যশোরে দুর্বৃত্তদের গুলিতে যুবক নিহত
Published: 18th, March 2025 GMT
যশোরে দুর্বৃত্তের গুলিতে মীর সামিল সাকিব সাদী (৩৫) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে শহরের রেলগেট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সামিল যশোর শহরের রেলগেট এলাকার বাসিন্দা। তাঁর বিরুদ্ধে যশোর কোতোয়ালি থানায় একাধিক মামলা আছে। পুলিশ জানায়, সামিল যুবলীগের শহর শাখার বহিষ্কৃত নেতা ও ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ মেহবুব ম্যানসেলের সহযোগী ছিলেন।
পুলিশ ও কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রাতে চাচাতো ভাই রাকিবের সঙ্গে মোটরসাইকেলে বাড়ি ফিরছিলেন সামিল। বাড়ির সামনে পৌঁছালে দুই অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি সামিলকে ছুরিকাঘাত করে। এ সময় রাকিব এক দুর্বৃত্তকে জাপটে ধরেন। তখন তাঁরা সামিলকে লক্ষ্য করে কয়েকটি গুলি ছোড়েন এবং রাকিবকে আঘাত করে পালিয়ে যান। তাঁদের ছোড়া গুলি সামিলের গলা ও বুকে বিদ্ধ হয়। পরে তাঁকে উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে রাজধানী ঢাকায় পাঠানো হয়। সেখানে আসার পথে গতকাল রাত একটার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়। সামিলের মরদেহ যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
ঘটনার পরপর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ বিষয়ে জানতে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূর ই আলম সিদ্দিকী ও কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী বাবুল হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে কেউ সাড়া দেননি। তবে গতকাল রাতেই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূর ই আলম সিদ্দিকী হাসপাতালে সাংবাদিকদের জানান, কারা ও কী কারণে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, সেটি তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। সামিল সন্ত্রাসী, তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা আছে। এ ছাড়া হত্যাকারী হিসেবে যাঁদের নাম আসছে, তাঁরাও সন্ত্রাসী। যাঁরা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন, তাঁদের গ্রেপ্তারে অভিযানে শুরু করেছে পুলিশ।
পুলিশের দাবি, সামিলের নেতৃত্বে রেলগেট এলাকায় মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, হাটবাজার ইজারার নিয়ন্ত্রণ করতেন মেহবুব ম্যানসেল। সামিলকে যাঁরা হত্যা করেছেন, তাঁরাও মেহবুবের সহযোগী হতে পারেন। গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তিনি আত্মগোপনে চলে যান। ফলে রেলস্টেশন বাজার ও রেলগেট এলাকার চাঁদার টাকা তাঁকে দেওয়া বন্ধ করেন সামিল। চাঁদার টাকা না পেয়ে মেহবুব তাঁর অন্য সহযোগীদের দিয়ে সামিলকে হত্যা করিয়েছেন বলে ধারণা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
রেলগেট এলাকার একাধিক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর যশোর শহরের কোট মোড়ে হত্যার শিকার হন তৎকালীন জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি কবির হোসেন। এতে মীর সামিলের বিরুদ্ধে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। হত্যাকাণ্ডের পর মোটরসাইকেলে পালানোর সময় শহরের পালবাড়ি ভাস্কর্য মোড়ে দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি। এতে তাঁর এক পা কেটে ফেলতে হয়। এক পা হারিয়েও আওয়ামী লীগের ক্ষমতার প্রভাবে এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করেছিলেন। আত্মগোপনে থাকা মেহবুবের অনেক সহযোগী সম্প্রতি এলাকায় ফিরতে শুরু করেছেন। তাঁদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে সামিল খুন হতে পারেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এল ক য় ম হব ব এক ধ ক শহর র সহয গ গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
শরীয়তপুরের জাজিরায় আবারও সংঘর্ষ, মুহুর্মুহু ককটেল বিস্ফোরণ
শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় শতাধিক ককটেল (হাতবোমা) বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
গতকাল রোববার দুপুরে জয়নগর ইউনিয়নের ছাব্বিশপারা এলাকায় এ সংঘর্ষ হয়। এতে এক তরুণের হাতের কব্জিতে গুরুতর ক্ষত হয় এবং আরও একজন আহত হন।
জাজিরা থানা ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জয়নগর ইউনিয়নের ছাব্বিশপারা এলাকায় তেজগাঁও কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিঠুন ঢালী ও জয়নগর ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হালিম তালুকদারের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ চলছে। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এই দুই নেতা আত্মগোপনে গেলে স্থানীয় পর্যায়ে তাদের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন জসিম তালুকদার ও নুর আলম সরদার।
রোববার দুপুরে দুই পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্র ও ককটেল নিয়ে সংঘর্ষের প্রস্তুতি নেয়। এ সময় নুর আলম সরদারের অনুসারীরা প্রতিপক্ষের ওপর ককটেল বোমা নিক্ষেপ করে। এরপর উভয় পক্ষ ঘণ্টা-ব্যাপী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। চলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ককটেল বিস্ফোরণ ও মারামারি। পরে পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
সংঘর্ষের কিছু দৃশ্য স্থানীয় এক ব্যক্তির সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারণ হয়, যা ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ৪ মিনিট ৪৪ সেকেন্ডের সেই ভিডিওতে দেখা যায়, এক পক্ষের সমর্থকরা বালতিতে করে ককটেল নিয়ে প্রতিপক্ষের দিকে নিক্ষেপ করছেন। তাদের হাতে ছিল টেঁটা, রামদা, ছেনদা, বল্লম, ডাল-সুরকি ও অন্যান্য দেশীয় অস্ত্র।
সম্প্রতি জাজিরার বিলাশপুরে সংঘর্ষের ঘটনায় খইয়ের মতো ককটেল বিস্ফোরণ দেশজুড়ে আলোচিত হয়। গত ৫ এপ্রিল সেখানে দুই শতাধিক ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে, যা এখনও আলোচনায় রয়েছে। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আবারও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটলো ছাব্বিশপারা এলাকায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল আখন্দ বলেন, গতকাল দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বেশ কিছু হাতবোমা বিস্ফোরিত হয় বলে জানতে পেরেছি। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এ ঘটনায় একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।