একনাগাড়ে দীর্ঘক্ষণ বসে থেকে শরীরের কী কী ক্ষতি করছেন, জানেন?
Published: 18th, March 2025 GMT
অফিসের কাজ হোক বা প্রতিদিনের ক্লাস, জীবনের একটা বড় সময় আমাদের কাটাতে হয় বসে থেকে। শরীর নড়াচড়া না করে একনাগাড়ে অফিসের ডেস্ক, কম্পিউটার কিংবা টিভির সামনে বসে থাকা মারাত্মক ক্ষতিকর। দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার ফলে দেখা দিতে পারে নানা রকম শারীরিক ও মানসিক সমস্যা। তবে কিছু কার্যকর উপায় অবলম্বন করলে এসব সমস্যা থেকে বাঁচা সম্ভব।
১.ঘাড়ব্যথা ও অস্বস্তি
কর্মব্যস্ত মানুষের দিনের বেশির ভাগ সময় কাটে অফিসের চেয়ারে বসে বা কম্পিউটারের দিকে কুঁজো হয়ে। এভাবে অনেকক্ষণ বসে থাকলে মেরুদণ্ডের ওপর চাপ পড়ে এবং এতে ঘাড়ের পেশিগুলোতে পড়ে অতিরিক্ত চাপ। গবেষণা বলে, বসে থেকে ঘাড় সামনের দিকে মাত্র ৩০ ডিগ্রি কাত করলেই স্বাভাবিকের চেয়ে তিন–চার গুণ বেশি পেশিশক্তির প্রয়োজন হয়, যা দীর্ঘ মেয়াদে ঘাড়ব্যথার কারণ হতে পারে।
যেভাবে প্রতিরোধ করতে পারেন
আপনার কম্পিউটার এমনভাবে বসান, যাতে কম্পিউটারটির পর্দার মাঝামাঝি অংশ আপনার চিবুকের সমান উচ্চতায় থাকে। এতে আপনার ঘাড় স্বাভাবিক অবস্থানে থাকবে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে বিরতি নিন। হেঁটে আসুন খানিকটা। কাজের সময় চেষ্টা করুন এমনভাবে বসতে, যেন সরাসরি কম্পিউটারের দিকে তাকাতে পারেন, যেন নিচের দিকে তাকাতে না হয়।
২. মনোযোগের অভাবদীর্ঘক্ষণ বসে থাকলে আমাদের শরীরে রক্ত সঞ্চালন কমে যায় এবং মস্তিষ্কে অক্সিজেন পৌঁছানোর কাজ বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে মস্তিষ্ক ধীরগতির হয়ে পড়ে এবং দীর্ঘক্ষণ মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে যায়।
যেভাবে প্রতিরোধ করতে পারেন
একটা নির্দিষ্ট কাজ শেষ করার পর আরেকটা কাজ করার মাঝখানে বিরতি নিন। একবারে সব কাজ করে সময় বাঁচানোর চেষ্টা করলে কর্মক্ষমতাই কমে যেতে পারে; বরং মাঝেমধ্যে উঠে হাঁটাহাঁটি করুন। হতে পারে দূরের টেবিলের সহকর্মীর সঙ্গে দেখা করে আসা বা নিজের বাসায় হলে বারান্দা থেকে ঘুরে আসা।
আরও পড়ুনআবহাওয়ার সঙ্গে হাঁটু, কোমর ও বাতের ব্যথার কী সম্পর্ক?২৫ আগস্ট ২০১৭৩. বিষণ্ণতাএক গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা দিনে সাত ঘণ্টার বেশি বসে থাকেন, তাঁরা কেবল চার ঘণ্টা বা এর কম সময় বসে থাকা ব্যক্তিদের তুলনায় বেশি বিষণ্ণতায় ভোগেন। তাই বিষণ্ণতা থেকে মুক্তি পেতে হলেও দীর্ঘক্ষণ বসে থাকবেন না।
যেভাবে প্রতিরোধ করতে পারেন
প্রকৃতির সংস্পর্শে আসুন। ছাদে বা বারান্দায় বাগান করলে সেখানে খানিকটা সময় কাটিয়ে আসুন। গবেষণা বলছে, ৯০ মিনিটের জন্য প্রকৃতির নির্মল পরিবেশে হাঁটাহাঁটি করলে নেতিবাচক চিন্তা কমে যায়, যা বিষণ্ণতা দূর করতে সাহায্য করে। তাই অফিস বা বাসার বাইরে কিছুটা সময় প্রকৃতিতে কাটানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন।
৪. ইনসুলিনজনিত সমস্যাডায়াবেটিস আছে, এমন রোগীদের বসে থাকা মানেই বিপদ। এক দিনের জন্য বসে থাকলেই তাঁদের শরীরে ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে যেতে পারে, বিশেষ করে যাঁরা টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে আছেন।
যেভাবে প্রতিরোধ করতে পারেন
নিয়ম করে প্রতিদিন হাঁটুন, যেন রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক থাকে। যথাযথ পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি খান। পানি কম খেলে শরীরে ভ্যাসোপ্রেসিন নামের হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়, যা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। গবেষণা বলছে, যাঁরা প্রতিদিন আধা থেকে এক লিটার পানি খান, তাঁদের টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে।
৫. পায়ের ব্যথাবেশ লম্বা সময় ধরে এক জায়গায় বসে থাকলে পায়ের পেশিগুলো শক্ত হয়ে যায় এবং ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
যেভাবে প্রতিরোধ করতে পারেন
চেয়ারের উচ্চতা এমনভাবে ঠিক করুন, যাতে পা মাটির ওপর সমানভাবে থাকে এবং হাঁটু সামান্য উঁচুতে থাকে। একনাগাড়ে বসে না থেকে কাজের মাঝেমধ্যে হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এতে পা সচল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন করে কাজ করার উদ্যমও পাবেন।
আরও পড়ুনযে ব্যায়াম কমাবে কোমর ও পিঠের ব্যথা১৫ জুলাই ২০২০৬. অতিরিক্ত মেদ জমাঅনেকক্ষণ বসে থাকার ফলে শরীরে চর্বি দহনকারী যে বিশেষ এনজাইম আছে, অর্থাৎ লিপোপ্রোটিন লাইপেজের কার্যকারিতা কমে যায়, যা শরীরে মেদ জমার অন্যতম কারণ হতে পারে।
যেভাবে প্রতিরোধ করতে পারেন
প্রতি ১৫ মিনিট পর একবার শরীরের কোনো একটি অংশ নাড়ানোর চেষ্টা করুন। আপনি চাইলে গোড়ালি বা হাতের কবজি ঘোরাতে পারেন, মাথা পেছনে হেলিয়ে নিতে পারেন বা হাতের আঙুল নাড়াতে পারেন। কোমরও খানিকটা এদিক–ওদিক করে নিতে পারেন।
৭. দুর্বল হাড়ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটি না করে অনেকক্ষণ বসে থাকলে হাড় ধীরে ধীরে ক্ষয় হয় ও এর ঘনত্ব কমে যায়। এটি দীর্ঘ মেয়াদে হাড় দুর্বল করে তোলে।
যেভাবে প্রতিরোধ করতে পারেন
কাজের ফাঁকে হাঁটাহাঁটির পাশাপাশি হাড় মজবুত রাখতে দুধ, পালংশাকের মতো ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার খান। এর সঙ্গে ডিমের মতো ভিটামিন ডি–সমৃদ্ধ খাবারও বেছে নিন। ভিটামিন ডি শরীরে ক্যালসিয়াম শোষণ করতে সাহায্য করে, যা হাড়ের গঠন রাখে মজবুত।
দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলে শরীর ও মনের ওপর বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তবে কিছু সহজ অভ্যাস গড়ে তুললে এসব সমস্যা এড়িয়ে চলা সম্ভব। তাই অলসতা করে দীর্ঘক্ষণ বসে না থেকে নিয়ম করে উঠে হাঁটুন, শরীরের নড়াচড়ার দিকে খেয়াল রাখুন এবং অবশ্যই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন। শরীর আপনার, যত্ন করার দায়িত্ব আপনারই।
সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট
আরও পড়ুনকোমর কত ইঞ্চি হলে বুঝবেন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছেন?০১ অক্টোবর ২০২২উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রাঙামাটিতে গুর্খা সম্মেলন ও গুণীজন সম্মাননা
বিষু উৎসব ও বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে রাঙামাটিতে বসবাসরত গুর্খা জনগোষ্ঠীর উদ্যোগে গুর্খা সম্মেলন, গুণীজন সম্মাননা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়েছে। মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) সকালে তবলছড়িস্থ স্থানীয় কমিউনিটি সেন্টারে রাঙামাটি গুর্খা কল্যাণ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ।
রাঙামাটি গুর্খা কল্যাণ ফাউন্ডেশনের সভাপতি মঞ্জু রাণী গুর্খার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রুহুল আমিন, রাঙামাটি গুর্খা কল্যাণ ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক বরুণ প্রসাদ নেওয়ার, রাঙামাটি গুর্খা কল্যাণ ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি মনোজ বাহাদুর গুর্খা, দীলিপ বাহাদুর রায়, পংকজ বাহাদুর গুর্খা, ত্রিদীপ বাহাদুর রায় প্রমুখ।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ বলেন, আদিকাল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত নেপালী বংশোদ্ভূত গুর্খা সম্প্রদায়ের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ধরে রাখতে হলে ভ্রাতৃত্ববন্ধনে আবদ্ধ হয়ে নতুন প্রজন্মকে এগিয়ে চলার পথ দেখাতে হবে। যাতে করে এই নতুন প্রজন্ম গুর্খা জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন উৎসব ও আচার-অনুষ্ঠান যথাযথভাবে উৎসবমুখর পরিবেশে পালন করতে পারে। আর এই উৎসবের মাধ্যমে সম্প্রীতি-ভ্রাতৃত্ববোধ ও পারস্পরিক সৌহাদ্য উত্তর উত্তর বৃদ্ধি পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
আরো পড়ুন:
অভ্যুত্থানে আহতদের সংবর্ধনা দিয়েছে রাঙামাটি জেলা পরিষদ
সাজেকে ঢল নেমেছে পর্যটকদের, খালি নেই রিসোর্ট
আলোচনা সভা শেষে গুর্খা জনগোষ্ঠীর ছয় নেতাকে গুণীজন সংবর্ধনার ক্রেস্ট দেওয়া হয়। পরে গুর্খা জনগোষ্ঠীর শিল্পীরা তাদের নিজস্ব পোশাক পরে নিজের ভাষায় সঙ্গীত ও মনোমুগ্ধকর নাচ পরিবেশন করেন।
ঢাকা/শংকর/বকুল