ভবন নির্মাণে কাটা হলো ৯৭টি গাছ, পরিবেশকর্মীদের আপত্তি
Published: 18th, March 2025 GMT
চট্টগ্রামের বন গবেষণা ইনস্টিটিউটে (বিএফআরআই) আগর গবেষণাগারের ভবন নির্মাণের জন্য কাটা হয়েছে ছোট-বড় অন্তত ৯৭টি গাছ। এক সপ্তাহ ধরে গাছগুলো কাটা হয়েছে। গতকাল সোমবারও চলে গাছ কাটা।
এ নিয়ে পরিবেশকর্মীরা আপত্তি তুললেও বিএফআরআই তাদের কাজ অব্যাহত রেখেছে। বিএফআরআই কর্তৃপক্ষের দাবি, গাছ কাটার অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই অনুমোদন যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ।
বিএফআরআই আগর গবেষণাগার করার জন্য ছয়তলার ভবন নির্মাণ করছে চট্টগ্রাম নগরের মুরাদপুরের বিএফআরআইয়ের অভ্যন্তরে ৫৮ শতক জায়গায়। গবেষণাগার নির্মাণের জন্য ‘সম্পূর্ণ বৃক্ষে উন্নতমানের আগর রেজিন সঞ্চয়ন প্রযুক্তি উদ্ভাবন প্রকল্প’ নেওয়া হয়। বন বিভাগের দুটি প্রতিষ্ঠানের একটি বিএফআরআই ও অপরটি বন অধিদপ্তর।
২০২১ সালের জুনে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) পৌনে ৭৮ কোটি টাকার প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়। এরপর নকশা দিয়েছে স্থাপত্য অধিদপ্তর। অনুমোদন রয়েছে গণপূর্ত অধিদপ্তর ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের।
সরেজমিনে গতকাল বিকেলে দেখা গেছে, বিএফআরআই ফটকের পাশে টিনের ঘেরাও দিয়ে গাছ কাটার কাজ চলছিল। কাটার কাজ শেষ পর্যায়ে। একটি ট্রাকে কাটা গাছ ওঠানো হচ্ছে। শেষ প্রান্তে একটি বৈলামগাছ তখনো মাথা তুলে দাঁড়িয়ে ছিল। আরেকটি ইউক্যালিপটাসগাছের ডাল ছেঁটে গোড়া কাটার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন শ্রমিকেরা। ঘেরাওয়ের গায়ে প্রকল্পের ছবিসংবলিত একটি ব্যানার লাগানো হয়েছে।
ভবনটি নির্মাণের দায়িত্ব পেয়েছে প্রোপার্টি ডেভেলপমেন্ট (পিডিএল) নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ছয়তলা ভবনটি নির্মাণের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ কোটি ৮৫ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। ২০২৬ সালের মাঝামাঝিতে ভবনের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। পুরো গবেষণা প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা ২০২৭ সালের জুন মাসে।
গাছ কাটছেন এক শ্রমিক। গতকাল বিকেলে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রকল প
এছাড়াও পড়ুন:
'গরিবের ছাওয়াক যে সম্মান কইরলেন, মনটা ভরি গেইল'
‘বাহে, শনিবার রাইত ১০টার সময় ছাওয়াটার ব্যথা ওঠে। সে কি ব্যথা, আতালি পাতালি। গ্রামের দাই আসি অনেক চেষ্টা করিল। কই, কিছুই তো হইল না। এলা কি করং, অতো রাইতত হাসপাতাল যাইম কেমন করি! গাড়ি, ঘোড়া, রিকশা-কিছুই নাই। তারপর একখান অটোরিকশা জোগাড় করি ভোর ৫টার সময় ফুলবাড়ি থাকি লালমনিরহাট রওনা হইনো। শহরের সাপটানা বাজারের ক্লিনিকে হাজির হই হামরাগুলা। ক্লিনিকের লোকজন অপারেশন করি মোর ছোট নাতনিক দুনিয়ার মুখ দেখায়ছে।'
নববর্ষের প্রথম প্রহরে জন্ম নেওয়া নাতনির সম্পর্কে বলতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন জমিলা বেগম। বলতে থাকেন, ''বাহে, হামরা গরিব মানুষ, অতো কিছু বুঝি না, তোমরাগুলা এই গরিবের ছাওয়াক যে সম্মান কইরলেন, তাতে মনটা ভরি গেইল। হাউস করি নাতনির নাম রাখমো ‘বৈশাখি’।’’
লালমনিরহাট শহরের খোদেজা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সোমবার সকাল ৬টায় শাহ আলম ও হামিদা দম্পতির কোলজুড়ে আসে কন্যাশিশু। বাংলা বছরের প্রথম দিনে সন্তান উপহার পেয়ে তাদের পরিবারে বইছে খুশির বন্যা। এটি তাদের দ্বিতীয় কন্যাসন্তান। বড় মেয়ে শিমু নার্সারি শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে।
পার্শ্ববর্তী কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ি উপজেলার নাওডাঙ্গা কুমারপাড়া গ্রামের শাহ আলম মিয়া বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে পুরোনো খাতাপত্র, পত্রিকা, ভাঙ্গা টিন কিনে শহরে তা বিক্রি করেন। দিনে তিন থেকে চারশ টাকা আয় হয়। তা দিয়েই চলে সংসার। পাঁচ শতকের বসতভিটায় তিন ভাইয়ের পরিবারের সঙ্গে তিনি বসবাস করেন। বসতভিটার ওইটুকু জায়গা ছাড়া আর কিছুই নেই তার। তাই সন্তানকে ক্লিনিকে রেখে টাকার সন্ধানে ছুটছেন। কারো কাছ থেকে টাকা নিয়ে ক্লিনিকের বিল পরিশোধ করতে হবে। শাহ আলম বলেন, ‘মুই বাহে হকার, দিন আনি দিন খাই। হামার নববর্ষ বলি কিছু নাই। দোয়া কইরবেন ছাওয়াক মুই নেখাপড়া শিখাইম। দুই বেটি নিয়া হামার কোনো কষ্ট নাই। আল্লাহ সুস্থ রাখছে, তাতে হামরা খুশি।'
শাহ আলমের এসব কথা শুনে ক্লিনিকের বিছানায় শুয়ে থাকা নবজাতকের মা হামিদা বেগম বলেন, ‘আমি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত করেছি। বাবা অটোরিকশা চালান। অভাবের সংসারে ইচ্ছা থাকার পরও লেখাপড়া করতে পারিনি। ২০১৪ বিয়ে হয়। পরের বছর প্রথম সন্তানের জন্ম হয়।' দুই মেয়েকে লেখাপড়া শেখানোর ইচ্ছা রয়েছে বলে জানান তিনি।
ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিশ্বজিৎ জানান, বাড়িতে অনেক চেষ্টা করেও হামিদার নরমাল ডেলিভারি করাতে পারেনি পরিবার। সময় ক্ষেপণ করায় বেশ সমস্যা হয়েছিল। পরে অস্ত্রোপচার করেন বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রাক্তন প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. ভোলানাথ ভট্টাচার্য্য। তাকে সহায়তা করেন ডা. হাবিব। ডা. ভোলানাথ ভট্টাচার্য্য জানান, মা ও শিশু এখন সুস্থ রয়েছে।