স্কুল-গোডাউন–কারখানার জন্য ভাড়া হবে রুনা সিনেমা হল
Published: 18th, March 2025 GMT
নরসিংদীর মনোহরদীর ঐতিহ্যবাহী রুনা প্রেক্ষাগৃহ আর থাকছে না। ৩৯ বছরের পুরোনো এই প্রেক্ষাগৃহটি এখন মাদ্রাসা, স্কুল, অফিস, বিমা, ব্যাংক, কারখানা, রেস্টুরেন্ট, শপিং মল ও গোডাউনের জন্য ভাড়া দেওয়া হবে। দুই সপ্তাহ ধরে এমন একটি নোটিশ বোর্ড ঝুলছে ‘রুনা’ প্রেক্ষাগৃহের সামনে। প্রথম আলোকে ব্যবসার ধরন বদলের খবরটি জানিয়েছেন প্রেক্ষাগৃহের প্রতিষ্ঠাতা মালেক মিয়ার পুত্র ফারুক হোসেন, তিনিই এখন এই প্রেক্ষাগৃহ পরিচালনা করছেন।
রুনা প্রেক্ষাগৃহের অবস্থান নরসিংদী জেলার মনোহরদী উপজেলার চালাকচর ইউনিয়নে। গত কয়েক বছর ক্রমাগত আর্থিক লোকসানে প্রেক্ষাগৃহটি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
১৯৮৬ সালে ‘রুনা’ প্রেক্ষাগৃহ প্রতিষ্ঠা করেন মালেক মিয়া। বাবার পর ১৯৯৮ সাল থেকে এই প্রেক্ষাগৃহের যাবতীয় তদারকি করছেন পুত্র ফারুক হোসেন, তিনিই স্বত্বাধিকারী। প্রেক্ষাগৃহ বন্ধের বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করে ফারুক হোসেন বলেন, ‘আর কত আর্থিক ক্ষতি গুনব? কর্মচারীর বেতন থেকে ইউটিলিটি বিল যদি পকেট থেকে দিতে হয়, তাহলে এ ব্যবসা করে কী হবে। তাই অন্য প্রতিষ্ঠানের কাছে ভাড়া দিয়ে দিচ্ছি।’
একসময় নরসিংদীর ছয় উপজেলায় সিনেমা হল ছিল ১৮টি। মনোহরদী উপজেলায় ছিল ‘পিপাসা’ ও ‘রুনা’ প্রেক্ষাগৃহ। এর আগে ‘পিপাসা’ বন্ধ হলেও টিকে ছিল ‘রুনা’। কিন্তু ২০২২–এর পর থেকে আশানুরূপ ব্যবসা হচ্ছিল না। নতুন কোনো ছবিও মুক্তি দেওয়া হয়নি বলে জানালেন প্রেক্ষাগৃহ কর্তৃপক্ষ। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছিল প্রতিষ্ঠানটি। এবার তাই একেবারেই বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। এর মধ্য দিয়েই প্রেক্ষাগৃহটির ৩৯ বছরের পথচলা আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ হচ্ছে।
কয়েক বছর ধরে ব্যবসায়িক অবস্থা খারাপ হলেও একটা সময় রমরমা ছিল। দর্শকের উপচে পড়া ভিড় থাকত এই প্রেক্ষাগৃহে। রুনা প্রেক্ষাগৃহে ব্যবসায়িক ভালো সময়ও দেখার সুযোগ হয় ফারুক হোসেনের। তিনি জানান, আশপাশের উপজেলা থেকে নানা বয়সী দর্শকেরা ছুটে আসত। হাউসফুল থাকত প্রায় প্রতিটা শো। চেয়ার শেষ হয়ে, বেঞ্চিতে বসাতে হতো দর্শকদের। আত্মীয় থেকে বন্ধুরা আগে থেকেই টিকিটের জন্য অনুরোধ করতেন। কিন্তু গত কয়েক বছর অনেক চেষ্টা করেও টিকিয়ে রাখা যাচ্ছে না। ফারুক হোসেন বলেন, ‘আমি যত দূর জানি আমাদের এই হলটি সবচেয়ে বেশি ব্যবসা করেছে ‘লাইলী মজনু’ ও ‘বেদের মেয়ে জোস্না’ সিনেমায়। পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে ব্যবসা করেছে শাকিব খান অভিনীত ‘নবাব’ সিনেমায়।’
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির কাছ থেকে পাওয়া তথ্যমতে, নব্বই দশকে দেশে প্রায় সাড়ে ১২০০ প্রেক্ষাগৃহ ছিল। একের পর এক প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ হয়ে সেই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে দেড় শতে। এর মধ্যে প্রায় ৬৫টি থেকে ৭০টি প্রেক্ষাগৃহ চলছে পুরোদমে। সবশেষ বন্ধ হয় ময়মনসিংহের ‘পূরবী’। তালিকায় এবার যুক্ত হলো মনোহরদী উপজেলার চালাকচরের ‘রুনা’ প্রেক্ষাগৃহ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এই প র ক ষ গ হ উপজ ল ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
গ্রীষ্মের বার্তা নিয়ে প্রকৃতিতে হাজির কৃষ্ণচূড়া
ঋতুচক্রে প্রকৃতিতে এখন গ্রীষ্মকাল। সেই গ্রীষ্মের বার্তা নিয়ে প্রকৃতিতে হাজির কৃষ্ণচূড়া। কাঠফাটা রোদ্দুরকে যেন সহনীয় করে দেয় কৃষ্ণচূড়া!
গ্রামবাংলার নানা প্রান্তে প্রকৃতিতে রং ছড়াচ্ছে বর্ণিল কৃষ্ণচূড়া। তবে শুধু গ্রামবাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলেই নয়, ইট-পাথরের নগরেও দেখা মিলছে কৃষ্ণচূড়ার। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকা ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশের কয়েকটি এলাকা ঘুরে আগুনরঙা হয়ে কৃষ্ণচূড়া ফুটে থাকতে দেখা গেছে।
জাতীয় পরিবেশ পদকপ্রাপ্ত কুমিল্লার পরিবেশ ও কৃষি সংগঠক মতিন সৈকত প্রথম আলোকে বলেন, যাঁরা ফুলপ্রেমী মানুষ, তাঁদের কাছে কৃষ্ণচূড়া বেশ পছন্দের ফুল। বাংলা কাব্য, সাহিত্য ও সংগীতে এসেছে এই ফুলের কথা। শুধু কবি–সাহিত্যিক নয়, কুমিল্লার পথচারী থেকে শুরু করে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের চোখ জুড়িয়ে দেয় কৃষ্ণচূড়া।
কুমিল্লা নগরের ধর্মসাগরপাড়, নগর উদ্যান, বাদুরতলা, অশোকতলা, হাউজিং এলাকা, রানির দিঘির পাড়, জেলা স্কুল রোড, চর্থা, উনাইসার, বিমানবন্দর এলাকা, দিশাবন্দ, ছোট ধর্মপুর এলাকা এবং জেলার ১৭টি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে কমবেশি দেখা মিলছে কৃষ্ণচূড়ার। এ ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে চলাচলের সময় কুমিল্লা সদর দক্ষিণের সুয়াগাজী এলাকা, চৌদ্দগ্রাম উপজেলার মিয়াবাজার, মিরশ্বান্নি এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্য চোখে পড়ছে।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, গ্রীষ্মকাল শুরুর আগে থেকেই কৃষ্ণচূড়া ফুলটি ফুটতে শুরু করে। নানা জাতের পাখির আনাগোনা বাড়তে থাকে গাছটিকে ঘিরে। বিশেষ করে জাতীয় পাখি দোয়েল, টুনটুনি, চড়ুই, বুলবুল পাখির সরব উপস্থিতি থাকে সারা বেলা। শরীরে রক্তিম আভা মেখে কৃষ্ণচূড়া সারাক্ষণ সবুজ বনভূমি–তৃণভূমিকে আলোকিত করে রেখেছে। কৃষ্ণচূড়ার তুলনা শুধু কৃষ্ণচূড়াই। রঙে, রূপে, উজ্জ্বলতায় ও কমনীয়তায় কোনো কিছুই যেন কৃষ্ণচূড়ার সমকক্ষ নয়।
মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন বলেন, বসন্তের শেষ দিকে সাধারণত কৃষ্ণচূড়ার পাতা ঝরে পড়তে শুরু করে। ধীরে ধীরে পত্রহীন বাঁকানো ডালগুলোতে দেখা যায় কলির আভাস। অন্যান্য ফুল গাছে যখন নতুন পাতা আসে, কিন্তু ফুল আসে না; ঠিক তখনই কৃষ্ণচূড়ার সব পাতা ঝরে গিয়ে ফুলের কলি দেখা দেয়। আর গ্রীষ্মের শুরুর সময়টাতে দেখা যায় লালের আভাস।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী শারমিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, কৃষ্ণচূড়া ফোটার এই সময়টা তাঁর অন্য রকম ভালো লাগে। এ ভালো লাগার কথা মুখে বলে প্রকাশ করা যাবে না।