জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলা বন্ধে পুতিনের সম্মতি
Published: 18th, March 2025 GMT
জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলা বন্ধে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেড় ঘণ্টার ফোনালাপে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ বিষয়ে আলোচনা হয়। বাংলাদেশ সময় রাত আটটায় শুরু হয় এ ফোনালাপ। এরপর ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে ফোনালাপ বিষয়ে তথ্য প্রকাশ করা হয়। বলা হয়, জ্বালানি অবকাঠামোতে রাশিয়া ও ইউক্রেন আগামী ৩০ দিন হামলা বন্ধ রাখবে—এমন প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন পুতিন।
ক্রেমলিনের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, পুতিন তাৎক্ষণিকভাবে রুশ সামরিক বাহিনীকে সংশ্লিষ্ট আদেশ দিয়েছেন।
এ ছাড়া কৃষ্ণসাগরে নিরাপদে চলাচল করার প্রস্তাবে পুতিন গঠনমূলকভাবে সাড়া দিয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এ ধরনের চুক্তির সুনির্দিষ্ট বিবরণ আরও বিশদভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য আলোচনা শুরু করার বিষয়ে সম্মত হয়েছে মস্কো।
পুতিনের পক্ষ থেকে ট্রাম্পকে বলা হয়েছে, ১৯ মার্চ (আজ) রাশিয়া ও ইউক্রেন ১৭৫ বন্দী বিনিময় করবে। এ ছাড়া রাশিয়ার পক্ষ থেকে ১৩ জন মারাত্মক আহত ইউক্রেনীয় সেনাকে হস্তান্তর করা হবে।
পুতিন আরও বলেছেন, সংঘাতের তীব্রতা রোধ ও রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক উপায়ে এর সমাধানের মূল শর্ত হলো বিদেশি সামরিক সাহায্য ও কিয়েভকে গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করা সম্পূর্ণ বন্ধ করা।
হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে বিবৃতিতে বলা হয়, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করে শান্তি এবং যুদ্ধবিরতির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কথা বলেছেন ট্রাম্প ও পুতিন। এ সংঘাতের অবসান একটি স্থায়ী শান্তির মাধ্যমে হওয়া উচিত বলে উভয় নেতাই একমত হয়েছেন।
হোয়াইট হাউস আরও জানিয়েছে, জ্বালানি ও অবকাঠামোগত যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে শান্তিপ্রক্রিয়া শুরু হবে বলে দুই নেতা একমত হয়েছেন। এ ছাড়া কৃষ্ণসাগরে সামুদ্রিক যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন, পূর্ণ যুদ্ধবিরতি ও স্থায়ী শান্তির বিষয়ে কারিগরি আলোচনা শুরুর ব্যাপারে তাঁরা মত দিয়েছেন। এসব আলোচনা মধ্যপ্রাচ্যে শিগগিরই শুরু হবে।
আরও পড়ুনট্রাম্প-পুতিন ফোনালাপ : দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার ও যুদ্ধবিরতির ওপর গুরুত্ব দেবেন দুই নেতা৪ ঘণ্টা আগেহোয়াইট হাউস আরও জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নতিতে ভবিষ্যতের বিরাট লাভ রয়েছে বলে দুই নেতা একমত হয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে বিশাল অর্থনৈতিক চুক্তি ও শান্তি অর্জনের পর ভূরাজনৈতিক স্থিতিশীলতার মতো বিষয়।
পুতিন ও ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্য, কৌশলগত অস্ত্রের বিস্তার বন্ধ করার প্রয়োজনীয়তা এবং ইরান নিয়েও আলোচনা করেছেন।
গত জানুয়ারি মাসে ট্রাম্পের ক্ষমতায় আসার পর পুতিনের সঙ্গে এটি তাঁর দ্বিতীয় ফোনালাপ। গত নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারের সময় ট্রাম্প দ্রুত ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এর ধারাবাহিকতায় সৌদি আরবে ইউক্রেনকে ছাড়াই রুশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ওয়াশিংটনের কর্মকর্তারা বৈঠক করেন। পরে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের বাগ্বিতণ্ডা হয়। এর পর থেকে ইউক্রেনকে সামরিক ও গোয়েন্দা সহযোগিতা বন্ধ করে ওয়াশিংটন। এরপর সৌদি আরবে মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কিয়েভের বৈঠকের পর ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব সামনে আসে। কিয়েভ এতে তাদের সম্মতি জানায়। তবে পুতিন বলেন, যুদ্ধবিরিতর প্রস্তাবটিতে তিনি রাজি থাকলেও এতে গুরুতর অনেক প্রশ্ন রয়েছে। তিনি ট্রাম্পের কথা বলার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে গতকালের ফোনালাপ।
ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে শুরু থেকেই ফোনালাপে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারের বিষয়টির কথা বলা হয়। একই সঙ্গে ইউক্রেন নিয়ে আলোচনার কথা বলা হয়। ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে বলা হয়, ইউক্রেন সংঘাত নিরসন এবং রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়ে আলোচনা করবেন দুই নেতা।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ‘১২ ফেব্রুয়ারি দুই নেতার মধ্যে ফোনালাপে নির্দিষ্ট কিছু বোঝাপড়া আগেই হয়। কিন্তু আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও স্বাভাবিকীকরণ এবং ইউক্রেন বিষয়ে একটি মীমাংসা নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। দুই প্রেসিডেন্ট এসব নিয়ে আলোচনা করবেন।’
আরও পড়ুনট্রাম্প ও পুতিনের দেড় ঘণ্টার ফোনালাপ২ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনপুতিনের সঙ্গে ফোনালাপের আগে ট্রাম্প বললেন, ‘অনেক বিষয়ে’ আমরা একমত হয়েছি১৫ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
‘ফেসবুক গল্পের’ উৎস খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে এল আসল ঘটনা
রাজশাহীর বাঘায় ট্রেনের নিচে পড়ে এক পেঁয়াজচাষি ‘আত্মহত্যা’ করেছেন, এমন একটি ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘হৃদয়বিদারক গল্প’ ছড়িয়ে পড়ে। যাঁরা এটি ফেসবুকে প্রকাশ করেছেন, তাঁদের সবাই ‘মূল গল্পটা’ একই রেখেছেন, শুধু ভিন্ন ভিন্ন ভূমিকা যুক্ত করে দিয়েছেন।
ফেসবুকের পোস্টে লেখা ছিল, ওই বৃদ্ধের স্ত্রী আট মাস আগে মারা গেছেন। দুই মেয়ে তাঁদের বাড়িতে কিছুদিন রেখে বের করে দিয়েছেন। দুই ছেলেও বাবার জিনিসপত্র ফেলে দিয়েছেন। গত মঙ্গলবার রাতে ফেসবুকে এ ঘটনা পড়তে পড়তে মাথার মধ্যে একটা প্রশ্ন জাগে, একটি পরিবারের সবাই কি প্রায় ৭০ বছর বয়সী একজন মানুষকে এভাবে ত্যাগ করতে পারেন?
ফেসবুকে ঘটনাটি পড়ে সবাই বৃদ্ধের সন্তানদের তীব্র ভাষায় আক্রমণ করে কমেন্ট করছিলেন। আমার স্ত্রী দুলারী খাতুনও ঘটনাটি পড়তে পড়তে খুব ‘আহা, আহা’ করছিলেন। কিন্তু আমার এমন মনে হচ্ছিল না। মনে আসে, কেউ ফেসবুকে ভিউ বাড়ানোর জন্য কাজটা করেনি তো? সিদ্ধান্ত নিলাম, সকালে উঠে ওই বৃদ্ধের বাড়িতে যাব।
এরপর ঘটনাস্থলে গেলাম। একটি শোকাহত পরিবারের সঙ্গে কথা বলার জন্য স্থানীয় পরিচিত কাউকে পেলে সুবিধা হয়। এ জন্য স্থানীয় সাংবাদিক আমার ঘনিষ্ঠ গোলাম তোফাজ্জল কবিরকে ডেকে নিলাম। মৃত ওই বৃদ্ধের নাম মীর রুহুল আমিন। তাঁর ভাতিজা মোফাক্কর হোসেনের সঙ্গে গোলাম তোফাজ্জলের ঘনিষ্ঠতা আছে। তিনি একটি জানাজায় ছিলেন। একটু সময় নিলেন। দুপুর গড়িয়ে গেল। দুজন বাঘা উপজেলার মাঝপাড়ার বাউসায় তাঁদের বাড়িতে যাই।
আরও পড়ুননেটিজেনরা ‘ধুয়ে দিচ্ছে’ পরিবারকে, বাস্তবতা ভিন্ন২০ ঘণ্টা আগেবাড়িতে গিয়ে পঞ্চাশোর্ধ এক নারীকে পাই। পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যাওয়া মীর রুহুল আমিনের স্ত্রী। অথচ ফেসবুকে লেখা হয়েছে, তাঁর স্ত্রী আট মাস আগে মারা গেছেন। এরপর তাঁর কাছে জানতে চাইলাম, ছেলে-মেয়ে কয়জন? মরিয়ম বেগম বললেন, তাঁর এক ছেলে ও এক মেয়ে। ২০-২২ বছর আগে মেয়ের বিয়ে হয়েছে ঈশ্বরদীতে, সেখানেই থাকেন। আর তাঁর ছেলে ঢাকায় একটি চাকরি করেন। সেখানে তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন। বাড়িতে তাঁরা স্বামী-স্ত্রী দুজন থাকতেন।
এরপর আর বুঝতে বাকি থাকে না যে দুই সন্তানের জিনিসপত্র ফেলে দেওয়া, দরজা বন্ধ করে বাবাকে বাইরে রাখা, চলে যেতে বলা—ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ঘটনাগুলোর সত্যতা নেই।
মরিয়ম বেগম বলেন, তাঁদের কোনো অশান্তি নেই। ঘটনার দিন ডাক্তার দেখানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছেন। সকালে খেয়ে গেছেন। বেলা তিনটার আগে-পরে তাঁর সঙ্গে দুবার ফোনে কথা হয়েছে।
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার মাঝপাড়া বাউসা গ্রামে মীর রুহুল আমিনের বাড়ি