দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর উদ্বোধনের মাধ্যমে স্বপ্নের যমুনা রেল সেতুর দ্বার খুলল। প্রমত্তা যমুনার উপরে নবনির্মিত দেশের বৃহত্তম রেল সেতুতে ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন পারাপার শুরু হলো। ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার মূল সেতু ৩ মিনিট ২১ সেকেন্ডে পারাপারে উচ্ছাসিত সাধারণ মানুষ।

মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) দুপুর ১২টার ২৪ মিনিটে সিরাজগঞ্জের সয়দাবাদ রেলওয়ে স্টেশনে স্পেশাল ট্রেনটি পৌঁছায়। এর আগে ১২টার দিকে টাঙ্গাইলের ভুয়াপুর ইব্রাহিমবাদ স্টেশন থেকে ট্রেনটি সিরাজগঞ্জের সয়দাবাদ স্টেশনের উদ্দেশে ছেড়ে আসার মধ্য দিয়ে সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।

সয়দাবাদ রেলওয়ে স্টেশনে স্পেশাল ট্রেনটি পৌঁছার পর বেলা ১২টা ৪০মিনিটে সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো.

ফাহিমুল ইসলাম। এ সময় বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানি রাষ্ট্রদুত এইচ ই সাইদা শিনিচি, জাইকার সাউথ এশিয়া বিভাগের মহাপরিচালক ইতো তারুকী, যমুনা রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মাসউদুর রহমান, সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইল জেলার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

আরো পড়ুন:

দেশের ‘অগ্রগতির প্রমাণ’ যমুনা রেল সেতুর উদ্বোধন মঙ্গলবার

দুর্ভোগের কেন্দ্রবিন্দু ফরিদপুরের বেইলি ব্রিজ

যমুনা রেলসেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, জাপান ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ প্রকল্পের ব্যয় ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে ২৭ দশমিক ৬০ শতাংশ অর্থায়ন এসেছে দেশীয় উৎস থেকে এবং ৭২ দশমিক ৪০ শতাংশ ঋণ দিয়েছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি-জাইকা।

২০১৬ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের নকশা প্রণয়নসহ সেতুর নির্মাণ ব্যয় প্রথমে ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা ধরা হয়েছিল। পরবর্তীতে ২ বছর বাড়ানো হলে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা দাঁড়ায়। জাপানের ওটিজি এবং আই এইচ আই যৌথভাবে সেতুটি নির্মাণ করেছে।

১৯৯৮ সালে যমুনা বহুমুখী সেতু চালু হওয়ার পর ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। এই সেতুতে সড়ক পথের পাশাপাশি রেলপথ আছে। তবে ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দেওয়ায় ট্রেনের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়। সেতুটি দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৩৮টি ট্রেন পারাপার হতো। পরে সরকার যমুনা নদীর ওপর আলাদা রেল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়।

২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চ্যুয়ালি যমুনা রেল সেতুর নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০২১ সালের মার্চে পিলার নির্মাণের জন্য পাইলিং কাজ শুরু হয়। ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই রেল সেতু দেশের দীর্ঘতম প্রথম ডাবল ট্র্যাকের ডুয়েল গেজের সেতু। এটি ৫০টি পিলারের ওপর ৪৯টি স্প্যানে নির্মিত হয়েছে।

যমুনা রেল সেতু প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী তানভীরুল ইসলাম জানান, সমান্তরাল ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকের এ সেতুর প্রতিটি স্প্যানের ওপর জাপানিদের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির রেললাইন বসানো হয়েছে। এর ফলে সেতুর ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলাচল করতে পারবে।

তিনি বলেন, নির্মিত এই সেতুটি ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগে নতুন দিগন্ত সূচনা করবে। ঢাকার সঙ্গে রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা অঞ্চলের রেল যোগাযোগে বর্তমান যে বিড়ম্বনা রয়েছে সেটা আর থাকবে না। সেতুটি দিয়ে প্রতিদিন অন্তত ৮৮টি যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেন চলাচল করবে। কমে যাবে পরিবহন খরচও। সেই সঙ্গে মহাসড়কের ওপর চাপও অনেকটা কমে আসবে। উত্তরবঙ্গ থেকে বিভিন্ন পণ্য সহজে ঢাকাসহ সারা দেশ রপ্তানি করা সম্ভব হবে।
 

ঢাকা/রাসেল/বকুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রকল প র র ওপর র লওয় দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

সাক্ষাৎকারের ২৫ মিনিট আগে আসায় চাকরি হলো না প্রার্থীর

সময়ানুবর্তিতাকে ভালো গুণ হিসেবে দেখা হয়। বিশেষ করে চাকরির সাক্ষাৎকারের ক্ষেত্রে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। তবে অনেক সময় এই গুণ হিতে বিপরীত হতে পারে। এমন একটি ঘটনা সম্প্রতি পেশাদারদের যোগাযোগমাধ্যম লিংকডইনের একটি পোস্ট ছড়িয়ে পড়েছে, যা বিতর্ক উসকে দিয়েছে।

ওই পোস্টে একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিক বলেছেন, একজন চাকরিপ্রার্থী নির্দিষ্ট সময়ের আগে সাক্ষাৎকার দিতে আসায় তাঁকে বাদ দিয়েছেন।

ওই ব্যক্তির নাম ম্যাথু প্রিওয়েট। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টা রাজ্যে একটি পরিচ্ছন্নতা প্রতিষ্ঠানের মালিক। ঘটনাটি তিনি নিজেই লিংকডইনে শেয়ার করেছেন। তিনি বলেছেন, অফিসের প্রশাসক পদের জন্য একজন চাকরিপ্রার্থী সাক্ষাৎকারের জন্য নির্ধারিত সময়ের ২৫ মিনিট আগে উপস্থিত হয়েছেন। ওই প্রার্থীকে নিয়োগ না দেওয়ার সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে এটি একটি প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন তিনি।

পোস্টটি আলোচিত হওয়া শুরু করলে এর কারণ ব্যাখ্যা করেন প্রিওয়েট। তিনি বলেন, যদিও চাকরির সাক্ষাৎকারে একটু আগে পৌঁছানো প্রশংসনীয় কাজ। তবে সময়ের অনেক আগে পৌঁছানো দুর্বল সময় ব্যবস্থাপনা বা সামাজিক সচেতনতার অভাবকে ইঙ্গিত দিতে পারে।

প্রিওয়েট ব্যাখ্যা করে বলেন, তাঁর অফিসটি ছোট। ওই প্রার্থী আগেভাগে আসায় তাঁকে অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে। কারণ, তিনি ব্যবসাসংক্রান্ত ফোনকল শুনে ফেলতে পারেন।

প্রিওয়েট জোর দিয়ে বলেন, সাক্ষাৎকারের শিষ্টাচার অনুযায়ী সাধারণত প্রার্থীরা ৫ থেকে ১৫ মিনিট আগে পৌঁছাতে পারেন। তবে এর বেশি হলে তাঁকে অবিবেচক মনে হতে পারে।

ওই ব্যবসায়ীর পোস্টটি দ্রুত ভাইরাল হয়। অনেকেই পক্ষে–বিপক্ষে মতামত দেন। কেউ কেউ তাঁর সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেন। তবে অনেকে প্রার্থীর পক্ষও নিয়েছেন।

পোস্টের নিচে একজন মন্তব্য করেছেন, ‘কাজটি ঠিক হয়নি। কী হাস্যকর মূল্যায়ন! তাঁকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিন। আমি তাঁকে এখনি চাকরি দেব।’

আরেকজন লিখেছেন, ‘যদি তাঁর একমাত্র পরিবহন বাস হয়ে থাকে, অথবা আসার সময়ের ওপর তাঁর কোনো নিয়ন্ত্রণ না থেকে থাকে? তাহলে তিনি দেরি না করার জন্য যা করার ছিল, তাই করতেন।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ