পবিত্র রমজান মাসেই অর্জিত হয়েছে ইসলামের বড় বড় সফলতা। এর অন্যতম হলো হিজরতের দ্বিতীয় বছর ১৭ রমজানের ঐতিহাসিক বদরের যুদ্ধ বিজয়।
এ বছর থেকেই মুসলমানদের দুটি ঈদ ‘ঈদুল ফিতর’ ও ‘ঈদুল আজহা’ উদ্যাপিত হয়। বদরের বিজয়ের ১৩ দিন পর হিজরি দ্বিতীয় বর্ষে দশম মাসের প্রথম তারিখ ঈদুল ফিতর বা রোজার ঈদ উদ্যাপিত হয়।
মদিনার ইহুদি সুদখোর মহাজন বনুকাইনুকা সম্প্রদায়কে পরাজিত করার পর দ্বিতীয় হিজরি সনের দ্বাদশ মাসে জিলহজের ১০ তারিখ প্রথম ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ পালন করা হয়।
মানবতার মুক্তিদূত হজরত মুহাম্মদ (সা.
৬২৩ খ্রিষ্টাব্দে রবিউল আউয়াল মাসে নবুয়তের ১৩তম বছরে আল্লাহর নির্দেশে মহানবী (সা.) প্রিয় জন্মভূমি মক্কা মোকাররম থেকে হিজরত করে মদিনা মুনাওয়ারায় চলে যান। শান্তিকামী ও নিরীহ মদিনাবাসী জনগণ খাজরাজ বংশীয় পৌত্তলিক নেতা আবদুল্লাহ ইবনে উবায় ইবনে সলুলের জন্য নবনির্মিত স্বর্ণমুকুটটি নবীজি (সা.)–এর পদপ্রান্তে উৎসর্গ করেন। মানবতার বন্ধু গরিবের দরদি নবীজি (সা.) সে মুকুট মাথায় না পরে তা বিক্রি করে দুস্থ ব্যক্তিদের মধ্যে বিলিয়ে দেন। মুকুট হারানোর বেদনায় প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে ওঠে মুনাফেক নেতা আবদুল্লাহ ইবনে উবায় ইবনে সালুল। তারই প্ররোচনায় মুনাফেক চক্রের ষড়যন্ত্রে এবং মদিনার মৈত্রী চুক্তি ভঙ্গকারী ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের গোপন মদদে মক্কার কুরাইশ পৌত্তলিকেরা হিজরতের দ্বিতীয় বছর ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দে রমজান মাসে মদিনা আক্রমণ করেন।
বদর যুদ্ধে কুরাইশ বাহিনীতে ছিল এক হাজার সশস্ত্র সেনা। তাদের মধ্যে ছিল ১০০টি ঘোড়া ও ৭০০টি উট। নেতৃত্বে ছিল উতবা, শায়বা ও ওয়ালিদ। কুরাইশরা মক্কা থেকে ৪৫০ কিলোমিটার দূরে মদিনার উপকণ্ঠে এসে আক্রমণ করলেন। নবীজি (সা.) মদিনার পবিত্রতা ও নিরাপত্তা রক্ষার খাতিরে নারী ও শিশুদের হেফাজতের জন্য মুহাজির ও আনসার সাহাবিদের সঙ্গে পরামর্শ করে মদিনা তয়্যবা থেকে ১৫০ কিলোমিটার দূরত্বে বদরে এসে প্রতিরোধ গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিলেন। এই আত্মরক্ষামূলক প্রতিরোধযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবি ছিলেন মাত্র ৩১৩ জন। তাঁদের সঙ্গে ছিল ২টি ঘোড়া ও ৭০টি উট। সাহাবিরা মদিনা থেকে তিন দিনে বদর গিরি প্রান্তরে পৌঁছালেন।
মুসলমানরা বদর যুদ্ধে আল্লাহর গায়েবি মদদে অলৌকিকভাবে বিজয় লাভ করেন এবং কাফেররা শোচনীয়ভাবে পরাজয় বরণ করে। এতে কুরাইশদের ৭০ জন নিহত ও ৭০ জন বন্দী হন। মুসলমানদের ১৪ জন সাহাবি শহীদ হন।
যখন যুদ্ধ থামল, নবীজি (সা.) প্রথমে ঘোষণা করলেন, ‘তাদের হত্যা কোরো না।’ পরে বদরের বন্দীদের সহজ শর্তে মুক্তি দেওয়া হয়। তাঁদের অনেকেই ইসলামের অনুপম আদর্শে মুগ্ধ হয়ে মুসলমান হলেন। মুক্তিপণের মূল্য ছিল ২ হাজার থেকে ১২ হাজার দিরহাম। গরিবদের বিনা পণেই মুক্তি দেওয়া হয়। শিক্ষিত বন্দীদের একেকজনকে ১০ জন মুসলিম শিশুকে লেখাপড়া শেখানোর বিনিময়ে মুক্তি দেওয়া হয়।
ইসলামে যুদ্ধের মূলনীতি হলো, ‘মানবতা সুরক্ষার জন্য যুদ্ধ এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ।’ বদর যুদ্ধের মানবিকতার দৃষ্টান্ত যুদ্ধের ইতিহাসে অনন্য উদাহরণ।
সব ক্ষেত্রে মহানবী (সা.)–এর সুন্নত ও সাহাবায়ে কিরামের আদর্শ বাস্তবায়ন করতে পারলে, সাহাবায়ে কিরাম আদর্শ অনুসরণ করলে, রমজানের লক্ষ্য তাকওয়া অর্জিত হলে আল্লাহর সাহায্য আসবেই। আজও বদরের মতো অলৌকিক বিজয় সংঘটিত হবে। জগৎ মুক্ত হবে অশুভ পেশিশক্তির জুলুম–নিপীড়ন থেকে।
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম
[email protected]
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: রমজ ন ম স ম সলম ন মদ ন র র জন য আদর শ বদর র
এছাড়াও পড়ুন:
২০৩৪ সালে ভারতের খুচরা বাজার হবে ১৯০ লাখ কোটি রুপির
বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল বাজার ভারত। সেই দেশটির খুচরা বিক্রির বাজার আগামী ২০৩৪ সালের মধ্যে ১৯০ লাখ কোটি রুপিতে উঠে যাবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে দুটি বাণিজ্য গবেষণা সংস্থা।
ক্রমবর্ধমান এই বাজারে যেসব খুচরা বিক্রেতা বিভিন্ন প্রান্তের ভিন্ন ক্রেতা মানসিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারবে, তারা সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে। বোস্টন কনসাল্টিং গ্রুপ (বিসিজি) ও রিটেলার্স অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার (রাই) যৌথ গবেষণায় এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। খবর ইকোনমিক টাইমস।
২০২৪ সালে ভারতের খুচরা বিক্রির বাজার ৮২ লাখ কোটি রুপিতে উঠেছে। ১০ বছর আগে অর্থাৎ ২০১৪ সালে এই বাজারের আয়তন ছিল ৩৫ লাখ কোটি রুপি। অর্থাৎ ১০ বছরে বাজারের আকার দ্বিগুণ হয়েছে। ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়া ও ভারতীয় অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির ওপর ভর দিয়ে গত ১০ বছর ভারতের খুচরা বাজার ৮ দশমিক ৯ শতাংশ হারে বেড়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থা দুটি। ‘উইনিং ইন ভারত অ্যান্ড ইন্ডিয়া: দ্য রিটেল ক্যালেইডোস্কোপ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে তারা এই তথ্য জানিয়েছে।
ভারতের মতো বিশাল দেশে ক্রেতাদের চাহিদা ও কেনাকাটার অভ্যাস পৃথক। এমনকি একই শহরে নানা বৈচিত্র্যের মানুষ দেখা যায়। খুচরা পণ্য বিক্রেতাদের এই বাজারে সফল হতে গেলে সব খুঁটিনাটি জানার পাশাপাশি নতুন নতুন সুযোগ খুঁজতে হবে বলে মনে করে সংস্থা দুটি। কোন ক্ষেত্রে ব্যবসা করলে সফলতা আসবে, তা চিহ্নিত করার পর দ্রুত সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করলেই কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যাবে, প্রতিবেদনে এমনটাই জানিয়েছে বিসিজি-রাই।
কোভিড মহামারির সময় বাদ দিলে সাধারণ ভারতীয় ক্রেতাদের পণ্য কেনাকাটায় প্রবৃদ্ধির হার মোটামুটি একই রকম ছিল। ২০২৪-২০৩৪ সালের মধ্যে এই বৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাবে বলে মনে করছে বিসিজি ও রাই।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ভারতের খুচরা পণ্যের বাজার অনেক বড় এবং ক্রমেই তা বড় হচ্ছে। ২০৩৪ সালের মধ্যে তা ১৯০ লাখ কোটি রুপির ঘরে উঠে যাবে। খুচরা বাজারের এই বাড়বাড়ন্তের পেছনে নানা মানসিকতার ক্রেতার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার বড় ভূমিকা আছে। ভারতে অবস্থাপন্ন পরিবারের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি খরচ করে কেনা পণ্য কতটা কাজে লাগবে, তা ভাবনাচিন্তা করার মানসিকতাও ক্রেতাদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে। কাজেই খুচরা বিক্রেতাদের সব দিক বিবেচনা করে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করতে হবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
সফলতা পেতে খুচরা বিক্রেতাদের জটিল পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য তৈরি থাকতে হবে বলে পরামর্শ দিয়েছে বিসিজি-রাই। একাধিক মাধ্যম ব্যবহার করে কেনাকাটা করা ও ডিজিটাল পেমেন্ট আগামী দিনে বাড়তে থাকবে বলেই মনে করে খুচরা বিক্রেতাদের সংগঠন ও উপদেষ্টা সংস্থাটি। যদিও এখন পর্যন্ত মোট কেনাকাটার ৫৮ শতাংশ সরাসরি হয়ে থাকে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিসিজি-রাই আরও জানিয়েছে, ভারতের ক্রেতাদের মধ্যে আন্তর্জাতিক মানের পণ্য কেনার প্রবণতা ও ব্র্যান্ড প্রীতি বাড়লেও ঘরোয়া পণ্য নিয়ে গর্ববোধ চলে যায়নি।