সভাপতির কার্যালয়ে তালা, স্নাতকোত্তর চিকিৎসা শিক্ষা ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থায় স্থবিরতা
Published: 18th, March 2025 GMT
বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনসের (বিসিপিএস) সভাপতির কার্যালয়ে বিএনপিপন্থী বলে পরিচিত কিছু চিকিৎসক তালা লাগিয়ে দিয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটির কাউন্সিলরদের পদত্যাগ চান তাঁরা। এর পর থেকে কাউন্সিলররা কার্যালয়ে যাচ্ছেন না। এতে প্রতিষ্ঠানটিতে তৈরি হয়েছে স্থবিরতা। অনিশ্চয়তায় পড়েছে স্নাতকোত্তর পর্যায়ের প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থীর পরীক্ষা।
আগামী ১ জুলাই এফসিপিএস (ফেলো অব কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস) পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা আছে। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি ও অন্যান্য প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল ২ মার্চ। সভাপতির কার্যালয়সহ বিভিন্ন দপ্তর বন্ধ থাকায় এসব কাজ শুরু হয়নি। কে, কবে তালা খুলবে, তার ঠিক উত্তর কারও কাছ থেকে পাওয়া যাচ্ছে না।
বিসিপিএস স্নাতকোত্তর চিকিৎসা শিক্ষা ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে। এখান থেকে এফসিপিএস ডিগ্রি দেওয়া হয়। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিসিপিএসের ডিগ্রিকে গুরুত্ব ও সম্মান দেওয়া হয়। দেশে মেডিকেল শিক্ষার মান নিয়ে নানা সমালোচনা হলেও বিসিপিএস মান ধরে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
বিসিপিএস স্নাতকোত্তর চিকিৎসা শিক্ষা ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে। এখান থেকে এফসিপিএস ডিগ্রি দেওয়া হয়। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিসিপিএসের ডিগ্রিকে গুরুত্ব ও সম্মান দেওয়া হয়। দেশে মেডিকেল শিক্ষার মান নিয়ে নানা সমালোচনা হলেও বিসিপিএস মান ধরে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।গতকাল সোমবার রাজধানীর মহাখালীতে বিসিপিএসে গিয়ে দেখা যায়, সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লা অফিসে আসেননি। বিসিপিএস ভবনের অষ্টম তলায় সভাপতির কার্যালয়ে তালা। কর্মচারীরা জানান, কিছু চিকিৎসক গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সভাপতির কার্যালয়সহ বিভিন্ন কক্ষে তালা লাগিয়ে দেন। তাঁরা কাউন্সিলরদের পদত্যাগ করতে বলেন। সে দিন থেকে সভাপতিসহ বিসিপিএসের কোনো কাউন্সিলর এখানে আসেননি।
ওই দিন অন্যদের সঙ্গে বিসিপিএসে গিয়েছিলেন সার্জন ফিরোজ কাদের। যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি কোনো দল বা গোষ্ঠীর হয়ে কথা বলছি না। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে এবং ভবিষ্যতে পরীক্ষার কাজে কোনো ব্যাঘাত না ঘটে, সে জন্য আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম।’
বিসিপিএস স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। এর নীতি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী এটির কাউন্সিল। কাউন্সিলের সদস্য ২০ জন। চারজন সদস্য সরকারের মনোনীত। অপর ১৬ জন বিসিপিএসের সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত। প্রতি চার বছরের জন্য আটজন করে নির্বাচিত হন। এ বছর আটজনের মেয়াদ শেষ হয়েছে। সেই আট কাউন্সিলর পদে নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছিল। এরই মধ্যে বাকি আটজনের পদত্যাগের জন্য চাপ দেওয়া হয়। ২৫ ফেব্রুয়ারির পরই বাকি সবাই পদত্যাগ করেন।
এখন সরকারকে অর্থাৎ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে।—রশীদ-ই-মাহবুব, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতিপদত্যাগকারী কাউন্সিলরদের মধ্যে আছেন স্নায়ুবিশেষজ্ঞ ও নিউরো সায়েন্সেস ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক কাজী দীন মোহাম্মদ, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগের সাবেক প্রধান আবিদ হোসেন মোল্লা, ঢাকা মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক টিটু মিয়া, স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক এ বি এম খুরশীদ আলম, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাকসুদুল আলম, ইমতিয়াজ ফারুক, বিল্লাল আলম, নূর হোসেন ভূঁইয়া শাহীন। তবে তাঁদের পদত্যাগপত্র কেউ গ্রহণ করেননি।
পদত্যাগকারী চিকিৎসকদের কেউ কেউ ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে স্বাস্থ্য খাতের সরকারি সংস্থায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। তাঁরা পেশাদার চিকিৎসক হিসেবে সুপরিচিত। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কেউ কেউ বলছেন, বিসিপিএসে যে পরিবর্তনই আসুক না কেন, প্রতিষ্ঠানটিকে সক্রিয় করা দরকার এবং গুণগত মানও বজায় রাখতে হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ১ জুলাই এফসিপিএস পরীক্ষার আগে প্রায় তিন হাজার শিক্ষার্থীর বেশ কয়েক ধরনের ওয়ার্কশপ ও থিসিস উপস্থাপন শেষ হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তা হয়নি। সার্বিকভাবে পরীক্ষা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এসব ছাড়াও বিসিপিএসের দৈনন্দিন অনেক কাজ বন্ধ আছে।
ঘটনার ব্যাপারে প্রবীণ চিকিৎসক ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক রশীদ-ই-মাহবুব প্রথম আলোকে বলেন, এখন সরকারকে অর্থাৎ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব স প এস র র পদত য গ পর ক ষ র চ ক ৎসক সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
নড়াইলে দু’পক্ষে সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ২ পুলিশ
নড়াইলের কালিয়ায় দু’পক্ষে সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় দুই পুলিশসহ আটজন আহত হয়েছেন। শনিবার উপজেলার হামিদপুর ইউনিয়নের সিলিমপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত হাসিম মোল্যা (৩৮) হামিদপুর ইউনিয়নের সিলিমপুর গ্রামের বাসিন্দা। আহতরা হলেন– কালিয়া থানার দুই পুলিশ সদস্য চন্দন সাহা ও সজল এবং সিলিমপুর গ্রামের কাদের মোল্যা ও তাঁর ছেলে জনি মোল্যা, বনি মোল্যা, আশিক, পনিসহ আটজন। এ ঘটনায় দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথ বাহিনী।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সিলিমপুর গ্রামের ঠান্ডু মোল্যা পক্ষের সঙ্গে একই গ্রামের জনি মোল্যা পক্ষের বিরোধ চলছিল। শুক্রবার বিকেলে স্থানীয় গাজীরহাট বাজার থেকে জনির লোকজন ঠান্ডুকে বের করে দেয়। এরই জেরে শনিবার বেলা ১১টার দিকে ঠান্ডুর লোকজন জনির বাড়িতে গিয়ে তাঁর লোকজনের ওপর দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা করেন। এ হামলা ঠেকাতে গেলে কালিয়া থানা পুলিশের দুই সদস্যসহ আটজন আহত হন। এ ঘটনায় আহত হাসিম দুপুরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। বাকিদের কালিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
এদিকে সকালে হামলার শিকার হয়ে জনি গ্রুপের লোকজন পাল্টা হামলার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় যৌথ বাহিনী অভিযানে জনি গ্রুপের সিরাজ মোল্যা (৪৪) ও আজিজার শেখকে (৫৫) গ্রেপ্তার করেছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি ওয়ান শুটার গান ও ২০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।
এ বিষয়ে কালিয়া থানার ওসি রাশিদুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় একটি ওয়ান শুটার গান ও ২০ রাউন্ড গুলিসহ দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে। পরিস্থিতি এখন শান্ত।