আইপিএলের প্রথম আদিবাসী ক্রিকেটার ‘ঝাড়খন্ডের ক্রিস গেইল’
Published: 18th, March 2025 GMT
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গত বছর রাঁচিতে টেস্ট খেলতে গিয়েছিল ভারত ক্রিকেট দল। রাঁচির বিশ্রা মুন্ডা বিমানবন্দরে ভারতীয় দল অবতরণের পর শুবমান গিলের সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা বলেন ফ্রান্সিস মিঞ্জ। তিনি এই বিমানবন্দরের নিরাপত্তারক্ষী। গিল তখন গুজরাট টাইটানসের অধিনায়ক। আর ফ্রান্সিসের ছেলে রবিন মিঞ্জ ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে আইপিএলের মিনি নিলামে প্রথমবারের মতো দল পান। ৩ কোটি ৬০ লাখ রুপিতে রবিনকে সেবার কিনেছিল গিলের দল গুজরাট। বিমানবন্দরে বাবা কেন গুজরাট অধিনায়কের সঙ্গে কথা বলেছিলেন, সেটা এতক্ষণে পরিস্কার। কিন্তু ফ্রান্সিসের স্বপ্ন শুধু এটুকুতেই সীমাবদ্ধ নয়।
আরও পড়ুনপ্রতিপক্ষকে ধাক্কা দিয়ে জরিমানা গুনলেন পাকিস্তানি অলরাউন্ডার১২ ঘণ্টা আগেফ্রান্সিস স্বপ্ন দেখেন, এই বিমানবন্দরে প্রতিদিন যেভাবে হাজারো লোকের যাতায়াত, তাঁর ছেলেও একদিন ভারত জাতীয় দলের হয়ে বিমানে এভাবে যাতায়াত করবে; কিন্তু সেই স্বপ্ন তো আর চাইলেই পূরণ হওয়ার নয়। কিছু ধাপ আছে এমন স্বপ্নপূরণের। তার মধ্যে একটি ধাপ যেমন আইপিএলে ভালো করা। গত বছর আইপিএলেই রবিনের সেই ‘পরীক্ষা’ দেওয়ার প্রস্তুতি ছিল। কাল হয়ে দাঁড়ায় বাইক দুর্ঘটনা। যে কারণে গতবার আর আইপিএলে খেলা হয়নি। তাঁর জায়গায় বিআর শরথকে দলভুক্ত করে গুজরাট। তবে রবিনের অপেক্ষা ফুরোচ্ছে এবার। মেগা নিলামে ৬৫ লাখ রুপিতে রবিনকে মুম্বাই ইন্ডিয়ানস দলভুক্ত করে গত বছর নভেম্বরে।
২২ মার্চ থেকে শুরু হতে যাওয়া আইপিএলে ২২ বছর বয়সী এই উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান এখন মুম্বাইয়ের হয়ে মাঠে নামার অপেক্ষায়। রবিন ঠিক যেদিন আইপিএলের মাঠে নামবেন, সেদিন কিন্তু নতুন ইতিহাসেরও দ্বার খুলবে। আর সেই দ্বারটা খুলবেন স্বয়ং রবিন নিজেই। আইপিএলের ইতিহাসে প্রথম আদিবাসী ক্রিকেটার খেলবেন রবিন।
আরও পড়ুনসেই এমবাপ্পেই এখন বড় স্বপ্ন দেখাচ্ছেন রিয়ালকে১৭ ঘণ্টা আগেঝাড়খন্ডের রাঁচিতে জন্ম নেওয়া রবিন মহেন্দ্র সিং ধোনির বড় ভক্ত। ভারতের সাবেক অধিনায়ক ও চেন্নাই সুপার কিংস কিংবদন্তিকে দেখে শৈশব থেকে নিজেকে গড়ে তুলেছেন রবিন। ধোনির মতোই বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি উইকেটকিপিংয়েও দক্ষ; কিন্তু বাঁহাতি ব্যাটসম্যান হওয়ায় নিজ এলাকায় তাঁর পরিচিতি ‘রাঁচির ক্রিস গেইল’ নামে। উপমার ব্যাপ্তি বাড়তে বাড়তে কেউ কেউ তাঁকে ‘ঝাড়খন্ডের ক্রিস গেইল’ও বলেন। এ পর্যন্ত ৭টি স্বীকৃত টি-টোয়েন্টি ম্যাচে তাঁর স্ট্রাইক রেট ১৮১.
আইপিএলের গত মৌসুমেই স্বপ্নপূরণ হয়ে যেত রবিনের। কিন্তু গুজরাটের অনুশীলনে যোগ দেওয়ার আগে নিজের কাওয়াসাকি বাইক নিয়ে দুর্ঘটনায় পড়েন। বাড়ির কাছাকাছি এসে অন্য এক বাইকের সঙ্গে সংঘর্ষে মারাত্মক আঘাত পাওয়ায় তাঁর গোটা মৌসুমই শেষ হয়ে যায়। হতাশ হয়েছিল পরিবারও। মুম্বাই ২০২৪ আইপিএলেও তাঁর পিছু ছুটে গুজরাটের কাছে হেরে যাওয়ার পর এবার তাঁকে পেয়েছে। ঈষান কিষানের শূন্যতা পূরণে রবিনকে তৈরি করতে চায় ফ্র্যাঞ্চাইজি দলটি।
গত নভেম্বরে রবিন মুম্বাইয়ের দলভুক্ত হওয়ার পর তাঁর বাবা ফ্রান্সিস টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেছিলেন, ‘সর্বোচ্চ (আইপিএল) পর্যায়ে রবিন আবারও সুযোগ পাওয়ায় আমরা অবিশ্বাস্যরকম খুশি...সে ২০ কিংবা ৩০ লাখ রুপিতে বিক্রি হলেও আমরা খুশি হতাম। পতনের পর আবারও ওঠাটা সব সময়ই ভালো। এতে সন্তুষ্টি বাড়ে।’
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
গ্যাসের দাম বাড়ায় বিনিয়োগ ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হবে
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) ঘোষিত গ্যাসের নতুন মূল্যহারকে বৈষম্যমূলক আখ্যায়িত করে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সংগঠন ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ফিকি)। সংগঠনটি বৈষম্যমূলক মূল্যহার অতিসত্বর পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছে।
এদিকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ (ইউরোচ্যাম) নতুন ঘোষিত গ্যাসের দাম বৈষম্যমূলক, অন্যায় এবং বিভ্রান্তিকর উল্লেখ করে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারাও দ্রুত এ সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়েছে। এ ছাড়া গতকাল বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরীর সঙ্গে এক বৈঠকে বাংলাদেশ ইকােনমিক জােনস ইনভেস্টর অ্যাসােসিয়েশন গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে। সমিতির নেতারা জানান, এ সিদ্ধান্ত বিনিয়াগ, উৎপাদন ব্যায় এবং রপ্তানি প্রতিযােগিতার সক্ষমতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তারাও সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন।
গত রোববার নতুন শিল্পে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ঘনমিটারপ্রতি ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০ টাকা করা হয়। নতুন শিল্পের পাশাপাশি এখন যারা অনুমোদিত লোডের বেশি গ্যাস ব্যবহার করছেন, সেসব শিল্প প্রতিষ্ঠানকেও ৩০ টাকার পরিবর্তে ৪০ টাকা দরে বিল দিতে হবে। পাশাপাশি নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ৩১ দশমিক ৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ফিকি বলেছে, নির্দেশনা অনুযায়ী নতুন গ্রাহক, নতুন গ্যাস সেলস এগ্রিমেন্ট, অনুমোদিত লোডের চেয়ে অতিরিক্ত গ্যাস ব্যবহারকারী এবং প্রতিশ্রুত গ্রাহকদের বেশি দাম পরিশোধ করতে হবে, এমনকি তা একই খাতের কোম্পানি হলেও। এই দ্বৈত মূল্যনীতি শুধু ন্যায্য প্রতিযোগিতার নীতি লঙ্ঘন করে না, বরং প্রতিযোগিতামূলক বাজারে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি অনিশ্চিত করে।
এতে বলা হয়, ভিন্ন ভিন্ন দামের মডেল নজিরবিহীন এবং এর কারণে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে। একই খাতে পরিচালনাকারী কোম্পানিগুলোর মধ্যে আলাদা জ্বালানি খরচের কারণে উৎপাদন খরচে পার্থক্য তৈরি হবে এবং এ ধরনের মূল্য কাঠামো সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরির নীতির পরিপন্থি। সর্বোপরি বাংলাদেশ সরকার যখন বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে, তখন শুধু নতুন শিল্প কিংবা নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত একটি বিপরীতমুখী আচরণ। এ ধরনের সিদ্ধান্ত সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট করবে, ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে এবং বিনিয়োগ সম্মেলনের মতো ইতিবাচক পদক্ষেপের মাধ্যমে অর্জনকে ধ্বংস করবে।
ফিকি সভাপতি জাভেদ আখতার বলেন, ‘আমরা জ্বালানির চাহিদা ও তা সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে বিইআরসিকে নতুন গ্যাসের মূল্য কাঠামো পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানাচ্ছি।’
ইউরোচ্যামের প্রতিক্রিয়া
গ্যাসের নতুন দামের মডেলটিকে বৈষম্যমূলক, অন্যায় এবং বিভ্রান্তিকর উল্লেখ করে বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর ব্যবসায়ী সংগঠন ইউরোচ্যাম বাংলাদেশ জানিয়েছে, এটি বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানের জন্য ঝুঁকি তৈরি করে এবং নতুন ও সম্প্রসারণশীল শিল্পের ওপর উচ্চমূল্য আরোপের মাধ্যমে বিনিয়োগের পথে বাধা সৃষ্টি করে।
ইউরোচ্যাম বাংলাদেশের চেয়ারপারসন নুরিয়া লোপেজ বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের আস্থা নিশ্চিত এবং শিল্প সম্প্রসারণে সহায়তা করার জন্য একটি ভারসাম্যপূর্ণ জ্বালানি শুল্ক কাঠামো বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। প্রস্তাবিত এই কাঠামো ব্যবসার ধারাবাহিকতা বিঘ্নিত করার হুমকি তৈরি করছে এবং সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের কাছে নেতিবাচক বার্তা পাঠাচ্ছে।’