বাংলাদেশে বারবার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের উত্থানের কারণ অনুসন্ধান এবং তার একটি বস্তুনিষ্ঠ পর্যালোচনা খুবই দরকার। রোগ যথাযথভাবে নিরূপিত না হলে রোগের চিকিৎসাও যথাযথ হয় না।

গত বছরের ৫ আগস্টের গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারী সরকার পতনের পর ছাত্রনেতৃত্ব সংবিধান পুনর্লিখনসহ যেভাবে দাবিদাওয়া উপস্থাপন করছে, তাতে কর্তৃত্ববাদ উত্থানের সব দায় বিদ্যমান সংবিধানের ওপর চাপানো হচ্ছে। নতুন বাংলাদেশ নির্মাণের জন্য গণপরিষদ গঠনের মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়নসহ দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র ঘোষণার দাবিতে তারা খুব সোচ্চার।

১৯৭১ সালে এক সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার প্রতিফলনসহ গণতন্ত্রকে অন্যতম মূলনীতি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান রচিত হয়।

সংবিধানের প্রস্তাবনা ও মূলনীতিতে গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের প্রাধান্য এবং পুরো সাংবিধানিক কাঠামো গণতান্ত্রিক হলেও বারবার এখানে স্বৈরতন্ত্র ও কর্তৃত্ববাদী শাসন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। শাসকগোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থে বিভিন্ন সময় সংবিধানে নানা সংশোধন এনেছে যা সংবিধানের মূল চরিত্রকে বিকৃত করেছে এবং নানান বিতর্ক তৈরি করেছে।

এরপরও যে বিষয় খতিয়ে দেখা দরকার তা হলো, বারবার কর্তৃত্ববাদী শাসন প্রত্যাবর্তনের দায় কি বর্তমান সংবিধানের নাকি এর বীজ লুকিয়ে রয়েছে অন্য কোথাও? এর জন্য প্রথমেই প্রয়োজন আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির দিকে বিশ্লেষণাত্মক দৃষ্টি ফেলা। রাজনীতির প্রাণভোমরা হলো রাজনৈতিক দল। সমাজ ও রাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক রাজনীতি ও গণতান্ত্রিক চেতনা বিকাশের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন দলে গণতন্ত্রের চর্চা। দলে গণতন্ত্রের চর্চা না থাকলে সমাজ ও রাষ্ট্রে তার প্রতিফলন অবশ্যই ঘটবে।

আমাদের দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো স্বাধীনতার পর কয়েক যুগ ধরে অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পরিচালিত হয়ে আসছে। অগণতান্ত্রিক গঠনতন্ত্রের মাধ্যমে ব্যক্তিকেন্দ্রিক রাজনীতি ও নেতৃত্বের বংশানুক্রমিক ধারা চলছে দীর্ঘ সময় ধরে। ফলে আদর্শের জায়গা দখল করে নিয়েছে ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতি। টাকা ও পেশিশক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজনীতির নিয়ামক শক্তি। নেতা নির্বাচনের বিষয়টি হয়েছে ব্যক্তির ইচ্ছা ও পছন্দনির্ভর। ফলে চাটুকারিতা, তোষামোদি, অন্ধ আনুগত্য ও দুর্নীতি দলগুলোর রাজনৈতিক কার্যক্রমের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনীতি হয়েছে টাকা উপার্জনের লাভজনক পেশা।

এ ছাড়া নির্বাচন টাকার খেলায় পরিণত হওয়ায় নিবেদিতপ্রাণ রাজনীতিবিদেরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। এসব কারণে চিরকালীন ক্ষমতার নেশা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে এমনভাবে পেয়ে বসে যে ক্ষমতায় থাকার জন্য নির্বাচনসহ রাষ্ট্রীয় সব প্রতিষ্ঠানকে অনৈতিকভাবে ব্যবহার করে এসব প্রতিষ্ঠানকে দুর্বল ও অকার্যকর করা হয়েছে। যখন যে দলই ক্ষমতায় এসেছে, তারা নিজেদের স্বার্থে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করেছে, তাদের ঠিকভাবে কাজ করতে দেওয়া হয়নি। প্রশাসন, বিচার বিভাগ থেকে আরম্ভ করে সর্বত্র এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে যে প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেনি।

আরও পড়ুনহাসিনার পতন হলেও স্বৈরাচারী শাসনের যেসব খুঁটি এখনো অক্ষুণ্ন১০ আগস্ট ২০২৪

অন্যদিকে দেখা গেছে, যখন কেয়ারটেকার সরকার স্বল্পকালের জন্য এসেছে, তখন সব প্রতিষ্ঠান নির্ভয়ে নিজ নিজ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছে। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনও করেছে। সুতরাং রাজনৈতিক সংস্কৃতির গণতন্ত্রায়ণ ও পরিশুদ্ধকরণ ছাড়া শুধু কাঠামোগত সংস্কারে সুষ্ঠু গণতন্ত্রের চর্চা বা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা কখনো সম্ভব নয়। এ দেশে সামরিক শাসন, স্বৈরতান্ত্রিক শাসনসহ নানা কারণে গণতন্ত্রের চর্চা ব্যাহত হয়েছে। ফলে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি বা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের যেমন বিকাশ ঘটেনি, তেমনি রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোও শক্তিশালী হতে পারেনি।

অথচ দলগুলোর মধ্যে গণতন্ত্রহীনতা, ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতির চর্চা, টাকা ও পেশির দৌরাত্ম্য—সব মিলিয়ে রাজনীতিতে যে অগণতান্ত্রিক ও অবক্ষয়ের রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, তার সংস্কারের কোনো অর্থবহ ব্যবস্থা না নিয়ে শুধু সংবিধানকে ফ্যাসিবাদী বলে ছুড়ে ফেলে নতুন সংবিধান রচনার কথা একধরনের অপরিপক্ব ও অবাস্তব চিন্তা ছাড়া আর কিছু নয়।

রাজনীতিতে ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা ও পারিবারিক রাজনীতির চর্চা বহাল রেখে বর্তমানের দুর্বৃত্তায়ন বন্ধ করা একেবারেই অসম্ভব। দলের মধ্যে পরিশীলিত রাজনীতি, গণতন্ত্রের চর্চা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার জন্য একটি ‘পলিটিক্যাল পার্টি আইন’ করে ব্যাপক সংস্কারমূলক ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। অথবা নির্বাচন কমিশন আইনে সংশোধন এনে কাউন্সিলের মাধ্যমে নেতা নির্বাচনসহ নিবন্ধনসংক্রান্ত কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা দরকার। একই ব্যক্তি যাতে সরকারপ্রধান ও দলের প্রধান না হতে পারেন, সে-সংক্রান্ত আইন করা দরকার।

বাংলাদেশে স্বৈরশাসন বা কর্তৃত্ববাদী শাসনের উত্থানের জন্য শুধু সংবিধানকে দোষারোপ করার একদেশদর্শী মনোভাব থেকে বেরিয়ে এসে অপশাসনের পেছনের কারণ যথাযথ বিশ্লেষণের মাধ্যমে আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির দায়কে চিহ্নিত করতে হবে। কারণ, সংবিধানের কোথাও একদলীয় নির্বাচনের কথা বলা হয়নি। নির্বাচন কমিশন আইনেও নেই। শুধু সব প্রতিষ্ঠানে দলীয় নিয়ন্ত্রণ বহাল করার মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দলীয় সরকার এটা করেছে। একমাত্র নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমল ছাড়া সব সময় এটা হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো এটা করে দলে ও সামগ্রিক রাজনীতিতে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিকাশ না হওয়ার কারণে।

বাংলাদেশের রাজনীতির দুর্বৃত্তায়নের কারণ রাজনৈতিক সংস্কৃতির মধ্যে না খুঁজে শুধু সংবিধানকে দোষারোপ করে রাজনীতির প্রকৃত সংস্কার কখনো হবে না। ১৯৭২ সালের মূল সংবিধান একটি গণতান্ত্রিক সংবিধান এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এই সংবিধান প্রণীত। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা একটি বহুমাত্রিক চেতনা। ৯০ ও ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের চেতনার আধার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।

কারণ, ৯০-এর গণতন্ত্র ও ২৪-এর বৈষম্যবিরোধী চেতনা মুক্তিযুদ্ধের চেতনারই অংশ। এ চেতনার বাস্তবায়ন না হওয়ায় মূলত জাতি তথা ছাত্র-জনতা ফুঁসে উঠেছে এবং গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে। সুতরাং, অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জাগ্রত গণ-আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য অবশ্যই সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে কিছু সংস্কার করতে হবে। সে ব্যাপারে ইতিমধ্যে প্রক্রিয়া চলমান।

বিভিন্ন সংশোধনীর কারণে বর্তমানে সংবিধানে নানান সীমাবদ্ধতা ও দোষত্রুটি থাকা সত্ত্বেও আমি মনে করি সংবিধানের কাঠামো গণতান্ত্রিক। এ ছাড়া সময়ের চাহিদা অনুযায়ী সংবিধান হালনাগাদ করা ও জনস্বার্থে সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হয়। যেমন ৭০ অনুচ্ছেদের বিলুপ্তি, দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী না হওয়া, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পুনঃপ্রবর্তন, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা সীমিতকরণের জন্য একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী ও দলের প্রধান না হওয়ার সাংবিধানিক বিধান ইত্যাদি। এ ছাড়া সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে সন্নিবেশিত জনস্বার্থবিরোধী অনুচ্ছেদগুলো বাতিল করা—সেটা অবশ্যই করতে হবে।

এ জন্য সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। তারা সুপারিশও প্রদান করেছে। ঐকমত্য ও যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে পরবর্তী সংসদ এটা বাস্তবায়ন করবে। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সংবিধান-বিশারদ ড.

কামাল হোসেন এ বিষয়ে তাঁর বিজ্ঞ মতামত প্রদান করেছেন। কিন্তু পুনর্লিখনের নামে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় লিখিত সংবিধান উপড়ে ফেলা কখনো জাতির কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।

বাংলাদেশে স্বৈরশাসন বা কর্তৃত্ববাদী শাসনের উত্থানের জন্য শুধু সংবিধানকে দোষারোপ করার একদেশদর্শী মনোভাব থেকে বেরিয়ে এসে অপশাসনের পেছনের কারণ যথাযথ বিশ্লেষণের মাধ্যমে আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির দায়কে চিহ্নিত করতে হবে। কারণ, সংবিধানের কোথাও একদলীয় নির্বাচনের কথা বলা হয়নি। নির্বাচন কমিশন আইনেও নেই। শুধু সব প্রতিষ্ঠানে দলীয় নিয়ন্ত্রণ বহাল করার মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দলীয় সরকার এটা করেছে। একমাত্র নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমল ছাড়া সব সময় এটা হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো এটা করে দলে ও সামগ্রিক রাজনীতিতে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বিকাশ না হওয়ার কারণে।

সংবিধানে নেতা নির্বাচন, সরকার গঠনবিষয়ক সব বিধানই গণতান্ত্রিক। শুধু ৭০ অনুচ্ছেদ ছাড়া নির্বাহী, আইন ও বিচার বিভাগসংক্রান্ত বিধানগুলো গণতান্ত্রিক বিধিবিধানের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। তবে বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতার জন্য বিচার বিভাগের সচিবালয় অবশ্যই সুপ্রিম কোর্টের অধীনে দিতে হবে।

সুতরাং রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন বা স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, সে জন্য ইতিবাচক রাজনৈতিক সংস্কৃতির ধারা শুরু করতে হবে। পাশাপাশি কাঠামোগত সংস্কারও প্রয়োজন। তবে সুষ্ঠু রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও দলে গণতন্ত্রচর্চার সংস্কৃতি না গড়ে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা কখনো সম্ভব নয়। গণতন্ত্রের অবিরাম চর্চার মধ্য দিয়েই গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি গড়ে ওঠে এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বিকশিত হয়। প্রতিষ্ঠানগুলোও কার্যকর ও শক্তিশালী হয়। সেটাই নিশ্চিত করা দরকার।

হাসান চৌধুরী প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক, সাবেক সরকারি কর্মকর্তা

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক স স ক ত র র জন ত ক স স ক ত র জন ত ক স স ক ত র ব যবহ র কর র জন ত ক দ র ক র জন ত র জন ত র র জন ত ত ক সরক র র প কর দল য় ন আম দ র ণ র জন র জন য ন র জন ক ষমত দরক র দলগ ল

এছাড়াও পড়ুন:

গাজায় জাতিগত নিধনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে

মানবাধিকার, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের ধ্বজাধারী যারা, তাদের হাতেই ফিলিস্তিনে জাতিগত নিধন, স্বাধীনতা হরণ ও গণতন্ত্রের সমাধি রচিত হচ্ছে। এই প্রহসন যেন সভ্যতার সঙ্গে উপহাস। আসলে এরা বর্ণচোরা মুনাফিক। ১৯১৭ সালে ইংরেজরা ফিলিস্তিনে অনুপ্রবেশ করে ও ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে এবং ইহুদিরা ফিলিস্তিনে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করে। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীরা অন্যায়ভাবে মুসলমানদের ফিলিস্তিন ভূমিকে মুসলমান ও ইহুদিদের মধ্যে ভাগ করে দেয়। ১৯৪৮ সালের ১৫ মে বেলফোর ঘোষণার মাধ্যমে জায়নবাদী অবৈধ ইসরায়েল রাষ্ট্র ঘোষিত হয়। তখন থেকে মুসলমানদের প্রতি ইহুদিদের জুলুম, নির্যাতন ও অত্যাচারের মাত্রা বাড়তে থাকে, যা আজও চলছে।

১৯৬৭ সালে অবৈধ রাষ্ট্র ইসরায়েল ‘মসজিদুল আকসা’ জবরদখল করে। এর পর থেকে মুসলিম জনগণ স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ সূচনা করে। ১৯৭৯ সাল থেকে ‘আল–আকসা’ মসজিদ মুক্তির লক্ষ্যে সমগ্র মুসলিম উম্মাহ প্রতিবছর রমজান মাসের শেষ দশকের শুক্রবার ‘আল–কুদস’ দিবস পালন করে। তখন থেকে সারা বিশ্বে এ দিনটি ফিলিস্তিন মুক্তির ও বিশ্ব মুসলিম ঐক্যের প্রতীক রূপে পালিত হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে সম্মিলিতভাবে দৃঢ়রূপে ধারণ করো, আর পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।’ (সুরা-৩, আল–ইমরান, আয়াত: ১০৩)

মুসলিম বিশ্বকে দাবিয়ে রাখার জন্য এবং মধ্যপ্রাচ্যের তেলসম্পদ লুণ্ঠনের জন্য আমেরিকা ও ইউরোপ দাবার ঘুঁটি হিসেবে ইসরায়েলকে ব্যবহার করছে এবং আরব শাসকদের জুজুর ভয় দেখিয়ে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে তাদের ঘাঁটি স্থাপন করেছে। ইরান ও ইয়েমেন ছাড়া প্রতিটি মুসলিম রাষ্ট্রকে আমেরিকা তাঁবেদার বানিয়ে নিয়েছে। এভাবে ছলে-বলে-কলে–কৌশলে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর কাছ থেকে ইসরায়েলের স্বীকৃতি ও ইসরায়েলের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করতে বাধ্য করা হচ্ছিল। এ সময় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার কথা ভুলে যাওয়ার উপক্রম হলো। বিশ্ব জনসংখ্যার ২৫ ভাগ মুসলিম পৃথিবীর ৭৫ ভাগ প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক হয়েও মানবতাবিরোধী আমেরিকার কাছে দাসখত দিল।

আন্তর্জাতিক আদালত অবৈধ ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলের জালিম প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলেও আমেরিকা তাদের বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করছে। জাতিসংঘে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত এলেও আমেরিকা তাতে ভেটো দিয়ে তা বানচাল করে দিচ্ছে।

অন্যদিকে ইসরায়েল ফিলিস্তিনে ত্রাণসহায়তা প্রবেশে বাধা দিয়ে গৃহহীন ফিলিস্তিনিদের দুর্ভিক্ষের দিকে ঠেলে দিয়েছে। স্কুল, হাসপাতাল ও আশ্রয়কেন্দ্রে বোমাবর্ষণ করছে। জাতিসংঘের স্থানীয় অফিস ও কর্মীদের গাড়িতে, ত্রাণবাহী গাড়িতে, ত্রাণকর্মীদের ওপর, এমনকি সংবাদকর্মীদেরও হামলা চালিয়ে নির্বিচার হত্যা করে যাচ্ছে।

সারা পৃথিবী তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। আরব শাসকেরা গদি হারানোর ভয়ে নিশ্চুপ। ইউরোপ-আমেরিকায় ছাত্র-জনতা ও সচেতন নাগরিক সমাজ প্রতিবাদ জানাচ্ছে, স্বৈরাচার শাসকগোষ্ঠী তা কঠোর হস্তে নিপীড়নের মাধ্যমে দমন করছে। বাংলাদেশসহ কিছু মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশের জনগণ প্রতিবাদ সমাবেশ করে যাচ্ছে। কিন্তু ওআইসি, ওপেক, আরব লিগ ও জাতিসংঘ বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধতে নির্বিকার।

এ অবস্থা চলতে থাকলে জনরোষ ও জনবিস্ফোরণ পরিবর্তিত হবে, যুদ্ধ বন্ধ না করলে খোদ আমেরিকা তাদের অবস্থান হারাবে। তাদের ঘাঁটিগুলো অনিরাপদ হবে, তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হবে।

আসুন মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও স্বাধীনতা সুরক্ষায় সোচ্চার হই। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যদি কোনো অন্যায় দেখে, তবে তা স্বহস্তে (বলপ্রয়োগের মাধ্যমে) পরিবর্তন করবে, যদি তা সম্ভব না হয়, তবে মুখের কথায় (কূটনৈতিক সমঝোতায়) তা পরিবর্তন করবে, যদি তা–ও সম্ভব না হয়, তবে মনের (পরিকল্পনা) দ্বারা তা পরিবর্তনের সচেষ্ট থাকবে; এটা হলো দুর্বলতম ইমান, এরপর ইমানের কোনো অংশ অবশিষ্ট নেই।’ (সহিহ মুসলিম শরিফ)

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী, যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

[email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আপনারা অবশ্যই অনির্বাচিত, প্রতিদিন স্মরণ করিয়ে দেওয়া হবে: সালাহউদ্দিন আহমেদ
  • আপনারা অবশ্যই অনির্বাচিত, প্রতিদিন স্মরণ করিয়ে দেওয়া হবে: সালাহ উদ্দিন
  • আপনারা অবশ্যই অনির্বাচিত, প্রতিদিন স্মরণ করিয়ে দেওয়া হবে: সালাহউদ্দিন
  • আপনারা অবশ্যই অনির্বাচিত, প্রতিদিন স্মরণ করিয়ে দেওয়া হবে: সালাহ উদ্দিন আহমদ
  • আপনারা অবশ্যই অনির্বাচিত, সেটা প্রতিদিন স্মরণ করিয়ে দেওয়া হবে: বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন
  • জুলাই বিপ্লবের স্বপ্ন বাস্তবায়নে গণতন্ত্রে ফিরতে হবে: গিয়াস উদ্দিন
  • শিক্ষার্থীদের আর বঞ্চিত রাখা না হোক
  • মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সবচেয়ে বড় বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন শেখ হাসিনা
  • সামাজিক মাধ্যমকেন্দ্রিক গণতন্ত্রচর্চার ঝুঁকি
  • গাজায় জাতিগত নিধনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে