খুলল স্বপ্নের যমুনা রেল সেতুর দ্বার
Published: 18th, March 2025 GMT
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর উদ্বোধনের মাধ্যমে স্বপ্নের যমুনা রেল সেতুর দ্বার খুলল। প্রমত্তা যমুনার উপরে নবনির্মিত দেশের বৃহত্তম রেল সেতুতে ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন পারাপার শুরু হলো। ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার মূল সেতু ৩ মিনিট ২১ সেকেন্ডে পারাপারে উচ্ছাসিত সাধারণ মানুষ।
মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) দুপুর ১২টার ২৪ মিনিটে সিরাজগঞ্জের সয়দাবাদ রেলওয়ে স্টেশনে স্পেশাল ট্রেনটি পৌঁছায়। এর আগে ১২টার দিকে টাঙ্গাইলের ভুয়াপুর ইব্রাহিমবাদ স্টেশন থেকে ট্রেনটি সিরাজগঞ্জের সয়দাবাদ স্টেশনের উদ্দেশে ছেড়ে আসার মধ্য দিয়ে সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।
সয়দাবাদ রেলওয়ে স্টেশনে স্পেশাল ট্রেনটি পৌঁছার পর বেলা ১২টা ৪০মিনিটে সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো.
আরো পড়ুন:
দেশের ‘অগ্রগতির প্রমাণ’ যমুনা রেল সেতুর উদ্বোধন মঙ্গলবার
দুর্ভোগের কেন্দ্রবিন্দু ফরিদপুরের বেইলি ব্রিজ
যমুনা রেলসেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, জাপান ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ প্রকল্পের ব্যয় ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে ২৭ দশমিক ৬০ শতাংশ অর্থায়ন এসেছে দেশীয় উৎস থেকে এবং ৭২ দশমিক ৪০ শতাংশ ঋণ দিয়েছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি-জাইকা।
২০১৬ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের নকশা প্রণয়নসহ সেতুর নির্মাণ ব্যয় প্রথমে ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা ধরা হয়েছিল। পরবর্তীতে ২ বছর বাড়ানো হলে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা দাঁড়ায়। জাপানের ওটিজি এবং আই এইচ আই যৌথভাবে সেতুটি নির্মাণ করেছে।
১৯৯৮ সালে যমুনা বহুমুখী সেতু চালু হওয়ার পর ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। এই সেতুতে সড়ক পথের পাশাপাশি রেলপথ আছে। তবে ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাটল দেখা দেওয়ায় ট্রেনের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়। সেতুটি দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৩৮টি ট্রেন পারাপার হতো। পরে সরকার যমুনা নদীর ওপর আলাদা রেল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়।
২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চ্যুয়ালি যমুনা রেল সেতুর নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০২১ সালের মার্চে পিলার নির্মাণের জন্য পাইলিং কাজ শুরু হয়। ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই রেল সেতু দেশের দীর্ঘতম প্রথম ডাবল ট্র্যাকের ডুয়েল গেজের সেতু। এটি ৫০টি পিলারের ওপর ৪৯টি স্প্যানে নির্মিত হয়েছে।
যমুনা রেল সেতু প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী তানভীরুল ইসলাম জানান, সমান্তরাল ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকের এ সেতুর প্রতিটি স্প্যানের ওপর জাপানিদের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির রেললাইন বসানো হয়েছে। এর ফলে সেতুর ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলাচল করতে পারবে।
তিনি বলেন, নির্মিত এই সেতুটি ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগে নতুন দিগন্ত সূচনা করবে। ঢাকার সঙ্গে রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা অঞ্চলের রেল যোগাযোগে বর্তমান যে বিড়ম্বনা রয়েছে সেটা আর থাকবে না। সেতুটি দিয়ে প্রতিদিন অন্তত ৮৮টি যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেন চলাচল করবে। কমে যাবে পরিবহন খরচও। সেই সঙ্গে মহাসড়কের ওপর চাপও অনেকটা কমে আসবে। উত্তরবঙ্গ থেকে বিভিন্ন পণ্য সহজে ঢাকাসহ সারা দেশ রপ্তানি করা সম্ভব হবে।
ঢাকা/রাসেল/বকুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রকল প র র ওপর র লওয় দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
২ এপ্রিল থেকে ট্রাম্পের উচ্চ শুল্ক আরোপের হুমকির বিষয়ে পরিষ্কার নয় ভারত
ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পণ্যে আগামী ২ এপ্রিল থেকে উচ্চ শুল্ক আরোপ করবেন বলে হুমকি দিয়ে রেখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু ভারতের কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ধারণা, সেটা হলে কিছু ক্ষেত্রে ভারতের সুবিধা হবে। অর্থাৎ বিষয়টি কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভারতের জন্য শাপেবর হতে পারে।
ভারতের কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মনে করছে, কিছু দেশের পণ্যে শুল্ক ভারতের জন্য রপ্তানির নতুন সুযোগ তৈরি করতে পারে। তাই ট্রাম্পের হুঁশিয়ারিতে চ্যালেঞ্জের সঙ্গে সম্ভাবনাও দেখছে তারা। বাণিজ্যসচিব সুনীল বার্থওয়াল বলেন, ভারত সরকার ইতিবাচক ও নেতিবাচক—সব প্রভাবই খতিয়ে দেখছে। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়া।
সম্প্রতি ট্রাম্প আবার বলেছেন, ২ এপ্রিল থেকে ভারতের মতো দেশে উচ্চ শুল্ক আরোপ করা হবে। এটা পাল্টা পদক্ষেপ, অর্থাৎ তারা মার্কিন পণ্যে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে বলে যুক্তরাষ্ট্রও পাল্টা তাদের পণ্যে শুল্ক আরোপ করবে।
কিন্তু ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের যুক্তি, আমেরিকা ঠিক কী নীতি গ্রহণ করছে, তা স্পষ্ট নয়। ভারত যদি যুক্তরাষ্ট্রের বৈদ্যুতিক গাড়িতে চড়া শুল্ক বসিয়ে থাকে, তার পাল্টা জবাবে ট্রাম্প কি ভারতের সব পণ্যে পাল্টা শুল্ক বসাবেন, নাকি শুধু গাড়িতে আরোপ করবেন, নাকি শুধুই বৈদ্যুতিক গাড়িতে করবেন, তা বোঝা যাচ্ছে না। তাতে আদৌ লোকসান হবে কি না, সেটাও প্রশ্ন। কারণ, ভারতের বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের যে পণ্যে শুল্ক চড়া, তেমন অনেক পণ্য ভারত যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করে না।
দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ভারতের চড়া শুল্ক নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন যে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে, তার প্রতিবেদন ১ এপ্রিল প্রকাশিত হওয়ার কথা। ৩০ আগস্টের মধ্যে শিল্পকে মতামত দিতে হবে। ফলে ২ এপ্রিল থেকে কীভাবে শুল্ক আরোপ করা হবে, তা স্পষ্ট নয়।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরুর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে দেনদরবারও করে এসেছেন। দুই দেশের বাণিজ্য ২০ হাজার কোটি ডলার থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য আছে।
ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উচ্চ শুল্ক নিয়ে কথা না বলে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে দর-কষাকষির মধ্যেই বিষয়টি রাখা হচ্ছে। আলোচনায় অগ্রগতিও হচ্ছে, বাকিটা যুক্তরাষ্ট্রের নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়।
এদিকে ভারতের গবেষণাপ্রতিষ্ঠান এসবিআই রিসার্চের গবেষণায় দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্কের কারণে ভারতের রপ্তানি কমতে পারে ৩ থেকে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ। দেশটি যেভাবে রপ্তানির বহুমুখীকরণ করছে তাতে যুক্তরাষ্ট্রের শাস্তিমূলক শুল্কের প্রভাব তারা কাটিয়ে উঠতে পারবে।