কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের পুরোনো একটি পোস্টে মন্তব্য করাকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা–কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বেশ কয়েকটি বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাসদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

গতকাল সোমবার রাতে উপজেলার আলকরা ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আজ মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি এবং কেউ থানায় মামলাও করেনি বলে জানিয়েছেন চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিলাল উদ্দিন আহমেদ।

আহত ব্যক্তিদের মধ্যে জামায়াতের পক্ষের লক্ষ্মীপুর গ্রামের মোহাম্মদ তারেক, আবু হানিফ, জাহিদ হোসেন, শাকিল হোসেন, সজীব হোসেন, নাছির উদ্দিন, একরামুল হক ও বিএনপির পক্ষের মোহাম্মদ সবুজ, নাহিদ হোসেন, রিসাদ মিয়া, মো.

ইউনুছ মিয়া, সুমন মিয়া, আবুল কালাম ও আবুল কাশেমের নাম জানা গেছে।

পুলিশ ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আলকরা ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের জামায়াতের সমর্থক মোহাম্মদ তারেক চৌধুরীর বিরুদ্ধে ২০২০ সালে একটি ধর্ষণের মামলা হয়। তখন বিষয়টি নিয়ে অনেকে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। ১৩ মার্চ পুরোনো একটি স্ট্যাটাসে মন্তব্য করেন স্থানীয় যুবদলের কর্মী হৃদয়। এর জেরে ১৬ মার্চ হৃদয়কে লক্ষ্মীপুর বাজারে মারধর করেন জামায়াত–শিবিরের নেতা–কর্মীরা। পরে বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসার জন্য গতকাল রাতে বৈঠক বসে। বৈঠককে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের দুই শতাধিক লোক জড়ো হন। রাত আটটার দিকে বৈঠক চলাকালে বাগ্‌বিতণ্ডার এক পর্যায়ে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

সংঘর্ষে জামায়াতের অন্তত আটজন আহত হন। তাঁদের মধ্যে একজনকে কুমিল্লা সদর হাসপাতালে, তিনজনকে ফেনীর একটি হাসপাতালে ও চারজনকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়। বিএনপির আহত ২০ জনের মধ্যে দুজনকে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন বলে জানা গেছে।

আলকরা ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক শরিফ হোসেন বলেন, ২০২০ সালে জামায়াত–সমর্থক মোহাম্মদ তারেক চৌধুরীর বিরুদ্ধে এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়। তখন স্থানীয় লোকজন এ নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেন। ১৩ মার্চ পুরোনো একটি পোস্টে যুবদলের কর্মী হৃদয় মন্তব্য করেন, ‘এ ঘটনায় তো এখনো ধর্ষণকারীর বিচার হয়নি।’ এর জেরে তাঁরা হৃদয়কে মারধর করেন। ঘটনাটি মীমাংসার কথা বলে গতকাল রাতে তাঁদের ডেকে নিয়ে হামলা করেছেন। এতে তাঁদের ১০ থেকে ১২ জন আহত হন। জামায়াত–শিবিরের নেতা–কর্মীরা পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী হামলা করেছেন এবং বেশ কয়েকটি বাড়িঘর ভাঙচুর করেছেন।

জানতে চাইলে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি বেলাল হোসাইন বলেন, মূলত ফেসবুকে পুরোনো পোস্টে মন্তব্যকে কেন্দ্র করে একই গ্রামের দুই যুবকের বিরোধ সামাজিক বিরোধে রূপ নেয়। এ ঘটনা থেকেই সংঘর্ষের সূত্রপাত। বিএনপি এখন এটাকে ইস্যু বানিয়ে রাজনৈতিক রূপ দেওয়ার চেষ্টা করছে। তাঁরা শান্ত চৌদ্দগ্রামকে অশান্ত করতে চান না। বিএনপির এই অপরাজনীতির তীব্র নিন্দা জানাচ্ছেন তিনি। হামলায় তাঁদের সাত থেকে আটজন আহত হয়েছেন।

উপজেলা বিএনপির সভাপতি কামরুল হুদা বলেন, জামায়াতের নেতা–কর্মীরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিএনপির নেতা–কর্মীদের বাড়িঘরে হামলা করেছেন। তাঁরা এ ঘটনার বিচারের দাবি করেন।

যোগাযোগ করলে চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি হিলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, সংঘর্ষের খবর পেয়ে রাতে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে। মূলত ফেসবুকে মন্তব্যকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে। এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনো পক্ষই থানায় লিখিত অভিযোগ করেনি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক ন দ র কর ম হ ম মদ ব এনপ র এ ঘটন য় জন আহত কর ছ ন স ঘর ষ ব ড় ঘর ফ সব ক উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

টেকনাফে যুবক অপহরণ, দশ লাখ মুক্তিপণ দাবি  

কক্সবাজারের টেকনাফের পাহাড় থেকে মোহাম্মদ দেলোয়ার (২৫) নামে এক যুবককে অপহরণ করেছে সশস্ত্র গোষ্ঠী। এ ঘটনায় অপহরণকারী দশ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করছে। 

জানা যায়, মোহাম্মদ দেলোয়ার মারিশবনিয়া এলাকার মৃত আব্দুল করিম মিস্ত্রীর ছেলে।

সোমবার দুপুরে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন টেকনাফের বাহারছড়ার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফরিদ উল্লাহ। 

তিনি বলেন, সকালে এলাকার তিনজন মিলে পাহাড়ে ছন আনতে যায়। ওই সময় সশস্ত্র গোষ্ঠী ধাওয়া করে একজনকে ধরে নিয়ে যায়। অপর দুজন কোন রকম পালিয়ে এসেছে। এরপর দুপুরে অপহরণকারীরা অপহৃত পরিবারের কাছে ফোনে দশ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। 

এ বিষয়ে বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ (পরিদর্শক) শুভ রঞ্জন সাহা বলেন, এক যুবক অপহরণের বিষয়টি শুনেছি। এ ঘটনায় পুলিশ কাজ করছে। তবে মুক্তিপণের বিষয়টি আমরা অবগত নই।

এদিকে কক্সবাজার জেলা পুলিশ ও ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের তথ্য বলছে, এ নিয়ে গত ১৫ মাসে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ২৫০ জনকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। এদের মধ্য বেশির ভাগই মুক্তিপণ দিয়ে ফিরেছে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ