আরব লিগের গাজা পরিকল্পনা নাকচ করে দিতে ট্রাম্পের কাছে কেন তদবির করছে আরব আমিরাত
Published: 18th, March 2025 GMT
গাজা উপত্যকায় যুদ্ধপরবর্তী সময়ে বাস্তবায়নের জন্য আরব লিগের অনুমোদিত পরিকল্পনাটি প্রত্যাখ্যান করতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের কাছে তদবির করছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। যুক্তরাষ্ট্র ও মিসরের কর্মকর্তারা মিডল ইস্ট আইকে এ কথা বলেছেন।
গাজা পরিকল্পনার খসড়াটি তৈরি করেছে মিসর। আরব লিগ তা অনুমোদন করেছে। এ পরিকল্পনা অনুযায়ী, গাজা পুনর্গঠনে ৫ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের প্রয়োজন হবে। পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নে গাজার বাসিন্দাদের বাস্তুচ্যুত করার প্রয়োজন হবে না। এর আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গাজার বাসিন্দাদের মিসর ও জর্ডানে পাঠিয়ে গাজায় উপকূলীয় পর্যটন শহর গড়ে তোলার প্রস্তাব দেন।
আরব লিগে অনুমোদন পাওয়া প্রস্তাবটি নিয়ে বিভাজন ক্রমাগত জোরালো হয়ে উঠছে। যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকদের আশঙ্কা, প্রস্তাবটি বাস্তবায়িত হলে ওই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হবে। গাজা উপত্যকার ভবিষ্যৎ শাসনব্যবস্থা ও পুনর্গঠন কেমন হবে, হামাসের সেখানে কতটা প্রভাব বজায় রাখা উচিত, এসব বিষয় নিয়ে আরব দেশগুলোও ওঠে–পড়ে লেগেছে।
আমিরাতের চাপের বিষয়টি কায়রোকে দোটানায় ফেলেছে। কারণ, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিসর—এ দুই দেশই গাজার প্রতিনিধি হিসেবে ফাতাহর নির্বাসিত সাবেক কর্মকর্তা মোহাম্মদ দাহলানকে ব্যাপকভাবে সমর্থন দিয়েছে।
আরব লিগের পরিকল্পনাকে সংযুক্ত আরব আমিরাত অকার্যকর বলে সমালোচনা করছে। তাদের অভিযোগ, কায়রো হামাসকে অত্যধিক প্রভাব বিস্তারের সুযোগ করে দিচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত আরব আমিরাতের দূত ইউসেফ আল ওতাইবা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠজনদের কাছে তদবির করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতারা বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের জায়গা দিতে মিসরকে চাপ দিচ্ছে। এ ঘটনা সম্পর্কে জানেন, এমন এক মার্কিন কর্মকর্তা এবং এক মিসরীয় কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
ওতাইবা এর আগে বলেছিলেন, ফিলিস্তিনিদের জোর করে গাজা উপত্যকার বাইরে পাঠিয়ে দিতে ট্রাম্প যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তার কোনো বিকল্প তিনি দেখছেন না।
মিসরভিত্তিক সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুডের একটি শাখা হামাস। মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে এ মুসলিম ব্রাদারহুডকে দমাতে চাইছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। মিসরের সেনাবাহিনীর নেতৃত্বাধীন সরকারও মুসলিম ব্রাদারহুডকে দমিয়ে রেখেছে। তবে হামাসের কর্মকর্তারা সেখানে কিছুটা স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারেন। মিসরীয় গুপ্তচরদের সঙ্গে কাসেম ব্রিগেডসহ হামাস সদস্যদের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক রয়েছে। আর সে সম্পর্কের বদৌলতে গাজায় যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করছে মিসর।
আরও পড়ুনগাজা নিয়ে বিকল্প প্রস্তাব গ্রহণ করল আরব দেশগুলো০৪ মার্চ ২০২৫মিসরের গাজা পরিকল্পনার সমালোচনা করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। তারা বলছে, হামাসকে কীভাবে নিরস্ত্র করতে হবে এবং তাদের গাজা উপত্যকা থেকে উৎখাত করতে হবে, তা প্রস্তাবে উল্লেখ করা নেই।
মিসরে কর্মকর্তারা বলছেন, তাঁদের পরিকল্পনাটি পরিষ্কার। আর তা হলো, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষই শাসনকার্য চালাবে। পরিকল্পনাটিতে গাজায় একটি নিরাপত্তা বাহিনী গঠনের কথা বলা হয়েছে। এ বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেবে জর্ডান ও মিসর। এতে গাজা এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের মোতায়েনের সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে।
হামাস বলেছে, তারা এই পরিকল্পনা মেনে নিয়েছে। আঞ্চলিক কূটনীতিকেরা বলছেন, ইসরায়েল এভাবে সংঘাতকে আন্তর্জাতিকীকরণের বিরুদ্ধে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নববর্ষে মেয়ের জন্ম, ডাক্তার খুশি হয়ে নাম রেখেছেন বৈশাখী
পহেলা বৈশাখে তৃতীয় সন্তান এসেছে চাঁদপুরের শাহাদাত হোসেন ও রিনা আক্তারের পরিবারে। বৈশাখের স্নিগ্ধ সকালে চাঁদপুর মা ও শিশু স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে মেয়ে সন্তান জন্ম নেয় তাদের ঘরে।
তাদের চরম এক টানাপড়েনের সংসারে বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে মেয়ের আগমনে বেশ খুশি শাহাদাত-রিনা দম্পতি। সকালে মেয়ের মিষ্টিমুখ দেখে চিকিৎসক এবং নার্স হাসপাতালে নবজাতকের নাম তালিকাভুক্ত করার সময় পরিবারের সদস্যদের ডেকে বলেন, ‘আজ বাংলা নববর্ষ এবং পহেলা বৈশাখ। তাই মেয়ের নামটি আমরা তালিকায় বৈশাখী দিয়ে দিলাম। খুশি তো?’ নবজাতকের মা-বাবা মাথা নেড়ে সায়ও দেন।
তবে চিকিৎসক আবার সঙ্গে সঙ্গে এটাও বললেন, ইচ্ছে করলে আপনারা এই বিশেষ দিনের নামটার সঙ্গে নিজেদের পছন্দের আরও নাম জড়িয়ে রাখতেই পারেন। সেটা আপনাদের বিষয়।
নবজাতকের বাবা শাহাদাত হোসেন পেশায় একজন রিকশাচালক। ৮ বছর আগে দুই ছেলে- ৫ম শ্রেণির ছাত্র রহমত আর ছোট ছেলে মাদরাসায় পড়ুয়া ইসমাইলকে নিয়ে চলে আসেন চাঁদপুর জেলা শহরের রহমতপুর কলোনিতে। এখানে সেমিপাকা ছোট্ট এক রুমের ভাড়া বাসা নেন। তার মূল বাড়ি ফরিদগঞ্জ উপজেলার সকদী রামপুর গ্রামে। স্ত্রী রিনা আক্তারের বাড়িও একই উপজেলার পাশের গ্রামে।
শহরে এসে ভাড়ায় রিকশা চালান শাহাদাত। ৩'শ টাকা রিকশা মালিককে দেন আর এক দেড়-দুইশ টাকায় চলে সংসার।
বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখে জন্ম নেওয়া মেয়ে সন্তানটিকে নিয়ে কথা হয় শাহাদাত হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, রাত তিনটায় স্ত্রী রিনার প্রসব ব্যথা উঠে। ক্রমেই ব্যথা বাড়তে থাকলে একটা অটো ডেকে আমার এক ভাবীসহ বাসা থেকে আধা কিলোমিটার দূরে সরকারি মা ও শিশু স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে (মাতৃমঙ্গল নামে পরিচিত) নিয়ে যাই। সঙ্গে সঙ্গে দারোয়ান হাসপাতালের গেট খুলে দেয় এবং নার্স এসে আমার স্ত্রীকে বেডে নিয়ে যায়। পর পরই ডিউটি ডাক্তার আসেন।
তিনি বলেন, হাসপাতালের নিয়ম অনুযায়ী আমাকে গেটের বাহিরে অপেক্ষা করতে বলে। তবে চিকিৎসক নার্সরা আমার ভাবীকে বলেন, চিন্তা করবেন না, সব কিছু ঠিক আছে। ইনশাআল্লাহ, উনার নরমাল ডেলিভারিই হবে এবং মা আর গর্ভের সন্তান ভালো আছে।
শাহাদাত হোসেন বলেন, হাসপাতালের বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে ভোরের আলো ফুটে যায়। আর সে সময়ই হাসপাতালের পাশের অফিসার্স ক্লাব থেকে ভেসে আসছিল নববর্ষের গান। ঠিক তখনই গেট খুলে দিয়ে দারোয়ান বলেন ভেতরে আসেন আপনি মেয়ের বাবা হয়েছেন। তখন আল্লার কাছে শুকরিয়া আদায় করলাম। ডাক্তার এবং নার্স বললেন- সকাল সাড়ে আটটায় আপনার মেয়ে জন্ম নিয়েছে। একটা স্যালাইন আর সামান্য কিছু ওষুধ দেওয়া হয়েছে। স্যালাইন শেষ হলেই ১০টার মধ্যেই বাসায় নিয়ে যেতে পারবেন। আর বাচ্চার ওজন ২ কেজি ৯ শ গ্রাম।
পহেলা বৈশাখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আপনার মেয়েকে কি উপহার দিলো, এমন প্রশ্নের জবাবে সরল হাসি দিয়ে রিকশাচালক শাহাদাত হোসেন বলেন, এই ভোররাতে তারা আমার বউ আর সন্তানের সেবায় একটুও হেলা করেনি। এটাই আমার মতো গরীব বাবার কাছে অনেক বড় উপহার। এর আগেও এই হাসপাতালে দুই-একবার গিয়েছিলাম। তারা তখনও অনেক যত্ন নিয়ে চিকিৎসা দিয়েছিলেন।
মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের চিকিৎসক মেহেদী আল মাসুদ জানান, নববর্ষের প্রথম প্রহরের রোগী রিনা আক্তার। তার চিকিৎসার কোনরূপ হেলা করিনি আমরা। আর এখানে আগে থেকেই আমরা গর্ভবতী মায়েদের প্রসব এবং অন্যান্য চিকিৎসাগুলো দিয়ে থাকি।
শাহাদাত হোসেন বলেন, গরীব ঘরের মেয়েকে কতদিন নিজের কাছে আগলে রাখতে পারবো আল্লাহই ভালো জানেন। তবে যথাসম্ভব চেষ্টা করবো মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মনুষ করার।
তিনি আরও বলেন, আমার মেয়ে যেন সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে বেচে থাকে সবাই এই দোয়া করবেন।