তেহরান-সমর্থিত ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের যেকোনো হামলার জন্য ইরান দায়ী থাকবে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইরানের ওপর চাপ বাড়ানোর পদক্ষেপের অংশ হিসেবে তিনি এ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গতকাল সোমবার তাঁর মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘কেউ বোকা হবেন না। ইয়েমেনের “দাঙ্গাবাজ ও গুন্ডাদের” শত শত আক্রমণ ইরান থেকে উদ্ভূত। আর তারা (হুতি) ইরানেরই তৈরি। ইয়েমেনি জনগণ তাদের ঘৃণা করেন।’

এর আগে ট্রাম্প ইরানকে হুতিদের সমর্থন দেওয়া বন্ধে চাপ দিলেও তাঁর গতকালের মন্তব্য বড় রকমের উত্তেজনার ইঙ্গিত দিচ্ছে। এটি ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের আশঙ্কাও তৈরি করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান পার্টির নেতা ট্রাম্প আরও লিখেছেন, ‘হুতিদের যেকোনো আক্রমণ বা প্রতিশোধ শক্ত হাতে মোকাবিলা করা হবে। আর তা থামার কোনো নিশ্চয়তা নেই।’

গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ ও ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে মানবিক সরবরাহ বন্ধ করার প্রতিবাদে হুতিরা লোহিত সাগরে ইসরায়েলি জাহাজ ও দেশটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বাণিজ্যিক জাহাজে ধারাবাহিকভাবে আক্রমণ চালিয়ে আসছে।

বিশেষজ্ঞরা স্বীকার করেছেন, ইরান হুতি বিদ্রোহীদের অস্ত্র সরবরাহে সহায়তা করছে। আর সশস্ত্র এই গোষ্ঠীকে অনানুষ্ঠানিকভাবে ইরানের সমর্থনপুষ্ট প্রতিরোধ বাহিনী বা এক্সিস অব রেজিস্ট্যান্সের অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

এর আগে ট্রাম্প ইরানকে হুতিদের সমর্থন দেওয়া বন্ধে চাপ দিলেও তাঁর গতকালের মন্তব্য বড় রকমের উত্তেজনার ইঙ্গিত দিচ্ছে। এটি ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের আশঙ্কাও তৈরি করছে।

ট্রাম্প তাঁর পোস্টে লিখেছেন, হুতিদের চালানো প্রতিটি গুলি এখন থেকে ইরানের অস্ত্র থেকে চালানো গুলি হিসেবে ধরা হবে এবং ইরানকে এ জন্য দায়ী করা হবে। আর তাদের এর পরিণতি ভোগ করতে হবে, যা হবে ভয়াবহ।

হুতিদের যেকোনো আক্রমণ বা প্রতিশোধ শক্ত হাতে মোকাবিলা করা হবে। আর তা থামার কোনো নিশ্চয়তা নেই।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্ট

ট্রাম্প ইরানকে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের জন্য চাপ দিচ্ছেন। যদিও ২০১৮ সালে হোয়াইট হাউসে তাঁর প্রথম মেয়াদে তিনি ‘জয়েন্ট কম্প্রিহেন্সিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ)’ চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। এ চুক্তির ফলে তেহরানের ওপর থেকে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিনিময়ে ইরান তার সমৃদ্ধ পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত রাখতে সম্মত হয়।

চলতি মাসের শুরুতে ট্রাম্প ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে একটি চিঠি পাঠিয়ে সতর্ক করে বলেছিলেন, একটি পারমাণবিক চুক্তিতে পৌঁছাতে না পারলে যুক্তরাষ্ট্র ‘সামরিকভাবে’–এর জবাব দিতে পারে।

কিন্তু খামেনি ট্রাম্পের পারমাণবিক ইস্যুতে আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে এটিকে ‘গুন্ডামি’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন এবং ইঙ্গিত করেছেন যে ট্রাম্প আগের চুক্তিটি ভঙ্গ করেছিলেন।

ইরান ধারাবাহিকভাবে বলে আসছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি বেসামরিক উদ্দেশ্যে এবং তারা পারমাণবিক অস্ত্র গ্রহণের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

গত সপ্তাহে হুতিরা সতর্ক করে বলেছে, তারা ইয়েমেনের আশপাশের জলপথে ইসরায়েলি জাহাজ নিষিদ্ধ করবে। এরপর ট্রাম্প হুতিদের ওপর মার্কিন হামলা আরও বাড়িয়েছেন।

হুতিরা এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘ঘোষিত এলাকায় কোনো ইসরায়েলি জাহাজ এই নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের চেষ্টা করলে সেটিকে সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হবে।’

বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি ইঙ্গিত দিয়েছে, ২ মার্চ থেকে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় মানবিক সহায়তাসংক্রান্ত পণ্য সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার কারণে তারা ইসরায়েলি জাহাজের ওপর এ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

হুতিদের হুমকির জবাবে ট্রাম্প গত শনিবার একটি বার্তা দিয়েছেন। তিনি সপ্তাহান্তে ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘আজ আমি মার্কিন সেনাবাহিনীকে ইয়েমেনে হুতি “সন্ত্রাসীদের” বিরুদ্ধে কার্যকর ও কঠোর সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি।’ এরপরই ইয়েমেনে ২৪ ঘণ্টায় ব্যাপক বোমাবর্ষণ করা হয়।

শনি থেকে রোববার পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র আনুমানিক ৪৭টি বিমান হামলা চালিয়েছে। এতে ইয়েমেনের ৭টি প্রদেশে আনুমানিক ৫৩ জন নিহত হয়েছেন। হুতি-নিয়ন্ত্রিত ইয়েমেনের রাজধানী সানাতেও হামলা চালানো হয়েছে।

২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে হুতিরা লোহিত সাগরে প্রায় ১০০টি জাহাজে আক্রমণ চালিয়েছে ও ২টি ডুবিয়ে দিয়েছে। ট্রাম্পই প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট নন যিনি হুতিদের লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ চালিয়েছেন।

ট্রাম্পের পূর্বসূরি ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও একইভাবে ইয়েমেনে হুতি-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় কয়েক দফায় হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

আরও পড়ুনহুতি কারা, কেন গোষ্ঠীটির বিরুদ্ধে বড় হামলা শুরু করলেন ট্রাম্প১৬ মার্চ ২০২৫আরও পড়ুনহুতিদের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র: জাহাজে হামলা বন্ধের ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে১৭ মার্চ ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পদক ষ প সমর থ র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

গরমে লোডশেডিং হলে আগে ঢাকায় হবে: বিদ্যুৎ উপদেষ্টা

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, গ্রীষ্ম মৌসুমে যাতে লোডশেডিং কম হয় সেজন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে সরকার। যদি লোডশেডিং হয়, আগে ঢাকা শহরে হবে। পরে দেশের অন্য জায়গায় হবে। আগের মতো শুধু গ্রামে হবে না।

শুক্রবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রামে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এসব কথা বলেন তিনি।

গ্রীষ্ম মৌসুমে বিদ্যুতের লোডশেডিং সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, দুইটি কারণে বিদ্যুৎ চলে যেতে পারে। উৎপাদন কম হলে যদি লাইন বন্ধ করে দেওয়া হয় তখন সেটি লোডশেডিং। আর ঝড় বৃষ্টিসহ কোনো কারণে যদি ফিউজ চলে যায়, ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে সেটি বিদ্যুৎ বিভ্রাট।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা অনেক বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল। রমজানের মতো নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়তো সম্ভব হবে না। তবে আমরা চেষ্টা করবো। তবে লোডশেডিং যদি হয়, এমন হবে না যে শুধু গ্রামে লোডশেডিং হবে। ঢাকাতে প্রথমে লোডশেডিং হবে। পরে অন্য জায়গায় হবে।

তিনি বলেন, তাপমাত্রা বাড়লে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ে। এ জন্য আমরা এসির তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রিতে রাখতে বলেছি। এটা রাখতে পারলে এক-দুই হাজার চাহিদা কমবে। এ জন্য সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানান উপদেষ্টা।

খাল-নালায় ময়লা ফেললে জেল-জরিমানা
এবার চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা আগের তুলনায় অনেকাংশে কমবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে। বৃষ্টির পরিমাণ কেমন হবে তা একটা বড় ফ্যাক্টর। তবে এই দুর্ভোগ এবার অনেকটা লাঘব হবে।

জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের অগ্রগতি আছে জানিয়ে তিনি বলেন, নগরের জলাবদ্ধতা নিরসন কাজের কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। তবে একটা জিনিস দেখে খারাপ লাগছে, কিছুদিন আগে খাল পরিষ্কার করা হলেও সেখানে এখন আবার ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয়েছে। এতে মনে হচ্ছে এই কাজে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারি নাই। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হবে। মানুষকে সচেতন করা হবে। ময়লা রাখার বিন দেওয়া হবে। এরপরেও যদি ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয় তাহলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জেল-জরিমানাসহ শাস্তি দেওয়া হবে।

কক্সবাজার সড়ক ছয় লেন হবে
এদিকে দুর্ঘটনাপ্রবণ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক প্রশস্ত করা হবে জানিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, এই মহাসড়ক ছয় লেন করা হবে। তবে তা সময়সাপেক্ষ। এখানে জমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সব মিলিয়ে দুই-তিন বছরের আগে হবে না। তবে এই সময় সড়কে দুর্ঘটনারোধে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ অংশে সড়ক প্রশস্ত করা হয়েছে। সতর্ক করে সাইন পোস্ট দেওয়া হয়েছে। জনসচেতনতা বাড়ানো হবে। চালকদের সচেতন করা হবে।

এই সময় সড়ক ও জনপথ বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন প্রকৌশলী জানান, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীত করার জন্য সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলছে। আগামী সেপ্টেম্বরে শেষ হবে। এরপর ডিসেম্বরে ডিপিপি প্রণয়ন করা হবে। আগামী জানুয়ারিতে জাপানের দাতা সংস্থা জাইকার সঙ্গে ঋণ চুক্তি করার কথা রয়েছে।

রেলের শত্রু রেলের কর্মীরা
এদিকে ব্রিফিংয়ের সময় রেলওয়ে প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, রেলের শত্রু রেলের কর্মীরা। সিটি করপোরেশন রাস্তা করতে চাইলে, ওয়াসা পানি দিতে চাইলেও রেল নিতে চায় না। তবে এখন থেকে তা হবে না। সিটি করপোরেশন সিআরবিতে রাস্তা করে দেবে। ওয়াসা পানি সরবরাহ করবে। রেলের কাজ হচ্ছে ট্রেন পরিচালনা করা। প্রতিনিয়ত সেবার মান বাড়ানোর কাজ করতে হবে। রাস্তা করা ও পানি সরবরাহ করা রেলের কাজ নয়। এসব করতে গিয়ে রেলের দক্ষতা নষ্ট হয়। অর্থের অপচয় হয়।

রেল উপদেষ্টা বলেন, রেলের এক টাকা আয় করতে আড়াই টাকা খরচ হয়। এভাবে হলে চলবে না। এটি দুই টাকার নিচে নিয়ে আসতে হবে। আর ট্রেনের ইঞ্জিন ও কোচ সংকটে সরকার কাজ করছে।

এ সময় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইউক্রেনে গ্যাস পাইপলাইনের নিয়ন্ত্রণ চায় যুক্তরাষ্ট্র
  • ধরা পড়ছে না ইলিশ, জেলেদের দিন কাটছে অর্থকষ্টে
  • আদানির সরবরাহ কমে লোডশেডিং বেড়েছে
  • পানি নেই ঝিরি-ঝরনায় সংকটে দুর্গম গ্রামবাসী
  • আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট ১৭ ঘণ্টা পর চালু
  • আদানির কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ, লোডশেডিং বাড়তে পারে
  • গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বিপর্যস্ত
  • যুক্তরাষ্ট্র-চীন শুল্কযুদ্ধে কতটা বাড়বে আইফোনের দাম
  • রংপুরে পাইপলাইনে গ্যাস কতদূর
  • গরমে লোডশেডিং হলে আগে ঢাকায় হবে: বিদ্যুৎ উপদেষ্টা