Samakal:
2025-03-18@22:47:36 GMT

রিলস সংস্কৃতি

Published: 18th, March 2025 GMT

রিলস সংস্কৃতি

সন্তানের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার নিয়ে অধিকাংশ অভিভাবক আজ চিন্তিত। সেখান কুরুচিপূর্ণ রিলস প্রদর্শিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই এগুলো দেখছে। গত ১১ মার্চ সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদন বলছে, ‘বিষণ্নতা ও মাদকের গ্রাস, পর্নোতে ঝুঁকছে কিশোর-কিশোরী’। সেখানে এমন ভয়াবহ তথ্যই উঠে এসেছে। 

‘রিলস’ বা সংক্ষিপ্ত সময়ের ভিডিও, যার ব্যাপ্তি থাকে ১৫ থেকে ২০ সেকেন্ড। এতে ধারণ করা যায় ইচ্ছামতো অনেক কিছু। এই রিলস এমন সব মনোরঞ্জনের কেচ্ছা, যার মূল শর্তই হলো তাকে সস্তা ও চটুল হতে হবে। দৈনন্দিন জীবনের রান্না, খাওয়া, হাসি-ঠাট্টা, ওঠাবসা সবকিছুই যেন রিলসে অনায়াসে মেলে। এই রিলসগুলো যেন মানুষকে বলে যায়, আপনার নাচ-গান, অভিনয়ের প্রতিভা নেই তো কী হয়েছে? তাতে কিছুই আসে যায় না। কেননা, গোটা ইউটিউব, ফেসবুক অপেক্ষা করছে আপনার জন্য। সুতরাং মনের মতো যা ইচ্ছা তা নিয়ে এসব সংক্ষিপ্ত ভিডিও বানান এবং সেখানে ছেড়ে দিন। মুহূর্তে কত লাইক, শেয়ারে ভেসে যাবেন, কল্পনাও করতে পারবেন না। এসব রিলসের মূল বিষয় হলো, এখানে ব্যক্তিগত বলে কিছু চলবে না। রিলস তাই নেহাত টাইম পাস, সস্তা, রুচিহীন উদ্ভট প্রদর্শনী, দিন দিন যার প্রতি আসক্ত হয়ে উঠছে অনেকেই।

স্নানঘর কিংবা শয্যাকক্ষ থেকে বেরিয়ে আসছে ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি। অশ্লীল রিলস তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার এক রমরমা ব্যবসা, যা সারা পৃথিবীতে চলছে। কেননা, ধর্ষকামী এক প্রকারের চোখ প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে সমাজে সোশ্যাল মিডিয়ারই কল্যাণে। সমাজে ধর্ষণ, যৌন হয়রানি মহামারির মতো ছড়িয়ে যাওয়ার পেছনে এসবের মদদ রয়েছে। কেননা, তা মানুষকে ক্রমশ মানসিকভাবে অসুস্থ ও বিকৃত মনের করে তুলছে। এসব রিলসে নারী শরীরকে করে তোলা হয় সর্বাপেক্ষা সুলভ পণ্য, যা ব্যবহার করে সহজে অনেক মুনাফা করা যায়। 
সামাজিক মাধ্যমের এসব সস্তা, রুচিহীন কদর্য রিলসের প্রচার বন্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, যা কিনা মানুষকে দিন দিন বিকারগ্রস্ত ও নির্লজ্জ করে তুলছে। কোমলমতী শিশু-কিশোর এসব রিলসে আসক্ত হয়ে উঠছে। ভালো-মন্দ বিবেচনার নৈতিক মূল্যবোধ এ বয়সে তেমন গড়ে ওঠে না। ফলে তারা সহজেই বিপথে আকৃষ্ট হচ্ছে। তাদের লেখাপড়ায় মনোসংযোগ ঘটছে না। মেজাজ খিটখিটে এবং আচরণ দিন দিন উগ্র হয়ে উঠছে। 

তাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অশ্লীলতা প্রদর্শনী রোধ এবং তথ্যপ্রযুক্তির যথেষ্ট অপব্যবহার রোধে আইন প্রয়োগে সরকারকে কঠোর হওয়া দরকার। কেননা, অশ্লীলতা আজ সেখানে রন্ধ্রে রন্ধ্রে ভাইরাসের মতো ছড়িয়ে পড়ছে। সমাজকে ক্রমশ অন্ধকারের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। তাই সমাজের বৃহত্তর স্বার্থে এসব অশ্লীল নোংরা রিলস নামে ভিডিও প্রদর্শন বন্ধ হওয়া জরুরি। অভিভাবকদেরও সতর্ক থাকা দরকার তাদের সন্তানরা যেন পর্নোগ্রাফি ও অশ্লীল রিলসে আসক্ত না হয়ে ওঠে। 
যুগের প্রয়োজনে সন্তানকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করতে দিলেও সন্তান সেখানে কী দেখছে বা কী শিখছে, তার ওপর অভিভাবকদের কিছুটা নিয়ন্ত্রণ থাকা দরকার। কেননা, কিশোর বয়স জীবনের সর্বাপেক্ষা সংবেদনশীল সময়। সন্তানের নৈতিক ও মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধে তার বন্ধু হয়ে অভিভাবককেই পাশে দাঁড়াতে হবে। 
মনে রাখতে হবে, একটি সমৃদ্ধ জাতি গঠনে মানসিক সুস্থতা সর্বাপেক্ষা জরুরি, যেটা আজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রযুক্তির অপব্যবহারে মানুষ হারাতে বসেছে। সামাজিক বিকৃতি এমন পর্যায়ে গেছে যে, সুস্থ রুচি ও চিন্তাভাবনার বড় অভাব আজ। প্রযুক্তির সঙ্গে চলব আমরা ঠিকই, তবে অবশ্যই বাছবিচার ও ভাবনচিন্তা করে। তাই অশ্লীল, কুরুচিপূর্ণ রিলস শর্টস আমাদের প্রত্যাখ্যান করা জরুরি। তার থেকেও বড় কথা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহার প্রসঙ্গে মানুষকে সচেতন করা দরকার। কেননা, আমরা কী গ্রহণ আর কী বর্জন করব, সেটাই নির্ধারণ করে দেবে আমাদের রুচির পরিচয়।

মাহজাবিন আলমগীর: শিক্ষিকা

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রদর শ ব যবহ র এসব র দরক র

এছাড়াও পড়ুন:

জাতীয় কবিতা পরিষদের কার্যনির্বাহী কমিটির সভা

জাতীয় কবিতা পরিষদের কার্যনির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় রাজধানীর সাওল হার্ট সেন্টারের কাজল মিলনায়তনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি মোহন রায়হান। তিনি বলেন, জাতীয় কবিতা পরিষদ এরশাদবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করে। বর্তমানেও কবিতা পরিষদ তার আন্দোলন, সংগ্রামের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। কবিতা চর্চার পাশাপাশি জাতীয় ও সামাজিক বিভিন্ন ইস্যুতে আমরা প্রতিবাদ ও আন্দোলন সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছি। ভবিষ্যতেও রাখব।  

সভায় আগামীতে কবিতা পরিষদের কার্যক্রম কীভাবে পরিচালিত হবে, নতুন কাব্য আন্দোলন গড়ে তুলতে, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাষ্ট্রিক পরিবর্তনে জাতীয় কবিতা পরিষদ কী ভূমিকা পালন করবে সেসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরা।  
 
আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় কবিতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রেজাউদ্দিন স্টালিন, সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ ফরায়েজী, সহ-সভাপতি এবিএম সোহেল রশীদ, সহ-সভাপতি মানব সুরত, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক শাহীন রেজা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল জাকারিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুন্নবী সোহেল, আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক সম্পাদক মাসুদ করিম, অর্থ সম্পাদক ক্যামেলিয়া আহমেদ, প্রকাশনা সম্পাদক শওকত হোসেন, সেমিনার সম্পাদক মঞ্জুর রহমান, পরিবেশ ও প্রকৃতিবিষয়ক সম্পাদক মিতা অলী, দপ্তর সম্পাদক রোকন জহুর প্রমুখ।  

সভায় উপস্থিত ছিলেন- প্রচার সম্পাদক আসাদ কাজল, জনসংযোগ সম্পাদক রফিক হাসান, শান্তি ও শৃঙ্খলা সম্পাদক ইউসুফ রেজা, সদস্য জমিল জাহাঙ্গীর, সদস্য আবীর বাঙালী প্রমুখ।  

আলোচনা শেষে ইফতার পর্বের মধ্য দিয়ে সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি মোহন রায়হান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ