১৪ বছর ধরে এক ব্যক্তির টানে ফিরে আসে পাখি
Published: 19th, March 2025 GMT
প্রেম, বন্ধুত্ব কিংবা রক্তের টানে মানুষ দূরদূরান্তে পাড়ি জমায়। বারবার ফিরে আসে আপন মানুষের কাছে। মানুষে মানুষে এমন পুনর্মিলন নতুন কিছু নয়; কিন্তু মানুষের টানে পশুপাখি বছরের পর বছর ধরে ফিরে আসে, এমন ঘটনা খুব কমই শোনা যায়।
তুরস্কের উত্তর-পশ্চিমে বুরসা প্রদেশের কারাকাব এলাকা এমনই এক বিস্ময়কর ঘটনার সাক্ষী। সেখানকার স্থানীয় এক মৎস্যজীবীর কাছে ‘ইয়ারেন’ নামের তাঁর প্রিয় সারস পাখিটি এ বছরও ফিরে এসেছে। এ নিয়ে টানা প্রায় ১৪ বছর এই দুই বন্ধুর পুনর্মিলন ঘটল।
টানা ১৩ বছর ধরে প্রতি বসন্তে এস্কিকারাগাচ গ্রামে ফিরে আসে ইয়ারেন। সেখানে অস্থায়ীভাবে বাসা বানায়। এ সময় পাখিটিকে প্রায় প্রতিবছরই ৬৯ বছর বয়সী মৎস্যজীবী আদেম ইলমাজের নৌকায় দেখা যায়।
এ বছর ইয়ারেন ও তার সঙ্গী নাজলির দুই দিন পর ১৫ মার্চ ওই গ্রামে এসে পৌঁছায়। ইলমাজের মাছ ধরার নৌকায় পাখিটি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় কাটায়, যা তাদের পুনর্মিলনকে আরও বেশি আবেগঘন করে তোলে এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে পাখিটির বন্ধনকে শক্তিশালী করে তোলে।
ইয়ারেনের ফিরে আসায় ইলমাজ স্বস্তি ও আনন্দের মিশ্র অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, ‘ইয়ারেনের আগমনের আশায় ছিলাম আমি। আগের বছরের তুলনায় এবার একটু দেরি করে আসায় আমি অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু অবশেষে তাকে দেখার পর আমি আনন্দে অভিভূত হয়ে পড়েছি। ইয়ারেন আমার কাছে শিশুর মতো। প্রতিদিন সকালে আমি তাকে মাছ খাওয়াই।’
তুরস্কের কৃষি ও বনমন্ত্রী ইব্রাহিম ইয়ুমাকলিও ইয়ারেনের প্রত্যাবর্তন উদ্যাপন করেছেন। তিনি এই জুটির একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করে বলেছেন, ‘বসন্ত এসে গেছে এবং অপেক্ষার অবসান ঘটেছে। এই হৃদয়গ্রাহী পুনর্মিলনের ১৪তম বছর পূর্ণ হলো।’
এই মৎস্যজীবী ও সারস পাখির বন্ধুত্বের অসাধারণ গল্পটি বিশ্বজুড়ে মানুষকে আকৃষ্ট করেছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্পের জন্য লজ্জায় পড়েছেন ফ্রান্স সফররত মার্কিন পর্যটকেরা
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের তুইলেরিস উদ্যানের পরিচ্ছন্ন নুড়িপাথরের ওপর দিয়ে ঝলমলে রোদে হেঁটে বেড়াচ্ছিলেন বারবারা ও রিক উইলসন দম্পতি। তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগন অঙ্গরাজ্যের ডালাস শহর থেকে প্রথমবারের মতো ফ্রান্স ভ্রমণে এসেছেন। মার্কিন পর্যটক হিসেবে ভ্রমণে এলেও তাঁরা ঠিক ছদ্মবেশ ধারণ করেননি। তবে ৭৪ বছর বয়সী রিক সাতসকালেই বাড়তি সতর্কতা গ্রহণ করেছিলেন।
বারবারা ও রিক উইলসন প্যারিসের একটি হোটেলে উঠেছেন। হোটেল থেকে বের হওয়ার আগে ছোট্ট একটি কালো টেপ দিয়ে মাথার সাদা–কালো বেসবল ক্যাপে থাকা তারকাখচিত ও ডোরাকাটা মার্কিন পতাকা ঢেকে দিয়েছেন।
বারবারা ও রিক উইলসন প্যারিসের একটি হোটেলে উঠেছেন। হোটেল থেকে বের হওয়ার আগে ছোট্ট একটি কালো টেপ দিয়ে মাথার সাদা-কালো বেসবল ক্যাপে থাকা তারকাখচিত ও ডোরাকাটা মার্কিন পতাকা ঢেকে দিয়েছেন।বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আকস্মিক পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণায় মার্কিন নাগরিক হিসেবে যে লজ্জা ও বিব্রতকর অনুভূতি অনুভব করছেন, তা নিয়ে ভাবছিলেন এই দম্পতি। রিক বলেন, ‘বিষয়টি (শুল্ক) নিয়ে আমাদের খারাপ লাগছে। এটা ভয়ানক। শুধুই আতঙ্কের।’
শুধু রিক নন, ৭০ বছর বয়সী বারবারাও তাঁর পকেটে একটি কানাডীয় ল্যাপেল পিন রেখে দিয়েছেন। আরেকজন পর্যটক তাঁকে এটি উপহার দিয়েছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন, ফ্রান্স ভ্রমণে কিছু আড়াল করার দরকার হলে এটি কাজে লাগাতে পারবেন।
বিষয়টি (ট্রাম্পের নতুন শুল্ক আরোপ) নিয়ে আমাদের খারাপ লাগছে। এটা ভয়ানক। শুধুই আতঙ্কের।রিক উইলসন, ফ্রান্স ভ্রমণে যাওয়া মার্কিন পর্যটকবারবারা বলেন, ‘আমাদের দেশ নিয়ে আমি হতাশ। শুল্ক নিয়ে আমরা বিরক্ত।’
কয়েক গজ দূরে বিখ্যাত ল্যুভর জাদুঘরের সামনে মানুষের জটলা দেখা গেল। সেখানে আরেক মার্কিন দম্পতি নিজেদের পরিচয় কিছুটা লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করছিলেন; যেমনটা সাধারণত দেখা যায় না। কথা হয় ক্রিস এপসের (৫৬) সঙ্গে। তিনি নিউইয়র্কে অ্যাটর্নি হিসেবে কাজ করেন। এবারের ফ্রান্স সফরে তিনি একটু ভিন্ন পোশাক পরবেন বলে ঠিক করেছিলেন।
ক্রিস এপস বলেন, ‘(আমার সঙ্গে) নিউইয়র্কের কোনো ইয়াঙ্কি হ্যাট নেই। সেটি হোটেলে রেখে এসেছি। (হ্যাট দেখে) মানুষ আমাদের আলাদা মনে করতে পারে।’
খোলাখুলি বলে রাখা ভালো, ফ্রান্সে মার্কিনদের আগের চেয়ে কম অভ্যর্থনা জানানো হচ্ছে, এমন কোনো লক্ষণ নেই। ট্রাম্প তাঁর নতুন শুল্ক ঘোষণা স্থগিত করার আগে দ্বৈবচয়নের ভিত্তিতে কিছু পর্যটকের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছিল।
কথা হয় ফিলিপ গ্লোয়াগুয়েন নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে। ফ্রান্সের সবচেয়ে জনপ্রিয় ট্রাভেল গাইড লে গাইড দু রুতার্দের প্রতিষ্ঠাতা তিনি। গ্লোয়াগুয়েন প্যারিসে একটি ডেস্কে বসে ছিলেন। তিনি জানান, চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে তাঁর লেখা বইয়ের ফরমাশ ২৫ শতাংশ কমে গেছে। ‘এটা একটা বড় পতন,’ বলেন তিনি।মার্কিনরা তাঁদের সরকারের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়া থেকে বহু দূরে রয়েছেন। তাঁদের মনোভাবে যে পরিবর্তন ঘটছে, সেটির সপক্ষে বেশির ভাগ প্রমাণই কল্পনাপ্রসূত। তবে ইতিমধ্যে ভ্রমণ, পর্যটন, শিক্ষা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রভাব পড়ার বিষয়টি বোধগম্য হয়ে উঠেছে।
কথা হয় ফিলিপ গ্লোয়াগুয়েন নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে। ফ্রান্সের সবচেয়ে জনপ্রিয় ট্রাভেল গাইড লে গাইড দু রুতার্দের প্রতিষ্ঠাতা তিনি। গ্লোয়াগুয়েন প্যারিসে একটি ডেস্কে বসে ছিলেন। তিনি জানান, চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে তাঁর লেখা বইয়ের ফরমাশ ২৫ শতাংশ কমে গেছে। ‘এটা একটা বড় পতন,’ বলেন তিনি।
ল্যুভর জাদুঘরের সামনে পর্যটকদের ভিড়