মহাকাশে যেভাবে সময় কাটালেন দুই নভোচারী
Published: 19th, March 2025 GMT
মহাকাশে ভোট দেওয়া, ক্রিসমাস উদযাপন, শূন্য অভিকর্ষে শরীরচর্চা—এসবের মধ্য দিয়েই সময় কেটেছে বুচ উইলমোর ও সুনিতা উইলিয়ামসের। প্রায় নয় মাস মহাকাশে থাকার পর, অবশেষে নাসার দুই নভোচারী বুচ উইলমোর ও সুনিতা উইলিয়ামস পৃথিবীর উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন স্পেসএক্সের ড্রাগন ক্যাপসুলে।
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) অতিরিক্ত সময় কাটাতে হলেও, তারা সময় নষ্ট করেননি। ৪০০ কিমি ওপরে ভেসে থেকে তারা মহাকাশ গবেষণা, রক্ষণাবেক্ষণ এবং মহাকাশে হাঁটাসহ (স্পেসওয়াক) গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন।
মহাকাশ স্টেশনে ব্যস্ত সময়
৫৯ বছর বয়সী সুনি এবং ৬২ বছর বয়সী বুচ দীর্ঘ সময় ধরে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা ও স্টেশনের রক্ষণাবেক্ষণ কাজে ব্যস্ত ছিলেন। জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে সুনি নিক হেগের সঙ্গে মহাকাশ স্টেশনের বাইরে যান মেরামতের কাজে, পরে বুচের সঙ্গেও তিনি একটি স্পেসওয়াক সম্পন্ন করেন।
তাদের কাজের মধ্যে ছিল—স্টেশনের অভিমুখ নিয়ন্ত্রণকারী যন্ত্রপাতি মেরামত, নিক্সার এক্স-রে টেলিস্কোপের জন্য আলোক ফিল্টার সংযোজন এবং একটি আন্তর্জাতিক ডকিং অ্যাডাপ্টারে প্রতিফলক ডিভাইস প্রতিস্থাপন।
পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে ভাবনার জগতে
নভোচারীদের প্রতিদিন ১৬ বার সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখার সুযোগ হয়, কারণ আইএসএস প্রতি ২৪ ঘণ্টায় ১৬ বার পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে।
এই অনন্য দৃশ্য তাদের পৃথিবী সম্পর্কে নতুনভাবে ভাবতে শিখিয়েছে। সুনি বলেন, এটি আমাদের ভিন্নভাবে চিন্তা করতে শেখায়। পৃথিবী একটাই, আমাদের এটি রক্ষা করা উচিত।
তিনি আরও বলেন, পৃথিবী থেকে অনেক মানুষ আমাদের বার্তা পাঠিয়েছে, যা আমাদের সবার সঙ্গে সংযুক্ত থাকার অনুভূতি দেয়।
মহাকাশ থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটদান
গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বুচ, সুনি এবং আরও দুই আমেরিকান নভোচারী ডন পেটিট ও নিক হেগ মহাকাশ থেকে ভোট দিয়েছেন।
সুনি বলেন, ভোট দেওয়া একজন নাগরিক হিসেবে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।
নাসা তাদের ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা সহজ করে দেয়। হিউস্টনের মিশন কন্ট্রোল সেন্টার তাদের কাছে এনক্রিপ্টেড ইমেলের মাধ্যমে ব্যালট পেপার পাঠায়। নভোচারীরা তা পূরণ করে উপগ্রহের মাধ্যমে নিউ মেক্সিকোর একটি গ্রাউন্ড টার্মিনালে পাঠান। সেখান থেকে এটি মিশন কন্ট্রোলে পৌঁছে এবং পরে সংশ্লিষ্ট কাউন্টি ক্লার্কের কাছে পাঠানো হয়।
শূন্য অভিকর্ষে শরীরচর্চা
বুচ প্রতিদিন সকাল ৪:৩০-এ এবং সুনি সকাল ৬:৩০-এ দিন শুরু করতেন। মহাকাশে থাকার কারণে শরীরের হাড় ও পেশির ক্ষয় রোধে তারা প্রতিদিন দুই ঘণ্টারও বেশি সময় শরীরচর্চা করতেন।
মহাকাশ স্টেশনে তিন ধরনের শরীরচর্চার যন্ত্র রয়েছে। অ্যাডভান্সড রেসিস্টিভ এক্সারসাইজ ডিভাইস (ARED) স্কোয়াট, ডেডলিফট ও রো-এর মতো ব্যায়ামের জন্য ব্যবহৃত হয়। একটি ট্রেডমিল রাখা ছিল। এটি নভোচারীদের বেল্টের সাহায্যে আটকে রাখা হয় যেন তারা ভেসে না যান। আর ছিল সাইকেল আরগোমিটার যা ধৈর্য বাড়ানোর জন্য ব্যবহৃত হয়।
বুচ এ সম্পর্কে বলেন, শূন্য অভিকর্ষে শরীরচর্চার মজাই আলাদা, কারণ এতে শরীরের জয়েন্টে ব্যথা হয় না।
ক্রিসমাস উদযাপন এবং বিদায়বার্তা
আইএসএস-এ থাকা অবস্থায় নভোচারীরা উল্লাসের মধ্যে ক্রিসমাস উদযাপন করেন। তারা সান্তা টুপি ও রেনডিয়ার হেডব্যান্ড পরে পৃথিবীর মানুষের উদ্দেশ্যে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠান। ক্যান্ডি ক্যান বাতাসে ভাসতে ভাসতে তারা একে অপরের কাছে মাইক্রোফোন ছুঁড়ে দিচ্ছিলেন। সুনির লম্বা চুল শূন্য অভিকর্ষে ভেসে থাকায় তাকে দেখতে ভিন্ন লাগছিল।
১৬ মার্চ স্পেসএক্সের একটি ক্যাপসুল নতুন ক্রু সদস্যদের নিয়ে আইএসএস-এ পৌঁছালে বুচ ও সুনির পৃথিবীতে ফেরার পথ উন্মুক্ত হয়। বুচ একটি আনুষ্ঠানিক ঘণ্টা বাজিয়ে সুনির কাছ থেকে কমান্ড হস্তান্তর করেন রুশ নভোচারী আলেক্সেই ওভচিনিনের কাছে।
দীর্ঘ নয় মাস পর, তারা পৃথিবীতে ফিরছেন। তাদের এই মহাকাশযাত্রা শুধুমাত্র গবেষণার জন্যই নয়, বরং মানবজাতির ভবিষ্যৎ মহাকাশ অভিযানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা হিসেবে বিবেচিত হবে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
কুবি শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ফেসবুকে হিন্দুধর্ম অবমাননার অভিযোগ উঠেছে।
এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়ে মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে অভিযুক্তের শাস্তি দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবার লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা। তারা উপাচার্যকে অভিযোগপত্রের একটি কপি দিয়েছেন।
অভিযুক্ত আব্দুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০২৩-২৪ বর্ষের শিক্ষার্থী। সোমবার (১৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় তার পোস্টটির স্ক্রিনশট ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ে সমালোচনা হয়।
আরো পড়ুন:
কুবি শিক্ষার্থীদের ভাবনায় ফ্যাসিবাদমুক্ত নববর্ষ
৫ বছর পর কুবিতে নববর্ষ উদযাপন
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, সম্প্রতি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী (আব্দুর রহমান, আইন বিভাগ ১৮তম আবর্তন) লাগাতার সনাতন ধর্মের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কটুক্তি করে যাচ্ছে। এর মধ্যে সোমবার (১৪ এপ্রিল) একটি পোস্টে সনাতন ধর্মকে ঘৃণিত ভাষায় উপস্থাপন করা হয়েছে। সেখোনে ‘হিন্দুধর্ম। ইট'স রিকোয়াইর্স টু বি অ্যাগ্রেসিভলি রেপড, (গালি) ইন আ রুড ওয়ে। (গালি)।’ বলা হয়েছে।
অভিযোগপত্রে আরো বলা হয়, এই বক্তব্য শুধু কুরুচিপূর্ণ নয়, বরং আমাদের ধর্মীয় বিশ্বাসকে অপমান এবং ঘৃণিত করে। এ ধরনের বক্তব্য কোনো সভ্য সমাজ বা শিক্ষাঙ্গনে মেনে নেওয়া যায় না। এছাড়া সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩ অনুযায়ী ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত একটি দণ্ডনীয় অপরাধ। যার সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে বর্তমানে ২ বছর কারাদণ্ড বা ৫ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় একটি জ্ঞান ও সম্প্রীতির স্থান। এখানে এমন কোনো মত প্রকাশের সুযোগ থাকা উচিত নয়, যা অন্যের ধর্মীয় অনুভূতিকে আঘাত করে এবং সাম্প্রদায়িক বিভাজন তৈরি করে।
অভিযোগপত্রে তাদের দাবি, ওই শিক্ষার্থীকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের ঘৃণিত কাজ না করে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সোমবার (১৪ এপ্রিল) এম এ হোসাইন নামের একটি পেইজে জ্বলন্ত আগুনের মধ্যে জীবন্ত ছাগলকে পুড়িয়ে ফেলার একটি ভিডিও শেয়ার করা হয়। সেটার ক্যাপশন অপশনে লেখা ছিল ‘জনশ্রুতি আছে, পৃথিবীর নিকৃষ্ট ধর্ম হচ্ছে হিন্দু ধর্ম। একটা নিরীহ জীবন্ত প্রাণীকে এভাবে আগুনে পুড়ে মারার অধিকার কি কোনো ধর্মে আছে?’
পরবর্তীতে স্ক্রিনশটটি আরো ছড়িয়ে পড়লে শেয়ারকৃত পোস্টটি ডিলিট করে ক্ষমা চেয়ে নতুন আরেকটি পোস্ট শেয়ার করেন। বর্তমানে অভিযুক্ত আবদুর রহমানের ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি ডিঅ্যাক্টিভেট করে রাখা হয়েছে।
আইন বিভাগের ১৫তম আবর্তনের শিক্ষার্থী সজীব বিশ্বাস বলেন, “আব্দুর রহমান যেভাবে ফেসবুকে আমাদের ধর্মকে নিয়ে কটুক্তি করেছে, আমি তার তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থী কিভাবে একটা ধর্মকে নিয়ে এমনভাবে গালি দিতে পারে? আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বলবো, বিগত বছরগুলাতে যেভাবে ধর্মকে অবমাননার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে, এবারো যেন তার ব্যতিক্রম না ঘটে।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত আবদুর রহমান বলেন, “আমি আমার বক্তব্য প্রক্টর অফিসে দিয়েছি।”
আইন বিভাগের বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহকারী অধ্যাপক মো. আলী মোর্শেদ কাজেম বলেন, “আমি এই বিষয়ে অবগত নই। ঘটনা সম্পূর্ণ না জেনে আমি তো কোন বক্তব্য দিতে পারছি না।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আবদুল হাকিম বলেন, “আমরা অভিযোগপত্রটি পেয়েছি অভিযুক্ত শিক্ষার্থী যেহেতু আইন বিভাগের, সেহেতু আমরা ওই বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের মাধ্যমে অভিযুক্তের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি শৃংখলা কমিটির কাছে হস্তান্তর করবো।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, “আমি অভিযোগপত্রটি পেয়েছি। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে ডেকে শোকজ করা হবে। তার লিখিত ব্যাখ্যা গ্রহণের পর নিয়ম অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
ঢাকা/এমদাদুল/মেহেদী