Samakal:
2025-04-13@22:48:37 GMT

ঈদ ফ্যাশনে শাড়ি

Published: 18th, March 2025 GMT

ঈদ ফ্যাশনে শাড়ি

ঈদ-উৎসবে নারীর পোশাকের কথা এলে অপরিহার্যভাবে উঠে আসে শাড়ির কথা। শাড়ি শুধু পোশাক নয়, এটি সময়ের গায়ে লেখা এক গল্প– যেখানে ঐতিহ্য, ভালোবাসা আর আধুনিকতার ধ্রুপদি ছোঁয়া একসঙ্গে জড়ানো থাকে। 
সুতোয় বোনা আবেগ, আঁচলে জড়ানো ইতিহাস: একটা সময় ছিল, যখন ঈদের সকালে নতুন শাড়ি পরে আয়নার সামনে দাঁড়ানো মানেই ছিল নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করা। নানি-দাদিদের আলমারিতে তুলে রাখা মসলিন শাড়ির গল্প এখনও সময়ের স্রোতে ভাসে, কিন্তু আজকের ঈদ ফ্যাশনে সেই গল্পে নতুন নতুন অধ্যায় যোগ হয়েছে। সময় বদলেছে, ফ্যাশনও বদলেছে, তবু শাড়ির আবেদন ঠিক আগের মতোই থেকে গেছে।
চলতি ধারায় ঈদের শাড়িতে এসেছে কোমল পরিবর্তন। কাতান আর বেনারসির গর্জন ঠেলে উঠে এসেছে মসলিনের মায়া, সুতি-সিল্কের নরম ছোঁয়া। হাতের কাজ করা শাড়ির আবেদন নতুন করে ছুঁয়ে গেছে ট্রেন্ডের পাতা। 
রঙের খেলায় সময়ের প্রতিচ্ছবি: ঈদের সকালে প্যাস্টেল রঙের শাড়ি যেন শিশিরভেজা ফুলের পাপড়ি, সন্ধ্যার আয়োজনে মেটালিক বা গাঢ় রঙের শাড়ি মনে করিয়ে দেয় ধ্রুপদি গানের সুরেলা বাঁধন। এবার ঈদের ফ্যাশনে রঙের ক্যানভাসও বেশ বৈচিত্র্যময়। যেমন– হালকা ল্যাভেন্ডার, মিন্ট গ্রিন কিংবা সূর্যাস্তের কমলা, আরও রয়েছে মেহেদির সবুজ, গাঢ় নীল রং।
ড্রেপিংয়ে নতুন ভাষা, ব্লাউজে সাহসী সৃজনশীলতা: ফ্যাশন ডিজাইনারদের মতে, শাড়ি এক অনবদ্য শিল্প, যার ভাষা বদলেছে ড্রেপিংয়ের বৈচিত্র্যে। কেউ কোমরে বেল্ট জড়িয়ে শাড়িকে দিয়েছে আধুনিক শার্পনেস, কেউবা লম্বা জ্যাকেটের সঙ্গে মিশিয়ে তুলেছে এক ভিন্নতর অভিব্যক্তি। আর ব্লাউজ? সেটিও তো এখন শুধু ‘পরিধান’ নয়, বরং এক স্টাইল স্টেটমেন্ট! অফ-শোল্ডার, ব্যাকলেস, বাটারফ্লাই স্লিভ কিংবা মখমলের জমিনে সূক্ষ্ম সূচিকর্ম। কেউ কেউ আবার ক্রপ টপ, শার্ট, ফতুয়ার সঙ্গেও শাড়ি জড়িয়ে ফ্যাশনে এনেছে অনন্যতা। 
ঈদের শাড়িতে আত্মার ছোঁয়া: কেউ চাইছেন সাবেকি, কেউ চাইছেন একদম ইউনিক কিছু। তাই তো কাস্টম ডিজাইনের শাড়ি এখন নতুন ঢেউ তুলেছে। আঁচলে হাতে লেখা প্রিয় কবিতার লাইন, আঁকা মেঘ-বৃষ্টির জলছবি কিংবা রঙিন কাঁথার ছোঁয়া– এ যেন শাড়ির গায়ে লেখা একেকটি আত্মার গল্প। 
কোথায় পাবেন এবং কেমন দাম: আপনার পছন্দের শাড়ি কিনতে যেতে পারেন মিরপুর বেনারসিপল্লি, ধানমন্ডি হকার্স, আজিজ সুপারমার্কেট, নিউমার্কেট, চাঁদনী চক, উত্তরার রাজলক্ষ্মীসহ দেশের যে কোনো মার্কেটে। তাছাড়া বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ফিউচার পার্কসহ অন্যান্য শপিংমল তো আছেই। 
দেশি ফ্যাশন হাউসের পাশাপাশি অনলাইন শপগুলোতেও চলছে বাহারি শাড়ির মেলা। এগুলোর মধ্যে অন্যতম পটের বিবি, খাঁচা, খুঁত, ভার্সাটাইল লেডিস, শিথিলতা, একতাল, হরীতকী, স্বচ্ছক্রয়, কইন্যা ইত্যাদি। এ ছাড়াও আড়ং, কিউরিয়াস, অঞ্জন’স, দেশাল, বিবিয়ানা, দেশীদশ, মনেরেখ শাড়িজ, টাঙ্গাইল শাড়ি কুটিরসহ সারাদেশের বিভিন্ন শোরুমে মিলবে শাড়ির আধিপত্য। 
এবারের ঈদ উৎসব গরমের মধ্যে হবে বলে ফ্যাশন ডিজাইনাররা আবহাওয়া এবং শাড়িপ্রিয় নারীর আরামের কথা বিবেচনা করে সুতির শাড়িকেই বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন। দিনের বেলায় সুতি শাড়ি পরা যাবে আর সন্ধ্যার পরের প্রোগ্রামে দেখা মিলবে সিল্ক, জর্জেটের বাহার। সুতির ক্ষেত্রে সবার আগে প্রাধান্য পায় তাঁতের শাড়ির বৈচিত্র্য। যেমন হাতের কাজ, মেশিনের কাজ, কখনও স্ক্রিন বা ব্লক প্রিন্ট, কখনও হ্যান্ড পেইন্ট। এ ছাড়া ফ্লোরাল ও জিওমেট্রিক প্যাটার্নও দেখা যাবে শাড়ির জমিনে। 
ফ্যাশন ব্র‍্যান্ড ‘বিশ্বরঙ’-এর স্বত্বাধিকারী বিপ্লব সাহা জানান, এবার রোজার ঈদে দেশীয় ঐতিহ্য ও আভিজাত্যের ছোঁয়ায় আন্তর্জাতিক সংমিশ্রণে শাড়ির জমিনে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে নান্দনিক সব নকশা। 
তিনি বলেন, ‘দেশের আবহাওয়াকে প্রাধান্য দিয়ে শাড়ি তৈরিতে আরামদায়ক কাপড় যেমন সুতি, ধুপিয়ান সিল্ক, তসর সিল্ক, লিনেন, কাতান, জ্যাকার্ড কাপড় ব্যবহার করা হয়েছে। রঙের ব্যবহারেও কনট্রাস্ট কালারের পাশাপাশি ম্যাচিউরড টোনের পরিমিত ব্যবহার রয়েছে। শাড়িতে কাজের মাধ্যম হিসেবে চলছে– স্ক্রিন প্রিন্ট, ব্লক প্রিন্ট, ডিজিটাল প্রিন্ট, মেশিন এমব্রয়ডারি, কম্পিউটার এমব্রয়ডারি, হ্যান্ড এমব্রয়ডারি, কারচুপি, নকশিকাঁথা, জারদৌসিসহ মিশ্র মাধ্যমের বিভিন্ন কৌশল।’
দামের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘ক্রেতার সাধ ও সাধ্যের কথা চিন্তা করে বিশ্বরঙের শাড়ির দাম ১ হাজার টাকা থেকে শুরু হয়েছে।’
‘কে ক্র্যাফট’-এর কর্ণধার খালিদ মাহমুদ খান বলেন, ঈদকে সামনে রেখে এবারও কটন, সিল্ক, হাফ সিল্ক, অরগাঞ্জা, টাঙ্গাইল কটন, টাঙ্গাইল হাফ সিল্ক, কোটা কটন ফেব্রিকের প্রাধান্য থাকছে। শাড়ির আঁচল, পাড় ও জমিনে স্ক্রিন প্রিন্টের সঙ্গে এমব্রয়ডারি ও কারচুপির কাজ বেশ চলছে। আবার ভারী আঁচল এবং পাড়ে প্রিন্ট ও এমব্রয়ডারির কাজ করা শাড়িও দেবে পার্টি লুক। 
মোটিফের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘মোগল আর্ট, ফ্লোরাল, জামদানি, কাঁথা স্টিচ, ট্র্যাডিশনাল, ট্রাইবাল, ইক্কত, পেইসলে, জিওমেট্রিক, ইজিপশিয়ান, টার্কিশসহ মিক্সড মোটিফের উপস্থাপনা ও নানা মিডিয়ার ব্যবহারে থাকবে নিপুণতা। রঙের বাহারিতে মেরুন, ম্যাজেন্টা, পার্পেল, রিগ্যাল পার্পেল, ল্যাভেন্ডার, নেভি, স্কাই, হোয়াইট, পার্ল হোয়াইট, কফি, বার্গান্ডি, কোরা, জাভা গ্রিন, টারকুইশ ছাড়াও আরও অন্যান্য শেড নিয়ে ডিজাইন করা বর্ণিল শাড়ি রয়েছে।’
তিনি জানান, তাদের তাঁতের শাড়ি পাওয়া যাবে ১ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে আর অন্যান্য শাড়ির দাম রাখা হয়েছে ২ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা।
অনলাইন পেজ ‘শিথিলতা’র স্বত্বাধিকারী দেওয়ান মণি বলেন, ‘এবার ঈদে এমব্রয়ডারির কাজে মসলিন শাড়িতে বেশ সাড়া পাচ্ছি। এক রঙা মসলিন শাড়িতে ফুলেল নকশার পাশাপাশি ডিজিটাল প্রিন্টের নকশাও চলছে বেশ। আমাদের দেশীয় ফ্যাশনে টাঙ্গাইল তাঁতিদের বুননে সুতি শাড়ি আর ব্লকের নকশার শাড়ি বরাবরই জনপ্রিয়। গত বছর থেকে মসলিন এবং অরগাঞ্জা ফেব্রিকের চাহিদা বেড়েছে। মসলিন আর অরগাঞ্জায় ফুলেল নকশা দারুণ ফুটে উঠে বলে ক্রেতারা এই শাড়িতে আকৃষ্ট হচ্ছেন বেশি। 
শাড়ির দামের ব্যাপারে মণি জানান, ‘শিথিলতায় সবসময় স্টুডেন্ট বাজেটের শাড়ি থাকে। 
এ ছাড়াও অন্যান্য শাড়ির দাম ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে রাখা হয় ।’
‘ভার্সাটাইল লেডিস’ নামের অনলাইন পেজের কর্ণধার প্রমি চাকমা জানান, ‘ঈদে তুলনামূলক সিল্ক কিংবা গর্জিয়াস শাড়ির চেয়ে সুতির চাহিদা বেশি। ক্রেতার কাছ থেকে দেশীয় মণিপুরি, জামদানি আর মিডবাজেটের কটন হ্যান্ডলুম বেগমপুরি, ধনেখালী, সম্বলপুরি শাড়ির বেশ সাড়া পাচ্ছেন। 
তিনি আরও জানান, শপিংয়ের ক্ষেত্রে ক্রেতা মিডবাজেটকে প্রাধান্য দিচ্ছেন খুব আর কালারের ক্ষেত্রে মভ লাইট টাইপ সুদিং কালারের সঙ্গে হলুদ, কমলার ডিমান্ড বেশি।
‘একতাল’ পেজের স্বত্বাধিকারী তনুশ্রী দেবের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়– ঈদে দেশি, ইন্ডিয়ান, এক্সক্লুসিভ সিল্ক, সুতি শাড়িসহ সব ধরনের শাড়িই চলছে। তবে ক্রেতার কাছে সুতি শাড়ির চাহিদা বরাবরই বেশি। ঈদ যেহেতু উৎসবমুখর একটা আমেজ নিয়ে আসে, তাই শাড়ির কালারের ক্ষেত্রেও কালারফুল শাড়িই বেশির ভাগ মানুষের পছন্দে থাকছে। ‘একতাল’ পেজে শাড়ির দাম ৬০০ থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত রয়েছে। v

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অন য ন য শ ব যবহ র ড জ ইন মসল ন

এছাড়াও পড়ুন:

চাল না পেয়ে জেলেদের ইউপি পরিষদ ঘেরাও

বাঁশখালীর সরল ইউনিয়নে জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত চাল না পেয়ে বিক্ষোভ করেছেন কয়েকশ জেলে। রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার জালিয়াঘাটাস্থ সরল ইউপি কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন জেলেরা। বিক্ষোভের এক পর্যায়ে ওই ইউপি কার্যালয় ঘেরাও করেন তারা। এ সময় বিক্ষুব্ধ জেলেরা সরল ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রোকসানা আক্তারের অপসারণ ও বিচার দাবি করেন।

জানা গেছে, ওই ইউনিয়নে ৬৯১ জন জেলের জন্য মাসে ৪০ কেজি করে দুই মাসের জন্য ৮০ কেজি করে ৩৩ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রোকসানা আক্তার ২৬ টন চাল উত্তোলন করে বাকি চাল আত্মসাৎ করেছেন বলে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন নুরুল ইসলাম নামের এক জেলে। রোববার জেলেদের চাল বিতরণের নির্ধারিত তারিখ ছিল। পূর্ব নির্ধারিত সময়ে কয়েকশ জেলে পরিষদে চাল নিতে গেলে তাদের ফেরত দেওয়া হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন তারা।

জেলে নুরুল ইসলাম জানান, জেলেদের জন্য মাসে ৪০ কেজি করে ৮০ কেজি চাল বরাদ্দ হলেও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান একবার ৩২ কেজি চাল দিয়ে বাকি চাল আত্মসাৎ করেন। এর মধ্যে অনেক জেলে সেই ৩২ কেজিও পাননি। চাল না পেয়ে তিনি জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

সরল ইউনিয়নের জেলে মনির উদ্দিন, মোহাম্মদ তৈয়ব, বাবুল দাশ, আবদুল আজিজ, মোহাম্মদ হাসানের ভাষ্য, মাসে ৪০ কেজি করে চাল দেওয়ার কথা থাকলেও কাউকে কাউকে ২৮ কেজি ও ৩২ কেজি চাল দেন। অধিকাংশ জেলেকে চাল না দিয়ে ফেরত দেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, এর আগে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গরিবের জন্য বরাদ্দ করা ভিজিএফের চাল অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছিলেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, সরল ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রোকসানা আক্তারকে অনিয়ম দুর্নীতিতে সহযোগিতা করছেন সরল থেকে বদলি করা ইউপি সচিব হারুন। কিছু দিন অরুণ জয় ধর নামে শীলকূপ ইউনিয়নের সচিবকে সরল ইউনিয়নের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হলেও বর্তমানে রহিম উল্লাহ নামে একজনকে নতুন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এত কিছুর পরও পাসওয়ার্ডসহ পুরো নিয়ন্ত্রণ হারুনের হাতে। সরলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিজেকে সরকারের একজন সচিবের চাচি বলেও পরিচয় দিচ্ছেন।

অভিযোগ প্রসঙ্গে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রোকসানা আক্তার জানান, জেলেদের জন্য তিনি ২৮ কেজি করে চাল বরাদ্দ পেয়েছেন। তিনি ৩৮ কেজি করে দিয়েছেন। যেসব জেলে এখনও চাল পাননি, তারাও চাল পাবে। সেলিম নামে একজন ইউপি সদস্য লোকজনকে উস্কে দিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে বলে দাবি করেন তিনি।
বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জামশেদুল আলম জানান, সরল ইউনিয়নে জেলেদের চাল বিতরণে অনিয়মের বিষয়টি শুনেছি। এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ