পরিবারের পুরুষ সদস্যদের ভূমিকা

শৈশবে মেয়েরা মায়ের শাড়ি পরে খেলছে, ছেলেরা বাবার জুতা-জামা পরছে, বাবার মতো করে শেভিং ক্রিম মেখে দাড়ি কামানোর চেষ্টা করছে, এমন দৃশ্য আমাদের সবার কাছে পরিচিত। শিশুরা অনুকরণপ্রিয়। তারা চারপাশে যা দেখে, তা–ই শেখে। বিশেষ করে জেন্ডার রোল বা লিঙ্গভূমিকা শেখার ক্ষেত্রে ছেলেরা বাবা এবং পরিবারের অন্য পুরুষ সদস্যদের দেখে শেখে এবং মেয়েরা শেখে মাসহ পরিবারের অন্য নারী সদস্যদের দেখে। পরিবারে নারী ও পুরুষ সদস্যদের মধ্যে সম্পর্ক শিশুর মনস্তত্ত্বকে ব্যাপক প্রভাবিত করে। পরিবারে নারী ও পুরুষ সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, বিভিন্ন বিষয়ে বা কাজে উভয় পক্ষের অংশগ্রহণ, আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং বিভিন্ন সমস্যার সমাধান এ কারণে গুরুত্বপূর্ণ। শিশুরা যেন শুধু পরিবারের পুরুষ সদস্যই নয়, সব সদস্যকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবতে পারে। একটি শিশু ‘প্রতিটি মানুষ গুরুত্বপূর্ণ’ ধারণা নিয়ে বেড়ে উঠলে নিজের পাশাপাশি অন্যদের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল থাকতে পারে। অন্যদিকে ‘আমি বেশি গুরুত্বপূর্ণ’ বা ‘আমি কম গুরুত্বপূর্ণ’—এমন আত্মমূল্যায়ন শিশুকে নিজের বা অন্যের প্রতি আগ্রাসী করে তুলতে পারে।

আরও পড়ুনআপনার সন্তানকে পর্নো দেখতে দেখলে কী করবেন?১৯ এপ্রিল ২০২৪যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্য শিক্ষা

যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্য সম্পর্কে সঠিক ও সুস্থ ধারণা শিশু–কিশোরদের শারীরিক ও মানসিকভাবে নিরাপদ থাকতে সহযোগিতা করে। শিশু–কিশোরেরা যেন যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্যের ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে বিজ্ঞানসম্মতভাবে জ্ঞান লাভ করে, সে ব্যাপারে অভিভাবকদের সজাগ থাকতে হবে। পর্নোগ্রাফি দেখা বা যৌনতা সম্পর্কে অসম্পূর্ণ, অবাস্তব ও বিকৃত ধারণা শিশু–কিশোরদের মনে যৌনতা সম্পর্কে ভীতি, অতি আগ্রহ বা যৌনবিকৃতির প্রবণতা তৈরি করতে পারে। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর এসব তার যৌনজীবনকে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তারা যেন যৌনতা সম্পর্কে ভুল ও বিকৃত বার্তা না পায়, সে ব্যাপারে অভিভাবককে সচেতন থাকতে হবে। পাশপাশি বয়স উপযোগী করে তাদের শরীর ও প্রজননস্বাস্থ্য সম্পর্কে শিক্ষা প্রদানে উদ্যোগ নিতে হবে। শিশু–কিশোরদের যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্য সম্পর্কে বয়স উপযোগী তথ্য দিতে বিজ্ঞাননির্ভর বিভিন্ন বইয়ের সাহায্য নিতে পারেন অভিভাবকেরা। বয়ঃসন্ধিতে বিভিন্ন রকম পরিবর্তন যেমন শারীরিক গঠনে পরিবর্তন, ঋতুস্রাব, স্বপ্নদোষ, প্রজনন অঙ্গের কার্যপ্রণালি ও পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব সম্পর্কে তাদের তথ্য দেওয়া দরকার। সেই সঙ্গে নিরাপদ ও পরস্পরের সম্মতিতে সম্পর্ক, গোপনীয়তা ও ব্যক্তিগত সীমারেখা সম্পর্কেও তাদের সচেতন করা জরুরি। ছেলেশিশুরাও যে যৌন হয়রানির শিকার হতে পারে, সে বিষয়ে অভিভাবকদের সচেতন থাকা দরকার। অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শ থেকে সুরক্ষার উপায়গুলো মেয়েশিশুর পাশাপাশি ছেলেশিশুদেরও শেখানো জরুরি। যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্য সম্পর্কে বয়স উপযোগী জ্ঞান শিশু–কিশোরদের মানসিক ও শারীরিক পরিবর্তনগুলো মোকাবিলা করতে যেমন সাহায্য করে, তেমনি অন্যকে নিপীড়ন করা থেকেও বিরত রাখে।

আরও পড়ুনছেলেশিশুকে যেভাবে গুড টাচ ও ব্যাড টাচ বিষয়টি জানাবেন২৩ আগস্ট ২০২৪আবেগময় বুদ্ধিমত্তার বিকাশ

আবেগময় বুদ্ধিমত্তা হলো বিভিন্ন পরিস্থিতিতে নিজের অনুভূতি ও চাওয়াগুলো বুঝতে পারা। সেই সঙ্গে অন্যরা কী অনুভব করছে, কী চাইছে, তা বুঝে যথাযথ আচরণ করতে পারা। আমাদের সমাজে আবেগ প্রকাশের ক্ষেত্রেও নারী ও পুরুষের ভেতর ভিন্নতা দেখা যায়, যার জৈবিক তেমন কোনো ভিত্তি নেই। এটি মূলত পরিবেশগত একটি বিষয়। ‘ছেলেদের কাঁদতে নেই’, এমন ধারণা আমাদের এখানে মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত। কষ্ট পেলে মানুষ কাঁদবে, তার আবেগপ্রবণতা নিরাময় হবে, এই স্বাভাবিক ও মৌলিক প্রক্রিয়া থেকে ছেলেদের বঞ্চিত করা হয়। এতে তাদের আবেগের বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং রাগসহ বিভিন্ন ধরনের অস্বস্তিকর অনুভূতি সামলানোর বিষয়ে তারা অদক্ষ হয়ে ওঠে। আবার ছেলেরা রাগ, ক্ষোভ প্রকাশ করতে পারবে, এমন সামাজিক অনুমতি থাকায় ছেলেদের মধ্যে অস্বস্তিকর যেকোনো আবেগকেই রাগ দিয়ে প্রকাশ করার প্রবণতা তৈরি হয়। কিন্তু ছেলেদের এমনভাবে বড় করা দরকার, যেন তারা শুধু রাগ নয়, অন্যান্য আবেগ–অনুভূতির সঙ্গেও পরিচিত হয়, সেগুলোর নাম জানে এবং সহজভাবে সেগুলো প্রকাশ করতে পারে।

ছোটবেলা থেকেই শিশুকে শেখাতে হবে যেন সে আগ্রাসী আচরণ না করে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ব র র

এছাড়াও পড়ুন:

আপনি কি পরিবারের মেজ সন্তান? অভিনন্দন!

১. পরিবারের মেজ সন্তানেরা বড় বা ছোট সন্তানের মতো মা–বাবার সময় বা মনোযোগ না পেলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাঁরা বঞ্চিত বা অবমূল্যায়িত বোধ করেন না। তাঁরা বরং ছোটবেলা থেকেই অবচেতনে নিজের দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার শিক্ষা পান। স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার চেষ্টা করেন।

২. মেজ সন্তানদের পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার দক্ষতা বেশি। যেকোনো বিপর্যয় সহজে সামাল দিতে পারেন।

৩. মেজ সন্তানদের ব্যক্তিত্ব অন্য কারও দ্বারা প্রভাবিত হয় না। তাই তাঁরা নিজেরাই নিজেদের ব্যক্তিসত্তা খুঁজে পান, শক্তিশালী ব্যক্তিত্বের অধিকারী হন। মানসিকভাবে অধিক শক্তিশালী ও সফল হওয়ার প্রবণতাও তাঁদের ভেতর বেশি।

৪. কানাডিয়ান মনোবিদ, লেখক ক্যাথেরিন স্যামন ও জার্মান লেখক ক্যাটরিন শুমানের ‘দ্য সিক্রেট পাওয়ার অব মিডল চিলড্রেন’ বইটি বেশ আলোচিত। এই বইয়ে লেখকদ্বয় বলেছেন, প্রাথমিকভাবে মেজ সন্তানেরা পরিবারে তাঁদের ভূমিকা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন। তবে সময়ের সঙ্গে নিজেরাই সেটি কাটিয়েও ওঠেন। সংসারে শান্তি ও যোগাযোগে ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রে মেজ সন্তানদের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। বড় ও ছোট সন্তান উভয়ের সঙ্গেই শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজার রাখার সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করেন তাঁরা। সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকার প্রবণতাও তাঁদের মধ্যে বেশি। এসব কারণে পরিবারের মেজ সন্তানকে বলা হয় ‘দ্য পিসকিপার’।

আরও পড়ুনদ্বিতীয় সন্তান নেওয়ার আগে নিজেকে যে ৩টি প্রশ্ন করবেন১২ ডিসেম্বর ২০২৪

৫. ছোটবেলা থেকেই আধিক্যের সঙ্গে পরিচয় না থাকায় মেজ সন্তানেরা অল্পে তুষ্ট থাকেন। খুঁতখুঁতে স্বভাবের হন না। তাঁদের মধ্যে অভিযোগ করার প্রবণতাও কম।

৬. নিজ উদ্যোগে যোগাযোগদক্ষতা অর্জন করার ফলে তাঁরা সাধারণত বহির্মুখী, মিশুক ও পরোপকারী হন।

৭. একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মা–বাবার শেষ বয়স কাটে মেজ সন্তানের সঙ্গে। বড় ও ছোট সন্তানেরা যখন পরিবার থেকে বেরিয়ে নিজেদের পেশা ও পরিবার নিয়ে ব্যস্ত থাকেন, তখন দেখা যায় মেজ সন্তানেরাই শেষমেশ মা–বাবার দায়িত্ব নেন। এর একটা কারণ হতে পারে, মেজ সন্তানেরা ছোটবেলায় মা–বাবার সঙ্গে সবচেয়ে কম সময় কাটান। বড় হয়ে সেটি পুষিয়ে নেওয়ার একটা প্রবণতা দেখা যায়।

আরও পড়ুনবড় সন্তানেরা কেন বাকিদের তুলনায় এসব ঝুঁকিতে বেশি থাকে২০ জানুয়ারি ২০২৫আপনি মেজ সন্তান হলে কাকে বিয়ে করবেন

৮১ বছর বয়সী মার্কিন মনোবিদ ও লেখক ডা. কেভিন লেম্যানের মতে, এক পরিবারের মেজ সন্তান ও আরেক পরিবারের ছোট সন্তানের দাম্পত্যজীবন অসাধারণ হয়ে থাকে। একাধিক গবেষণায়ও তার প্রমাণ মিলেছে। এ ধরনের জুটির বিচ্ছেদের হারও সবচেয়ে কম।

দেখা যায় বিপরীত চিত্রও

অনেক পরিবারের মেজ সন্তান ছোটবেলা থেকে অবজ্ঞা ও অবহেলার শিকার হয়ে নিজেদের নিয়ে হীনম্মন্যতায় ভোগেন। তৈরি হয় ‘কনফিডেন্স ইস্যু’। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন বোধ করেন তাঁরা। খেই হারিয়ে হতাশায় নিমজ্জিত হন। তাঁদের মনে হতে পারে, ‘আমি যথেষ্ট নই।’ যোগাযোগের দক্ষতাও বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

সবাই একরকম নন

তবে সব পরিবার একরকম নয়। আবার প্রত্যেক মানুষের ব্যক্তিসত্তাও আলাদা। তাই সব পরিবারের মেজ সন্তানের ক্ষেত্রে কথাগুলো পুরোপুরি খাটে না। তবে মা–বাবার দায়িত্ব—প্রত্যেক সন্তানকেই যথাযথ মনোযোগ ও প্রচেষ্টা নিয়ে বড় করে তোলা।

সূত্র: ওয়েব এমডি ও হেলথলাইন

আরও পড়ুনপরিবারের বড় মেয়েদের যে ৭টি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রোজায় ডায়াবেটিক রোগীর খাবার গ্রহণে সতর্কতা
  • এত সয়াবিন আমদানি, তবু সংকট কেন
  • আপনি কি পরিবারের মেজ সন্তান? অভিনন্দন!