সতর্ক থাকতে হবে সড়ক বিভাগ ও পুলিশকে
Published: 18th, March 2025 GMT
প্রতিবছর ঈদযাত্রায় যাত্রীদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। প্রথমত, একসঙ্গে অনেক বেশি যানবাহন সড়কে নামার কারণে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়। সড়কে নির্মাণকাজ চলতে থাকলে পরিস্থিতি আরও অসহনীয় অবস্থায় চলে যায়। দ্বিতীয়ত, যানজটের সুযোগে একশ্রেণির দুর্বৃত্ত যাত্রীবাহী যানবাহনে ছিনতাই, ডাকাতি করে থাকে। এতে আনন্দের ঈদযাত্রা পরিণত হয় বিষাদে।
এ অবস্থার উত্তরণে সম্প্রতি রাজধানীর বিদ্যুৎ ভবনে আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সড়ক–মহাসড়ক, সেতু ও রেলপথের যাত্রীদের যাতায়াত নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে ঈদুল ফিতরে মহাসড়কের যানজট হতে পারে, এমন ১৫৯টি সম্ভাব্য স্পট চিহ্নিত করা হয়েছে। যানজটের আশঙ্কায় জননিরাপত্তা বিভাগ এসব স্পটে ঈদের আগে ও পরে বিশেষ দৃষ্টি রাখতে সুপারিশ করেছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়কে।
এ ছাড়া জাতীয় মহাসড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ করিডরগুলোর সড়ক ঈদের সাত দিন আগেই মেরামত বা সংস্কার করতে বলা হয়েছে। এর মধ্যে আছে ঢাকা–বাইপাস (মদনপুর-ভুলতা-ভোগড়া-এন-১০৫), নবীনগর-চন্দ্রা (এন-৪৫০), ঢাকা-জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ (এন-৩), ঢাকা-জয়দেবপুর (এন-৩), ঢাকা (ভোগড়া)-চন্দ্রা-এলেঙ্গা, এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-বগুড়া-রংপুর, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-গোপালগঞ্জ-খুলনা, ভাঙ্গা-বরিশাল। এ ছাড়া ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতায় থাকা সড়কগুলো মেরামত করা জরুরি বলে জানানো হয়।
বৈঠকে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, ঈদে ১ কোটি ২০ লাখের মতো মানুষ ঢাকা ছেড়ে যান এবং ৩০ লাখের মতো মানুষ ঢাকায় আসেন। এই দেড় কোটি মানুষের ঈদ আনন্দের যাতায়াত যাতে নিরানন্দ না হয়, সে বিষয়ে সবাইকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। কেবল ঢাকা নয়, অন্যান্য মহানগরের যাত্রীদের প্রতিও নজর রাখতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যানজটের আশঙ্কা বেশি। এ ছাড়া ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে বাজার বসে যানজট সৃষ্টি হয়। লালমনিরহাট-বুড়িমারী দুই লেনের সড়কের অবস্থাও ভালো নয়। ঈদের আগে মেরামত না করলে যান চলাচল থমকে যেতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন লালমনিরহাট, টাঙ্গাইল ও নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসকেরা।
হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে প্রায় ৭০০ পুলিশ সদস্য কাজ করবেন। তঁাদের দাবি, ৩৮ থেকে ৩৯টি সড়কের অবস্থা খুবই খারাপ। যেগুলো দ্রুত মেরামত করা দরকার।
সমস্যা হলো, মহাসড়কগুলোর মেরামত ও প্রশস্তকরণের কাজ ঈদের আগে শেষ করা হয় না। অসমাপ্ত সড়কে যেমন যানজট বেড়ে যায়, তেমনি দুর্ঘটনা, ছিনতাই, ডাকাতির ঝুঁকিও থাকে। একশ্রেণির পরিবহনমালিক ঈদকে দেখেন বাড়তি মুনাফার সুযোগ হিসেবে। তাঁরা বেশি বেশি ট্রিপ দেওয়ার জন্য চালকদের প্রলুব্ধ করেন। অনেক সময় একনাগাড়ে চালকদের ১৫–১৬ ঘণ্টা কাজ করানো হয়, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
ঢাকা শহর থেকে ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ যে ঈদের সময় বাইরে যান, তাঁদের বেশির ভাগ কর্মজীবী। ঈদের ছুটি আগে–পরে দিয়েও যানজটের চাপ কমানো যেতে পারে। আমাদের কর্মসংস্কৃতি হলো বৈঠকে অনেক ভালো সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও কার্যকর করা হয় না। ঈদের বাকি দুই সপ্তাহের কম। এই সময়ে সড়কে শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা দুটি বিষয়েই প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে হবে।
ঈদে মানুষের আসা ও যাওয়ার পথে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা দেওয়া হবে এবং সবার ঈদযাত্রা নিরাপদ হবে, এটাই প্রত্যাশিত। ডিএমপি সহায়ক পুলিশ বাহিনী গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বড় বড় অনুষ্ঠান পাহারা দেওয়ার চেয়ে তাদের জননিরাপত্তার কাজে ব্যবহার করলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটবে আশা করি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য নজট র ঈদয ত র ম র মত অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
শরীয়তপুরের জাজিরায় আবারও সংঘর্ষ, মুহুর্মুহু ককটেল বিস্ফোরণ
শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় শতাধিক ককটেল (হাতবোমা) বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
গতকাল রোববার দুপুরে জয়নগর ইউনিয়নের ছাব্বিশপারা এলাকায় এ সংঘর্ষ হয়। এতে এক তরুণের হাতের কব্জিতে গুরুতর ক্ষত হয় এবং আরও একজন আহত হন।
জাজিরা থানা ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জয়নগর ইউনিয়নের ছাব্বিশপারা এলাকায় তেজগাঁও কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিঠুন ঢালী ও জয়নগর ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হালিম তালুকদারের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ চলছে। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এই দুই নেতা আত্মগোপনে গেলে স্থানীয় পর্যায়ে তাদের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন জসিম তালুকদার ও নুর আলম সরদার।
রোববার দুপুরে দুই পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্র ও ককটেল নিয়ে সংঘর্ষের প্রস্তুতি নেয়। এ সময় নুর আলম সরদারের অনুসারীরা প্রতিপক্ষের ওপর ককটেল বোমা নিক্ষেপ করে। এরপর উভয় পক্ষ ঘণ্টা-ব্যাপী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। চলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ককটেল বিস্ফোরণ ও মারামারি। পরে পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
সংঘর্ষের কিছু দৃশ্য স্থানীয় এক ব্যক্তির সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারণ হয়, যা ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ৪ মিনিট ৪৪ সেকেন্ডের সেই ভিডিওতে দেখা যায়, এক পক্ষের সমর্থকরা বালতিতে করে ককটেল নিয়ে প্রতিপক্ষের দিকে নিক্ষেপ করছেন। তাদের হাতে ছিল টেঁটা, রামদা, ছেনদা, বল্লম, ডাল-সুরকি ও অন্যান্য দেশীয় অস্ত্র।
সম্প্রতি জাজিরার বিলাশপুরে সংঘর্ষের ঘটনায় খইয়ের মতো ককটেল বিস্ফোরণ দেশজুড়ে আলোচিত হয়। গত ৫ এপ্রিল সেখানে দুই শতাধিক ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে, যা এখনও আলোচনায় রয়েছে। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আবারও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটলো ছাব্বিশপারা এলাকায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল আখন্দ বলেন, গতকাল দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বেশ কিছু হাতবোমা বিস্ফোরিত হয় বলে জানতে পেরেছি। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এ ঘটনায় একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।