যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাহাপাড়ায় খ্রিষ্টান মিশনারির ছাত্রীনিবাস থেকে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর এক কিশোরীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধারের ঘটনায় মিশনারি কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মী-সমর্থকেরা। আজ মঙ্গলবার সকালে ওই কিশোরীকে নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগ তুলে তাঁরা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেন।

গত শুক্রবার রাতে রাজেরং ত্রিপুরা (১৫) নামের ওই কিশোরীর মরদেহ ছাত্রীনিবাসে তার কক্ষের গ্রিলের সঙ্গে ওড়না দিয়ে ‘ঝুলন্ত’ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। বান্দরবানের থানচি উপজেলার কালুপাড়া গ্রামের রমেশ ত্রিপুরার মেয়ে রাজেরং মিশনারির একটি প্রকল্পের অধীনে কেশবপুর পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণিতে পড়ত।

পুলিশ ও মিশনারি কর্তৃপক্ষ জানায়, কেশবপুরের সাহাপাড়ার খ্রিষ্টান মিশনারির ছাত্রীনিবাসে থেকে ‘খ্রিষ্টান আউটরিস্ট সেন্ট্রাল ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ’ প্রকল্পের অধীনে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ৪৪ জন মেয়ে পড়ালেখা করে। শুক্রবার সন্ধ্যার পর কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে ছাত্রীনিবাসের ম্যাট্রন জেসিকা সরকার রাজেরং ত্রিপুরার কক্ষের তালা খুলে তার মরদেহ গ্রিলের সঙ্গে ফাঁস দেওয়া অবস্থায় দেখতে পান। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

ছাত্রীনিবাসের সুপার প্রদীপ সরকার বলেন, রাজেরং ত্রিপুরা বাড়ি থেকে এত দূরে এসে লেখাপড়া করতে চায়নি। পরিবার তাকে জোর করে পাঠানোয় সে মানসিক অবসাদগ্রস্ত ছিল। সেই কষ্ট থেকে সে গলায় ফাঁস দিয়ে ‘আত্মহত্যা’ করেছে।

এদিকে মিশনারির পক্ষ থেকে কিশোরীর পরিবারকে তার মৃত্যুর খবর দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন স্বজনেরা। গতকাল সোমবার মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে কেশবপুরে আসেন বাবা রমেশ ত্রিপুরা ও তিন স্বজন। তাঁরা কেশবপুর প্রেসক্লাবে গিয়ে অভিযোগ করেন, চার দিন আগে মেয়ে মারা গেলেও মিশনারি তাঁদের কোনো খবর দেয়নি। তাঁদের ধারণা, মেয়েকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। তাঁরা মেয়েটির লাশ পেতে চান। পাশাপাশি তাঁদের এলাকার আরও তিন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মেয়েকে আবাসিক থেকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চান।

এ ঘটনায় রাজেরং ত্রিপুরার বাবা রমেশ ত্রিপুরা কেশবপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগে তিনি ‘খ্রিষ্টান আউটরিস্ট সেন্ট্রাল ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ’ প্রকল্পের পরিচালক খ্রীষ্টফার সরকারসহ ছয়জনকে বিবাদী করেন। অভিযোগে বলা হয়, তাঁর মেয়েকে নির্যাতন করে ‘আত্মহত্যা’ করতে বাধ্য করা হয়েছে। বান্দরবানের লামা উপজেলার সত্য মানিক ত্রিপুরা ও হানিচরণ ত্রিপুরাকে টাকার লোভ দেখিয়ে তাঁর মেয়ের অভিভাবক সাজিয়ে নিয়ে যেতে ভাড়া করে আনা হয়। তাঁর মেয়ের লাশ নিতে তাঁদের খ্রীষ্টফার সরকার কেশবপুরে আসতে বলেন।

অভিযোগের বিষয়ে খ্রীষ্টফার সরকার প্রথম আলোকে বলেন, মেয়েটির বাড়ি দুর্গম এলাকায়। সেখানে মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। পরে থানার মাধ্যমে বার্তা পাঠিয়ে যোগাযোগ করা হয়। একেবারেই যোগাযোগ করা হয়নি, এ অভিযোগ সত্য নয়।

এদিকে ওই কিশোরীর মরদেহ হস্তান্তর ও হত্যার অভিযোগ তুলে বিচারের দাবিতে মিশনারির সামনে বিক্ষোভ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা। আজ সকাল সাড়ে নয়টায় শুরু হওয়া বিক্ষোভে তাঁরা ছাত্রীনিবাসে ঢোকার দাবি জানিয়ে ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলতে চান। বেলা ১১টার দিকেও সেখানকার দায়িত্বশীলরা বিক্ষোভকারীদের ভেতরে ঢুকতে দেননি। একপর্যায়ে কেউ কেউ প্রাচীর টপকে ভেতরে ঢুকে মূল ফটক খুলে দিলে বিক্ষোভকারীরা ভেতরে ঢুকে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে থানা-পুলিশ ও সেনাসদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। পাশাপাশি ছাত্রীনিবাসে থাকা অন্য তিন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর কিশোরীকে হস্তান্তর করার আশ্বাস দেওয়া হয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্রপ্রতিনিধি মাশফি আরেফিন চৌধুরী বলেন, খ্রিষ্টান মিশনারির একটি মেয়ে মারা যাওয়ার পরও তার পরিবারকে জানানো হয়নি। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিলেও মামলা না হওয়ায় তাঁরা মিশনারিতে গিয়েছিলেন। তাঁদের দাবি ছিল, এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার।

যশোরের সহকারী পুলিশ সুপার (মনিরামপুর সার্কেল) ইমদাদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, মেয়েটির বাবার অভিযোগ পুলিশ পেয়েছে। এতে নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগ করা হয়েছে। মেয়েটির লাশ ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। লাশ এখনো হাসপাতালের মর্গে আছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে সেই অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, ভুল–বোঝাবুঝি থেকে মিশনারিতে ছাত্র-ছাত্রীরা ঢুকে পড়েছিলেন। পরে সবাইকে বুঝিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করা হয়। এখন পরিবেশ শান্ত আছে।

এ বিষয়ে মিশনারির প্রকল্প পরিচালক খ্রীষ্টফার সরকার বলেন, পুলিশ বাদী হয়ে মামলার পাশাপাশি সংস্থার পক্ষ থেকেও থানায় একটি অভিযোগ করা হয়েছে। ছাত্রীদের নির্যাতন করা ও তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করার অভিযোগ সত্য নয়। তিনি বলেন, তাঁরা এখানে এসেছেন সেবা করতে। এ জন্যই তাঁদের মিশনারি ও ছাত্রীনিবাসে হামলা করা হয়েছে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান তিনি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক শবপ র প রকল প এ ঘটন তদন ত উপজ ল ঘটন র

এছাড়াও পড়ুন:

ফের স্বর্ণের দামে রেকর্ড

দুই দিনের ব্যবধানে দেশের বাজারে ফের স্বর্ণের দাম বেড়েছে। সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ১ হাজার ৪৭০ টাকা বাড়িয়ে ১ লাখ ৫৪ হাজার ৯৪৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। দেশের বাজারে স্বর্ণের এত দাম আগে আর হয়নি।

মঙ্গলবার বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বুধবার থেকে নতুন এ দাম কার্যকর হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবী স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) মূল্য বেড়েছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বর্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।

নতুন মূল্য অনুযায়ী, ২১ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম এক হাজার ৪০০ টাকা বাড়িয়ে এক লাখ ৪৭ হাজার ৯০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ ছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম এক হাজার ২০১ টাকা বাড়িয়ে এক লাখ ২৬ হাজার ৭৭৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সনাতন পদ্ধতির এক ভরি স্বর্ণের দাম এক হাজার ২৭ টাকা বাড়িয়ে এক লাখ ৪ হাজার ৪৯৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। 

এর আগে ১৬ মার্চ স্বর্ণের দাম বাড়ানো হয়। যা পরদিন থেকে কার্যকর হয়। সে সময় ভালোমানের এক ভরি সোনার দাম ২ হাজার ৬১৩ টাকা বাড়ানো হয়। দুই দিনের মাথায় এখন আবার দাম বাড়ানো হলো। এতে দু’দফায় ভালোমানের এক ভরি স্বর্ণের দাম বাড়ল ৪ হাজার ৮৩ টাকা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ