অবশেষে যমুনা নদীর ওপর নির্মিত দেশের দীর্ঘতম রেলসেতু চালু হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে পূর্ব প্রান্ত থেকে অতিথি নিয়ে উদ্বোধনী ট্রেনটি তিন মিনিটে সেতু পার হয়ে সিরাজগঞ্জের সয়দাবাদে পশ্চিম প্রান্তে পৌঁছায়। সেতুটি চালুর মধ্য দিয়ে ঢাকার সঙ্গে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের রেল যোগাযোগে নতুন দিগন্তের সূচনা হলো।

প্রধান অতিথি হিসেবে যমুনা রেলসেতু উদ্বোধন করেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ফাহিমুল ইসলাম। পরে উদ্বোধনী ট্রেনটি ১২০ কিলোমিটার গতিতে মাত্র ৩ মিনিটে সেতু পার হয়। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত সাইদা শিনইচি ও জাইকার দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের মহাপরিচালক ইতো তেরুয়ুকি উপস্থিত ছিলেন। স্বাগত বক্তব্য দেন যমুনা রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মো.

মাসউদুর রহমান এবং অনুষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে সমাপনী বক্তব্য দেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক আফজাল হোসেন।

মাসউদুর রহমান বলেন, আগে যমুনা সেতু দিয়ে যেখানে ২০-২৫ মিনিট লেগেছে, সেখানে নতুন সেতু দিয়ে মাত্র আড়াই থেকে ৩ মিনিট সময় লাগবে নদী পার হতে। সেতু দিয়ে সর্বোচ্চ ১২০ কিলোমিটার বেগে দুটি ট্রেন পাশাপাশি চলবে। দুই প্রান্তের সিঙ্গেল ট্র্যাকের কারণে যমুনা রেলসেতুর পুরোপুরি সুবিধা পেতে দেরি হলেও সেতুটি নির্মাণের ফলে উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতি সাধিত হলো।

৫০টি পিলার ও ৪৯টি স্প্যানের ওপর অত্যাধুনিক স্টিল প্রযুক্তির অবকাঠামো দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে যমুনা রেলসেতু। ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুটি নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হয় ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে। প্রকল্পের নকশা প্রণয়নসহ নির্মাণ ব্যয় প্রথমে ধরা হয়েছিল ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা। ২০২৩ সালের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল। পরে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা এবং মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২৫ সাল পর্যন্ত।

যমুনা রেলসেতু দিয়ে এখন থেকে প্রতিদিন ৮৮টি ট্রেন নিয়মিত চলবে এবং সেতু ব্যবহারকারীদের আসন শ্রেণির ওপর ৪৫ থেকে ১৪৫ অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হবে। রেলসেতু উদ্বোধন শেষে দুপুর সাড়ে ১২টায় সয়দাবাদ রেলওয়ে স্টেশনে সংবাদ সম্মেলনে সচিব ফাহিমুল ইসলাম ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এই সেতুতে চলাচল করা ট্রেনের ভাড়া বাড়বে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র লস ত

এছাড়াও পড়ুন:

ঈদে কাপড় বিক্রির লক্ষ্য ৫৫০ কোটি টাকা

পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ভুলতা গাউছিয়া পাইকারি কাপড়ের মার্কেটের বেচাকেনা জমে উঠেছে। দোকানিরা সাধ্যমতো পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। ক্রেতা আকর্ষণে নানা অফারে ডাকছেন কেউ কেউ। রেডিমেড কাপড়ের দোকানে ক্রেতাদের ভিড় তুলনামূলক কম হলেও জাকাতের লুঙ্গি এবং শাড়ি কাপড়ের দোকানগুলোয় উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। গত রোজায় মার্কেটটিতে বিক্রি হয়েছিল প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, এ বছর তা বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ৫৫০ কোটি টাকায়। যদিও কাপড়ের বাড়তি দাম এবং চলমান অর্থনৈতিক মন্দার কারণে এ লক্ষ্য অর্জনে শঙ্কাও প্রকাশ করেছেন কয়েক ব্যবসায়ী। 

জানা গেছে, প্রায় ২৪ একর জায়গায় ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত গাউছিয়া মার্কেটে বর্তমানে দোকানের সংখ্যা ৫ হাজার ৪৭২টি। নির্মাণকাজ শেষ হলে এ সংখ্যা ১৪ হাজারে দাঁড়াবে। শনিবার বাদে সপ্তাহের ছয় দিনই চলে জমজমাট বেচাকেনা। ঈদ উপলক্ষে তিন সপ্তাহ ধরে শনিবারও মার্কেট খোলা থাকছে। সপ্তাহের সোম ও মঙ্গলবার তৈরি পোশাকের পাইকারি বেচাকেনা চলে এ মার্কেটে। এ দু’দিন দৈনিক ৫০ থেকে ৭০ কোটি টাকার পাইকারি কাপড় বেচাকেনা হয়। ঈদের সময় বিক্রির পরিমাণ বেড়ে যায় কয়েক গুণ। বাকি দিনগুলোয় চলে খুচরা বেনাকেনা। 
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানী ঢাকা ছাড়াও রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, সিলেট, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, বরিশালসহ সারাদেশের ব্যবসায়ীরা পাইকারি কাপড় কিনতে এসেছেন। এ বছর দাম একটু বেশি হলেও কেনাবেচার যেন কমতি নেই। 
রাজশাহী থেকে আসা আসিয়া ফ্যাশনের মালিক জসীমউদ্দীন বলেন, আমি এই মার্কেট থেকেই পাইকারি কাপড় কিনে থাকি। এই মার্কেটের কাপড়ের দাম বেশ সাশ্রয়ী এবং মানও ভালো। ইদানীং ব্যবসায়ীরা আর আগের মতো বাকিতে পণ্য দিতে চাচ্ছেন না। নগদ টাকায় ব্যবসা করতে অনেকেরই বেগ পেতে হচ্ছে। 
গাউছিয়া মার্কেটের আলিফ বস্ত্র বিতানের মালিক রইসুল ইসলাম বলেন, আমাদের একটাই লক্ষ্য, সর্বনিম্ন লাভ করে সবচেয়ে ভালো কাপড়টি পাইকারি ক্রেতাদের হাতে তুলে দেওয়া। ফলে সারাদেশের ব্যবসায়ীরা আমাদের ওপর আস্থা রাখছেন। 

ব্যবসায়ীরা জানান, এখানে ৩০০ থেকে শুরু করে ১ হাজার ২০০ টাকার মধ্যে ভালো মানের বুটিক থ্রিপিস পাবেন। জয়পুরি সুতির কাপড় পাবেন ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকার মধ্যে। সিল্কের শাড়ি ১ হাজার ৫০০ থেকে ৩-৪ হাজার টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন। রুহিতপুরি লুঙ্গি ২৫০ থেকে ১ হাজার, জয়পুরহাটের লুঙ্গি পাবেন ২৫০ থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে। ১৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৬০০ টাকার মধ্যে ভালো মানের জাকাতের কাপড় পাবেন। এ ছাড়া সুতি গজ কাপড়, সুতি থ্রিপিস, ওড়না, জামদানি শাড়ি, লুঙ্গিসহ সব ধরনের কাপড় খুব সস্তায় পেয়ে যাবেন। 
বিক্রি নিয়ে খুচরা রেডিমেড কাপড়ের ব্যবসায়ীদের গলার সুর একটু ভিন্ন। সজীব ফ্যাশনের মালিক ইমরান হোসেন বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছরের বেচাকেনা একটু কম। গত বছরের এ সময় প্রতিদিন গড়ে দেড় থেকে দুই লাখ টাকার কাপড় বিক্রি করেছি। কিন্তু এবার একটু কমে গেছে। আগামী কয়েকদিন বাড়বে বলে আশা করছি। 
ভুলতা গাউছিয়া মার্কেটের বাইরে ফুটপাতের দোকানগুলোও সেজেছে ঈদের সাজে। রংবেরঙের বাহারি জামাকাপড় নিয়ে ফুটপাতে প্রায় ৫০০ দোকান বসেছে। সরকার পরিবর্তনের পর ফুটপাতে ব্যবসা করার জন্য কোনো চাঁদা দিতে হয়নি বলেও জানান ব্যবসায়ীরা। 
গাউছিয়া করপোরেশনের মালিক মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভূঁইয়া বলেন, গাউছিয়া করপোরেশন এখন দেশের সর্ববৃহৎ পাইকারি কাপড়ের মার্কেট। ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা, আধুনিক ফায়ার ডিফেন্স সিস্টেমসহ সর্বোত্তম সেবা দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ