ভারত সরকার জনসংখ্যার ভিত্তিতে নির্বাচনী আসন পুনর্নির্ধারণের ঘোষণা দেওয়ায় দেশটিতে এখন রাজনৈতিক ঝড় বইছে। মূলত উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের প্রভাব নিয়ে রাজনীতিতে নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে। আর এই ঝড়ের প্রথম ঢেউ উঠেছে দক্ষিণাঞ্চলে। 

ওই বিতর্কে প্রথম মুখ খুলেছেন দক্ষিণাঞ্চলীয় তামিলনাড়ু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন। দক্ষিণের অন্য চারটি রাজ্য হলো– অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্ণাটক, কেরালা ও তেলেঙ্গানা। স্ট্যালিন এই অঞ্চলে নরেন্দ্র মোদির বিজেপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনীতিক। তিনি বলছেন, ‘সীমানা নির্ধারণের পদক্ষেপ দক্ষিণ ভারতের ওপর ঝুলন্ত তলোয়ার।’ তিনি ২২ মার্চ বিভিন্ন রাজ্যপ্রধানদের নিয়ে সম্মেলনও ডেকেছেন। 

বিবিসি বলছে, জনসংখ্যার ভিত্তিতে আসন নির্ধারণ হলে দক্ষিণাঞ্চলের প্রদেশগুলোতে আসন সংখ্যা কমে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ, এই অঞ্চলের জনসংখ্যা উত্তরাঞ্চলের রাজ্যগুলোর চেয়ে অনেক কম। দক্ষিণাঞ্চলের রাজ্যগুলো স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দিক দিয়ে অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে এগিয়ে থাকলেও এখানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কম।   

ভারতের সংবিধানে বলা হয়েছে, প্রতিটি রাজ্যকে জনসংখ্যার ভিত্তিতে আসন বরাদ্দ করতে হবে। এর আগে জনশুমারি করার শর্ত রয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের নেতাদের উদ্বেগ, জনশুমারিতে দক্ষিণের জনসংখ্যা কম হওয়ার কারণে রাজ্যগুলো সংসদীয় আসন হারাতে পারে। 

ভারত ১৯৫১, ১৯৬১ ও ১৯৭১ সালে দশম বার্ষিক জনশুমারির ভিত্তিতে তিনবার সংসদীয় আসন পুনর্নির্ধারণ করেছে। কম জনসংখ্যার রাজ্যগুলোতে সংসদীয় আসন কমে যাওয়ার আশঙ্কায় গত ৫০ বছর পদ্ধতিটির প্রয়োগ বন্ধ রয়েছে। ২০২৬ সালে আবার তা শুরু হওয়ার কথা। মোদি সরকার সেটা বাস্তবায়নের ঘোষণা দেওয়ায় বিতর্ক শুরু হয়েছে।  

ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র ফেলো ইয়ামিনী আইয়ার বলেন, এই বিতর্কে ভারত একটি ফেডারেল অচলাবস্থার দ্বারপ্রান্তে। 

১৯৫১ সালে ভারতে প্রতিটি এমপি ৭ লাখ লোকের প্রতিনিধিত্ব করতেন। সেই সংখ্যা এখন ২৫ লাখে ঠেকেছে, যা মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের একজন সদস্যের জনসংখ্যার তিনগুণেরও বেশি। আর যুক্তরাজ্যের একজন এমপি প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার নাগরিকের প্রতিনিধিত্ব করেন।

স্ট্যালিন সতর্ক করে দিয়েছেন, ২০২৬ সালে সীমানা নির্ধারণ করা হলে তামিলনাড়ু আটটি আসন হারাতে পারে। তবে এই বিতর্কে বিজেপি খুব কমই কথা বলেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আশ্বস্ত করেছেন, আসন্ন সীমানা নির্ধারণে দক্ষিণ রাজ্যগুলো একটি আসনও হারাবে না। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সুহাস পালশিকর সতর্ক করে বলেছেন, উত্তর-দক্ষিণ বিভাজন ভারতের ফেডারেল কাঠামোর জন্য হুমকিস্বরূপ।  

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জনস খ য র র জনস খ য র জন ত

এছাড়াও পড়ুন:

সুরে-গানে-তালে বৈশাখকে বরণ করল রাবি

বাংলা বছরের প্রথম দিনকে স্বাগত জানাতে বাঙালি মেতে উঠেছে নানা আয়োজনে। বাঙালি জাতিসত্তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার অন্যতম দিনটিকে কেন্দ্র করে সর্বত্রই বইছে উৎসবের আমেজ। জাতি-গোত্র-বর্ণ সব ভেদাভেদ ভুলে সকলে একযোগে দিনটি উদযাপন করেছে।

বৈশাখের আগমনকে নতুন সুরে, গানে, তালে বরণ করে নিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষক শিক্ষার্থীরা।

সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকাল ৯টায় চারুকলা চত্বরে মুক্তমঞ্চে বর্ষবরণের কর্মসূচি উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব। পরে বেলা ১০টায় চারুকলা চত্বর থেকে শুরু হওয়া বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে।

আরো পড়ুন:

নববর্ষে থাকবে রাবি অধ্যাপকের ৩০০ ফুটের স্ক্রলচিত্র প্রদর্শনী

রাবি শিক্ষার্থীদের বিজু উৎসব উদযাপন

শোভাযাত্রায় উপাচার্য, উপ-উপাচার্যসহ বিপুল সংখ্যক শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অংশ নেন।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনও নিজ নিজ কর্মসূচির মাধ্যমে বর্ষবরণ উদযাপন করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, লোক প্রশাসন বিভাগ, ফলিত গণিত বিভাগ, মার্কেটিং বিভাগসহ একাধিক বিভাগ নতুন বছরকে বরণ করে নিতে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।

এবারের আয়োজনে ছিলো নানা ধরনের ব্যানার আর ফেস্টুন। শোভাযাত্রায় ২৪ এর গণঅভ্যুত্থান, বাঙালির ঐতিহ্য, কৃষ্টি-কালচার তুলে ধরতে তৈরি করা হচ্ছে বিভিন্ন মোটিফ। তবে আগের বছরগুলোর তুলনায় এবার আয়োজনের ব্যাপ্তি কিছুটা কমেছে বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা কেউ শখের হাড়ির ভাস্কর্য, আবার কেউ বাঙালির ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে রঙ তুলিতে ফুটিয়ে তুলেছেন। কেউ ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে ধারণ করে এঁকেছেন নানা চিত্র। মাঠজুড়ে বিরাজ করছে বাঁশের ফালি দিয়ে শখের হাঁড়ি ও পালকি। আবার কেউ কেউ মধ্যপ্রাচ্যের মানবতার বিপর্যয়কে প্রতীকী করে শলাকা দিয়ে মিসাইল বোমা ও ড্রোন বানিয়েছেন।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ফারিহা সাঈদ নিশা বলেন, “এটা আমার জীবনের প্রথম বৈশাখ পালন। আগে কখনো এত বড় করে পালন করা হয়নি। সবার সঙ্গে অনেক আনন্দ করলাম, অনেক ভালো লাগলো। বৈশাখের আনন্দ সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ুক, এই কামনা করছি।”

রাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক সাজ্জাদ হোসেন বকুল বলেন, “শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে নতুন বর্ষকে আমরা বরণ করে নিলাম। আমার শিক্ষার্থীরা গত এক সপ্তাহ ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে ব্যানার ফেস্টুন তৈরি করেছে। সেসব নিয়ে সবাই উল্লাসে মেতেছে আজ। নববর্ষে এমন আয়োজন করতে সত্যি খুশি লাগছে। এর জন্য আমার শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তারা অনেক পরিশ্রম করেছে।”

বর্ষবরণের কর্মসূচিতে ক্যাম্পাস জুড়ে বিভিন্ন বিভাগ ও সংগঠনের উদ্যোগে দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়েছে।

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ