ইয়েমেনের হুতিরা লোহিত সাগরে ইসরায়েলি জাহাজের ওপর পাল্টা হামলা চালাতে ‘পিছপা’ হবে না। ইয়েমেনি হুতিদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক চাপ কিংবা ইরানের মতো মিত্রের কাছ থেকে আবেদনও তাদের হুতিদের হামলার গতি রোধ করতে পারবে না। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত সপ্তাহে ইয়েমেনের ইরান-সমর্থিত হুতিদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় একের পর এক হামলা শুরু করেছে। ইরানের দুই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, উত্তেজনা প্রশমিত করার জন্য ইরান শুক্রবার তেহরানে হুথি দূতকে মৌখিক বার্তা দিয়েছে এবং ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রবিবার মাস্কাট সফরের সময় হুতিদের সাথে মধ্যস্থতাকারী ওমানকে একই বার্তা দিতে বলেছিলেন। উভয় কর্মকর্তাই নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়েছেন।

হুতিদের নতুন করে নেওয়া পদক্ষেপের বিষয়ে সাম্প্রতিক যোগাযোগের বিষয়ে ইরান প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেনি। তেহরান জানিয়েছে, এই দলটি স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেয়।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার জানিয়েছেন, হুতিদের দ্বারা পরিচালিত যেকোনো হামলার জন্য তিনি ইরানকে দায়ী করবেন।

সোমবার রাতে হুতি সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জামাল আমের রয়টার্সের সাথে কথা বলেছেন, "গাজায় ত্রাণ অবরোধ শেষ না করা পর্যন্ত কার্যক্রম বন্ধ করার কোনো আলোচনা হবে না। ইরান আমাদের সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করছে না, তবে যা ঘটছে তা হল তারা মাঝে মাঝে মধ্যস্থতা করে কিন্তু কিছু বিষয়ে নির্দেশ দিতে পারে না।”

তেহরানে হুতি দূতকে ইরান কোনো বার্তা দিয়েছে কিনা সে সম্পর্কে তাকে অবহিত করা হয়নি উল্লেখ করে আমের জানান, অন্যান্য পক্ষ থেকে ফোনে করে বার্তা দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, “এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি যে ইয়েমেন আমেরিকার সাথে যুদ্ধে লিপ্ত এবং এর অর্থ হল আমাদের সকল সম্ভাব্য উপায়ে আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে, তাই উত্তেজনা বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।”
 

ঢাকা/শাহেদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

চিন্তায় ফেলা আলুই এনেছে স্বস্তির হাসি

সারাবছরের সংসার খরচ। ছেলেমেয়ের পড়াশোনা। আছে ঋণের বোঝা। সবকিছুর জন্য আলুর ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল উত্তরের কৃষক। কিন্তু কিছু মুনাফালোভীর কারসাজির কারণে হিমাগারে আলু রাখতে পারেননি তারা। এতে অনেক চাষিই মুষড়ে পড়েছিলেন। কিন্তু তাদের জন্য সুখবর নিয়ে এসেছে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। তারা কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি আলু কিনে বিদেশে পাঠাচ্ছে। ফলে যে আলু নিয়ে দু’দিন আগেও কৃষকের কপালে ছিল চিন্তার ভাঁজ, তাদের মুখেই এখন চওড়া হাসি।
কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার জুয়ানসেতরা চরের কৃষক লুৎফর রহমান হাজি। তিনি ছয় একর জমিতে আলু চাষ করেছেন। ফলন ভালো পেয়েছেন। কিন্তু দাম পাচ্ছিলেন না। আবার হিমাগারেরও ব্যবস্থা করতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘আলু নিয়া কী যে বিপদে পড়ছিলাম, তা কয়য়া সারন যাইত না। শ্যাষে কোম্পানি আইসা আমাগোর আলুর বিহিত হইছে। দামও ভালা পাইছি।’
রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানটি রাজধানী ঢাকাভিত্তিক। বারুন ক্রোপ কেয়ার লিমিটেড ও বারুন এগ্রো লিমিটেড। তারা সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে আলু কিনে প্যাকেটজাত করে বিদেশে পাঠাচ্ছে। শুধু উলিপুর নয়; গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ, নীলফামারী, রংপুরের কাউনিয়া থেকেও আলু কিনছে প্রতিষ্ঠানটি। এসব আলুর গন্তব্য মালয়েশিয়া, দুবাই, ব্রুনাই, সিঙ্গাপুর, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা। 
প্রতিষ্ঠানটির ভাষ্য, উলিপুর চরের আলুর মান খুব ভালো। অল্প পরিমাণে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করায় এখানকার আলু দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। ফলে পুষ্টিমান ভালো। খেতেও সুস্বাদু। একই ভাষ্য উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মোস্তফা কামালেরও।  
উলিপুর থেকে ১৮-১৯ টাকা কেজি দরে আলু কিনছে রপ্তনিকারক প্রতিষ্ঠান। চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত পৌঁছাতে প্রতি কেজিতে খরচ পড়ছে আরও ২ টাকা ৫০ পয়সা। বিদেশে রপ্তানি করে কেজিতে কী পরিমাণ লাভ হবে, তা জানা সম্ভব হয়নি।
এই উপজেলার আরেকটি চর গোড়াই পিয়ার। সেখানকার কৃষক রানা মিয়া। তিনিও আলুর বাম্পার ফলন পেয়েছেন। ১৬ একর জমিতে চাষ করেছিলেন। কিন্তু আলু সংরক্ষণের জন্য হিমাগারে বারবার ধরনা দিয়েও একটা স্লিপ জোগাড় করতে পারেননি। দালালের শরণাপন্ন হলেও কাজ হয়নি। 
কৃষক রানা মিয়াও বারুন গ্রুপের কাছে আলু বিক্রি করেছেন। যে কষ্টের ফসল সত্যিই কষ্টের বোঝা হয়ে উঠেছিল, সেই আলু নিয়ে তিনিই এখন স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন। তিনি ১৭ একরে চাষ করে পেয়েছেন ২৫ টন। কোম্পানির কাছে বিক্রি করেছেন ১৯ টন। তাদের মতো নুর ইসলাম ও মিন্টু মিয়াও আলু বিক্রি করে লাভবান হয়েছেন। মিন্টুর ৬ একরে উৎপাদন হয়েছে ১০ টন। কোম্পানি নিয়েছে ৬ টন। 
বারুন গ্রুপের স্থানীয় সরবরাহকারী আবু ইমরান। তিনি বলেন, বিদেশিরা ভালো মানের আলু ছাড়া নেয় না। তাই সান সাহিন জাতসহ উন্নত জাতের আলু কিনে বিভিন্ন দেশে পাঠাচ্ছেন তারা। উলিপুর থেকে চার হাজার টন আলু নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে ২ হাজার টনের বেশি কেনা হয়েছে।
১০০ কনটেইনারে ২ হাজার ৮০০ টন আলু বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বারুন ক্রোপ কেয়ার লিমিটেডের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. ছাদেকুল ইসলাম।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোশারফ হোসেন বলেন, এ বছর উপজেলায় আলুর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২৮ হাজার ৬শ টন। উৎপাদন হয়েছে ৩৫ হাজার ১০০ টন। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ