জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যান অনেকে। দেশের মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনায় চলে যান কেউ কেউ। আর কেউ কেউ বিদেশে যান অবস্থার উন্নতি ঘটাতে। বিদেশে অভিবাসনের ক্ষেত্রে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার মানুষ গড়ে খরচ করেছেন ৪ লাখ ৬১ হাজার ২২০ টাকা। এর মধ্যে ২৫ শতাংশ টাকা সংগ্রহ করেছেন জমি বিক্রি করে আর ১৮ শতাংশ নিয়েছেন চড়া সুদের ঋণ।

জলবায়ু পরিবর্তন, অভিবাসন ও আধুনিক দাসত্ব নিয়ে রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত আলোচনা সভায় উপস্থাপন করা গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। প্রতিবেদনটি গত মাসে অনলাইনে প্রকাশ করা হলেও আজ মঙ্গলবার আবার তুলে ধরা হয়। ইউকে ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের আর্থিক সহায়তায় গবেষণাটি করেছে তৃণমূল অভিবাসীদের সংগঠন অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রাম (ওকাপ)।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দুই জেলা পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া ও সিলেটের গোয়াইনঘাট এলাকার ওপর বিভিন্ন ধাপে গবেষণাটি করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬৪৮ জনের ওপর জরিপ চালানো হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন গোষ্ঠীর সঙ্গে আলাদা করে ১৮টি বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। অভিবাসী শ্রমিকদের মধ্যে ২৭ জনের বিস্তারিত সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় প্রতিনিধি ও জাতীয় পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ মিলে ১৭ জনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে গবেষণায়।

ওকাপের গবেষণা প্রতিবেদনে আধুনিক দাসত্বের নানা নমুনা পাওয়া গেছে। এর মধ্যে আছে শ্রমিকদের বেতন কম দেওয়া, বেতন বন্ধ রাখা, শারীরিক-মানসিক নির্যাতন, চলাফেরায় বিধিনিষেধ দিয়ে রাখা। গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, দাসত্বের নমুনার মধ্যে অন্তত একটির মুখোমুখি হয়েছেন ৯৯ শতাংশ শ্রমিক। আর আধুনিক দাসত্বের নমুনার মধ্যে পাঁচটির বেশি আচরণ মোকাবিলা করেছেন ৮১ শতাংশ শ্রমিক।

অভিবাসন খাতের সাংবাদিকদের মধ্যে সংবাদপত্র (বাংলা) ক্যাটাগরিতে ফেলোশিপ বিজয়ী প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মো.

মহিউদ্দিন ক্রেস্ট গ্রহণ করেন। ঢাকা, ১৮ মার্চ

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক শিক্ষার সুযোগ তৈরি করতে তৎপর

বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক শিক্ষার সুযোগ তৈরি করতে ব্রিটিশ কাউন্সিল তৎপর। এ জন্য তারা সরকারের স্পষ্ট নির্দেশিকা, প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা কার্যক্রম, আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অংশীদারত্ব মনোভাব চায়।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান এক্টিসের একটি গবেষণায় এই বিষয়টি উঠে এসেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর ফুলার রোডে ব্রিটিশ কাউন্সিল মিলনায়তনে ট্রান্সন্যাশনাল এডুকেশন (টিএনই) শীর্ষক এই গবেষণার প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ব্রিটিশ কাউন্সিলের সাউথ এশিয়ার এডুকেশন ডিরেক্টর সালভাদর কারবাজাল লোপেজ।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক বলেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে এগিয়ে গেছে। জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি তৈরি ও বৈশ্বিক শিক্ষা অংশীদারত্বের মাধ্যমে শিক্ষার ভবিষ্যৎ গঠনে ট্রান্সন্যাশনাল এডুকেশন যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে কাজ করে যাবে।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ বলেন, টিএনই একাডেমিক উৎকর্ষ ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি করছে। এটা উভয় দেশের জন্যই উপকারি। উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়ন, জ্ঞানবিনিময় এবং এই খাতে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে।

বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার ভবিষ্যৎ গঠনে টিএনই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর স্টিফেন ফোর্বস। তিনি বলেন, প্রতিবেদনটি বাংলাদেশে টিএনই-এর প্রসারসংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা চিহ্নিত করতে সহায়ক হবে। এ ছাড়া যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা খাতে পারস্পরিক সহযোগিতার পথ সুগম করবে।

অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশে ট্রান্সন্যাশনাল এডুকেশনের সম্ভাবনা ও সামাজিক মূল্য’ শীর্ষক একটি প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে অংশগ্রহণকারীরা তাঁদের মতামত তুলে ধরেন।

জাতিসংঘের নীতিমালা অনুযায়ী কাউকে বাদ না দিয়ে শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন রূপকল্পে টিএনই প্রোগ্রাম চালানোর আহ্বান জানান ইউজিসির সদস্য মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন।

এ সময় ব্রিটিশ কাউন্সিলের সাউথ এশিয়ার এডুকেশন ডিরেক্টর সালভাদর কারবাজাল লোপেজ বলেন, বাংলাদেশে টিএনই প্রোগ্রাম ঠিকমতো চালু করতে হলে সঠিক শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন জরুরি। যেমনটি ভারত কিংবা মালয়েশিয়া করেছে।

কর্মমুখী শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, ‘গ্র্যাজুয়েটরা বর্তমান বাজারে চাকরি পাচ্ছেন না। বেকারত্ব বাড়ছে। আমাদের দরকার কর্মমুখী শিক্ষা।’

অনুষ্ঠানে টিএনই–২০২৫ অনুদান বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেন ব্রিটিশ কাউন্সিলের হেড অব এডুকেশন তৌফিক হাসান। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ২৫ হাজার পাউন্ড করে অনুদান দেওয়া হবে।

অনুদানের আওতায় লিভারপুল জন মুরস ইউনিভার্সিটি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজ একসঙ্গে কাজ করবে। এ ছাড়া নটিংহাম ট্রেন্ট ইউনিভার্সিটি ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বার্মিংহাম সিটি ইউনিভার্সিটি এবং আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশও একসঙ্গে কাজ করবে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়েছে।

এ ছাড়া রয়েল হলোওয়ে ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এবং কিল ইউনিভার্সিটি ও ফ্রেন্ডস ইন ভিলেজ ডেভেলপমেন্ট বাংলাদেশ (এফআইভিডিবি) যৌথভাবে কাজ করবে।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ব্রিটিশ কাউন্সিলের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার (এডুকেশন) জাকিয়া শারমিন। প্যানেল আলোচনা পর্বটি পরিচালনা করেন ব্রিটিশ কাউন্সিলের ডিরেক্টর (প্রোগ্রাম) ডেভিড নক্স। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন অ্যাসোসিয়েশন অব প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিজ অব বাংলাদেশের সেক্রেটারি জেনারেল ইশতিয়াক আবেদিন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ