কুমিল্লার চান্দিনায় ঋণের কিস্তি আদায় শেষে ফেরার পথে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) দুই কর্মীকে তুলে নিয়ে নির্যাতন ও টাকা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ভুক্তভোগী দুজন অভিযোগ করেছেন, এলাকার চার বখাটে তাঁদের দুজনকে জোর করে তুলে নিয়ে যায়। পুরুষ কর্মীকে গাছে বেঁধে বিদ্যুতের শক দেওয়া হয়। আর নারী কর্মীকে নগ্ন করে ভিডিও করা হয়। ওই ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তাঁর বোনের কাছ থেকে বিকাশে টাকা আদায় করা হয়।

চান্দিনা পৌরসভার তুলাতলী দক্ষিণপাড়া দিঘির পাড়ের একটি বাগানে গতকাল সোমবার সন্ধ্যা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত এই ঘটনা ঘটে। পরে স্থানীয় লোকজন টের পেয়ে বখাটেদের ধাওয়া দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ওই দুজনকে উদ্ধার করে চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় আজ মঙ্গলবার দুপুরে ভুক্তভোগী পুরুষ কর্মী বাদী হয়ে চারজনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা করেছেন।

আসামিদের বাড়ি তুলাতলী ও এর আশপাশের এলাকায়। তবে পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে আসামিদের নাম প্রকাশ করতে রাজি হয়নি। এ বিষয়ে আজ বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে চান্দিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, নির্যাতিত পুরুষ কর্মী অপহরণ, মুক্তিপণ আদায় ও চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলাটি করেছেন। আসামিরা পলাতক। তাঁদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

ভুক্তভোগী দুজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সোমবার ইফতারের পর তাঁরা দুজন উপজেলার তুলাতলী গ্রামে ঋণের কিস্তি আদায় করতে যান। সেখান থেকে বের হতেই চার বখাটে যুবক তাঁদের আটক করে তুলাতলী গ্রামের শেষে এতবারপুর গ্রামের মালিবাড়ি–সংলগ্ন একটি মৎস্য খামারের পাড়ে নিয়ে যান। তাঁদের আদায় করা কিস্তির টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এমন সময় স্থানীয় রুহুল আমিন নামে এক ব্যক্তি তাঁদের দেখে ফেলেন। তখন সেখান থেকে তাঁদের তুলাতলী দক্ষিণপাড়া দিঘির পাড়ে নির্জন বাগানে নিয়ে আটকে রাখা হয়। এ সময় পুরুষ কর্মীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে বিদ্যুতের শক দেওয়া হয় আর নারী কর্মীর হাত-পা ও মুখ বেঁধে নগ্ন করে মুঠোফোনে ভিডিও করা হয়। ওই ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে আবার চাঁদা দাবি করা হয়। ওই নারী কর্মী তাঁর বোনকে মুঠোফোনে কল করে বখাটেদের বিকাশ নম্বরে ২০ হাজার টাকা পাঠাতে বলেন। ওই টাকা পাওয়ার পরও তাঁদের নির্যাতন করা হয়। একপর্যায়ে গ্রামের লোকজন টের পেয়ে ডাকাত বলে ধাওয়া করলে বখাটেরা পালিয়ে যান।

মামলার বাদী বলেন, ‘আমাকে এত নির্যাতন করা হয়েছে যে আমি চিৎকার করার শক্তি হারিয়ে ফেলেছিলাম। আমার সহকর্মীর মুখ বেঁধে রাখায় সে–ও চিৎকার করতে পারেননি। একপর্যায়ে মুখের বাঁধন খুলে গেলে আমার সহকর্মী জোরে জোরে চিৎকার করেন। তখন গ্রামবাসী এসে আমাদের উদ্ধার করেন।’

ভুক্তভোগীদের বর্ণনায়—নগ্ন করে নির্যাতনের কথা বলা হলেও মামলার এজাহারে তা উল্লেখ করা হয়নি। এ সম্পর্কে ওসি নাজমুল হুদা বলেন, ‘মামলার বাদী সাংবাদিকদের কাছে নারী কর্মীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের কথা বলেছেন। তবে এজাহারে বাদী সেটি উল্লেখ করেননি। তবে আমরা ঘটনাটি তদন্ত করে দেখছি।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প র ষ কর ম কর ম ক

এছাড়াও পড়ুন:

ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যানের বিদেশ যাওয়ার অনুমতির আদেশ হাইকোর্টে স্থগিত

ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান ওবায়দুল করিম ও তাঁর স্ত্রী আরজুদা করিমের বিদেশ যেতে অনুমতি দিয়ে ঢাকার মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত যে আদেশ দিয়েছিলেন, তা স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট।

জজ আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে দুদকের করা এক আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মোহাম্মদ আলী ও বিচারপতি শেখ তাহসিন আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার রুলসহ এ আদেশ দেন।

এর আগে ঢাকার মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত ১৬ মার্চ ওবায়দুল করিম ও তাঁর স্ত্রীকে বিদেশ যেতে অনুমতি দিয়ে আদেশ দেন। এই আদেশের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) হাইকোর্টে রিভিশন আবেদন করে, যার ওপর আজ শুনানি হয়।

আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আসিফ হাসান। ওবায়দুল করিম ও তাঁর স্ত্রীর পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম শুনানিতে অংশ নেন।

জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ১৬ মার্চ স্পেশাল জজ আদালতের দেওয়া আদেশ আগামী ২১ এপ্রিল পর্যন্ত স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। সেদিন হাইকোর্টে আবার শুনানি হবে।

দুদকের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আসিফ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান ও তাঁর প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং–সংক্রান্ত অভিযোগ বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। যে কারণে ওবায়দুল করিম, তাঁর স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদের বিদেশ যাওয়ার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়। প্রথমে স্পেশাল জজ আদালত বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দেন। পরবর্তী সময়ে ওবায়দুল করিম, তাঁর স্ত্রী ও মেয়ে বিদেশে যাওয়ার জন্য অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন। এতে ওবায়দুল করিমের চিকিৎসা ও ওমরাহ হজের জন্য এবং এ ক্ষেত্রে অ্যাটেনডেন্ট হিসেবে স্ত্রী ও মেয়ের বিদেশযাত্রার অনুমতি চাওয়া হয়। স্পেশাল জজ ওবায়দুল করিম ও তাঁর স্ত্রীকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিয়ে ১৬ মার্চ আদেশ দেন। এই আদেশের বিরুদ্ধে দুদক আবেদন করে। শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল দিয়ে স্পেশাল জজ আদালতের আদেশ আগামী ২১ এপ্রিল পর্যন্ত স্থগিত করেছেন।

ওবায়দুল করিম ও তাঁর স্ত্রীকে বিদেশ যেতে অনুমতি দিয়ে স্পেশাল জজ আদালতের ১৬ মার্চ দেওয়া আদেশ কেন বাতিল ঘোষণা করা হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়েছে বলে জানান দুদকের এই আইনজীবী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ