বিশ্ববাজারে সোনার দাম তিন হাজার ডলার পেরিয়েছে, এ নিয়ে সপ্তাহে দুবার
Published: 18th, March 2025 GMT
বিশ্ববাজারে সোনার দাম আজ মঙ্গলবার আবারও আউন্সপ্রতি তিন হাজার ডলার পেরিয়ে গেছে। এর আগে গত শুক্রবার ইতিহাসে এই প্রথম সোনার দাম তিন হাজার ডলারে ওঠে। তারপর দাম কমে যায়। কিন্তু আজ আবার সোনার দাম আউন্সপ্রতি তিন হাজার ডলার ছাড়িয়ে গেছে। মূলত ট্রাম্পের শুল্কনীতির প্রভাবে বিশ্ববাজারে সোনার দাম বাড়ছে।
গোল্ড প্রাইস ডট অর্গের তথ্যানুসারে, আজ সকালে এশিয়ার বাজারে সোনার দাম আউন্সপ্রতি ১৬ দশমিক ৭৬ ডলার বেড়ে ৩ হাজার ১৪ ডলারে উঠেছে। বিবিসির সংবাদে বলা হয়েছে, চলতি বছর এখন পর্যন্ত সোনার দাম বেড়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ।
নানা কারণে সোনার দাম বাড়ছে। তার মধ্যে আছে ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা, বিভিন্ন দেশের পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির চাপ ও তার জেরে শুল্ক যুদ্ধের আশঙ্কা। ফলে রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক জটিলতা তৈরি হচ্ছে। সুরক্ষিত বিনিয়োগের ক্ষেত্র হিসেবে অনেকে সোনার দিকে ঝুঁকছেন। শেয়ারবাজার থেকে পুঁজি প্রত্যাহার করেও অনেকে কিনছেন।
ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের প্রধান বাজার কৌশলবিদ জো কাভাতোনি বলেছেন, চলমান ভূ-অর্থনৈতিক সংকট ও অনিশ্চয়তার কারণে মানুষ নিজেদের অর্থ ব্যবস্থাপনার বিষয়ে শঙ্কিত। এ পরিস্থিতিতে তাঁর ধারণা, মানুষ নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবে আবারও সোনার দিকে ঝুঁকছেন এবং সে কারণে সোনার দাম বাড়বে।
ট্রাম্প যেভাবে শুল্ক আরোপ করছেন, তাতে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি বাড়বে। এর পাল্টা হিসেবে অন্যান্য দেশও যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে শুল্ক আরোপ করবে। ফলে ওই সব দেশেও মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির আশঙ্কা থেকে যায়। এসব কারণেও মানুষ সোনার প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন বলে মনে করেন জো কাভাতোনি।
জ্বালানি তেলের কেনাবেচার সঙ্গেও সোনার সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। সাধারণত দেখা যায়, জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে সোনার দামও বাড়ে। দাম বাড়লে অনেক দেশ সোনার বিনিময়ে জ্বালানি তেল বিক্রি করে থাকে। ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের ওপর মার্কিন হামলার জেরে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম গত দুই দিনে বেড়েছে। ফলে আজ সোনার দাম একধাক্কায় আউন্সপ্রতি প্রায় ১৭ ডলার বেড়ে যাওয়ার পেছনে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব আছে।
গত এক মাসে বিশ্ববাজারে সোনার দাম বেড়েছে ৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ। ছয় মাসে বেড়েছে ১৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এক বছরে বেড়েছে ৩৮ দশমিক ৯৮ শতাংশ। পাঁচ বছরে বেড়েছে ১০২ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং গত ২০ বছরে বেড়েছে ৫৮২ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
বিশ্ববাজারে সোনার দাম হ্রাস–বৃদ্ধির প্রভাবে দেশের বাজারেও সোনার দাম বাড়ে ও কমে। গত রোববার দেশের বাজারে সোনার দাম বাড়ানো হয়েছে ভরি প্রতি ২ হাজার ৬১৩ টাকা। এতে ভালো মানের এক ভরি সোনার দাম পড়ছে এখন ১ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। নতুন এই দর গতকাল সোমবার থেকে কার্যকর হয়েছে।
বাস্তবতা হলো, বিশ্বে সোনাকেই সবচেয়ে স্থিতিশীল ও নির্ভরযোগ্য পণ্য হিসেবে ধরা হয়। একমাত্র সোনার দরেই বড় ধরনের অস্থিতিশীলতা দেখা যায় না। ডলারের মান প্রতিদিনই বাড়ে বা কমে। শেয়ারবাজার নিয়ে তো কথাই নেই, অন্তত বাংলাদেশে শেয়ারবাজারের ঠিকঠিকানা নেই। সোনা কিনে রাখলে লোকসানের ভয় নেই বলা যায়। এ কারণেই সোনার প্রতি সবার এত আকর্ষণ। ৫০ বছর আগে কেউ সোনা কিনে রাখলেও তা ভালো বিনিয়োগ হিসেবেই বিবেচিত। শেয়ারবাজার, ডলার বা অন্য কিছু এই নিশ্চয়তা দেয় না।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ য় রব জ র দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
সন্তানকে পেয়ে আনন্দাশ্রু বাধ মানছে না তুষার-শান্তা দম্পতির
বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ উদযাপনে তখন ব্যস্ত সারাদেশ। চলছে শোভাযাত্রা, মেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজন। কিন্তু এ দিনে একটি নবজাত শিশুকে ঘিরে আরও আনন্দের বন্যা বয়ে গেছে কুমিল্লায় আহসান হাবিব তুষার ও শামীমা আক্তার শান্তা দম্পতির ঘরে, তার কাছে যেন বাইরের সব আয়োজন ফিকে। পহেলা বৈশাখের সকালেই তাদের কোলজুড়ে এসেছে দ্বিতীয় কন্যাসন্তান। শিশুটিকে ঘিরে আনন্দাশ্রু যেন বাঁধ মানছে না বাবা-মার। দাদার দেওয়া নামে শিশুটির নাম রাখা হয়েছে সুফিয়া আহসান রোয়া। তুষার ও শান্তার চাওয়া, তাদের দুই মেয়ে প্রথমে হোক ভালো মানুষ, পরে একজন চিকিৎসক।
গত সোমবার ভোর সাড়ে ৬টায় দেবিদ্বার উপজেলা সদরের সেন্ট্রাল হসপিটালে সিজারিয়ানের মাধ্যমে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন শান্তা। এ হাসপাতালটি তুষারের পারিবারিক যৌথ মালিকানায় পরিচালিত হচ্ছে। এ দম্পতির ৯ বছর বয়সী আরেকটি কন্যাসন্তান আছে। ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অনার্স শেষ করা তুষার পেশায় একটি প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় পরিবেশক। উচ্চ মাধ্যমিক পাস করা তাঁর স্ত্রী শান্তা প্যাথলজি ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেছেন। তুষার দেবিদ্বার উপজেলা সদরের নিউমার্কেট এলাকার ব্যবসায়ী মো. সেলিমের ছেলে। শান্তা একই উপজেলার বাঙ্গুরী এলাকার বাসিন্দা। তাদের তিন বছরের প্রেমের সম্পর্ক বিয়েতে পরিণতি পায় ২০১৪ সালে। বিয়ের পর ২০১৬ সালে দেবিদ্বার সেন্ট্রাল হসপিটালেই তাদের প্রথম কন্যাসন্তানের জন্ম। এবার বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে ঘর আলো করে এসেছে দ্বিতীয় সন্তান রোয়া।
তুষার বলেন, নববর্ষের কাছাকাছি সময়ে আমার স্ত্রীর প্রসবের সময় ছিল। কিন্তু পহেলা বৈশাখের বিশেষ দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে এ দিনেই সিজার করতে আমরা চিকিৎসকের মতামত নিয়েছিলাম। চিকিৎসকও সিজারিয়ানের জন্য নববর্ষকেই বেছে নেন। এ দিনে সন্তানের জন্ম হওয়ায় আমরা খুব খুশি। ওর জন্মদিন উদযাপনে কাউকে আর তারিখ মনে করিয়ে দিতে হবে না।
তুষার আরও বলেন, আমাদের প্রথম বাচ্চা হয়েছে সিজারিয়ানের মাধ্যমে। তাই দ্বিতীয় বাচ্চার ক্ষেত্রেও চিকিৎসক স্বাভাবিক প্রসবের ঝুঁকি নেননি। শান্তার গাইনি সার্জন ছিলেন আমার চাচি ডা. হনুফা আক্তার। হাসপাতাল কম্পাউন্ডে আমাদের বাসা হওয়ায় নিয়মিত ডা. হনুফার তত্ত্বাবধানে আমার স্ত্রী চিকিৎসা ও পরামর্শ নিতেন। তবু মনে শঙ্কা তো ছিলই। অপারেশন থিয়েটারের সামনে মা-বাবা ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনসহ ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। মনে মনে আল্লাহকে ডেকেছি, যেন কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে। আমার মা যখন বাচ্চা কোলে নিয়ে অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হন, তখন সব দুশ্চিন্তা দূর হয়। বাচ্চার জন্য নতুন কাপড়, তোয়ালে উপহার দিয়েছে আমার বোনসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন।
শান্তা বলেন, স্থানীয় রীতি অনুসারে আমি সন্তান সম্ভবা হওয়ার ৯ মাসের মাথায় আত্মীয়স্বজনকে নিয়ে বিশেষ খাবার ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। এখন বাচ্চার জন্য দোয়া কামনায় সাত দিন বয়সের সময় আবার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।
হাসপাতালের আবাসিক গাইনি সার্জন হনুফা আক্তার বলেন, প্রসূতি শান্তা আমার তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। যেন কোনো ঝুঁকিতে না পড়তে হয় এবং গর্ভের সন্তান যেন ভালো থাকে এ বিষয়ে শান্তা ও তুষার আগে থেকেই চেম্বারে এসে নিয়মিত ফলোআপ করতেন। এ ক্ষেত্রে স্বামীদের যতটুকু সচেতন থাকা দরকার, তুষার তার শতভাগ ছিলেন। নবজাতকের ওজন সাধারণত আড়াই কেজি হলেও সমস্যা নেই। শান্তা ও তুষারের মেয়ের ওজন হয়েছে ২ কেজি ৯০০ গ্রাম; যা একজন সুস্থ নবজাতকের জন্য যথেষ্ট। বর্তমানে মা ও সন্তান সুস্থ আছে।