ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে নয়ন চন্দ্র দাস (২৬) নামে এক নববিবাহিত যুবককে অপহরণের ৫২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত তাকে উদ্ধার করা যায়নি। অপহরণকারীরা তার মুক্তির জন্য ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছে এবং বিষয়টি পুলিশ বা অন্য কারও কাছে জানালে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দিয়েছে। বাজার থেকে প্রকাশ্যে একজন ব্যবসায়ীকে অপহরণের ঘটনায় স্থানীয়দের মাঝে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।

রোববার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার ফান্দাউক ইউনিয়নে নয়নকে অপহরণ করা হয়। আজ মঙ্গলবার অপহরণের ৫২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও তাকে উদ্ধার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

অপহরণকারীদের দাবি, সোমবার সকাল ১০টার মধ্যে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিলে নয়নকে নিরাপদে ফেরত দেওয়া হবে। তবে তাদের দেওয়া নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে গেলেও অপহরণকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। সন্তানকে ফিরে পেতে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে অর্থ জোগাড় করলেও অপহরণকারীদের মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। এরই মধ্যে পেরিয়ে গেছে ৫২ ঘণ্টা। নয়ন দাসের পরিবারের এখন সময় কাটছে অজানা শঙ্কা আর উদ্বেগের মধ্যে। শুধু নয়নের পরিবারই নয়, প্রতিবেশীসহ আশপাশের অনেকেই আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী বিষ্ণু দেব জানান, নয়ন প্রতিদিনের মতো সকাল ৯টার দিকে দোকান খুলে পূজা করছিলেন। সকাল ১০টার দিকে দুই ব্যক্তি বাজারে ঘোরাফেরা করছিলেন। তাদের কোমরে ওয়াকিটকি জাতীয় কিছু একটা ছিল।

বাজারের ব্যবসায়ী জুয়েল দাস বলেন, নয়নকে প্রকাশ্যে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ৩০ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও তার কোনো সন্ধান মেলেনি। আমরা সবাই আতঙ্কের মধ্যে আছি।

নয়নের পাশের দোকানি অপূর্ব দেবনাথও অপহরণের ঘটনার সাক্ষী। এরপর থেকেই পুরো বাজারের ব্যবসায়ীরা আতঙ্কগ্রস্ত। ব্যবসায়ী হরিমন রায় জানান, নয়নের অপহরণের পর থেকে অনেক ব্যবসায়ী দোকান বন্ধ রেখেছেন। কেউ আসলেও সকালে না এসে দুপুরের দিকে আসছেন।

অপহরণ হওয়া নয়ন দাসের মা রত্না রানী দাস বলেন, গত রোববার সকালে আমার ছেলে দোকানে যেতে বের হয়েছিল, তারপর থেকেই তাকে খুঁজে পাচ্ছি না। রাতে কিছু লোক ফোন করে জানায়, সোমবার সকাল ১০টার মধ্যে ১০ লাখ টাকা প্রস্তুত রাখতে। কেউ কিছু জানতে পারলে নয়নকে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। অনেক কষ্ট করে টাকা জোগাড় করেছি, কিন্তু অপহরণকারীদের কোনো ফোন পাইনি। আমার ছেলেটা বেঁচে আছে কি না, তাও জানি না।

নয়নের চাচা সুভাষ চন্দ্র দাস বলেন, আমরা থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি, কিন্তু এখনো তাকে উদ্ধার করা যায়নি। আমরা দুশ্চিন্তায় আছি, দ্রুত নয়নের সন্ধান চাই।

নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.

খায়রুল আলম সমকালকে জানান, স্থানীয়দের মাধ্যমে নয়ন দাস নিখোঁজ হওয়ার সংবাদ পেয়েছেন তারা। কয়েকটি সূত্র ধরে অপহরণকারীদের খোঁজার চেষ্টা চলছে। ডিবি ও র‍্যাবের মাধ্যমে নয়নকে উদ্ধার ও অপহরণকারীদের ধরতে অভিযান চলছে।

প্রসঙ্গত, নাসিরনগর উপজেলার ফান্দাউক ইউনিয়নের ফান্দাউক বাজার থেকে গত রোববার (১৬ মার্চ) সকালে নয়ন দাসকে অপহরণ করা হয়। তিনি রামু চন্দ্র দাসের ছেলে। মাত্র ১০ দিন আগে বিয়ে করেছিলেন তিনি।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অপহরণ অপহরণক র দ র অপহরণ র নয়ন দ স ব যবস য় নয়ন র আতঙ ক

এছাড়াও পড়ুন:

নাসিরনগরের শুঁটকি মেলা: আগে বেচাকেনা ছিল বিনিময় প্রথায়, এখন নগদ টাকায়

ব্যবসায়ীরা দোকান সাজাতে ব্যস্ত। তাঁদের যেন কথা বলার ফুরসত নেই। তাঁরা বিভিন্ন মাছের তৈরি শুঁটকি পসরা সাজাতে ব্যস্ত। এই চিত্র ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের কুলিকুন্ডা গ্রামের; আজ মঙ্গলবার সকাল সাতটার।

বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে আজ থেকে এখানে দুই দিনব্যাপী শুঁটকি মেলা শুরু হয়েছে। নাসিরনগরের এ মেলার ঐহিত্য দীর্ঘদিনের। মেলার প্রধান পণ্য শুঁটকি। বর্তমানে বাংলা সনের দ্বিতীয় দিনে এ মেলা শুরু হয়। যদিও পুরোনো পঞ্জিকা অনুযায়ী দিনটি পয়লা বৈশাখ। স্থানীয় জেলেরা পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য ধরে রাখতে ব্যতিক্রমধর্মী এ মেলা করে থাকেন।

কুলিকুন্ডা গ্রামের কুলিকুন্ডা (উওর) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে মেলা শুরু হয়েছে। গ্রামবাসী ও মেলায় আসা একাধিক ব্যক্তি জানান, কবে মেলা শুরু হয়েছে, তাঁদের জানা নেই। তাঁদের ধারণা, ‘শুঁটকি মেলা’ প্রায় ৩০০ বছরের পুরোনো। যখন কাগজের মুদ্রার প্রচলন হয়নি, তখন স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বী লোকজন নিজেদের উৎপাদিত শুঁটকি বিক্রি করতেন। স্থানীয় কৃষকেরা তাঁদের উৎপাদিত চাল, ডাল, ধান, শিমের বিচি, আলু, শর্ষে, পেঁয়াজ, রসুনসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় নানা পণ্যের বিনিময়ে শুঁটকি কিনতেন। এ মেলার প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল পণ্যের বিনিময়ে শুঁটকি কেনাবেচা। ওই ঐতিহ্য ধরে রাখতে স্বল্প সময়ের জন্য পণ্যের বিনিময়ে শুঁটকির বিনিময় হতো। বর্তমানে ওই ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসেছে। এখন নগদ টাকায় বেচাকেনা হয়। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ীরা এখানে শুঁটকি বেচাকেনা করতে আসেন।

মেলায় বোয়াল, গজার, শোল, বাইম, ছুরি, লইট্টা, পুঁটি, গনা, গুচি, ট্যাংরা আইড়সহ আড়াই শর বেশি ধরনের শুঁটকির পসরা নিয়ে বসেছেন দোকানিরা। এ ছাড়া ইলিশ ও সামুদ্রিক মাছের শুঁটকি রয়েছে। পাশাপাশি ইলিশ ও কার্পজাতীয় বিভিন্ন মাছের ডিমও বিক্রি হচ্ছে। মেলায় স্থানীয় কুমারদের হাতের তৈরি হাঁড়ি, পাতিল, কলসি, ঝাঁজর, থালা, ঘটি, বদনা, বাটি, পুতুলসহ নানা ধরনের সামগ্রী আছে।

আজ সকালে মেলায় এসেছেন উপজেলার গোকুলনীয় ইউনিয়নের জেঠাগ্রামের বাসিন্দা জ্যোৎস্না চৌধুরী। তিনি সঙ্গে করে এসেছেন নিজের উৎপাদিত আম, পেঁয়াজ, চাল, শিমের বিচি ও বেগুন। এসব পণ্যের বিনিময়ে তিনি শুঁটকি নেন।
হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলা থেকে মেলায় এসেছেন মহেশ্বর দাস। তিনি বলেন, এ মেলায় শুঁটকির বেচাকেনা ভালো হয়। ১৫ ধরনের শুঁটকি এনেছেন, যার দাম ১ লাখ ২০ হাজার টাকা।

আরেক ব্যবসায়ী আবদুর রহমান এসেছেন সরাইল উপজেলা থেকে। তিনি জানান, তিনি ৩০ বছর ধরে মেলায় আসছেন। তাঁর বাবা-দাদাও শুঁটকির ব্যবসা করতেন। ছোটবেলা থেকেই এ মেলায় আসেন।

হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, তিনি চুনারুঘাট ও রানীগাও বাজারে শুঁটকি বিক্রি করেন। আট বছর ধরে এ মেলা থেকে শুঁটকি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এখানকার শুঁটকির মান ভালো। এবার তিনি ২০ হাজার টাকার শুঁটকি কিনে নিয়ে যাবেন।

আরও পড়ুন নববর্ষের ঐতিহ্য: কুমিল্লায় শতবর্ষী মাছের মেলায় ক্রেতাদের ভিড়২১ ঘণ্টা আগেমেলায় বোয়াল, গজার, শোল, বাইম, ছুরি, লইট্টা, পুঁটি, গনা, গুচি, ট্যাংরা আইড়সহ আড়াই শর বেশি ধরনের শুঁটকির পসরা নিয়ে বসেছেন দোকানিরা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জাহাঙ্গীরনগরে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারীদের চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে মানববন্ধন
  • নাসিরনগরের শুঁটকি মেলা: আগে বেচাকেনা ছিল বিনিময় প্রথায়, এখন নগদ টাকায়
  • পাহাড়ে শণ কাটতে গিয়েছিলেন যুবক, অপহরণ করে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি
  • অপহরণকারী আখ্যা দিয়ে বাবাকে পেটাচ্ছিল, পাশে কাঁদছিল শিশু রাইসা
  • মেয়েলি কণ্ঠে সম্পর্ক করে অপহরণ, যুবক গ্রেপ্তার
  • যশোর থেকে অপহৃত যুবক গোপালগঞ্জে উদ্ধার, অপহরণকারী আটক
  • টেকনাফে যুবক অপহরণ, দশ লাখ মুক্তিপণ দাবি  
  • টেকনাফে পাহাড়ি এলাকায় দিনমজুর অপহৃত
  • মায়ের জন্য কাঁদছিল শিশুটি, অপহরণকারী ভেবে বাবাকে পেটালেন জনতা
  • জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাসানী হলের প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে কক্ষে তালা