সম্রাট আওরঙ্গজেবের সমাধি সরানোর দাবি ঘিরে অশান্ত নাগপুর
Published: 18th, March 2025 GMT
মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সমাধি সরানোর দাবিকে ঘিরে মহারাষ্ট্রের নাগপুর শহর অশান্ত হয়ে উঠেছে। শহরের বিভিন্ন এলাকায় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কারফিউ জারি করা হয়েছে। সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগে গতকাল সোমবার রাতে শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে ৫০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এই পরিস্থিতির সূচনা হয় সম্ভাজি নগরকে কেন্দ্র করে। এই জেলার আগের নাম ছিল আওরঙ্গবাদ। বর্তমান নাম ছত্রপতি শিবাজির জ্যেষ্ঠ পুত্র সম্ভাজির নামে, সম্ভাজি নগর। সেখানেই খুলদাবাদ এলাকায় রয়েছে মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সমাধি। উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা সেই সমাধি সেখান থেকে সরানোর দাবি অনেক দিন ধরেই জানিয়ে আসছে। সম্প্রতি সেই দাবি জোরালো হয়ে উঠেছে। গত সোমবার নাগপুর শহরের মহল অঞ্চলে এই দাবিতে বেশ কয়েকটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের প্রতিনিধিরা জমায়েত করেন। সেই জমায়েতে আওরঙ্গজেবের একটি ছবি এবং সবুজ কাপড়ে ঢাকা এক প্রতীকী কবরে আগুনও লাগানো হয়।
ওই অগ্নিসংযোগের ঘটনার পর পরিস্থিতি সহিংস হয়ে ওঠে। বিভিন্ন এলাকায় যানবাহন ও দোকানে হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশও আক্রান্ত হয়। ওই হাঙ্গামায় অন্তত ২৫ জন পুলিশ কর্মী আহত হন। আহত হন অনেক সাধারণ মানুষও। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ লাঠিপেটা করে ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে।
নাগপুরের পুলিশ কমিশনার রবীন্দ্র সিংঘল জানান, শহরের মোট ১১টি থানা এলাকায় গত সোমবার রাত থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করা হয়েছে। অশান্তি ছড়ানোর অভিযোগে সোমবার রাতেই শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে ৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি থমথমে।
আওরঙ্গজেবের হাতে সম্ভাজি মহারাজের মৃত্যু হয়েছিল। সম্ভাজির জীবনকাহিনি নিয়ে সম্প্রতি এক হিন্দি সিনেমা তৈরি হয়েছে, ‘ছাওয়া’। তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে সেই সিনেমা। তাতে আওরঙ্গজেবের চরিত্রায়ণ মহারাষ্ট্রের অনেক মানুষকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে তা ছড়িয়ে পড়ে। এই ভাবাবেগকে হাতিয়ার করে কিছু উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আওরঙ্গজেবের সমাধি রাজ্য থেকে সরানোর পুরোনো দাবি নতুন করে তুলতে থাকে। তারা সমাধিক্ষেত্র গুঁড়িয়ে দেওয়ার কর্মসূচিও গ্রহণ করে। সে জন্য খুলদাবাদ অভিযানের ডাক দেওয়া হয়। অভিযান রুখতে জেলা প্রশাসন গত শনিবার থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের নেতাদের জেলায় ঢোকা নিষিদ্ধ করে দেয়। নাগপুর শহরের বিক্ষোভ মিছিল ছিল তারই প্রতিবাদ। বজরঙ্গ দল ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মতো সংগঠনও সেই আন্দোলনের পক্ষে থাকার কথা জানিয়েছিল।
সমাধি সরানোর দাবি ঘিরে মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক দলগুলো বিভক্ত। এই রাজ্যে বিজেপি তার দুই জোট শরিকের সঙ্গে ক্ষমতাসীন। মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফাডনবিশ নাগপুরের মানুষ। জনগণকে শান্ত থাকার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেছেন, নাগপুর শান্তির জায়গা। নাগপুরবাসী সর্বদা মানুষের সুখ-দুঃখের সঙ্গী। জনতা যেন শান্তি স্থাপনে পুলিশের সঙ্গে সহযোগিতা করে। তাঁর অভিযোগ, নাগপুরে যা ঘটেছে, তা তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে এক গভীর চক্রান্ত। কেন্দ্রে এনডিএ সরকারের শরিক রিপাবলিকান পার্টি আবার উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের দাবির সমালোচনা করে বলেছে, আওরঙ্গজেব ইতিহাসের এক চরিত্র। তাঁর সমাধি সরানোর দাবি ইতিহাসকেই বিকৃত করবে। কংগ্রেস বলেছে, মারাঠাভূমিতে আওরঙ্গজেব পরাস্ত হয়েছিলেন। এটাই ইতিহাস। তাঁর সমাধিও তাই এখানেই। সেই সমাধি সরানোর দাবি জানানোর অর্থ ইতিহাসের বিকৃতি ঘটানোর চেষ্টা। সম্ভাজি নগরের শিব সেনা (শিন্ডে) নেতারা আবার সমাধি সরিয়ে দেওয়ার পক্ষে। সব মিলিয়ে নাগপুর হয়ে উঠেছে অশান্ত।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর স থ ত শহর র ব স মব র এল ক য়
এছাড়াও পড়ুন:
ভারতে সম্রাট আওরঙ্গজেবের সমাধি সরানো নিয়ে ব্যাপক সহিংসতা, কারফিউ
মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সমাধি সরানোর দাবিকে ঘিরে ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে ভারতের মহারাষ্ট্রে। সহিংসতার এই ঘটনার জেরে দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় এই রাজ্যটির নাগপুর শহরের বেশ কয়েকটি এলাকায় কারফিউ জারি করা হয়েছে। খবর এনডিটিভির।
১৭ শতকের সম্রাটের সমাধি আওরঙ্গবাদে অবস্থিত, যা বর্তমানে ছত্রপতি সম্ভাজিনগর জেলা নামে পরিচিত।
নাগপুরের পুলিশ কমিশনার রবীন্দ্র কুমার সিঙ্গাল ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতার ১৬৩ ধারার অধীনে একটি নোটিশ জারি করেছেন।
আরো পড়ুন:
চাঁপাইনবাবগঞ্জে ভারতীয় নাগরিকের মরদেহ ফেরত
বাংলাদেশ নিয়ে গণমাধ্যমের ভিত্তিহীন বক্তব্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ
এতে বলা হয়েছে, কোতোয়ালি, গণেশপেঠ, তহসিল, লাকাদগঞ্জ, পাচপাওলি, শান্তিনগর, সক্করদারা, নন্দনবন, ইমামওয়াদা, যশোধরানগর এবং কপিলনগর থানা এলাকায় কারফিউ প্রযোজ্য। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে।
পুলিশ কমিশনারের নোটিশ অনুযায়ী, কট্টর উগ্র হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠী বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং বজরং দলের সমর্থকরা গতকাল সোমবার (১৭ মার্চ) নাগপুরের মহল এলাকায় শিবাজি মহারাজের মূর্তির কাছে জড়ো হয়ে মহারাষ্ট্র থেকে আওরঙ্গজেবের সমাধি সরিয়ে নেয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করেন। এসময় তারা বিভিন্ন স্লোগান দেন এবং আওরঙ্গজেবের ছবি এবং 'ঘাসে আবৃত্ত সবুজ কাপড়ে মোড়া একটি প্রতীকী সমাধিও' আগুনে পুড়িয়ে দেয়।
প্রতিবেদন অনুসারে, সবুজ কাপড়টি পোড়ানোর ফলে ‘গুজব’ ছড়িয়ে পড়ে। কারণ অনেকে দাবি করে, এতে পবিত্র আয়াত লেখা ছিল, যার ফলে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। নোটিশে বলা হয়েছে, গত সন্ধ্যায় একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের প্রায় ৮০ থেকে ১০০ সমর্থক হিংসাত্মক হয়ে ওঠেন। পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছোঁড়া হয় এবং বেশ কয়েকটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে এবং টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। সেখানে পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআইয়ের প্রতিবেদন অনুসারে, সহিংসতায় চারজন আহত হয়েছেন। এক ডজনেরও বেশি পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন।
ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং নাগপুরের তিনবারের সংসদ সদস্য নীতিন গড়করি সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান এবং গুজবে বিশ্বাস না করার জন্য জনগণকে অনুরোধ করেছেন। নাগপুরের এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘আমি আপনাদের সবাইকে আশ্বস্ত করছি, যারা ভুল করেছেন বা অবৈধ কার্যকলাপে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। মুখ্যমন্ত্রীকে ইতোমধ্যেই এই পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে, তাই আমি সকলকে ‘গুজবে’ কান না দেয়ার জন্য অনুরোধ করছি।”
সহিংসতার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৫০ জনকে আটক করা হয়েছে। এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা দেবেন্দ্র ফড়নবিশ আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে জনগণকে পুলিশের সঙ্গে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি নাগরিকদের ‘গুজবে’ বিশ্বাস না করার এবং আইন নিজের হাতে না নেওয়ার জন্যও আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “নাগপুর শান্তিপ্রিয় শহর এবং একে অপরের সুখ-দুঃখে অংশগ্রহণ করে। এমন পরিস্থিতিতে, কোনও ধরনের ‘গুজবে’ বিশ্বাস করবেন না এবং প্রশাসনকে সহযোগিতা করুন।”
মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, “যারা সহিংসতার আশ্রয় নেয় তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। যদি কেউ পুলিশের ওপর আক্রমণ করে, তবে তা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নেয়া হবে।”
অন্যদিকে মহারাষ্ট্রের বিরোধী দল সহিংসতার জন্য রাজ্য সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছে। শিবসেনা ইউবিটি বিধায়ক আদিত্য ঠাকরেসোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেয়া এক পোস্টে বলেছেন, “রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা আগের চেয়ে অনেক ভেঙে পড়েছে। মুখ্যমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নিজ শহর নাগপুর এই ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে।”
কংগ্রেস নেতা পবন খেরা বলেছেন, ‘নাগপুর তার অস্তিত্বের ৩০০ বছরে দাঙ্গার সম্মুখীন হয়নি। গত বেশ কয়েকদিন ধরে, ৩০০ বছরের পুরোনো ইতিহাসকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে বিভাজন, বিভ্রান্তি এবং অস্থিরতা তৈরি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এই সংঘর্ষগুলো কেন্দ্র এবং রাজ্য উভয় ক্ষেত্রেই শাসকগোষ্ঠীর আদর্শের আসল চেহারা উন্মোচিত করছে।’
ঢাকা/ফিরোজ