দ্য ডিপ্লোম্যাট: আপনি আন্দোলন থেকে সরকারে গেছেন, পরে রাজনীতিতে ফিরে এসেছেন এবং আবার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করেছেন। আপনার অভিজ্ঞতা কী?

নাহিদ ইসলাম: একটি সরকারকে ভেতর ও বাইরে থেকে দেখাটা বিস্তর ভিন্ন অভিজ্ঞতা। অন্তর্বর্তী সরকার যখন দায়িত্ব নিল, তখন বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে চ্যালেঞ্জিং সময় ছিল। এটা আমার জন্য একটি বড় অভিজ্ঞতা। সময়ের চাহিদার প্রতি সাড়া দিয়ে আমি পদত্যাগ করেছি এবং মূলধারার রাজনীতিতে যোগ দিয়েছি। এখন এই অভিজ্ঞতা আমি আমার ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক যাত্রায় ব্যবহার করতে পারব—বিশেষ করে সামনের পথটা যখন কঠিন বলে মনে হচ্ছে। একটি রাজনৈতিক দলের যাত্রা শুরু করা আমার জন্য একটি নতুন চ্যালেঞ্জ, তবে এই পথ পাড়ি দেওয়ার জন্য আমি প্রস্তুত আছি।

দ্য ডিপ্লোম্যাট: অন্তর্বর্তী সরকারে আপনার দায়িত্ব পালনের সময় আপনারা কতটুকু সংস্কার করতে পেরেছেন?

নাহিদ ইসলাম: আমার স্বল্প মেয়াদে আমরা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা ইন্টারনেট কাঠামোর স্তরগুলো নতুন করে বিন্যস্ত করেছি। আইসিটি বিভাগের জন্য সংস্কারের একটি রূপরেখা প্রস্তুত করেছি। আর তথ্যের প্রবাহ যেন আরও ভালো হয়, তা নিশ্চিত করতে নিয়ন্ত্রণ আরোপকারী বিভিন্ন আইন নিয়ে কাজ করেছি। এই সংস্কারগুলোর পুরো প্রভাব হয়তো শিগগিরই দৃশ্যমান না হতে পারে, তবে আমি আত্মবিশ্বাসী—এগুলো দীর্ঘ মেয়াদে দেশের জন্য সুবিধা নিয়ে আসবে।

দ্য ডিপ্লোম্যাট: এনসিপি নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী? এটি কি ডানপন্থী নাকি বামপন্থী দল হবে?

নাহিদ ইসলাম: এগুলোর কোনোটিই নয়। এনসিপি একটি মধ্যপন্থী রাজনৈতিক দল এবং আমরা এই আদর্শ ধরে রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের লক্ষ্য হলো নতুনদের কথা বলার জায়গা করে দেওয়া; বিশেষ করে তরুণ এবং সমাজের সব শ্রেণির ব্যক্তিদের, যাঁরা বছরের পর বছর ধরে গতানুগতিক রাজনীতির বাইরে রয়ে গেছেন।

আমাদের লক্ষ্য হলো একটি গণপরিষদ গঠনের মাধ্যমে ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ প্রতিষ্ঠা করা। এই গণপরিষদের মাধ্যমে আমরা নতুন একটি সংবিধান প্রবর্তন করতে চাই এবং ক্ষমতার ধরনে পরিবর্তন আনতে চাই। আমাদের লক্ষ্যকে আরও সুস্পষ্ট করার জন্য বিভিন্ন ধারণা খতিয়ে দেখছি ও মতামত নিচ্ছি।

দ্য ডিপ্লোম্যাট: অনেকেই বলছেন, এনসিপি ‘কিংস পার্টি’ এবং সরকারের কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা নিচ্ছে। এটা কি সত্যি?

নাহিদ ইসলাম: যদি এনসিপি একটি ‘কিংস পার্টি’ হয়, তাহলে আমি কেন সরকার থেকে পদত্যাগ করলাম? আমি থেকে যেতে পারতাম, আমার পদকে ব্যবহার করতে পারতাম এবং সরকারের ভেতরে থেকে রাজনীতি করতে পারতাম।

আমরা সরকার থেকে কোনো বিশেষ সুবিধা নিচ্ছি না। শুধু অভ্যুত্থানে আমাদের ভূমিকার কারণে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো থেকে অনুপ্রেরণা ও স্বীকৃতি পেয়েছি। তা ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকার একদলীয় সরকার নয়। এতে বিভিন্ন মতাদর্শের লোকজন রয়েছেন। ফলে সব দল সরকারের কাছ থেকে একই আচরণ পাচ্ছে।

দ্য ডিপ্লোম্যাট: এনসিপি কি জামায়াতে ইসলামীর ঘনিষ্ঠ? তাদের দাবিগুলো একই রকম মনে হচ্ছে। এমনটা আশঙ্কা করা হচ্ছে যে বাংলাদেশে কট্টরপন্থা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে এনসিপি।

নাহিদ ইসলাম: বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি—আমরা সবাই আওয়ামী লীগের নেতাদের বিচার দাবি করছি। এর অর্থ কী—আমরা সবাই এক বা একে–অপরের ঘনিষ্ঠ? মোটেও না। বিষয়টি যদি তা–ই হতো, তাহলে আমরা একটি জোট গঠন করতাম।

এনসিপি ও জামায়াতে ইসলামী পুরোপুরি ভিন্ন দল, যাদের পৃথক পৃথক এজেন্ডা রয়েছে। আমাদের মধ্যে কোনো সংযোগ নেই। জামায়াতে ইসলামী আমাদের ঘনিষ্ঠ নয়। আমাদের কিছু দাবি মিলে যেতে পারে, যেমন আমরা সংস্কার আগে করার, গণপরিষদ প্রতিষ্ঠার এবং বড় পরিসরে কাঠামোগত পরিবর্তনের বিষয়ে অগ্রাধিকার দিই। কিন্তু মৌলবাদের বিষয়ে আমাদের মিল রয়েছে—এমন দাবি হলো মিথ্যা একটি বয়ান প্রতিষ্ঠার চেষ্টা। উদাহরণ হিসেবে বলতে গেলে, জুলাই গণ–অভ্যুত্থানকে অনেকেই সন্ত্রাসী আন্দোলন তকমা দিয়েছেন, যা পুরোপুরি বিভ্রান্তিকর।

দ্য ডিপ্লোম্যাট: আপনারা কখন জাতীয় নির্বাচন চান?

নাহিদ ইসলাম: আমাদের গুরুত্বের বিষয়গুলো হলো পূর্ববর্তী সরকারের অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা, দেশে একটি স্থিতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিশ্চিত করা এবং গণপরিষদ গঠন করা। আমরা সংবিধান ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারের পক্ষে, যাতে ফ্যাসিবাদী শাসন আবার ফিরে আসতে না পারে। তাই একটি নির্বাচন আমাদের তাৎক্ষণিক অগ্রাধিকার নয়। বর্তমানে নির্বাচনের জন্য আমরা কোনো সুনির্দিষ্ট সময়সীমা দিচ্ছি না।

দ্য ডিপ্লোম্যাট: আপনার নতুন দলের সামনে কী কী চ্যালেঞ্জ রয়েছে?

নাহিদ ইসলাম: প্রথমত, বাংলাদেশে অনেক সুপ্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল রয়েছে। এটা তাদের সঙ্গে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে কঠিন করে তুলবে, বিশেষ করে নির্বাচনের আগে সীমিত সময়ের মধ্যে। (নির্বাচনের) নির্দিষ্ট তারিখ অনিশ্চিত হলেও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ইঙ্গিত দিয়েছেন, ২০২৫ সালের শেষে বা ২০২৬ সালের মাঝামাঝিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।

দ্বিতীয়ত, তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছানো আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ। ক্যাম্পাস ও শহরের রাজনীতি থেকে গ্রামের রাজনীতি ভিন্নভাবে পরিচালিত হয় এবং এখানে ভিন্ন পদ্ধতিতে এগোতে হয়। আগামী মাস থেকে আমরা ঢাকার বাইরে প্রচার শুরু করতে যাচ্ছি।

তা ছাড়া এটা দেশের জন্য একটি কঠিন সময়। তাই জনগণের দাবির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সরকারের ওপর চাপ তৈরির জন্য আমাদের অবশ্যই সক্রিয় থাকতে হবে। এর পাশাপাশি দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মধ্যে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়া একটি উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ হবে।

দ্য ডিপ্লোম্যাট: এনসিপি কোন ধরনের ‘সেকেন্ড রিপাবলিকের’ কথা ভাবছে?

নাহিদ ইসলাম: সেকেন্ড রিপাবলিকের ক্ষেত্রে আমাদের প্রাথমিক দাবি হলো একটি নতুন সংবিধান। এর জন্য গণপরিষদ প্রতিষ্ঠা দরকার। এই সংবিধান হবে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধ এবং জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনার আলোকে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সীমাহীন ক্ষমতা প্রত্যাহারসহ ক্ষমতার একটি ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবস্থা এবং স্বাধীন বিচারব্যবস্থার পক্ষে সোচ্চার রয়েছি।

দ্য ডিপ্লোম্যাট: বাংলাদেশের কূটনীতির বিষয়ে এনসিপির অবস্থান কী? দলটি কি দেশকেন্দ্রিক রাজনীতির সঙ্গে থাকবে?

নাহিদ ইসলাম: প্রথম ও সর্বাগ্রে আমরা চাই, বাংলাদেশ যেকোনো বিদেশি শক্তির আধিপত্যমুক্ত থেকে একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও লাভজনক কূটনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে চলবে। অতীতে আমরা বিভিন্ন সরকারকে নয়াদিল্লির প্রভাবের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়তে দেখেছি। আমরা বাংলাদেশের রাজনীতিকে ভারত বা পাকিস্তানকেন্দ্রিক হতে দেব না। এনসিপি পুরোপুরি বাংলাদেশকেন্দ্রিক থাকবে, সবার ওপরে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেবে।

দ্য ডিপ্লোম্যাট: আপনার দল কি আওয়ামী লীগকে রাজনীতি বা পরবর্তী নির্বাচনে অংশ নিতে দেবে?

নাহিদ ইসলাম: না, আমরা চাই না আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিক। প্রথমত, দলটির ভেতরে যাঁরা অন্যায় কাজের সঙ্গে জড়িত, তাঁদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন হ দ ইসল ম র র জন ত সরক র র আম দ র র জন য আপন র এনস প আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

সংস্কারের মত এখনও জানায়নি বিএনপি জামায়াত এনসিপি

পাঁচ সংস্কার কমিশনের ১৬৬ সুপারিশের বিষয়ে এখনও মতামত জানায়নি বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ ২৩টি দল। গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে মতামত জানিয়েছে ১৫টি দল। বিএনপি আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত এবং জামায়াত ও এনসিপি আরও কয়েক দিন সময় চেয়েছে।

বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, সংস্কার কমিশনের সুপারিশ নয়, দলীয় ৩১ দফার আলোকে মতামত জানানো হবে। নির্বাচন বিলম্বিত হতে পারে– এ শঙ্কায় গণপরিষদ, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ও প্রাদেশিক ব্যবস্থায় রাজি নয় তারা। বিএনপি ও সমমনা দলগুলো চায়, শুধু নির্বাচনবিষয়ক সংস্কার অন্তর্বর্তী সরকার করবে; বাকিটুকু করবে নির্বাচিত সরকার। 

জামায়াত সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন চায়। গণপরিষদে নতুন সংবিধান প্রণয়নের দাবি তোলা এনসিপি জানিয়েছে, সুপারিশ পর্যালোচনা করা হচ্ছে। দলীয় মতামতে ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ এবং আগে গণপরিষদ নির্বাচনের মতামত থাকবে। 

বড় দল বিএনপি মতামত না জানালেও আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসতে যাচ্ছে ঐকমত্য কমিশন। প্রথম দিন এলডিপির সঙ্গে হবে আলোচনা। কমিশনের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করা প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার সমকালকে বলেন, আগে ১৩টি দল মতামত জানিয়েছিল। মঙ্গলবার জেএসডি ও গণফ্রন্ট জানিয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোকে ১৩ মার্চের মধ্যে মতামত জানাতে অনুরোধ করা হয়েছিল। বিএনপি ২০ মার্চ পর্যন্ত সময় চেয়েছিল; কমিশন ১৮ মার্চের মধ্যে দিতে অনুরোধ করে। তবে দলগুলো মৌখিকভাবে আরও কিছুদিন সময় চেয়েছে।
কমিশন সূত্র সমকালকে জানিয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সময় চাওয়ার বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টাকে জানানো হয়েছে। সরকারপ্রধানের কাছ থেকে জবাব এসেছে, রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতেই যেহেতু সংস্কার করা হবে, তাই তাদের জন্য অপেক্ষা করা হবে। কিন্তু কাজ এগিয়ে রাখতে যেসব দল মতামত জানিয়েছে, তাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে অসুবিধা নেই। 

সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, দুদক এবং পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোর মত এক করার লক্ষ্যে ১২ ফেব্রুয়ারি ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়। ২২ রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে ১৫ ফেব্রুয়ারি ড. ইউনূসের সভাপতিত্বে কমিশনের প্রথম সভা হয়। এতে সিদ্ধান্ত হয়, রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কারের সুপারিশের বিষয়ে আলাদা মতামত জানাবে। কতটুকু সংস্কার, কীভাবে হবে– এ বিষয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য হবে দলগুলোর মতামতে। প্রথমে দলগুলোর সঙ্গে আলাদাভাবে এবং পরে একসঙ্গে বৈঠক হবে। যেসব বিষয়ে একমত হবে, তা বাস্তবায়নে হবে জুলাই সনদ।
 এর মাধ্যমে দলগুলো অঙ্গীকার করবে, নির্বাচনে যে দলই জয়ী হোক; জুলাই সনদ অনুযায়ী সংস্কার হবে। 

বাকি পাঁচ কমিশনের সুপারিশের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেওয়া হলেও পুলিশ সংস্কারের ক্ষেত্রে তা হচ্ছে না। সরকারি সূত্র জানিয়েছে, নির্বাহী ক্ষমতায় পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংস্কার করা হবে। যদিও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায় পুলিশকে। প্রশাসনের প্রভাবমুক্ত হতে পুলিশ চায় স্বাধীন কমিশন। 
রাজনৈতিক দলগুলোর পাঠানো ‘স্প্রেডশিটে’ প্রতিটি সুপারিশের সঙ্গে ‘একমত’, ‘আংশিক একমত’ ও ‘ভিন্নমত’– এ তিনটি অপশন রয়েছে। ভিন্নমত থাকলে মন্তব্যের কলামে বিস্তারিত জানানোর সুযোগ রয়েছে। সংস্কার বাস্তবায়নে ছয়টি বিকল্প দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো– ‘নির্বাচনের আগে অধ্যাদেশের মাধ্যমে’, ‘নির্বাচনের আগে গণভোটের মাধ্যমে’, ‘নির্বাচনের সময় গণভোটের মাধ্যমে’, ‘গণপরিষদের মাধ্যমে’, ‘নির্বাচনের পরে সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে’ এবং ‘গণপরিষদ ও আইনসভা হিসেবে নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে’। এসব ঘরের যে কোনো একটিতে টিক চিহ্ন দিয়ে মত দিতে বলা হয়েছে।

সংবিধান সংস্কার সংসদে চায় বিএনপি
অধিকাংশ রাজনৈতিক দল শুধু ‘টিক চিহ্ন’ দিয়ে মতামত জানাতে রাজি হয়নি। বিএনপি বিস্তারিত মত জানাচ্ছে দলটির ঘোষিত ৩১ দফার আলোকে। তবে ‘স্প্রেডশিট’ও পূরণ করবে। যুগপৎ আন্দোলনের মিত্র দলগুলোর মতো যেন অভিন্ন হয়, তা নিশ্চিতে কথা বলছে বিএনপি। দলটির সূত্র জানিয়েছে, আলোচনার ভিত্তিতে ইতোমধ্যে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক তিনটি দল ঐকমত্য কমিশনে মতামত জানিয়েছে। আগামী সপ্তাহে বিএনপিসহ বাকি মিত্ররা মতামত জানাবে। এর মাধ্যমে সংস্কার প্রশ্নে অভিন্ন মতামত দিয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকার বার্তা দিতে চায় তারা। 

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ‘রাষ্ট্র সংস্কার করবে নির্বাচিত সংসদ’– এ অবস্থানের ভিত্তিতে মতামত তৈরি করা হচ্ছে। দলটির দৃষ্টিতে যেসব সংস্কারের এই মুহূর্তে প্রয়োজন নেই, সেগুলোতে মত নাও দিতে পারে। অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ ও কাঠামো তৈরিতে সংবিধান এবং নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে বিএনপি। 

বিএনপি নেতাদের ভাষ্য, সংবিধান না থাকলে গণপরিষদের প্রয়োজন হয়। অন্তর্বর্তী সরকার বিদ্যমান সংবিধানের আলোকে শপথ নিয়েছে। নতুন সংবিধানের যেহেতু দরকার নেই, তাই গণপরিষদের প্রস্তাব অপ্রয়োজনীয়। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ন্যূনতম বয়স কমিয়ে ২১ বছর করার প্রস্তাবে আপত্তি জানাবে বিএনপি। প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ টানা দুই মেয়াদে সীমাবদ্ধের প্রস্তাব করবে দলটি। তবে সর্বোচ্চ দুই মেয়াদের প্রস্তাবে বিএনপি রাজি নয়। সংসদের মেয়াদ শেষে নির্বাচিত সরকার শপথ না নেওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব পালন করবে– এ প্রস্তাবেও রাজি নয় বিএনপি। নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ ৯০ দিনে সীমাবদ্ধের প্রস্তাবে ইতিবাচক দলটি। নির্বাচন কমিশনের নিয়োগ, দায়িত্ব ও ক্ষমতা এবং স্বার্থের দ্বন্দ্ব স্পষ্টীকরণ ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে আইন প্রণয়নেও একমত। 

মতামত চূড়ান্ত করতে গত রোববার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়েছে। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি সংবিধান সংস্কারের অধিকাংশ সুপারিশে একমত। তবে দলটির অভিমত হলো, সংবিধান সংস্কারের এখতিয়ার একমাত্র নির্বাচিত সংসদের। নির্বাচিত সংসদই প্রয়োজনীয় সংস্কার করবে। নির্বাচন ও প্রশাসনিক সংস্কারের ওপর জোর দিচ্ছে বিএনপি। দলীয় মতামত সংবাদ সম্মেলন করেও তুলে ধরা হবে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দলীয় মতামত প্রস্তুত করা হয়েছে। যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ, আলোচনা করা হচ্ছে। সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশের বিস্তারিত মতামতের সঙ্গে স্প্রেডশিটও থাকবে।

জামায়াত, এনসিপি কী করছে
জামায়াত সূত্র জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর পদ দুই মেয়াদে সীমাবদ্ধ রাখার প্রস্তাবের সঙ্গে একমত জামায়াত। দ্বিকক্ষের বদলে বিদ্যমান পদ্ধতির সংসদ চায় দলটি। তবে জামায়াতের প্রস্তাব হবে, সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন হতে হবে। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ শিথিল করে আরও ১০ বছর বহাল রাখার পক্ষে জামায়াত। 
শেখ হাসিনার পতন ঘটানো ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতৃত্বের দল এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন সমকালকে বলেন, গণপরিষদে নতুন সংবিধান প্রণয়নের দাবিতেই রয়েছে। এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব বলেন, দলীয় নেতারা মতামত নিয়ে কাজ করছেন। আরও কয়েক দিন সময় লাগবে। 
মতামত জমা দেওয়া বাকি ১৩টি দল হলো– এলডিপি, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, জাকের পার্টি, ভাসানী অনুসারী পরিষদ, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম), আমজনতার দল, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, বাংলাদেশ জাসদ, লেবার পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, এবি পার্টি এবং নাগরিক ঐক্য। 


 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সংস্কারের মত এখনও জানায়নি বিএনপি জামায়াত এনসিপি
  • নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে আমরা চাই না
  • আমরা চাই না আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক
  • আমরা চাই না আওয়ামী লীগ নির্বাচনে আসুক
  • যাত্রীর চেয়ে ঠিকাদার কেন বেশি সুবিধাভোগী