ঈদযাত্রায় রোডক্র্যাশ কমাতে তরুণদের ৯ সুপারিশ
Published: 18th, March 2025 GMT
ঈদের মতো বড় উৎসবের ছুটিতে দেশে রোডক্র্যাশে হতাহতের ঘটনা বেড়ে যায়। কিন্তু কেন থামানো যাচ্ছে না রোডক্র্যাশ, কারণ রোডক্র্যাশ প্রতিরোধে এবং সড়কে সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজন একটি উপযুক্ত আইন, যা বাংলাদেশে নেই। তাই একটি সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন এবং এর যথাযথ প্রয়োগ অতিব জরুরি।
মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর শ্যামলীতে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন স্বাস্থ্য সেক্টরে সভাকক্ষে আহ্ছানিয়া মিশন ইয়ুথ ফোরাম ফর হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিংয়ের আয়োজনে ঈদযাত্রায় রোডক্র্যাশ কমাতে তরুণদের সুপারিশ নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন ইয়ুথ ফোরামের সমন্বয়কারী মারজানা মুনতাহা।
এ সময় তিনি ঈদযাত্রাসহ সব সময়ে রোডক্র্যাশ কমাতে তরুণদের ৯ সুপারিশ তুলে ধরেন।
আরো পড়ুন:
দেড় ঘণ্টা পর ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচল শুরু
ঈদে যমুনা সেতু মহাসড়কে যানজটের শঙ্কা
সুপারিশগুলো হলো-
১.
২. মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী উভয়েরই ঈদে চলাচলে মানসম্মত হেলমেট ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এবং অতিদ্রুত এ সংক্রান্ত এনফোর্সমেন্ট গাইডলাইন প্রণয়ন করতে হবে।
৩. সড়কে ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল বন্ধ করতে হবে। ৪. চালকদের কর্মঘণ্টা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। যাতে ঈদযাত্রায় চালকরা পর্যাপ্ত বিশ্রাম পায়। কারণ ক্লান্ত চালক যেমন নিজের জীবনের ঝুঁকি বাড়ায়, তেমনি যাত্রীদের জন্যও বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।
৫. ঈদযাত্রায় গুরুত্বপুর্ণ সড়ক ও মহাসড়কে নছিমন, করিমন, টেম্পুসহ সব ধরনের ব্যাটারিচালিত যানবাহন ও ভটভটি চলাচল বন্ধ করতে হবে।
৬. মদ বা নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন করে যাতে গাড়ি না চালায় সেদিকে কঠোর নজরদারি রাখতে হবে এবং এ সংক্রান্ত বিধি-বিধান বাস্তবায়ন করতে হবে।
৭. ঈদযাত্রায় যানবাহনে চালকসহ সব যাত্রীর সিটবেল্ট ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে এবং অতিদ্রুত এ সংক্রান্ত গাইডলাইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
৮. পরিবহনের পাশাপাশি পথচারী পারাপার ও তাদের নিরাপদে চলাচলে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যেমন-ফুটপাত হকারমুক্ত করতে হবে। ফুটওভারব্রিজ পথচারীবান্ধব করতে হবে এবং ফুটপাত ও ফুটওভারব্রিজ ব্যবহারে পথচারীদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে।এছাড়াও পারাপারের সময় মুঠোফোন ব্যবহার না করা, জেব্রাক্রসিং দিয়ে রাস্তা পার হওয়া ইত্যাদি বিষয়ে পথচারীদের সচেতন করতে হবে।
৯. সর্বোপরি, বিশ্বব্যাপী সমাদৃত সেইফ সিস্টেম এপ্রোচের আদলে সমন্বিত সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ-বিআরটিএ’র তথ্যমতে, গত পবিত্র ঈদুল ফিতরের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ের রোডক্র্যাশে ১৭ দিনে সারা দেশে ২৮৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩২০ জন নিহত এবং ৪৬২ জন আহত হয়। তাই ঈদযাত্রাসহ দেশে রোডক্র্যাশের সংখ্যা কমিয়ে আনা যায়, সেই লক্ষে ইয়ুথ ফোরামের পক্ষ থেকে মারজানা মুনতাহা, এ এফ এম সাদমান সাকিব, বাংলাদেশ মেডিকেল স্টুডেন্ট সোসাইটির জাকিয়া মাইশা ও নিশাত তারান্নুম, বাংলাদেশ ডিবেড ফেডারেশনের ইশতিয়াক ইমন, মিশন গ্রীন বাংলাদেশের আহ্সান রনিসহ বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধ শতাধীক তরুণ শিক্ষার্থীরা উপস্থিত থেকে সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি রোড সেফটি বিষয়ে মরক্কোর মারাকাসে অনুষ্ঠিত ৪র্থ গ্লোবাল মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্সে ২০২৭ সালের মধ্যে সেইফ সিস্টেম এ্যাপ্রোচের আদলে বাংলাদেশে একটি সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের প্রতিশ্রুতি দেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।
ঢাকা/হাসান/সাইফ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সড়ক পর বহন সড়ক দ র ঘটন ন শ চ ত করত ঈদয ত র য় ব যবহ র প রণয়ন পথচ র
এছাড়াও পড়ুন:
আর্থিকখাতের শৃংখলা ফেরাতে নতুন দুটি আইন হচ্ছে, সংশোধন হচ্ছে ছয় আই
আর্থিকখাতের শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে দুটি নতুন আইন প্রণয়নসহ ৬ আইন সংশোধন হচ্ছে। আইন দুটির একটি হচ্ছে ‘ব্যাংক রেগুলেশন অ্যাক্ট ২০২৫’ (বাস্তবায়নকাল: ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের এপ্রিল) এবং অপরটি হচ্ছে ‘ডিসট্রেসড অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট’ (২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৬ সালের জুন সময় কালের জন্য)।
জানা গেছে, এই দুটি নতুন আইন তৈরির পাশাপাশি ৬টি আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। সব কটি আইনেরই খসড়া প্রণয়নের কাজ বর্তমানে চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে কোনো কোনোটির খসড়া চূড়ান্ত করে এর ওপর অংশীজনদের মতামত গ্রহণের জন্য খসড়া আইনটি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সংস্কার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নতুন আইন প্রণয়ন এবং পুরনো আইনগুলো সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই আইনগুলো তৈরি ও সংশোধনের কাজ শেষ হলে তা আর্থিকখাতের ভিত্তিকে মজবুত ও শৃংখলায় আনবে বলে মনে করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, ‘ব্যাংক রেগুলেশন অ্যাক্ট ২০২৫’ এর চূড়ান্ত খসড়া ইতোমধ্যে প্রণয়ন করা হয়েছে এবং খসড়ার ওপর অংশীজনদের মতামত গ্রহণের জন্য তা বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। অন্যদিকে ‘ডিসট্রেসড অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট’ এর খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে এবং খসড়ার ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের মতামত পাওয়া গেছে। মতামতের ভিত্তিতে একটি সভা হয়েছে, আরেকটি সভা দ্রুতই করা হবে।
এছাড়া ৬টি আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এগুলো হচ্ছে- ব্যাংক আমানত বীমা (সংশোধন) আইন। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) আইন; বীমা আইন ২০১০। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইন ২০১০ এবং বীমা কর্পোরেশন আইন ২০১৯ সংশোধন। মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি আইন ২০০৬ ও মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি বিধিমালা ২০১০ সংশোধন; প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক আইন ২০১০ যুগোপযোগীকরণ এবং গ্রামীণ ব্যাংক আইন সংশোধন।
ব্যাংক আমানত বীমা (সংশোধন) আইন (২০২৪ সালের ডিসেম্বর – ২০২৫ সালের এপ্রিল): ব্যাংক রেগুলেশন অ্যাক্ট এর কিছু কিছু ধারার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ব্যাংক আমানত বীমা (সংশোধন) আইনটি অধিকতর যাচাইপূর্বক অধ্যাদেশ আকারে খসড়া প্রণয়ন করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে ব্যাংক কোম্পানি আইনের ৫৮ থেকে ১০০ ধারা সংশোধনের প্রয়োজন হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
এ ছাড়াও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) আইন সংশোধন (অক্টোবর ২০২৪- ডিসেম্বর ২০২৫): আইনের খসড়াটি বিএসইসি পুনরায় পর্যালোচনা করার পর পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সেটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পাঠাবে বলে জানা গেছে।
বীমা আইন ২০১০, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইন ২০১০ এবং বীমা কর্পোরেশন আইন ২০১৯ সংশোধন (ডিসেম্বর ২০২৪- ডিসেম্বর ২০২৫): এ দুটি আইন সংশোধনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি আইন ২০০৬ ও মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি বিধিমালা ২০১০ সংশোধন (অক্টোবর ২০২৪- ডিসেম্বর ২০২৬): সংশোধনী প্রস্তাবের ওপর গত ডিসেম্বরে অংশীজনদের সঙ্গে প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ আলোচনা শেষে তা বোর্ডসভায় উপস্থাপন কর হবে।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক আইন ২০১০ যুগোপযোগীকরণ (ডিসেম্বর ২০২৪- ডিসেম্বর ২০২৫): আইনটির খসড়া প্রণয়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
গ্রামীণ ব্যাংক আইন সংশোধন (ডিসেম্বর ২০২৪- ডিসেম্বর ২০২৫): ইতোমধ্যে আইনটির সংশোধিত খসড়া প্রকাশ করা হয়েছে ও অংশীজনদের নিয়ে গত ডিসেম্বরে একটি মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রাপ্ত মতামতের ভিত্তিতে আইন সংশোধন করে চূড়ান্ত খসড়া প্রণয়ন করা হচ্ছে।
এছাড়া রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিচালক নিয়োগ নীতিমালা সংশোধন। রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক ও বিশেষায়িত ব্যাংকের কর্মচারী (অনূর্ধ্ব ডিজিএম) নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন এবং রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক ও বিশেষায়িত ব্যাংকের সাংগঠনিক কাঠামো সংশোধন/সংস্কার (রূপালী-জনতা-বেসিক-রাকাব) এর কার্যক্রমও চলমান রয়েছে।
জানা গেছে, রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিচালক নিয়োগ নীতিমালা সংশোধন (অক্টোবর ২০২৪- মার্চ ২০২৫- জুন ২৫): গত বছর ৯ এপ্রিল আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপন জারির পর বিশ্বব্যাংক কর্তৃক গত বছর ১৬ এপ্রিল পুনরায় কতিপয় পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়। বর্তমানে বিশ্বব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ-অর্থ বিভাগ-বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সম্মিলিত কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক ও বিশেষায়িত ব্যাংকের কর্মচারী (অনূর্ধ্ব ডিজিএম) নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন (অক্টোবর ২০২৪- সেপ্টেম্বর ২০২৫): অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়নে ইতোমধ্যে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির কাছ থেকে খসড়া পাওয়ার পর পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করা হবে।
এছাড়াও রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক ও বিশেষায়িত ব্যাংকের সাংগঠনিক কাঠামো সংশোধন/সংস্কার (রূপালী-জনতা-বেসিক-রাকাব)- (ডিসেম্বর ২০২৪- ডিসেম্বর ২০২৫): ইতোমধ্যে রূপালী ব্যাংকের সাংগঠনিক কাঠামো সংশোধন করে গত ডিসেম্বরে পরিপত্র জারি করা হয়েছে। জনতা-বেসিক-রাকাব এর সাংগঠনিক কাঠামো সংশোধন প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে সূত্র জানায়।
ঢাকা/হাসনাত/টিপু