বিশ্ববাজারে সোনার দাম আজ মঙ্গলবার আবারও আউন্সপ্রতি তিন হাজার ডলার পেরিয়ে গেছে। এর আগে গত শুক্রবার ইতিহাসে এই প্রথম সোনার দাম তিন হাজার ডলারে ওঠে। তারপর দাম কমে যায়। কিন্তু আজ আবার সোনার দাম আউন্সপ্রতি তিন হাজার ডলার ছাড়িয়ে গেছে। মূলত ট্রাম্পের শুল্কনীতির প্রভাবে বিশ্ববাজারে সোনার দাম বাড়ছে।

গোল্ড প্রাইস ডট অর্গের তথ্যানুসারে, আজ সকালে এশিয়ার বাজারে সোনার দাম আউন্সপ্রতি ১৬ দশমিক ৭৬ ডলার বেড়ে ৩ হাজার ১৪ ডলারে উঠেছে। বিবিসির সংবাদে বলা হয়েছে, চলতি বছর এখন পর্যন্ত সোনার দাম বেড়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ।
নানা কারণে সোনার দাম বাড়ছে। তার মধ্যে আছে ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা, বিভিন্ন দেশের পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির চাপ ও তার জেরে শুল্ক যুদ্ধের আশঙ্কা। ফলে রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক জটিলতা তৈরি হচ্ছে। সুরক্ষিত বিনিয়োগের ক্ষেত্র হিসেবে অনেকে সোনার দিকে ঝুঁকছেন। শেয়ারবাজার থেকে পুঁজি প্রত্যাহার করেও অনেকে কিনছেন।

ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের প্রধান বাজার কৌশলবিদ জো কাভাতোনি বলেছেন, চলমান ভূ-অর্থনৈতিক সংকট ও অনিশ্চয়তার কারণে মানুষ নিজেদের অর্থ ব্যবস্থাপনার বিষয়ে শঙ্কিত। এ পরিস্থিতিতে তাঁর ধারণা, মানুষ নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবে আবারও সোনার দিকে ঝুঁকছেন এবং সে কারণে সোনার দাম বাড়বে।

ট্রাম্প যেভাবে শুল্ক আরোপ করছেন, তাতে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি বাড়বে। এর পাল্টা হিসেবে অন্যান্য দেশও যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে শুল্ক আরোপ করবে। ফলে ওই সব দেশেও মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির আশঙ্কা থেকে যায়। এসব কারণেও মানুষ সোনার প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন বলে মনে করেন জো কাভাতোনি।

জ্বালানি তেলের কেনাবেচার সঙ্গেও সোনার সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। সাধারণত দেখা যায়, জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে সোনার দামও বাড়ে। দাম বাড়লে অনেক দেশ সোনার বিনিময়ে জ্বালানি তেল বিক্রি করে থাকে। ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের ওপর মার্কিন হামলার জেরে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম গত দুই দিনে বেড়েছে। ফলে আজ সোনার দাম একধাক্কায় আউন্সপ্রতি প্রায় ১৭ ডলার বেড়ে যাওয়ার পেছনে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব আছে।

গত এক মাসে বিশ্ববাজারে সোনার দাম বেড়েছে ৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ। ছয় মাসে বেড়েছে ১৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এক বছরে বেড়েছে ৩৮ দশমিক ৯৮ শতাংশ। পাঁচ বছরে বেড়েছে ১০২ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং গত ২০ বছরে বেড়েছে ৫৮২ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

বিশ্ববাজারে সোনার দাম হ্রাস–বৃদ্ধির প্রভাবে দেশের বাজারেও সোনার দাম বাড়ে ও কমে। গত রোববার দেশের বাজারে সোনার দাম বাড়ানো হয়েছে ভরি প্রতি ২ হাজার ৬১৩ টাকা। এতে ভালো মানের এক ভরি সোনার দাম পড়ছে এখন ১ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। নতুন এই দর গতকাল সোমবার থেকে কার্যকর হয়েছে।

বাস্তবতা হলো, বিশ্বে সোনাকেই সবচেয়ে স্থিতিশীল ও নির্ভরযোগ্য পণ্য হিসেবে ধরা হয়। একমাত্র সোনার দরেই বড় ধরনের অস্থিতিশীলতা দেখা যায় না। ডলারের মান প্রতিদিনই বাড়ে বা কমে। শেয়ারবাজার নিয়ে তো কথাই নেই, অন্তত বাংলাদেশে শেয়ারবাজারের ঠিকঠিকানা নেই। সোনা কিনে রাখলে লোকসানের ভয় নেই বলা যায়। এ কারণেই সোনার প্রতি সবার এত আকর্ষণ। ৫০ বছর আগে কেউ সোনা কিনে রাখলেও তা ভালো বিনিয়োগ হিসেবেই বিবেচিত। শেয়ারবাজার, ডলার বা অন্য কিছু এই নিশ্চয়তা দেয় না।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ য় রব জ র দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তব্য গুরুতর: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রধান তুলসী গ্যাবার্ড বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন এবং ইসলামী খিলাফত বিষয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে যে মন্তব্য করেছেন, তা গুরুতর বলে অভিযোগ করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।

তিনি বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় যে প্রতিক্রিয়া (তুলসী গ্যাবার্ডের বক্তব্যের বিষয়ে) জানিয়েছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অবস্থান ওটাই। ওনার (তুলসী গ্যাবার্ড) বক্তব্য গুরুতর।

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রধান তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তব্য নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অবস্থান জানতে চাইলে মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) সাংবাকিকদের কাছে তিনি এ অভিযোগ করেন।

সোমবার (১৭ মার্চ) নয়াদিল্লিতে এনডিটিভি ওয়ার্ল্ডকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তুলসী গ্যাবার্ড বলেছেন, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, ক্যাথলিক ও অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে চলমান দুর্ভাগ্যজনক নিপীড়ন, হত্যা ও অন্যান্য নির্যাতন যুক্তরাষ্ট্র সরকার, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার প্রশাসনের উদ্বেগের একটি প্রধান ক্ষেত্র। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নতুন মন্ত্রিসভা ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে আলোচনা মাত্র শুরু হচ্ছে, কিন্তু এটি উদ্বেগের মূল জায়গার একটি হয়ে আছে।

সোমবার রাতেই বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে তুলসী গ্যাবার্ডের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এক বিবৃতিতে সরকার বলেছে, আমরা গভীর উদ্বেগ ও হতাশার সঙ্গে তুলসী গ্যাবার্ডের বক্তব্য লক্ষ করেছি, যেখানে তিনি বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিপীড়ন ও হত্যা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে বলেছেন, ইসলামপন্থি সন্ত্রাসীদের হুমকি এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বৈশ্বিক তৎপরতা একই আদর্শ ও লক্ষ্য দ্বারা পরিচালিত হয়। সেই আদর্শ ও লক্ষ্য হলো—ইসলামী খিলাফতের মাধ্যমে শাসন করা।

তুলসী গ্যাবার্ডের এ মন্তব্য বিভ্রান্তিকর এবং বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ও সুনামের জন্য ক্ষতিকর, উল্লেখ করে অন্তর্বর্তী সরকার বলেছে, বাংলাদেশ ঐতিহ্যগতভাবে শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ইসলাম চর্চার জন্য সুপরিচিত এবং চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অসাধারণ অগ্রগতি অর্জন করেছে।

ঢাকা/হাসান/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ