পড়েছে দুর্বল ব্যাংকগুলো। কয়েকটি ব্যাংক গ্রাহকের জমা টাকা ফেরত দিতে পারছে না। অথচ তাদের প্রতিটি শাখা ৬৫ লাখ টাকা করে ভল্টে রেখেও লেনদেন করতে পারছে না। এমন সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ পাঁচটি শাখা রয়েছে জনতা ব্যাংকের। তিনটি করে শাখা রয়েছে এক্সিম, সোশ্যাল ইসলামী ও ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের। ন্যাশনাল ব্যাংকের উত্তরা ও গাজীপুরের শ্রীনগর এবং এবি ব্যাংকের প্রগতি সরণি শাখা রয়েছে তালিকায়।

চাইলেই কী টাকা ছাপা যায়
সরকার পতনের প্রায় আট মাস পরও নতুন ডিজাইনের নোট কেন বাজারে এলো না, তা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, নতুন ডিজাইনের নোট আনা একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। একটি নোটের ডিজাইন চূড়ান্ত করা থেকে শুরু করে বাজারে আনা পর্যন্ত ১২ থেকে ১৮ মাস সময় লাগে। গত ১৬ বছরে যেসব নোট ছাপা হয়েছে তার সবই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবিযুক্ত। আবার যেসব কাগজ, কালি মজুদ আছে তাও আগের নকশার। ফলে চাইলেই তা বদলানো সম্ভব নয়। সব প্রক্রিয়া শেষে নতুন ডিজাইনের নোট বাজারে আসতে পারে আগামী এপ্রিলের শেষ কিংবা মে মাসের শুরুর দিকে। এরই মধ্যে নতুন ডিজাইনের নোট প্রিন্টিংয়ের জন্য প্লেট তৈরি করা হয়েছে। কাগজ, কালি কেনার প্রক্রিয়াও প্রায় শেষের দিকে। সব প্রক্রিয়া শেষ করে আগামী এপ্রিলের শেষ দিকে অথবা মে মাসের প্রথম দিকে নতুন ডিজাইনের নোট বাজারে ছাড়া সম্ভব হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নতুন টাকা এখন গলার কাঁটা