অলিগলিতে বাড়ছে পুলিশের মোটরসাইকেল টহল
Published: 18th, March 2025 GMT
ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী ঢাকা মহানগরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও জননিরাপত্তা বিধানসহ উত্তম কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ডিএমপির বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের পুরস্কৃত করেছেন।
মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) সকালে রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামের অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুলিশ কর্মকর্তাদের হাতে পুরস্কার তুলে তিনি।
ফেব্রুয়ারি মাসের মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় কমিশনার বলেন, অপরাধ প্রতিরোধে রাজধানীর অলিগলিতে নিয়মিত, অন্যান্য টহলের পাশাপাশি মোটরসাইকেল টহল আরো বাড়ানো হবে। পুলিশি তৎপরতায় ছিনতাইয়ের ঘটনা এখন অনেকাংশে কমে এসেছে। এজন্য সবাইকে আরো সাহসী, আন্তরিকতার সঙ্গে অপরাধীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে কাজ করার জন্য তিনি পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন।
ফেব্রুয়ারি-মাসের মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অপরাধ বিভাগের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হয়েছে রমনা বিভাগ। শ্রেষ্ঠ থানা পল্লবী। সহকারী পুলিশ কমিশনারদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হয়েছেন উত্তরা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার সাদ্দাম হোসাইন। পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত)-দের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হয়েছেন মোহাম্মদপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো.
এএসআইদের মধ্যে যৌথভাবে শ্রেষ্ঠ হয়েছেন যাত্রাবাড়ী থানার এএসআই মো. আখতারুজ্জামান মন্ডল পলাশ ও মোহাম্মদপুর থানার এএসআই মো. নুরে আলম। শ্রেষ্ঠ ওয়ারেন্ট তামিলকারী অফিসার হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন উত্তরা-পশ্চিম থানার এসআই মো. সাব্বির হোসেন। অস্ত্র উদ্ধারে প্রথম হয়েছেন পল্লবী থানার এসআই মওদুদ আহমেদ। মাদকদ্রব্য উদ্ধারে শ্রেষ্ঠ হয়েছেন তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার এসআই মো. রুহুল আমীন। চোরাই গাড়ি উদ্ধারে শ্রেষ্ঠ হয়েছেন কামরাঙ্গীরচর থানার এসআই মো. আব্দুর রহিম, যাত্রাবাড়ী থানার এসআই মো. জহিরুল ইসলাম, ডেমরা থানার এসআই মইন উদ্দিন, গুলশান থানার এসআই মো. রোমেন মিয়া ও উত্তরা-পশ্চিম থানার এসআই মো. সাইফুল ইসলাম।
গোয়েন্দা বিভাগের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হয়েছে গোয়েন্দা-মিরপুর বিভাগ। শ্রেষ্ঠ টিম লিডার নির্বাচিত হয়েছেন গোয়েন্দা-মিরপুর বিভাগের মিরপুর জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. সোনাহর আলী, তিনি অস্ত্র উদ্ধারেও শ্রেষ্ঠ টিম লিডার নির্বাচিত হয়েছেন। বিস্ফোরকদ্রব্য উদ্ধারে শ্রেষ্ঠ টিম লিডার নির্বাচিত হয়েছেন লালবাগ বিভাগের সংঘবদ্ধ অপরাধ, গাড়ি চুরি ও প্রতিরোধ টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার এনায়েত কবীর সোয়েব। মাদকদ্রব্য উদ্ধারে শ্রেষ্ঠ টিম লিডার নির্বাচিত হয়েছেন গোয়েন্দা-লালবাগ বিভাগের লালবাগ জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. আব্দুল্লাহ আল-মামুন। চোরাইগাড়ি উদ্ধারে যৌথভাবে শ্রেষ্ঠ টিম লিডার নির্বাচিত হয়েছেন লালবাগ বিভাগের সংঘবদ্ধ অপরাধ, গাড়ি চুরি ও প্রতিরোধ টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার এনায়েত কবীর সোয়েব এবং গোয়েন্দা-ওয়ারী বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন) মো. নুরুল হুদা আশরাফী বিপিএম-বার, পিপিএম।
অন্যদিকে, ট্রাফিক বিভাগের মধ্যে প্রথম হয়েছে ট্রাফিক-গুলশান বিভাগ। ট্রাফিকের শ্রেষ্ঠ সহকারী পুলিশ কমিশনার হয়েছেন দারুসসালাম-ট্রাফিক জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার বিমল চন্দ্র বর্মন। শ্রেষ্ঠ ট্রাফিক ইন্সপেক্টর হয়েছেন কোতয়ালী ট্রাফিক জোনের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ আতিকুর রহমান। শ্রেষ্ঠ ট্রাফিক সার্জেন্ট যৌথভাবে নির্বাচিত হয়েছেন গুলশান-ট্রাফিক জোনের সার্জেন্ট মো. বায়েজীদ হোসেন ও মোহাম্মদপুর-ট্রাফিক জোনের সার্জেন্ট রাসেল আলম।
এ ছাড়াও ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পিআর বিভাগসহ একাধিক বিভাগ ও বিভিন্ন পদমর্যাদার অফিসার ও ফোর্সকে বিশেষ পুরস্কার দেওয়া করা হয়।
সভায় যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) মো. ফারুক হোসেনের সঞ্চালনায় অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. সরওয়ার, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন) ফারুক আহমেদ; অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) রেজাউল করিম মল্লিক; অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (লজিস্টিকস্, ফিন্যান্স অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট) হাসান মো. শওকত আলী; অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মো. মাসুদ করিম; যুগ্ম পুলিশ কমিশনারগণ, উপ-পুলিশ কমিশনারগণ, ডিএমপির সকল থানার অফিসার ইনচার্জ ও বিভিন্ন পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/মাকসুদ/এনএইচ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর শ র ষ ঠ ট ম ল ড র ন র ব চ ত হয় ছ ন শ র ষ ঠ হয় ছ ন থ ন র এসআই ম কর মকর ত ড এমপ সহক র অপর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
এক এসআইর অপকর্মে অতিষ্ঠ লোকজন
দৌলতপুর উপজেলার তেকালা পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই আনিছুর রহমানের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে। কুষ্টিয়া মডেল থানায় নানা অপকর্মের কারণে তাঁকে শাস্তিমূলক বদলি করা হয় তেকালা ক্যাম্পে। সেখানে যোগদান করেই মাদক কারবারিদের কাছ থেকে মাসোহারা আদায়, তল্লাশি করে পাওয়া মাদক জব্দ না দেখিয়ে বিক্রি করে দেওয়া এবং চাকরিজীবী ও সাধারণ মানুষের তালিকা করে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে বাড়িঘরে অভিযানের নামে চাঁদাবাজির অনেক অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব নিয়ে স্থানীয় লোকজন পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর মিরপুর সার্কেল অফিসকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে আনিছের অপকর্মের নানা তথ্য মিলেছে। তাঁর হয়রানির শিকার হন মোটর মেকানিক স্বপন হোসেন। গত ১০ মার্চ বিকেলে ধর্মদহ গ্রামের স্বপনের কাছে আসেন তেকালা পুলিশ ক্যাম্পের কনস্টেবল সোহেল। একটি ব্যাগে ১০ বোতল ফেনসিডিল নিয়ে এসে স্বপনকে বিক্রি করে দেওয়ার জন্য চাপ দেন। তিনি বলেন, ‘স্যার বলেছেন (আনিছ) এগুলো বিক্রি করে দিতে হবে, জরুরি টাকা লাগবে।’ স্বপন ফেনসিডিল বিক্রিতে রাজি না হলে জোরাজুরি করা হয়। এক পর্যায়ে স্বপন নিজস্ব মোটরসাইকেল নিয়ে চলে যান। রাস্তায় ধর্মদহ মোড়ে এসআই আনিছ এবং তাঁর অনুগত তরিকুল, সোহেলসহ কয়েকজনকে দেখে ভয়ে মোটরসাইকেল ফেলে রেখে স্বপন পালিয়ে যান। এই মোটরসাইকেল ক্যাম্পে নিয়ে যান আনিছ। এর পর তাঁর কাছে ৫০ হাজার টাকা ও ১০ বোতল ফেনসিডিলের মূল্য দাবি করেন। স্বপন ৩০ হাজার টাকা দিতে রাজি হন। এর আগে গত শবেবরাতের দিন মাংস কেনার জন্য টাকা দাবি করেন আনিছ। ৫ হাজার টাকা দিতে গেলে না নিয়ে ফেরত দেন তিনি। ধর্মদহ গ্রামের মাদক কারবারি ও সোর্স জাহিদুল এবং রতনের মাধ্যমে এই টাকা দাবি করা হয়। জাহিদুল অন্য মাদক কারবারিদের কাছ থেকে মাসোহারা আদায় করেন।
স্বপনের কাছে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ভয়ে আনিছের বিরুদ্ধে কিছু বলতে রাজি হননি। তবে জানান, পুলিশের লোকজন তাঁর দোকানে মাঝে মধ্যে আসেন।
গত ১ ফেব্রুয়ারি দুপুরে আনিছ তাঁর সহকর্মী তরিকুল ইসলামকে নিয়ে গুড়ারপাড়া ডাংমড়কা মাঠে মাদক কারবারি মোকলেছসহ দু’জনকে মোটরসাইকেলে মাদক বহনের সময় আটক করেন। পরে গুড়ারপাড়া গ্রামের শাকিল নামের এক ব্যক্তির মধ্যস্থতায় ১ লাখ টাকা নিয়ে দু’জনকে ছেড়ে দেন। ১৭০ বোতল ফেনসিডিল জব্দ না দেখিয়ে প্রাগপুর এলাকার মাদক কারবারি জুয়েলের কাছে প্রতিটি ১ হাজার ১০০ টাকা করে বিক্রি করে দেন বলে স্থানীয় একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘দারোগা আনিছ এলাকায় আসার পর মাদক চোরাচালান ও অপরাধ বেড়েছে। তিনি ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের তালিকা তৈরি করে আওয়ামী লীগ বলে হয়রানি করছেন। মাদক কারবারিদের সঙ্গে নিয়ে ঘোরেন। শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার পরিবর্তে নিজেই শান্তি বিনষ্ট করছেন।’
আনিছের বিরুদ্ধে উপজেলার মশাওড়া মধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জান মোহাম্মদকে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন এ অভিযোগ এনে পর পর তিন দিন তাঁর বাড়িতে অভিযান চালান আনিছ। ২০১২ সালের আগে আওয়ামী লীগে যুক্ত ছিলেন জান মোহাম্মদ। চাকরি হওয়ার পর দলের সব পদ থেকে ইস্তফা দেন। ৫ আগস্টের পর বিএনপির একটি পক্ষ তাঁর কাছে চাঁদা দাবি করে। পরে এক আত্মীয়ের মাধ্যমে সেটি সমাধান করেন। এর পর আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড কমিটিতে তাঁর নামে আছে এমন অভিযোগ করে তার বাড়িতে লোক পাঠান আনিছ। বিএনপির কয়েকজন নেতার মাধ্যমেও টাকা-পয়সা দাবি করেন। এক পর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন জান মোহাম্মদ। ভয়ে তিনি পালিয়ে আছেন। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘খুব বিপদে আছি। রাজনীতি না করেও এখন হয়রানি হতে হচ্ছে।’
এ বিষয়ে জানতে এলাকার এক সাংবাদিক আনিছকে ফোন করলে তিনি ক্ষুব্ধ হন। পরে ওই শিক্ষকের এক আত্মীয়ের মাধ্যমে জানান, ‘এখন ৫০ হাজার টাকা দিলে কিছুই হবে না। তবে আমি ধরলে ২ লাখের কমে কাজ হবে না। মাজায় রশি বেঁধে মামলায় ঢুকিয়ে দেব, কেউ বাঁচাতে পারবে না।’
এসআই আনিছুর রহমানের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির সুষ্ঠু তদন্ত এবং তাঁকে তেকালা পুলিশ ক্যাম্প থেকে অপসারণের দাবিতে স্থানীয় লোকজন গত ৬ মার্চ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনের গোপনীয় শাখার একজন কর্মকর্তা বলেন, আনিছের বিরুদ্ধে সদরে থাকতে নানা অনিয়ম ও অপকর্মের অভিযোগ ছিল। এর পর তাঁকে তেকালায় পাঠানো হয়। নতুন অভিযোগ নিয়ে তদন্ত চলছে।
এদিকে অভিযোগ দেওয়ার পর নিজেকে বাঁচতে আনিছ নানা কায়দায় তদবির করছেন। অভিযোগের বিষয়ে জানতে মোবাইল ফোনে কল করলে এসআই আনিছ বলেন, ‘আমিও একজন মানুষ। দোষ, গুণ থাকবেই। তবে কেউ বলতে পারবে না আমি মাদক কারবারিদের কাছ থেকে একটি লজেন্স খেয়েছি। আমি আপনার সঙ্গে দেখা করব। নিউজ করার দরকার নেই।’ কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, ‘আনিছের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত চলছে।’