উপজেলা বিএনপি নেতার নেতৃত্বে থানায় হামলা, গ্রেপ্তার ৫
Published: 19th, March 2025 GMT
চাঁদাবাজির মামলা নেওয়ায় জয়পুরহাটে ক্ষেতলাল থানায় হামলা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে দুইজন পুলিশ সদস্যসহ ছয়জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার থানা চত্বরে ইফতারের আগে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, ক্ষেতলাল উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী আশিক পার্থের নেতৃত্ব এই হামলা করা হয় বলে অভিযোগ ওঠেছে। এ ঘটনায় থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের হয়েছে। একটি মামলা থানা হামলা ও পুলিশকে আহত করার অন্যটি চাঁদাবাজির মামলা।
জয়পুরহাটের পুলিশ সুপার মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব জানান, থানায় হামলা ও পুলিশকে আহত করার মামলায় পাঁচজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার পাঁচজন হলেন, দেলোয়ার হোসেন ওরফে বাবু (৪৭), মো.
আহতরা হলেন, ক্ষেতলাল থানার পুলিশ কনস্টেবল কাজী জাফর ও সুমন মিয়া, ক্ষেতলাল পৌর এলাকার শাখারুঞ্জ গ্রামের তোফাজ্জল হোসেন, একই গ্রামের আমিরুল ইসলাম, বগুড়ার শাহজাহানপুরের রফিক হোসেন ও আব্দুল মমিন।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সাত বছর আগে বগুড়ার শাহজাহানপুর এলাকার তোফাজ্জল হোসেন ক্ষেতলালের মিজানুর রহমানের কাছে জমি কিনেন। ওই জমি আজ মঙ্গলবার ক্ষেতলাল সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয়ে দলিল সম্পাদন করতে আসেন। এসময় উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী আশিক পার্থসহ বিএনপির কয়েকজন নেতা-কর্মী সেখানে গিয়ে জমির ক্রেতার কাছে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করেন। এতে জমির ক্রেতা তাদের চাঁদা দিতে অপারগতা জানান। তখন উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী আশিক পার্থ ও তার লোকজন দলিল সম্পাদন করতে দেবেন না বলে তাদের জানিয়ে দেন। এ নিয়ে তোফাজ্জল ও স্বজনদের সঙ্গে বিএনপির নেতাদের বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে বিএনপি নেতা মেহেদী আশিক ও তার লোকজন তোফাজ্জলের আত্মীয়দের বেধড়ক মারপিট করে জখম করেন। খবর পেয়ে থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে যায়। পুলিশ গুরুতর আহত তোফাজ্জলকে সেখান থেকে উদ্ধার করে ক্ষেতলাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করায়।
পুলিশ জানায়, এ ঘটনায় তোফাজ্জলের স্ত্রী জয়নব বেগম থানায় একটি চাঁদাবাজি মামলা করতে যান। এ খবর পেয়ে ইফতারের আগ মুহূর্তে বিএনপি নেতা মেহেদী আশিক পার্থ তার দলবল নিয়ে থানায় গিয়ে হামলা করেন। এসময় বাধা দিতে গিয়ে থানার পুলিশ কনস্টেবল কাজী জাফর ও সুমন মিয়া আহত হন। সেনাবাহিনী, ডিবি পুলিশ, কালাই থানা পুলিশ দ্রুত থানায় এসে লাঠিপেটা করে লোকজনকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ঘটনাস্থল থেকে তিন জন ও পরে দুই জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, ওই ঘটনায় উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী আশিক পার্থ ছাড়াও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক ছিলেন। ঘটনার সময় তাকে আটক করা হয়েছিল। পরে তাকে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, তিনি হামলার সঙ্গে জড়িত নন। তিনি লোকজনদের নিবৃত্ত করতে থানায় গিয়েছিলেন। এ ঘটনার দলীয়ভাবে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা ঘরোয়াভাবে বিষয়টি নিয়ে বসব।
মুঠোফোন বন্ধ থাকায় উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী আশিক পার্থের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে ক্ষেতলাল উপজেলা বিএনপির সভাপতি খালেদুল মাসুদ আঞ্জুমান বলেন, আমার বাসা উপজেলা সদর থেকে অনেক দূরে। তবে আমি ঘটনাটি শুনেছি। যদি দলের কেউ অপরাধ করে তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
ক্ষেতলাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুর রহমান সরকার বলেন, বিএনপির নেতৃত্বে প্রায় শতাধিক লোকজন এসে থানায় হামলা করে পুলিশকে বেধড়ক মারপিট করেছে।
জয়পুরহাটের এসপি মুহাম্মদ আবদুল ওয়াহাব বলেন, তোফাজ্জলের স্ত্রী জয়নব বেগম বাদী হয়ে সাত জন নামীয়সহ অজ্ঞাত ২০ থেকে ২৫ জনের বিরুদ্ধে থানায় একটি চাঁদাবাজি মামলা করেছেন। থানায় হামলা ও পুলিশকে আহত করার ঘটনায় থানা এসআই সঞ্চয় কুমার বর্মণ বাদী হয়ে ২০ জন নামীয় ও অজ্ঞাত ২০০ থেকে ২৫০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছেন। এ মামলায় পাঁচ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের ধরতে অভিযান চলছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আহত গ র প ত র কর ব এনপ র স ল কজন এ ঘটন ঘটন য় উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রে বিরল খনিজ রপ্তানি বন্ধ করে দিল চীন
বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বিরল খনিজ ও চুম্বক আমদানি করে যুক্তরাষ্ট্র যার বেশির ভাগই আসে চীন থেকে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের বাণিজ্যযুদ্ধ তীব্র হওয়ার মধ্যেই এবার বেইজিং বিরল কয়েকটি খনিজ পদার্থ ও চুম্বক দেশটিতে রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। চীন সরকার এরই মধ্যে বিভিন্ন চীনা বন্দরে চুম্বকের চালান পাঠানো বন্ধ করেছে। এর ফলে পশ্চিমা বিশ্বে অস্ত্র, ইলেকট্রনিক্স ও বিভিন্ন ধরনের ভোগ্যপণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত খনিজ পদার্থের সরবরাহ কমে গেছে। এতে যুক্তরাষ্ট্র তো বটেই, বিশ্বজুড়ে হুমকির মুখে পড়েছে অটোনির্মাতা থেকে শুরু করে অ্যারোস্পেস নির্মাতা, সেমিকন্ডাকটর কোম্পানি ও সামরিক কন্ট্রাক্টাররাও। খবর-নিউইয়র্ক টাইম্স
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাণিজ্যযুদ্ধ মোকাবিলা নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে আলোচনা করে এসেছে চীন সরকার। চীন থেকে কোন কোন জিনিস রপ্তানি করা হবে তা নিয়ে একটি নতুন বিধিমালা ব্যবস্থার খসড়া তৈরি করেছে চীন প্রশাসন। সেই খসড়া তালিকাতেই আছে বিরল খনিজ ও চুম্বকের কথা। একবার এই নতুন ব্যবস্থা চালু হয়ে গেলে কয়েকটি কোম্পানিসহ যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কনট্রাক্টরদের জন্যও স্থায়ীভাবে এই খনিজ এবং চুম্বক রপ্তানি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এতে বিপদে পড়তে পারে যুক্তরাষ্ট্র। কারণ, গাড়ি থেকে শুরু করে ড্রোন, রোবোট এবং ক্ষেপণাস্ত্র পর্যন্ত অনেককিছু তৈরিতেই চুম্বক অপরিহার্য। সেইসঙ্গে বিরল খনিজ পদার্থও রপ্তানি না করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই খনিজ বৈদ্যুতিক গাড়ি থেকে শুরু করে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত সরঞ্জাম তৈরিতে কাজে লাগে।
কয়েক দিন আগেই যুক্তরাষ্ট্রের ‘প্রতিশোধমূলক’ শুল্ক আরোপের পাল্টা জবাব দিয়েছে চীন। তারাও যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে ১২৫ শতাংশ শুল্কের ঘোষণা দিয়েছে। শনিবার থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে। বুধবার তারা মার্কিন পণ্যের ৮৪ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিল। এর পরপরই যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ করে। কিছু চীনা পণ্যে ১৪৫ শতাংশ শুল্কও আরোপ করা হয়।
এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধের প্রকৃতি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠলো। যুক্তরাষ্ট্র যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছে, চীন তার পাল্টা পদক্ষেপই নিচ্ছে বারবার। তবে চীন এটাও বলেছে, এরপর যুক্তরাষ্ট্র আবার পাল্টা শুল্ক দিলে তারা আর এতে ‘সাড়া দেবে না’। তারা এটাও বলেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারা আরোপিত ‘অস্বাভাবিকভাবে উচ্চ শুল্ক’ আরোপের বিষয়টি ‘আন্তর্জাতিক এবং অর্থনৈতিক বাণিজ্যের নিয়মনীতি, মৌলিক অর্থনৈতিক আইন এবং সাধারণ জ্ঞানকে গুরুতরভাবে লঙ্ঘন করছে এবং এটি সম্পূর্ণ একতরফা ধমকাধমকি ও জবরদস্তি’।
বেইজিংয়ের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে চীনা পণ্য রপ্তানির ওপর আরোপিত শুল্ক ‘অর্থনীতিতে বাস্তবিক কোনো তাৎপর্য ছাড়াই একটি সংখ্যার খেলায় পরিণত হয়েছে’। তিনি আরও বলেছেন, বারবার শুল্ক বৃদ্ধি কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘জবরদস্তিকে’ আরও উন্মোচিত করবে। এটি একটি রসিকতায় পরিণত হবে।
মাত্র এক সপ্তাহ আগেও চীনের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ছিল ২০ শতাংশ। সেটা এখন বাড়তে বাড়তে ১২৫ শতাংশে পৌঁছেছে। গত ২ এপ্রিল ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বের যেসব দেশের পণ্যে উচ্চহারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন, নয়ই এপ্রিল বুধবার তা কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এই দিনই তিনি জানান, চীন, কানাডা ও মেক্সিকো বাদে বিশ্বের অন্যান্য দেশের ওপর ধার্যকৃত পাল্টা শুল্ক আগামী ৯০ দিনের জন্য স্থগিত থাকবে। তবে এই ৯০ দিন, অর্থাৎ তিন মাস এই দেশগুলোর সবার জন্য বাড়তি ১০ শতাংশ শুল্ক হার প্রযোজ্য হবে।
একই দিনে চতুর্থ বারের মতো চীনা পণ্যে শুল্ক বাড়ায় যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন বাজারে চীনের পণ্যে সর্বশেষ ধার্যকৃত শুল্ক ছিল ১০৪ শতাংশ। বুধবার তা কার্যকর হওয়ার দিনই আবার বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ করা হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি বলেছিলেন, আমি আগেই সতর্ক করেছিলাম, যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যদি কোনো দেশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করে, তবে তারা সঙ্গে সঙ্গে নতুন ও অনেক বেশি হারে শুল্কের মুখোমুখি হবে। এই প্রতিক্রিয়ায় চীন বলে, চীনকে চাপ বা হুমকি দিয়ে কখনোই লাভ হবে না।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলেছেন, তাদের সরকার উসকানিকে ভয় পায় না। এদিকে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানাচ্ছে, প্রতিশোধমূলক শুল্ক নিয়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) কাছে আরও একটি অভিযোগ করেছে চীন। ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনা পণ্যের বর্ডার ট্যাক্স ১০ শতাংশ বাড়ানোর পর ডব্লিউটিও'র কাছে একটি অভিযোগ দায়ের করেছিল চীন। এরপরে গত সপ্তাহে ডব্লিউটিওতে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নিয়ে তারা বিবাদ সংক্রান্ত আরেকটি আবেদন দাখিল করে।
যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে উচ্চ শুল্কের সম্মুখীন দেশগুলো এখন চীনের মতো তাদের অভিযোগও ডব্লিউটিও'র বিরোধ নিষ্পত্তি আদালতে নিয়ে যেতে পারে। তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, রাষ্ট্রপতি হিসেবে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্র ডব্লিউটিও'র আপিল সংস্থায় বিচারক নিয়োগে বাধা দেওয়া শুরু করে। সংস্থাটি তাদের ক্ষমতার চেয়েও বেশি ভূমিকা রাখছে এই যুক্তিতে ওই পদক্ষেপ নেয় তারা। ফলে এই আদালত মূলত বর্তমানে কাজ করতে পারছে না এবং নিয়ম লঙ্ঘনর বিষয়েও খুব কমই ব্যবস্থা নিতে পারছে ডব্লিউটিও।
বিবিসির সাংবাদিক স্টিফেন ম্যাকডোনেল বলেছেন, চীনা ক্রেতাদের স্থানীয় ব্র্যান্ড কেনার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ অব্যাহত থাকায় বেইজিং এখনও অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে রয়েছে। এদিকে চীনের ঘোষণার পর, ইউরোপীয় স্টক মার্কেটগুলো লাল রঙে প্রবেশ করেছে। এর মানে হলো প্রারম্ভিক লেনদেনে সামান্য বৃদ্ধি পাওয়ার পর তিনটি প্রধান স্টক সূচক এখন নিম্নমুখী। পতনশীল বাজারের মানে হলো বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন বেশিরভাগ কোম্পানি মুনাফা হারাচ্ছে। কারণ তারা বিশ্বাস করেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপের প্রবণতা পণ্যের চাহিদা কমিয়ে দেবে এবং দাম বাড়িয়ে দেবে।