ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ  (টিসিবি) এর মাধ্যমে ভর্তুকি দামে বিক্রির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ১টি প্রস্তাবে ১০ হাজার মে.টন মসুর ডাল এবং ১ কোটি ১০ লাখ লিটার পরিশোধিত রাইস ব্রান তেল ক্রয়সহ ২ ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে ২৭২ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।

মঙ্গলবার (১৮মার্চ) সকালে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে কমিটির সভাপতি অর্থ উপদেষ্টা ড.

সালেহউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিটির সভায় প্রস্তাব ২ টিতে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সভায় কমিটির সদস্য ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে  ১০ হাজার মে.টন মসুর ডাল (৫০ কেজির বস্তায়) ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।

জানা গেছে, টিসিবি’র ফ্যামিলি কার্ডধারী ১ কোটি পরিবারের কাছে ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির লক্ষ্যে ১০ হাজার মে.টন মসুর ডাল ক্রয়ের জন্য স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ৪টি দরপ্রস্তাব জমা পড়ে। ৪টি দরপ্রস্তাবই কারিগরিভাবে ও আর্থিকভাবে রেসপনসিভ হয়। দরপ্রস্তাবের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স মদিনা ট্রেডিং করপোরেশন, ঢাকা সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে এই মসুর ডাল সরবরাহ করবে। প্রতি কেজি ৯৪.২৩ টাকা হিসেবে সর্বমোট ব্যয় হবে ৯৪ কোটি ২৩ লাখ টাকা।

সূত্র জানায়, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ১ কোটি ১০ লাখ লিটার পরিশোধিত রাইস ব্রান তেল ক্রয়ের একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। টিসিবি’র ফ্যামিলি কার্ডধারী ১ কোটি পরিবারের নিকট ভর্তুকি দামে বিক্রির লক্ষ্যে ১ কোটি ১০  লাখ লিটার পরিশোধিত রাইস ব্রান তেল ক্রয়ের জন্য স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ৫টি দরপ্রস্তাব জমা পড়ে। তার মধ্যে ৩টি দরপ্রস্তাব আর্থিক ও কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়। 

দরপ্রস্তাবের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন ৩টি দরদাতা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ১ কোটি ১০ লাখ লিটার পরিশোধিত রাইস ব্রাণ তেল প্রতি লিটার ১৬২.৫০ টাকা  হিসেবে সর্বমোট ব্যয় হবে ১৭৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। ১ কোটি ১০ লাখ লিটার পরিশোধিত রাইস ব্রান তেল এককভাবে কোন প্রতিষ্ঠান সরবরাহ করতে অপারগতা প্রকাশ করায় ৩টি প্রতিষ্ঠান থেকে ক্রয় করা হবে। এরমধ্যে গ্রীণ অয়েল অ্যান্ড পোল্ট্রি ফিড ইন্ডাষ্ট্রিজ, ঢাকা থেকে ২০ হাজার লিটার, মজুমদার প্রোডাক্টস লি. ঢাকা ৪৫ হাজার লিটার এবং মজুমদার ব্রান অয়েল মিলস লি. যশোরের কাছ থেকে ৪৫ হাজার লিটার ক্রয় করা হবে। 

২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ভোজ্য তেল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ২৮ কোটি লিটার। এ পর্যন্ত ক্রয় হয়েছে ১৫ কোটি ২৫ লাখ ৬০ হাজার লিটার।

ঢাকা/হাসনাত/টিপু

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র সপনস ভ

এছাড়াও পড়ুন:

অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে জোর দিতে হবে

আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত বলে মনে করে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। তারা বলেছে, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আগামী বাজেটে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে, এমন বিনিয়োগ আকর্ষণে উদ্যোগ নিতে হবে। দুর্বল ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা নিশ্চিত করার পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের অপ্রয়োজনীয় ব্যয় হ্রাস ও পণ্যের সরবরাহও ঠিক রাখতে উদ্যোগ নিতে হবে।

উচ্চ মূল্যস্ফীতির এই সময়ে বার্ষিক করমুক্ত আয়সীমা ৪ লাখ টাকায় উন্নীত করার সুপারিশ করেছে গবেষণা সংস্থাটি।

আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে সুপারিশ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে সিপিডির গবেষকেরা এসব প্রস্তাব তুলে ধরেন। গতকাল রোববার রাজধানীর ধানমন্ডিতে নিজেদের কার্যালয়ে আয়োজিত এই ব্রিফিংয়ে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। আরও উপস্থিত ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রমুখ।

উচ্চ মূল্যস্ফীতির এই সময়ে বার্ষিক করমুক্ত আয়সীমা চার লাখ টাকায় উন্নীত করার সুপারিশ করেছে সিপিডি। তারা বলেছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের বেশি। শহর ও গ্রামে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি থেকে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেশি। মূল্যস্ফীতির চাপে স্বল্প আয়ের মানুষের মধ্যে সঞ্চয় ভেঙে খাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে মূল্যস্ফীতি আরেক দফা বাড়বে বলেও মনে করে সিপিডি।

অনুষ্ঠানে ফাহমিদা খাতুন বলেন, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জিং সময়ে আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নে দূরদর্শী ও সমন্বিত নীতিগত পদক্ষেপ নিতে হবে। মুদ্রানীতির পুনরুদ্ধার এখন নীতিনির্ধারকদের অন্যতম প্রধান কাজ। এটি অর্জনের জন্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বিনিময় হার স্থিতিশীল করা এবং আর্থিক শৃঙ্খলা রক্ষা জরুরি হয়ে পড়েছে।

রাজস্ব ঘাটতি ১ লাখ কোটি ছাড়াবে

চলতি অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩২ শতাংশ। যদিও প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ। রাজস্ব আদায়ের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি অর্থবছর শেষে রাজস্ব ঘাটতি ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়াতে পারে, এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সিপিডি।

চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) বাজেট ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ৫২৭ কোটি টাকা। যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল মাত্র ৭ হাজার ৩২১ কোটি টাকা। এমন তথ্য দিয়ে সিপিডি বলেছে, বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নিচ্ছে। এতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রভাব কমে গেছে।

ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার ও রিজার্ভ পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে জানিয়ে সিপিডি বলেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে প্রবাসী আয় ২২ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে। যদিও একই সময়ে বিদেশে কর্মী যাওয়ার হার ২২ শতাংশ কমেছে। তারা বলেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক আগামী জুন শেষে মূল্যস্ফীতির হার ৭-৮ শতাংশে নামিয়ে আনার যে পরিকল্পনার কথা বলেছে, সেটি অর্জন অসম্ভব হবে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ ধরা হয়েছে। তবে সিপিডি মনে করছে, প্রবৃদ্ধি হবে ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ।

আরও যেসব সুপারিশ করেছে সিপিডি

রাজস্ব ঘাটতির কারণে সরকার যেসব কৃচ্ছ্র সাধন করছে, তা বজায় রাখতে হবে বলে মনে করে সিপিডি। সংস্থাটি বলেছে, আগামী বাজেটে রাজস্ব পরিকল্পনা বাস্তবসম্মত করতে হবে। রাজস্ব আয় অনেক বাড়ানো সম্ভব হবে না। ফলে সরকারি ব্যয়ে দক্ষতা বাড়াতে হবে। এসব পদক্ষেপের কারণে বর্তমান সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্তের কারণে সামাজিক সুরক্ষা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি ও ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্প খাতে যেন কোনো ধরনের নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।

করদাতারা যেন ঝামেলামুক্তভাবে কর দিতে পারেন সে বিষয়ে জোর দিয়ে সিপিডি বলেছে, সামঞ্জস্যপূর্ণ করনীতি করতে হবে, যা হবে বাস্তবায়নযোগ্য। ভ্যাটের হার পরিবর্তন করে ১৫ শতাংশ থেকে ১০ নামিয়ে আনা যেতে পারে।

২০২৬ সালের নভেম্বরে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ফলে পণ্য রপ্তানিতে নগদ সহায়তা ধাপে ধাপে বন্ধ করতে হবে। এমন প্রেক্ষাপটে রপ্তানিকারকদের অন্যভাবে সহায়তা দেওয়ার চিন্তা করতে হবে বলে মনে করে সিপিডি।

নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট বিষয়টি বাতিল করার পরামর্শ দিয়েছে সিপিডি। পাশাপাশি গ্যাসকূপ খননে গতি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে সংস্থাটি বলেছে, এ জন্য পেট্রোবাংলার উচিত বিদেশি দরদাতাদের ওপর নির্ভর না করে গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের অর্থ ব্যবহার করা।

আগামী অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে সিপিডি। একই সঙ্গে তারা ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের আমদানি করা বইয়ের ওপর শুল্ক প্রত্যাহার; বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ও কলেজের করপোরেট কর ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ; শিক্ষা উপবৃত্তির অর্থ বাড়ানো, জুলাই আন্দোলনে আহত ব্যক্তিদের বৃত্তি এবং স্কুল ফিডিং কর্মসূচির আওতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে।

অনুষ্ঠানে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় কাঠামোগত পরিবর্তনের বিরল সুযোগ এসেছে। এ জন্য ডিজিটালাইজেশনে বিনিয়োগ করতে হবে। এখানে এক টাকা বিনিয়োগ করলে প্রতিবেশী যেকোনো দেশের চেয়েও বেশি সুফল আসবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুই কার্গো এলএনজি কেনার প্রস্তাব অনুমোদন 
  • খাদ্য মজুদ বাড়াতে ৫০ হাজার মে.টন চাল ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন
  • সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার নির্মাণ: ২ প্রকল্পে ব্যয় ১ হাজার ৫১৩ কোটি
  • আট মাসে এডিপির বাস্তবায়ন ২৪%
  • অর্থবছরের আট মাসে ২৪ দশমিক ২৭ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন
  • বাজেটে পুঁজিবাজারে কর অব্যাহতির প্রস্তাব
  • অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে জোর দিতে হবে
  • কুমারখালীতে কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ
  • ৪০০ শতাংশ চূড়ান্ত লভ্যাংশ দেবে লিন্ডে বিডি