তুলসী গ্যাবার্ড একসময় ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর সদস্য। রাজনীতি করেছেন ডেমোক্রেটিক পার্টির হয়ে। পরে রিপাবলিকান পার্টিতে যোগ দেন তিনি।

রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর তুলসীকে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক হিসেবে মনোনীত করেন।

জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালকের পদে তুলসীকে মনোনয়ন দিয়ে ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি (তুলসী) সবার জন্য গর্ব করার মতো একজন মানুষ হয়ে উঠবেন।

৪৩ বছর বয়সী তুলসীর মনোনয়ন নিয়ে নানা তর্ক-বিতর্ক, আলোচনা-সমালোচনা হয়। তাঁর ব্যাপারে খোদ রিপাবলিকান পার্টির অনেকে আপত্তি জানান। তাঁকে নিয়ে উদ্বেগ জানান যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রায় ১০০ কূটনীতিক, গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা কর্মকর্তা।
তবে শেষ পর্যন্ত তাঁর মনোনয়ন মার্কিন সিনেটে অনুমোদন পায়। গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি তিনি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালকের দায়িত্ব নেন।

আগে থেকে তুলসীর গোয়েন্দা বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিজ্ঞতা নেই। তবে দুই দশকের বেশি সময় মার্কিন বাহিনীতে একজন সেনাসদস্য হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে তাঁর।

কুয়েত ও ইরাক যুদ্ধের সময় দেশ দুটিতে তুলসীকে মোতায়েন করা হয়েছিল। এ ছাড়া দুই বছর যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়বিষয়ক কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি।

২০১৩ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ডেমোক্রেটিক পার্টির একজন কংগ্রেস সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তুলসী। ২০২০ সালে নিজ দল থেকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ করেছিলেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত সরে দাঁড়ান।

২০২২ সালে তুলসী ডেমোক্রেটিক পার্টি ছাড়েন। তখন তিনি অভিযোগ করে বলেছিলেন, ডেমোক্রেটিক পার্টি ‘যুদ্ধবাজদের’ আধিপত্যে চলছে।

তুলসী বিয়ে করেছেন আব্রাহাম উইলিয়ামস নামের এক সিনেমাটোগ্রাফারকে। তুলসীর বাবার নাম মাইক গ্যাবার্ড। মেয়ের মতো বাবারও দলবদলের ইতিহাস রয়েছে। তিনি প্রথমে রিপাবলিকান পার্টি থেকে সিনেট সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে ডেমোক্রেটিক পার্টিতে যোগ দেন।

তুলসী রিপাবলিকান পার্টিতে যোগ দেওয়ার পর ২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রচারশিবিরের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। গত সেপ্টেম্বরে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিসের বিরুদ্ধে নির্বাচনী বিতর্কের প্রস্তুতি নিতে ট্রাম্পকে সহায়তা করেছিলেন তুলসী।

আরও পড়ুনবাংলাদেশে ‘সংখ্যালঘু নির্যাতন’ যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের মূল জায়গা: তুলসী গ্যাবার্ড১৫ ঘণ্টা আগে

হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নামের কারণে তুলসীকে অনেকেই ভারতীয় বলে মনে করেন। তবে ভারতের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই।

তুলসীর মা হিন্দু মতাদর্শে দীক্ষা নেন এবং তাঁর সব সন্তানের হিন্দু নাম দেন। তুলসীও নিজেকে হিন্দু হিসেবে পরিচয় দেন। মার্কিন কংগ্রেসে তিনিই প্রথম হিন্দু সদস্য। আইনপ্রণেতা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার সময় ভগবত গীতা হাতে শপথ নিয়েছিলেন তিনি।

রিপাবলিকান পার্টিতে যোগ দেওয়ার অল্প সময়ের মধ্যে তুলসী যে ট্রাম্পের আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন, তা বোঝা যায় তাঁকে দেশটির জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক হিসেবে বেছে নেওয়া থেকে।

আরও পড়ুনতুলসী গ্যাবার্ড হলেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা প্রধান, ট্রাম্পের আরেক বিজয়১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

গত নভেম্বরে তুলসী এক সাক্ষাৎকারে বলছিলেন, ট্রাম্প প্রশাসনে কাজ করাটা তাঁর জন্য সম্মানজনক হবে। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও পরমাণু যুদ্ধ ঠেকাতে তিনি যদি কোনো সহযোগিতা করতে পারেন, তাহলে অবশ্যই করবেন।

জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালকের কাজ কী

জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইনটেলিজেন্স কমিউনিটি’র প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ন্যাশনাল ইনটেলিজেন্স প্রোগ্রামের দেখভাল করেন। পাশাপাশি জাতীয় নিরাপত্তার খাতিরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল ও হোমল্যান্ড সিকিউরিটি কাউন্সিলের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

আরও পড়ুনওয়াশিংটনে পৌঁছেই তুলসী গ্যাবার্ডের সঙ্গে বৈঠক করলেন নরেন্দ্র মোদি১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ইনটেলিজেন্স কমিউনিটির প্রধান তথা জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক হিসেবে তুলসীর অধীনে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইএ), কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো (এফবিআই), প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা, সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা, নৌবাহিনীর গোয়েন্দা, বিমানবাহিনীর গোয়েন্দা, মহাকাশবাহিনীর গোয়েন্দাসহ ১৮টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা ও দপ্তর আছে।

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার পর জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক পদটি সৃষ্টি করা হয়। ২০০৫ সালে প্রথম এ পদে নিয়োগ দিয়েছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ। তুলসী দেশটির প্রথম নারী জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক।

আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা প্রধান হলেন তুলসী গ্যাবার্ড১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক পদে ট্রাম্প মনোনীত তুলসী গ্যাবার্ডকে নিয়ে কেন এত বিতর্ক১৫ নভেম্বর ২০২৪.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র প বল ক ন প র ট ত লস র ন ত লস ত লস ক সদস য প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

অর্থবছরের আট মাসে ২৪ দশমিক ২৭ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) ২৪ দশমিক ২৭ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে। অর্থবছরের আট মাস বিবেচনায় এটি গত ১২ বছরের মধ্যে এডিপির সর্বনিম্ন বাস্তবায়ন হার।

সোমবার (১৭ মার্চ) পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) এডিপি বাস্তবায়নের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে।

এতে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাস ২০২৪ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছে ৬৫ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকার। এটি অর্থবছরের মোট এডিপি বরাদ্দের মাত্র ২৪ দশমিক ২৭ শতাংশ। এর আগের অর্থবছর প্রথম আট মাসে এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ৩১ দশমিক ১৭ শতাংশ।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দায়িত্বে আসা অন্তর্বর্তী সরকার অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে প্রকল্প বাস্তবায়নে জোর দেয়। এতে করে আগের সরকারের নেওয়া অনেক প্রকল্পে অর্থছাড় কমিয়ে দেওয়া হয়। ফলে চলমান অনেক প্রকল্পের কাজও স্থগিত হয়ে যায়। এসব মিলিয়ে এডিপির বরাদ্দ করা অর্থ ব্যয় কমে যায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

২০২২-২৩ অর্থবছরে এ বাস্তবায়ন হার ছিল ৩২ দশমিক ১০ শতাংশ এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে এ বাস্তবায়ন হার ছিল ৩৫ দশমিক ৮০ শতাংশ। এমনকি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে দেশে কোভিড অতিমারির প্রভাব থাকা সত্ত্বেও চলতি অর্থবছরের তুলনায় বেশি হারে এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছিল।

ওই অর্থবছরের প্রথম আট মাসে এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ৩৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ। আর ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ৩৭ দশমিক ২৬ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরের এডিপিতে মোট বরাদ্দের পরিমাণ দুই লাখ ৭৮ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা। সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন এক লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা, বৈদেশিক ঋণ বা প্রকল্প সাহায্য এক লাখ কোটি টাকা এবং বিভিন্ন সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ১৩ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা।

বাস্তবায়নের হার পর্যালোচনায় দেখা যায়, সরকারি অর্থায়ন অংশে বাস্তবায়ন হার সবচেয়ে কম। এক্ষেত্রে বাস্তবায়িত হয়েছে ২১ দশমিক ১৩ শতাংশ বা ৩৪ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা। এটি প্রথম আট মাসের গড় বাস্তবায়নের চেয়ে কম। বৈদেশিক সহায়তা অংশে বাস্তবায়িত হয়েছে ২৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ বা ২৭ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা। আর সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন অংশে বাস্তবায়িত হয়েছে ৩৯ দশমিক ৩১ শতাংশ বা পাঁচ হাজার ২২৪ কোটি টাকা।

বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের এডিপি বাস্তবায়ন পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, অর্থবছরের প্রথম আট মাসে বাস্তবায়নে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ। ৪ হাজার ৯৩৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকা বরাদ্দের মধ্যে আট মাসে সংস্থাটি বাস্তবায়ন করেছে মাত্র ২০ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। এটি মোট বরাদ্দের মাত্র শূন্য দশমিক ৪১ শতাংশ। বাস্তবায়নে পিছিয়ে থাকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়। ১.২৫ কোটি টাকার বরাদ্দের বিপরীতে আট মাসে সংস্থাটি বাস্তবায়ন করেছে ০.০৩ কোটি টাকা। এটি মোট বরাদ্দের মাত্র ২ দশমিক ১৮ শতাংশ। এর পরের অবস্থানে রয়েছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ। তারা ৭৫৪ কোটি ৫০ লাখ টাকার বরাদ্দের বিপরীতে বাস্তবায়ন করেছে ২৮ কোটি ০৩ লাখ টাকা। এটি মোট বরাদ্দের ৩ দশমিক ৭২ শতাংশ।

এ ছাড়া এডিপি বাস্তবায়ন হারে পিছিয়ে থাকা মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ৫.৪৮ শতাংশ, ভূমি মন্ত্রণালয় ৬.৪১ শতাংশ এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ৬.৭৭ শতাংশ।

এডিপি বাস্তবায়নে সবচেয়ে এগিয়ে থাকার তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। চলতি অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৪৬৩ কোটি ১০ লাখ টাকা। প্রথম আট মাসে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ বাস্তবায়ন করেছে ৩,৭৬২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৮৪ দশমিক ৩০ শতাংশ। বাস্তবায়ন হারে পরের অবস্থানে রয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। অর্থবছরের প্রথম আট মাসে ১৫ কোটি ৪৮ লাখ টাকার বরাদ্দের বিপরীতে বাস্তবায়ন করেছে ১২ কোটি ৮ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৭৮ দশমিক ০৬ শতাংশ। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, বাস্তবায়নের হার ৭২ দশমিক ৮৫ শতাংশ। আর চতুর্থ অবস্থানে থাকা বাস্তবায়ন পরীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের বাস্তবায়ন হার ৪৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ।

ঢাকা/হাসান/এনএইচ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের মেয়াদ ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ল
  • আট মাসে এডিপির বাস্তবায়ন ২৪%
  • অর্থবছরের আট মাসে ২৪ দশমিক ২৭ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন
  • সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান চার দিনের রিমান্ডে
  • ইবির ‘ডি’ ইউনিটে ভর্তির আবেদন শুরু, পরীক্ষা ১১ মে
  • লিন্ডের ৪০০ শতাংশ চূড়ান্ত লভ্যাংশ ঘোষণা
  • প্রাইম ব্যাংকের ১৭.৫০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা
  • দালালের জালে তরুণরা, স্বপ্ন দেখিয়ে সর্বনাশ
  • নোবিপ্রবিতে ২ ছাত্রদল নেতার জন্য মাস্টার্স চালু