Samakal:
2025-04-13@22:34:37 GMT

ছেলেদের ঈদ পোশাক

Published: 18th, March 2025 GMT

ছেলেদের ঈদ পোশাক

ছেলেদের ঈদ মানেই সারাদিন কেবল এক পাঞ্জাবি– এই গতানুগতিক চিন্তা কিন্তু এখন আর নেই। তবে ঈদের সকালটা জুড়ে থাকে পাঞ্জাবির আধিপত্য। বাকি দিন চলে টি শার্ট, পলো বা রেগুলার শার্ট পরেই।
চলতি ঈদ কালেকশনে টি-শার্টে দেখা যাচ্ছে ওভারসাইজড ফিট ও গ্রাফিক প্রিন্টের আধিপত্য। আড়ং ও ইয়েলোর কালেকশনেই মিলছে নেকলাইন ডিটেইল ও জিওমেট্রিক প্যাটার্নের ছোঁয়া। লিনেন ও কটন ব্লেন্ড ফেব্রিকের কারণে গরমের সময়েও এই পোশাকগুলো পরে স্বস্তি পাওয়া যাবে। রঙের দিক থেকেও এবার রয়েছে বেশ বৈচিত্র্য– হালকা নীল, সাদা, অলিভ গ্রিনের পাশাপাশি থাকছে বোল্ড নিওন শেড। দাম শুরু হচ্ছে মাত্র ৫০০ টাকা থেকে আর ব্র্যান্ডেড টি-শার্টের রেঞ্জ ১ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। 
পলো শার্টের ক্ষেত্রেও এবার এসেছে বেশ আরামদায়ক ও মার্জিত রূপ। কে ক্র্যাফট ও রিচম্যান এনেছে মিনিমাল ডিজাইন ও সাবটেল স্ট্রাইপের মেলবন্ধন। তরুণদের পছন্দের তালিকায় উঠে এসেছে প্যাস্টেল টোন, মিন্ট গ্রিন, ল্যাভেন্ডার ও স্যান্ড বেজ। ফেব্রিক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে মোইস্টার-উইকিং কটন ও পলিয়েস্টার ব্লেন্ড, যা এই চৈত্রের গরমেও ঘাম শোষণে সহায়ক। দাম ৮০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে। 
রেগুলার শার্টে চেকার্ড, ফ্লোরাল ও স্ট্রাইপড ডিজাইনে রয়েছে আধুনিক লুক। অঞ্জন’স ও দর্জি বাড়ি এনেছে ডুয়াল-টোন শার্ট, যেখানে কলার ও কাফে রয়েছে কনট্রাস্টিং রঙের ব্যবহার। কটন-সিল্ক ও লিনেন-রেয়ন ফেব্রিকের কারণে শার্টগুলোয় যুক্ত হয়েছে লাকজারি ফিল। রঙের দিক থেকে আর্থি টোন যেমন টেরাকোটা ও ম্যাট ব্লু, আবার ক্ল্যাসিক হোয়াইট-ব্ল্যাক কম্বিনেশনও জনপ্রিয়। দাম ব্র্যান্ডেড শার্টের ক্ষেত্রে ১ হাজার ২০০ থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকা আর স্থানীয় বাজারে ৪০০ থেকে ১ হাজার টাকার মধ্যেই মিলছে মানসম্মত বিকল্প। 
প্রতিটি ফ্যাশন হাউস ঈদ আয়োজনে সেজেছে ভিন্নভাবে। আড়ংয়ের ‘আরবান ঈদ’ কালেকশনে রয়েছে হ্যান্ড-এমব্রয়ডারি টি-শার্ট ও লিনেন শার্ট। কে ক্র্যাফট নজর দিয়েছে টেক্সচার্ড ফেব্রিক ও মেটালিক বাটন ডিটেইলে। ইয়েলোর কালেকশনে দেখা যাচ্ছে চেস্ট পকেট ও টোন অন টোন প্রিন্ট। সাশ্রয়ী দামের ট্রেন্ডি কালেকশন এনেছে টেক্সমার্ট ও বি-টেক। দাম ৮০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকার মধ্যে। 
দেশের অন্যতম ফ্যাশন ও লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড ‘লা রিভ’। এবারের ঈদে পুরুষের পোশাকে ‘মুভমেন্ট’ থিমে নতুন কালেকশন উন্মোচন করেছে। এ ব্যাপারে লা রিভের ডিজাইন ও ক্রিয়েটিভ ম্যানেজার মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ঈদ মানেই সংযোগের আনন্দ– এই অনুভূতিকে রং, কাপড় ও নকশায় রূপ দেওয়াই ছিল আমাদের মূল লক্ষ্য। মুভমেন্ট থিমের মাধ্যমে আমরা নতুন কিছু আনতে চেয়েছি, যা পরিধানকারীর মনে স্বাধীনতা ও আত্মপ্রকাশের বার্তা দেয়।’ 
এ বছর পুরুষদের ঈদ ট্রেন্ডে গুরুত্ব পেয়েছে আর্থি টোন্স, অর্গানিক রং এবং সফট প্যাস্টেল টোনস। এ ছাড়া লাল, নীল, কালো, অরেঞ্জ, টেরাকোটা এবং স্বর্ণালি রংও এই বছর ঈদ ফ্যাশনে বিশেষভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। 
লা রিভে পুরুষদের জন্য থাকছে নতুন ডিজাইনের শার্ট, পলো, টি-শার্ট, ডেনিম, চিনো ও প্যান্ট-পায়জামা। কিশোরদের জন্য রয়েছে বয়স উপযোগী উৎসবের পোশাক। 
সব বয়সীর জন্য ট্রেন্ডি ফ্যাশন 
বিক্রেতারা জানান, এবারের ঈদে সদ্য তরুণরা চাচ্ছেন একটু ফ্রেশ, কনফিডেন্ট আর বোল্ড লুক। ওভারসাইজ টি-শার্ট, গ্রাফিক প্রিন্ট আর প্যাস্টেল বা নিওন রঙের পলো শার্ট তাদের প্রথম পছন্দ। হালকা ফেব্রিক ও স্মার্ট কাটে তারা এবার আরও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন। মধ্যবয়সী পুরুষ পছন্দ করছেন একটু মার্জিত অথচ আধুনিক লুক– সলিড কালার, মিনিমাল ডিজাইন আর আরামদায়ক টেক্সচারের রেগুলার শার্ট। আবার বয়স্কদের জন্য রয়েছে– ক্ল্যাসিক কটন শার্ট, আর্থি শেড আর লুজ কাটের শার্ট; যা আরাম ও সৌন্দর্য একসঙ্গে ধরে রাখে। 
এ বছর ঈদ ট্রেন্ড নিয়ে ফ্যাশন ডিজাইনার হোসাইন ইমন জানান, হালকা জিএসএমের ঢিলেঢালা পলো এখন ট্রেন্ডি। এই ট্রেন্ড আগামী দু’তিন বছর এভাবেই চলবে। আগে মানুষ টাইট পলো পরত; এখন একটু রিলাক্স ফিট চলছে। লাইট কালার, ডেনিম কলার বা স্লিভের ভ্যারিয়েশন জনপ্রিয় হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, টি-শার্টেও সলিড বেইজের ওপর সামনে ছোট লেখা বা লোগো আর পেছনে বড় প্রিন্ট বা সিনারি জেন জি ও জেন আলফাদের জন্য বেশ ট্রেন্ডি। v

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: দ র জন য ক ল কশন ড জ ইন

এছাড়াও পড়ুন:

সাহিত্যে রন্ধনশিল্পের প্রভাব

মুসলিম সভ্যতায় খাওয়ার সংস্কৃতি কথা তখনকার সাহিত্যকে প্রভাবিত করেছে। সাহিত্যিকদের অনেকে রান্নার স্বাদ, রস ও প্রকার বিভিন্ন উপমায় বর্ণনা করেছেন। অনেকে ভোজনশালার পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেছেন চটুল ও রহস্যময় বর্ণনায়। কেউ কেউ বুদ্ধিবৃত্তিক সমালোচনাও করেছেন। তাঁদের বইয়ে রান্নার সঠিক নিয়ম কী হওয়া উচিত এবং সুস্বাদু খাবারের পূর্বশর্ত কী, তা অনুসন্ধান করেছেন। আবু বাকার আল-রাযির (৩১১ হিজরি, ৯২৩ খ্রিষ্টাব্দ) মুনাফি আল-গিজা ওয়াদাফিউল আযমারাহ এ বিষয়ে একটি অনন্য গ্রন্থ।

বাগদাদি লেখক ‘মিসাল বাগদাদ’ বাগদাদের রন্ধনশিল্পের বিশালতা কাব্যিক ঢঙে বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘যেখানে কালো সিসা রুটির ওপর ছড়িয়ে দেওয়া ছিল, সেটি দেখলে মনে হতো যেন পূর্ণ চাঁদ, এবং তার স্বাদ এত মিষ্টি ছিল যেন এক গ্রাসে খেয়ে ফেলা যেত।’

ইবন তাইফুর মারভেজি (২৮০ হিজরি, ৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দ) তাঁর কিতাব বাগদাদ গ্রন্থে মাওমুন নামে এক বাগদাদি বিশেষজ্ঞের বাড়িতে খাবারের সময়ে উপস্থিত ছিলেন। তিনি সেখানে কী কী দেখেছেন, তার সরস বর্ণনা দিয়েছেন। সে সময় মাওমুনের অতিথিশালায় প্রায় তিন শ ধরনের খাবার পরিবেশন করা হয় এবং মাওমুন প্রতিটি খাবারের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে বোঝান।

আরও পড়ুনমন্দ প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণের উপায়০৬ এপ্রিল ২০২৫

বাদশাদের মতো অনেক মন্ত্রীদেরও খাবারের প্রতি আগ্রহ ছিল গভীর। জাহাজি (২১৬ হিজরি, ৮৩১ খ্রিষ্টাব্দ) একটি উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন, পারস্যের গভর্নর আমর ইবন লাইস তার ব্যক্তিগত রন্ধনশালায় সাড়ে ছয় শ উট ব্যবহার করতেন। এগুলো ছিল মন্ত্রীর প্রাসাদে খাবার প্রস্তুত করার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানের বিশাল নির্দেশ।

এ ছাড়া বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতিতে খাবার প্রতিযোগিতার কথাও শোনা যায়। এই ধরনের প্রতিযোগিতা কেবল যে খাবার প্রস্তুতির জন্য ছিল তা নয়, এটি ছিল একটি আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক ধারণা ছিল, যেখানে রান্নার শৈলী ও খাবারের বৈচিত্র্য চিহ্নিত করার উদ্যোগ নেওয়া হতো।

কঠোর নজরদারি ও মান নিয়ন্ত্রণ

ইসলামি সভ্যতায় রেস্তোরাঁয় ও খাদ্য উৎপাদনে কঠোর নজরদারি চালানো হতো। খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধ, তৈরির পাত্রের পরিচ্ছন্নতা, রাঁধুনির ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য, উপকরণের বিশুদ্ধতা—এসব ছিল বাধ্যতামূলক।

আলাদা চুলা: আলাদা খাবারের জন্য আলাদা চুলা বরাদ্দ থাকত। যেমন যেখানে মাছ ভাজা হয়, সেখানে রুটি বানানো নিষেধ ছিল। তেল বারবার ব্যবহার করাও নিষিদ্ধ ছিল।

অপ্রাপ্তবয়স্ক সরবরাহকারী: একটি মজার তথ্য হলো—যেসব রুটি বিক্রেতা ‘সরবরাহকারী’ রাখত, তাদের বলা হতো অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেদেরই নিয়োগ দিতে, যাতে তারা গৃহস্থালির নারীদের সামনে যাওয়া হলেও কোনো সামাজিক অস্বস্তি না হয়।

আরও পড়ুনসুরা সাফে মন্দ আচরণ নিয়ে আল্লাহর বক্তব্য৩১ জুলাই ২০২৩

ওজনে কারচুপি: তখন বেশির ভাগ খাবার বিক্রি হতো ওজনে। তাই ওজনে কারচুপি ঠেকাতে ‘মুহতাসিব’ বা বাজার তদারকি কর্মকর্তারা নজরদারি করতেন। যেমন, মাংস রান্নার আগে-পরে ওজন করে দেখা হতো, যেন অতিরিক্ত শুকিয়ে না যায় বা ভেতরে লোহা জাতীয় কিছু ঢুকিয়ে ওজন না বাড়ানো হয়।

ভেজাল-নিরোধ: বিভিন্ন ভেজালের কৌশলও ধরা পড়েছে। কেউ কেউ কিমার ভেতরে ভুঁড়ি, পেঁয়াজ ও বুটলতাও ঢুকিয়ে দিত। কেউবা সমুচার ভেতরে মাছ ও মসলা দিয়ে মাংসের বিকল্প বানাত। এগুলো ধরা হতো ভাজনের আগেই কেটে দেখে।

রসায়ন ব্যবহার: এক ধরনের খাদ্যভিত্তিক ‘রাসায়নিক ভেজাল’ও ছিল। রঙিন মাংস বানানো হতো আসল মাংস ছাড়াই। কলিজা, ডিম, এমনকি মধু বা চিনি ছাড়া মিষ্টিও তৈরি হতো। একজন প্রাচীন চিকিৎসক—ইবন আল-কিন্দি—এমন প্রযুক্তির উল্লেখ করেন তাঁর কেমিস্ট্রি অব কুকিং বইতে। তবে এসব গোপন রাখা হতো, যাতে কেউ শিখে অনৈতিকভাবে না ব্যবহার করে।

ফাতেমি যুগে নারী রাঁধুনিরাও (দাসী) ছিলেন বিশিষ্ট। কেউ কেউ ৮০ রকম ভাজাভুজি বানাতে পারতেন। এমন দক্ষতা দেখে এক তুর্কি রাজা তাঁর রাঁধুনিদের কায়রোতে পাঠিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন।

আরও পড়ুনশয়তানের মন্দ প্ররোচনা থেকে বাঁচার দোয়া২৭ এপ্রিল ২০২৩

আধুনিক রান্নার আগমনী

বিখ্যাত ‘বিফ বোর্গুইনিয়ন’ ফরাসি রান্না, যা ধীরে ধীরে রান্না করা হয়, সেটি ৭০০ বছর আগেই আরব অঞ্চলে প্রচলিত ছিল ‘স্কবাজ’ নামে। এতে মাংস, মসলা, খেজুরের রস ও জাফরান দিয়ে ট্যানুরে সারা রাত রান্না হতো।

রমজান উপলক্ষে নানা খাবার, যেমন: কাতায়েফ, হরিরা, কুসকুস, সামোসা, লুকাইমাত (লালমোহন জাতীয় মিষ্টি) ও সোবিয়া (একধরনের মিষ্টি পানীয়)—এই সব খাবার বহু শতাব্দী ধরে প্রচলিত।

আন্দালুসীয়রা খাবার একসঙ্গে পরিবেশন করতেন না। একে একে পরিবেশন করতেন—প্রথমে ডাল, তারপর মিষ্টি, মাঝে মাঝে আচার, সবশেষে পুনরায় মিষ্টি। এ রেওয়াজ এখনো মরক্কোসহ কিছু অঞ্চলে প্রচলিত।

ইরাকের সংগীতজ্ঞ জেরিয়াব শুধু সুর নয়, খাবারের রুচিতেও বিপ্লব এনেছিলেন আন্দালুসিয়ায়। তিনি খাবারের পরিবেশনা, থালার সাজসজ্জা, গ্লাসের ব্যবহার (সোনা-রুপার বদলে কাচের), ও চামচ-কাঁটা ছুরি ব্যবহারে সৌন্দর্যবোধের পরিচয় দেন। তাঁর কৌশল পরবর্তীতে ইউরোপেও ছড়িয়ে পড়ে।

খাদ্য শুধু পেট ভরানোর বিষয় নয়, বরং তা সংস্কৃতি, স্বাস্থ্য, সৌন্দর্য ও নৈতিকতারও বহিঃপ্রকাশ। ইসলামি সভ্যতার রন্ধনশৈলী আমাদের শিখিয়ে দেয়—ভালো খাবার মানে বিশুদ্ধতা, রুচিশীলতা এবং সামাজিক সচেতনতার এক অনন্য মিশেল।

আলজাজিরা ডট নেট অবলম্বনে

আরও পড়ুনঅহংকারের পরিণতি মন্দ২৬ মার্চ ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ