জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক, এটা আমরা চাই না। দলটির ভেতরে যারা অন্যায় কাজের সঙ্গে জড়িত, তাদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ডিপ্লোম্যাটকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি। সোমবার তা প্রকাশ করা হয়েছে। সাক্ষাৎকারে নতুন দলের চ্যালেঞ্জ, নির্বাচন এবং আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়েও কথা বলেন নাহিদ ইসলাম।

আন্দোলন থেকে সরকারে, তারপর আবার রাজনীতিতে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাহিদ ইসলাম বলেন, একটি সরকারকে ভেতর ও বাইরে থেকে দেখাটা বিস্তর ভিন্ন অভিজ্ঞতা। অন্তর্বর্তী সরকার যখন দায়িত্ব নিল, তখন বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে চ্যালেঞ্জিং সময় ছিল। এটা আমার জন্য একটি বড় অভিজ্ঞতা। সময়ের চাহিদার প্রতি সাড়া দিয়ে আমি পদত্যাগ করেছি এবং মূলধারার রাজনীতিতে যোগ দিয়েছি। এখন এই অভিজ্ঞতা আমি আমার ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক যাত্রায় ব্যবহার করতে পারব—বিশেষ করে সামনের পথটা যখন কঠিন বলে মনে হচ্ছে। একটি রাজনৈতিক দলের যাত্রা শুরু করা আমার জন্য একটি নতুন চ্যালেঞ্জ, তবে এই পথ পাড়ি দেওয়ার জন্য আমি প্রস্তুত আছি।

এনসিপির সর্ম্পকে তিনি বলেন, এনসিপি একটি মধ্যপন্থি রাজনৈতিক দল এবং আমরা এই আদর্শ ধরে রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের লক্ষ্য হলো নতুনদের কথা বলার জায়গা করে দেওয়া, বিশেষ করে তরুণ এবং সমাজের সব শ্রেণির ব্যক্তিদের, যারা বছরের পর বছর ধরে গতানুগতিক রাজনীতির বাইরে রয়ে গেছেন। আমাদের লক্ষ্য একটি গণপরিষদ গঠনের মাধ্যমে ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ প্রতিষ্ঠা করা। এই গণপরিষদের মাধ্যমে আমরা নতুন একটি সংবিধান প্রবর্তন করতে চাই এবং ক্ষমতার ধরনে পরিবর্তন আনতে চাই। আমাদের লক্ষ্যকে আরও সুস্পষ্ট করার জন্য বিভিন্ন ধারণা খতিয়ে দেখছি ও মতামত নিচ্ছি।

জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি ঘনিষ্ঠ কিনা, এমন প্রশ্নে নাহিদ বলেন, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি আমরা সবাই আওয়ামী লীগের নেতাদের বিচার দাবি করছি। এর অর্থ কী- আমরা সবাই এক বা একে অপরের ঘনিষ্ঠ? মোটেও না। বিষয়টি যদি তাই হতো, তাহলে আমরা একটি জোট গঠন করতাম। এনসিপি ও জামায়াতে ইসলামী পুরোপুরি ভিন্ন দল, যাদের পৃথক পৃথক এজেন্ডা রয়েছে। আমাদের মধ্যে কোনো সংযোগ নেই। জামায়াতে ইসলামী আমাদের ঘনিষ্ঠ নয়। আমাদের কিছু দাবি মিলে যেতে পারে, যেমন আমরা সংস্কার আগে করার, গণপরিষদ প্রতিষ্ঠার এবং বড় পরিসরে কাঠামোগত পরিবর্তনের বিষয়ে অগ্রাধিকার দিই। কিন্তু মৌলবাদের বিষয়ে আমাদের মিল রয়েছে—এমন দাবি হলো মিথ্যা একটি বয়ান প্রতিষ্ঠার চেষ্টা। উদাহরণ হিসেবে বলতে গেলে, জুলাই গণ–অভ্যুত্থানকে অনেকেই সন্ত্রাসী আন্দোলন তকমা দিয়েছেন, যা পুরোপুরি বিভ্রান্তিকর।

সাক্ষাৎকারে নির্বাচন প্রসঙ্গে এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, আমাদের গুরুত্বের বিষয়গুলো হলো পূর্ববর্তী সরকারের অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা, দেশে একটি স্থিতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিশ্চিত করা এবং গণপরিষদ গঠন করা। আমরা সংবিধান ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারের পক্ষে, যাতে ফ্যাসিবাদী শাসন আবার ফিরে আসতে না পারে। তাই একটি নির্বাচন আমাদের তাৎক্ষণিক অগ্রাধিকার নয়। বর্তমানে নির্বাচনের জন্য আমরা কোনো সুনির্দিষ্ট সময়সীমা দিচ্ছি না।

আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রসঙ্গে নাহিদ বলেন, আমরা চাই না আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিক। প্রথমত, দলটির ভেতরে যারা অন্যায় কাজের সঙ্গে জড়িত, তাদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন হ দ ইসল ম র জন ত ক আম দ র র র জন র জন য এনস প ইসল ম আওয় ম সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

হাইব্রিড গাড়ির শুল্ক কমানোর দাবি বারভিডার

কয়েক বছর ধরে বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশে রিকন্ডিশন্ড যান আমদানি ও বিক্রি কমেছে। এ পরিস্থিতিতে জ্বালানি সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব হাইব্রিড গাড়ির শুল্ক হার কমানোর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বারভিডা)। এছাড়াও গণপরিবহন হিসেবে ব্যবহৃত মাইক্রোবাসের সম্পূরক শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহারেরও আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি। 

শনিবার রাজধানীর বিজয়নগর ফার্স হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বারভিডার সভাপতি আবদুল হক এ দাবি জানান। এ সময় সংগঠনের অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

লিখিত বক্তব্যে বারভিডার সভাপতি আবদুল হক মোটরযান আমদানির জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি কর কাঠামো এবং শুল্ক হার নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন। রিকন্ডিশন মোটরযান আমদানিতে ন্যূনতম ১২৯ শতাংশ ও সর্বোচ্চ ৮২৬ শতাংশ শুল্ক দিতে হচ্ছে। মাইক্রোবাসের সম্পূরক শুল্ক ও অ্যাম্বুলেন্স আমদানির শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার এবং পিক আপ বা ভ্যানের শুল্ক সর্বনিম্ন স্তরে নির্ধারণ করা উচিত। এছাড়াও ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে মানসম্পন্ন গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ১৬ থেকে ৪০ আসনের বাস আমদানিতে শুল্ক কমাতে হবে। হাইব্রিড গাড়ির সিসি স্ল্যাব ও সম্পূরক শুল্ক হার পুনর্বিন্যাস করা হলে এসব গাড়ি আমদানি সহজ হবে এবং সরকারে রাজস্ব আয় বাড়বে বলে মনে করে বারভিডা। 

আবদুল হক বলেন, করোনা মহামারির কারণে বারভিডার সদস্যদের ব্যবসা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর ডলার সংকট ও দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে আমদানি করা গাড়ির দামও বেড়েছে। ফলে মধ্য ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রেতাদের সামর্থ্যের বাইরে চলে গেছে রিকন্ডিশন গাড়ি। এতে এসব গাড়ি আমদানি কমেছে।

বারভিডার সভাপতি বলেন, বৈদ্যুতিক গাড়ি আমদানিতে দেশে বেশ আগ্রহ তৈরি হয়েছে। মোটরযানে ২০৩০ সাল নাগাদ ফসিল ফুয়েলের ব্যবহার কমে আসার পরিপ্রেক্ষিতে দেশে বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহার বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ইদানীং নিম্নমানের বৈদ্যুতিক গাড়ি আমদানি হচ্ছে। তাই দেশে বৈদ্যুতিক, হাইব্রিড, প্লাগ-ইন হাইব্রিড এবং হাইড্রোজেন গাড়ি আমদানি ও ব্যবহার বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়ন করা দরকার। 

রিকন্ডিশন্ড গাড়ি এবং দেশে আমদানি করা নতুন গাড়ির নিবন্ধন ফি’র মধ্যে অনেক বৈষম্য রয়েছে বলে দাবি করেন বারভিডা সভাপতি। 

তিনি বলেন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) নিবন্ধন খরচ নতুনের চেয়ে পুরোনো গাড়িতে অনেক বেশি। দেড় হাজার সিসি সক্ষমতার গাড়ি নিবন্ধন, মালিকানা বদল ও মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) মিলিয়ে নতুন গাড়িতে খরচ পড়ে ৮০ হাজার ৪০৮ টাকার বেশি। অন্যদিকে পুরোনো গাড়িতে এ খরচ হয় ১ লাখ ৭ হাজার টাকার বেশি। আর সাড়ে তিন হাজার সিসি সক্ষমতার নতুন গাড়িতে খরচ ১ লাখ ৫৯ হাজার ৭৫৮ টাকা। একই সক্ষমতার পুরোনো গাড়ির বেলায় তা ২ লাখ ১৩ হাজার ৭১৬ টাকা।

মডেল ভেদে পুরোনো গাড়ির নিবন্ধন খরচ নতুনের তুলনায় ২৭ হাজার থেকে ৫৪ হাজার টাকার মতো বেশি। এছাড়া আমদানি করা রিকন্ডিশন গাড়ি বিক্রির সময় ‘দ্বৈত নিবন্ধন’ করতে হয়। বৈষম্যমূলক এসব সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানান তারা।

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের যেসব ঘটনা ঘটছে সেগুলোকে গণহত্যা আখ্যা দিয়ে আবদুল হক বলেন, 
ব্যাটারিচালিত রিকশা পরিবেশের জন্য হুমকি ও দেশের জন্য ‘ক্যান্সারে’ পরিণত হয়েছে। গাড়ি এখন আর বিলাসিতা নয়। নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজন। গাড়ির ব্যবহার বাড়লে দুর্ঘটনার পরিমাণ কমে যাবে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • স্পেন ও পর্তুগালে ভয়াবহ বিদ্যুৎবিভ্রাট, সব ধরনের গণপরিবহনে বিপর্যয়
  • মাইক্রোবাসে শুল্ক প্রত্যাহার দাবি
  • হাইব্রিড গাড়ির শুল্ক কমানোর দাবি বারভিডার