এলডিসি থেকে উত্তরণের সিদ্ধান্তে রপ্তানিকারকেরা কেন ‘ক্ষুব্ধ’
Published: 19th, March 2025 GMT
নির্ধারিত সময় অনুযায়ী অর্থাৎ আগামী বছর স্বল্পোন্নত দেশে (এলডিসি) থেকে উত্তরণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এলডিসি থেকে উত্তরণ হলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিজেদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হওয়ার পাশাপাশি অর্থনৈতিক সক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। এতে বিদেশি বিনিয়োগকারী আস্থা রাখতে পারেন।
অবশ্য বর্তমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মধ্যে এলডিসি থেকে উত্তরণের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় রপ্তানিকারকদের একটি অংশ ক্ষুব্ধ। তাঁরা বলছেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের পর পণ্য রপ্তানিতে বাজার সুবিধা মিলবে না। দেওয়া যাবে না প্রণোদনা। এতে বাংলাদেশি পণ্যের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমবে। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ ছাড়া এলডিসি থেকে উত্তরণের সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী। কেন হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত নিল, সেটি তাঁদের বোধগম্য নয়।
এলডিসি থেকে বের হলে চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়বে বাংলাদেশের রপ্তানি খাত। কারণ, এলডিসি হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) আওতায় শুল্কমুক্ত বাজার-সুবিধা পায়। এর ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), যুক্তরাজ্য, ভারত, চীন, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে শুল্কমুক্ত সুবিধায় পণ্য রপ্তানি করা যায়। বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী, এলডিসি থেকে উত্তরণের পর এই বাজার-সুবিধা বন্ধ হয়ে যাবে। তবে ইইউ জিএসপির আওতায় এই শুল্কমুক্ত সুবিধা থাকবে ২০২৯ সাল পর্যন্ত। যুক্তরাজ্যও একইভাবে সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এলডিসি হিসেবে যেকোনো দেশ তার দেশে উৎপাদিত পণ্য বা সেবার ওপর নগদ সহায়তা ও ভর্তুকি দিতে পারে। বাংলাদেশও পণ্য রপ্তানিতে নগদ সহায়তা দেয়। করসুবিধা, ভর্তুকিসহ নানা ধরনের সুবিধা পান দেশীয় উদ্যোক্তারা। তবে এলডিসি থেকে উত্তরণের পর নগদ সহায়তা না দেওয়ার বাধ্যবাধকতা তৈরি হবে। তারই প্রস্তুতি হিসেবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী সরকারের আমলে দুই দফায় বিভিন্ন খাতের পণ্য রপ্তানিতে প্রণোদনা কমানো হয়।
রপ্তানি কমার আশঙ্কা
বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি ৮০ শতাংশের বেশি তৈরি পোশাক খাত থেকে আসে। আর তৈরি পোশাক রপ্তানির ৫০ শতাংশের গন্তব্য ইইউ। বর্তমানে এই বাজারে অগ্রাধিকারমূলক বাজার–সুবিধা বা জিএসপির অধীন শুল্কমুক্ত সুবিধা পায় বাংলাদেশ। এলডিসি থেকে উত্তরণের পর আরও তিন বছর সুবিধাটি পাবে বাংলাদেশ। তারপর জিএসপি প্লাস না পেলে গড়ে ১২ শতাংশ শুল্ক দিয়ে ইইউর বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে হবে।
জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে এলডিসি থেকে উত্তরণে সিদ্ধান্ত নেওয়ার মধ্য দিয়ে আমরা আত্মহত্যার প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমাদের সমসাময়িক সময়ে যেসব দেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উত্তরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে, তাদের তৈরি পোশাক রপ্তানি নেই। ফলে তাদের হারানোর কিছু নেই।’ এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রস্তুতি হিসেবে প্রণোদনা কমিয়ে দেওয়ায় দেশের বস্ত্র খাত নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দাবি করেন মোহাম্মদ হাতেম।
তৈরি পোশাকের পর বাংলাদেশের শীর্ষ রপ্তানি খাতের একটি চামড়া ও চামড়া পণ্য। দীর্ঘদিন ধরে এই খাতের রপ্তানি ১০০ কোটি ডলারের আশপাশেই ঘুরছে। এলডিসি থেকে উত্তরণের কারণে চামড়া ও চামড়া পণ্যে নেতিবাচক পড়বে এমনটাই জানালেন চামড়াপণ্য ও জুতা উৎপাদন ও রপ্তানিকারক সমিতির (এলএফএমইএবি) সহসভাপতি মো.
হস্তশিল্প রপ্তানির পরিমাণ কম হলেও অনেক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা এই খাতের সঙ্গে যুক্ত। বর্তমানে পাটপণ্যে ১০ শতাংশ ও হস্তশিল্পে ৮ শতাংশ প্রণোদনা দেয় সরকার। এলডিসি থেকে উত্তরণের কারণে প্রণোদনা না থাকলে ক্রয়াদেশ হারানোর শঙ্কা করছেন হস্তশিল্প খাতের উদ্যোক্তারা। বহুমুখী পাটপণ্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ক্রিয়েশন প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রাশেদুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, শুল্কমুক্ত সুবিধা ও প্রণোদনা না থাকলে তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হবে। তার জন্য দক্ষতা ও পণ্যের এবং প্রযুক্তির উন্নয়নেও বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে। এসব প্রস্তুতি জন্য আরও কয়েক বছর উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ পেছানো দরকার।
প্রস্তুতি শুরুর পরামর্শ
চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কয়েকটি কাজ দ্রুত শুরু করার দরকার বলে মনে করেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান র্যাপিডের চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে জিএসপি প্লাস সুবিধাপ্রাপ্তি নিয়ে দর-কষাকষি শুরু করা উচিত। এলডিসি থেকে উত্তরণের পর তারা শুল্কমুক্ত–সুবিধা দিতে পারে কি না। এ ছাড়া ব্যবসার খরচ কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে। নগদ সহায়তা না দিয়েও ভারত যেভাবে পণ্য রপ্তানিতে সুযোগ-সুবিধা দেয়, সেভাবে আমাদের দেশেও দেওয়া সম্ভব। আবার এলডিসি থেকে উত্তরণের পর তিন বছর প্রণোদনা অব্যাহত রাখারও সুযোগ রয়েছে, সেটিও মনে রাখতে হবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ ল কম ক ত স ব ধ প রথম আল ক জ এসপ এলড স সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
হাত, পা দুর্বল হওয়া মানেই কি স্ট্রোক?
অনেক সময় দেখা যায় যে হাত, পা ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। এভাবে চার পাঁচ মাস ধরে চলতে থাকলে সেক্ষেত্রে স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম থাকে বলে মত দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু দেখা যায় যে একজন সুস্থ মানুষ হঠাৎ পড়ে গেছেন এরপর তার এক সাইড দুর্বল হয়ে গেছে, এটা স্ট্রোকের লক্ষণ। স্ট্রোকের প্রাথমিক লক্ষণগুলো সম্পর্কে জেনে নিন।
অধ্যাপক ডা: এম বাহাদুর আলী মিয়া, নিউরো মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় বলেন, ‘‘প্রথম কথা হলো স্ট্রোকটা হঠাৎ করে শুরু হবে। যেমন শরীরের একদিকে হাত ও পা একসঙ্গে দুর্বল হয়ে যেতে পারে, অচল হয়ে যেতে পারে, মুখ বেঁকে যেতে পারে। এ ছাড়াও আরও কিছু লক্ষণ রয়েছে, যেমন মাথা ব্যথা, বমি হওয়া। স্ট্রোক হলে ব্রেনে রক্ত ক্ষরণ হয় এবং চাপ বেড়ে যায়। চাপ বেড়ে গেলে মাথা ব্যথাও হবে এবং চাপের কারণে বমিও হবে । খিঁচুনিও দেখা দিতে পারে।’’
এই চিকিৎসক জানান, এই লক্ষণগুলো নির্ভর করে ব্রেন স্ট্রোক মস্তিষ্কের কোন জায়গায় হচ্ছে, তার ওপর। একটা জায়গায় হলে হাত পা দুর্বল হয়ে যাবে আবার আরেকটা জায়গায় হলে মুখ বেঁকে যাবে। দেখা যাবে যে আক্রান্ত ব্যক্তির আচার আচরণে সমস্যা হচ্ছে।
আরো পড়ুন:
ঈদের ছুটিতে হাসপাতালে সেবা নিশ্চিত করতে সরকারের ১৬ নির্দেশনা
গরমে ডায়রিয়ার ঝুঁকি এড়াতে করণীয়
এমনটি হাত, পা চারটাই দুর্বল হয়ে যেতে পারে। ব্রেনের নিচের অংশে স্ট্রোক হলে হাত পা চারটা দুর্বল হয়ে যেতে পারে।
ঢাকা/লিপি