রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টির লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু হচ্ছে। আগামী বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সঙ্গে প্রথম পর্যায়ে বৈঠক শুরু করবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) ঐকমত্য কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত জনসংযোগ কর্মকর্তা এম এম ফজলুর রহমান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদের এলডি হলে এ বৈঠক শুরু হবে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য দলের সঙ্গে আলোচনার সময়সূচি ঘোষণা করা হবে।

ঈদের আগে ২৪ মার্চ পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

এদিকে মঙ্গলবার পর্যন্ত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে ১৫টি রাজনৈতিক দল মতামত জমা দিয়েছে। মঙ্গলবার জাতীয় গণফ্রন্ট ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) মতামত জমা দেয়। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ ১৪টি রাজনৈতিক দল তাদের পূর্ণাঙ্গ মতামত কয়েক দিনের মধ্যে জমা দেবে বলে জানিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। 

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে মতামত জমা দেওয়া বাকি ১৩টি দল হলো—লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, জাকের পার্টি, ভাসানী অনুসারী পরিষদ, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম), আমজনতার দল, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (বাংলাদেশ জাসদ), বাংলাদেশ লেবার পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) এবং নাগরিক ঐক্য। 

গত বছর রাষ্ট্র সংস্কারে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করে সরকার। সংবিধান, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি, পুলিশ এবং নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন তাদের পূর্ণাঙ্গ মতামত গত ফেব্রুয়ারি মাসে জমা দেয়। এরপর সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করতে প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়। 

এরপর পুলিশ সংস্কার বাদে বাকি পাঁচটি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর সুনির্দিষ্ট মতামত ১৩ মার্চের মধ্যে জানাতে অনুরোধ করে সুপারিশগুলোর ১৬৬টি প্রশ্ন স্প্রেডশিট আকারে ৩৮টি রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো হয়।

ঢাকা/হাসান/রফিক

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর মত মত

এছাড়াও পড়ুন:

দলগুলোকে ঐকমত্যে আসতেই হবে

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে সরকারের প্রতিনিধি, বিভিন্ন সংস্কার কমিশনের প্রধান ও রাজনৈতিক দলের নেতাদের বৈঠকে সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ বৈঠকে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ আগস্টের গণ–অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী প্রায় সব দলের নেতারা অংশ নিয়েছেন।

বৈঠকটি এমন সময় হলো, যখন সংস্কার নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা চলমান। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ইতিমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে সংস্কারবিষয়ক কিছু প্রশ্ন পাঠিয়েছে, যার উত্তর ১৩ মার্চের মধ্যে দেওয়ার কথা ছিল। কয়েকটি রাজনৈতিক দল উত্তর পাঠালেও অন্যরা সময় নিয়েছে। আবার কেউ কেউ ঐকমত্য কমিশনের প্রশ্নের ধরন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় জাতিসংঘ মহাসচিব বলেছেন, বাংলাদেশের অংশীজনেরাই সংস্কার বাস্তবায়ন করবে। কতটুকু এবং কীভাবে করবে, সে বিষয়ে তাদেরই ঠিক করতে হবে। জাতিসংঘ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ ও সংস্কারে সহায়তা দিয়ে যাবে।

বৈঠকে পাঁচটি সংস্কার কমিশনের প্রধানেরা তাঁদের প্রতিবেদনের সংস্কার প্রস্তাবের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেছেন। অন্যদিকে রাজনৈতিক দলের নেতারাও মতামত ব্যক্ত করেছেন। কোনো কোনো রাজনৈতিক দল লিখিত বক্তব্য জমা দিয়েছে। এর মাধ্যমে জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশের রাজনীতি ও আর্থসমাজিক বিষয়ে একটা ধারণা পেয়েছেন।

বৈঠকে রাজনৈতিক দলের নেতারা সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেছেন। তবে নির্বাচনের আগে কতটুকু সংস্কার আর কতটুকু পরে হবে, সেসব নিয়ে তাদের মধ্যে মতভেদ আছে। কেউ কেউ গণপরিষদের মাধ্যমে সংস্কার সম্পন্ন করার কথাও বলেছেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস আগেই জানিয়ে দিয়েছেন, রাজনৈতিক দলগুলো বেশি সংস্কার চাইলে আগামী বছরের জুনে এবং কম সংস্কার চাইলে চলতি বছরের ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে। এর মাধ্যমে তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছেই সিদ্ধান্তের ভার দিয়েছেন।

বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের বক্তৃতা–বিবৃতি দেখে মনে হয়, তাঁরা কোনো বিষয়ে একমত হতে পারবেন কি না, সে বিষয়ে সন্দেহ আছে। কোনো দল কোনো বিষয়ে মত প্রকাশ করলে অন্যদের দায়িত্ব হয়ে পড়ে তার বিরোধিতা করা। কথাটি যুক্তি দিয়ে বললে সমস্যা হয় না। কিন্তু অনেকেই ‘সালিস মানি কিন্তু তালগাছ’ আমার অবস্থানে চলে যায়। গণ–অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর মধ্যে মত ও পথের ফারাক থাকা অস্বাভাবিক নয়। সংস্কারের মাত্রা ও সময় নিয়েও বিতর্ক থাকতে পারে। কিন্তু কিছু মৌলিক বিষয়ে তাদের তো একটা ঐকমত্যে আসতে হবে। সেটা তখনই সম্ভব, যখন রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরকে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা তৈরি করতে পারবে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে ছয় মাস। এত দিন অভিযোগ ছিল জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আলোচনা করতে বিলম্ব করছে। আলোচনা শুরুর পর রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্বই বেশি। তারা যত দ্রুত কমিশনের প্রশ্নের উত্তর দেবে, তত দ্রুত আলোচনা শুরু হবে।

জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে রাজনৈতিক দলগুলোকে একটি কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন মনে করি। বাংলাদেশে অতীতে যত অঘটন ঘটেছে, তার দায় আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব এড়াতে পারে না। তাদের ব্যর্থতার কারণেই গণ–অভ্যুত্থানের সুফল থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আগস্টের গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রে উত্তরণের যে সুযোগ এসেছে, তা কোনোভাবে হারানো যাবে না।

আশা করি, রাজনৈতিক দলগুলোর বোধোদয় হবে এবং দলগুলো প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতার পরিচয় দেবে। নির্বাচন ডিসেম্বরে না জুনে হলো, তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো দলগুলো রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে কতটা পরিবর্তন আনতে পারল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নির্বাচন বিলম্বিত হয় এমন সংস্কারকে ‘না’ বলবে বিএনপি
  • সংস্কার টেকসই করতে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলা হচ্ছে
  • বৃহস্পতিবার থেকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ শুরু
  • রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা শুরু বৃহস্পতিবার
  • সংস্কার কমিশনের ৯ সুপারিশে আপত্তি নির্বাচন কমিশনের
  • জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে লিখিত মতামত দিল এবি পার্টি 
  • সংস্কার কমিশনের সুপারিশের সঙ্গে ভিন্নমত জানিয়ে চিঠি দিল ইসি
  • নির্বাচন নিয়ে ধূম্রজাল বাড়াল ‘সংক্ষিপ্ত’ ও ‘বৃহৎ সংস্কার’
  • দলগুলোকে ঐকমত্যে আসতেই হবে