অবশেষে পৃথিবীতে ফিরছেন সুনিতাসহ চার নভোচারী
Published: 18th, March 2025 GMT
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে ১০ মাস ধরে আটকে রয়েছেন মার্কিন নভোচারী বুচ উইলমোর ও সুনিতা উইলিয়ামস। দ্রুত একটি মিশন শেষ করে পৃথিবীতে ফেরার কথা থাকলেও মহাকাশযানের ত্রুটির কারণে আটকে যান তাঁরা। পৃথিবীতে তাঁদের ফেরানো নিয়ে রাজনীতিও শুরু হয়। তবে সব শঙ্কা কেটেছে। বুচ ও সুনিতা অবশেষে পৃথিবীতে ফিরছেন। বুধবার ফিরতে পারেন তাঁরা। গতকাল সোমবার মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার পক্ষ থেকে তাঁদের ফেরার দিনক্ষণ জানানো হয়। এ ছাড়া তাঁদের ফেরার বিষয়ে তোড়জোড় শুরু হয়েছে।
নভোচারীদের ফেরাতে মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা ও স্পেসএক্স একটি মিশন পরিচালনা করেছে। গত রোববার মহাকাশকেন্দ্রে পৌঁছানো স্পেসএক্সের ক্রু ড্রাগন মহাকাশযানে করে তাঁরা পৃথিবীর পথে রওনা দেবেন।
সুনিতা ও বুচ দুজনই মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার নভোচারী। তাঁরা গত বছরের জুন থেকে আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে আছেন। বোয়িংয়ের স্টারলাইনার মহাকাশযানে ত্রুটির কারণে তাঁরা মহাকাশকেন্দ্রে আটকা পড়েন। মহাকাশযানটিকে খালি অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হয় নাসা।
এমন অবস্থায় আটকে পড়া দুই নভোচারীকে ফিরিয়ে আনতে গত বছর থেকেই নানা পরিকল্পনা করতে শুরু করে নাসা। গত জানুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি দুই নভোচারীকে ফিরিয়ে আনার ওপর জোর দেন। তাঁদের ফিরিয়ে আনতে নাসার তৎপরতার অংশ হিসেবে ক্রু-১০ মিশনের ফ্লাইটে তাঁদের ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়।
গত শুক্রবার গ্রিনিচ মান সময় রাত ১১টা ৩ মিনিটে স্পেসএক্সের ক্রু ড্রাগন মহাকাশযানটি ফ্লোরিডায় নাসার কেনেডি মহাকাশকেন্দ্র থেকে যাত্রা শুরু করে। এর ২৯ ঘণ্টা পর গত রোববার ভোর ৪টা ৪ মিনিটের দিকে এটি আন্তর্জাতিক মহাকাশকেন্দ্রে পৌঁছায়। এ মিশনে রয়েছেন চার নভোচারী। তাঁরা হলেন অ্যান ম্যাকক্লেইন, নিকোল আয়ার্স, জাপানের মহাকাশ সংস্থার নভোচারী তাকুয়া অনিশি ও রুশ নভোচারী কিরিল পেসকভ। এই চার নভোচারী প্রায় ছয় মাস মহাকাশ কেন্দ্রে অবস্থান করবেন। সুনিতা, বুচসহ আন্তর্জাতিক মহাকাশকেন্দ্রে থাকা সাত নভোচারী তাঁদের স্বাগত জানান।
এখন নভোচারী অদলবদলের অংশ হিসেবে ক্রু-১০–এর ওই ফ্লাইটে করে সুনিতা ও বুচ ফিরবেন। তাঁদের সঙ্গে থাকবেন নাসার নভোচারী নিক হেগ এবং রাশিয়ার নভোচারী আলেকসান্দর গরবুনোভ। নাসার নভোচারী নিক হেগ এবং নভোচারী আলেকসান্দর গরবুনোভ গত বছরের সেপ্টেম্বরে ক্রু ড্রাগন মহাকাশযানে সুনিতা ও বুচের জন্য দুটি ফাঁকা সিট নিয়ে গিয়েছিলেন। তখন থেকে যানটি মহাকাশকেন্দ্রের সঙ্গেই ছিল।
ট্রাম্প এবং তাঁর উপদেষ্টা ও স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইলন মাস্ক দ্রুত ক্রু-১০ উৎক্ষেপণের আহ্বান জানালে এ অভিযানের সঙ্গে রাজনীতি জড়িয়ে পড়ে। ট্রাম্প ও মাস্ক কোনো প্রমাণ ছাড়াই দাবি করেন, ট্রাম্পের পূর্বসূরি জো বাইডেন রাজনৈতিক কারণে সুনিতা ও বুচকে আন্তর্জাতিক মহাকাশকেন্দ্রে ফেলে রেখেছেন।
সুনিতাদের ফেরার সময় নির্ধারিত থাকলেও কিছুটা আশঙ্কা থেকে গেছে। নাসা বলছে, পরিস্থিতি বাদ সাধলে আবার বদলে যেতে পারে সুনিতাদের ফেরার দিনক্ষণ। মহাকাশ থেকে পৃথিবীতে ফেরার জটিল এই প্রক্রিয়ায় বিলম্ব হলে মহাকাশচারীদের নিয়ে পৃথিবীতে ফিরতে দেরি হতে পারে ড্রাগনের। তা ছাড়া বিজ্ঞানীদের মতে, মহাকাশযানের অবস্থা, পুনরুদ্ধার দলের প্রস্তুতি, আবহাওয়া, সমুদ্রের পরিস্থিতি—নভোচারীদের ফেরার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে এই সবকিছুই।
পৃথিবীতে ফেরার পর সুনিতাদের বেশ কিছু পরীক্ষা–নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। এত দিন মহাকাশে থাকার পর পৃথিবীতে ফিরলে নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে তাঁদের। বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘদিন মহাকাশে শূন্য মাধ্যাকর্ষণে থাকার কারণে নানা শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় হেরফের ঘটে।
গতকাল সুনিতাদের ফেরার প্রক্রিয়ার সরাসরি সম্প্রচার শুরু হয়েছে। সে সময়ে তাঁদের মহাকাশযানটির দরজা বন্ধ হয়। এরপর শুরু হয়েছে মহাকাশ স্টেশন থেকে সরে আসার প্রক্রিয়া। তাতে এখনো বেশ খানিকটা সময় লাগবে। ওই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে শুরু হবে ফেরার প্রক্রিয়া।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
৬ বছর পর পাবিপ্রবির বর্ষবরণে বাঙালি সংস্কৃতির ছোঁয়া
৬ বছর পর পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পাবিপ্রবি) বর্ণিল আয়োজনে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ এর আনন্দ শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে ছিল উৎসবের রঙ, বাঙালি সংস্কৃতির ছোঁয়া।
সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় আয়োজনের অংশ হিসেবে শুরু হয় বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা।
পাবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস.এম আব্দুল-আওয়ালের নেতৃত্বে শোভাযাত্রায় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. শামীম আহসানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অংশগ্রহণ করেন।
আনন্দ শোভাযাত্রাটি ক্যাম্পাসের মূল ফটক থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় মূল মঞ্চে এসে শেষ হয়। মহিশের গাড়ি, পালকি, মুখোশ, গ্রামীণ খেলনা, রঙিন ব্যানার, পটচিত্র ও বাদ্যযন্ত্রে মুখর ছিল পুরো আয়োজন।
দিনব্যাপী বর্ষবরণের আয়োজনে আরো ছিল স্বাধীনতা চত্ত্বরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বৈশাখী মেলা। এতে উৎসবমুখর পরিবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি বিভাগের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী, পাবিপ্রবি প্রেসক্লাব, ছাত্র ও ছাত্রী হলকে স্বতন্ত্রভাবে বর্ণিল সাজে সজ্জিত দোকানে বাঙালির ঐতিহ্যবাহী খাবার অংশগ্রহন করতে দেখা যায়।
ইইসিই বিভাগের শিক্ষার্থী ইউসুফ খান রাচি বলেন, “এই প্রথমবার আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান দেখতে পারছি। শুনেছি এর আগে ২০১৯ সালে আমাদের ক্যাম্পাসে এরকম উৎসব মুখর পরিবেশে এমন আয়োজন হয়েছিল। নিজেদের হাতে স্টল সাজানো, পিঠা বানানো, বিক্রি করা। সব মিলিয়ে দারুণ অভিজ্ঞতা। বাংলা সংস্কৃতির এমন প্রাণবন্ত আয়োজন আমাদের মন ছুঁয়ে গেছে।”
সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিব বলেন, “সারাদিন ক্যাম্পাসে একটা অন্যরকম অনুভূতি ছিল। সবাই যেন একে অপরের আপন। এই ধরনের আয়োজন আমাদের মধ্যে বন্ধন গড়ে তোলে, সংস্কৃতির সঙ্গে জুড়ে দেয়।”
৬ বছর আগে ২০১৯ সালে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা নববর্ষের উৎযাপন করা হলেও মাঝখানে করোনা, রোমজান থাকার কারনে গত কয়েকবছর এই উৎসব পালন করা সম্ভব হয়নি।
ঢাকা/আতিক/মেহেদী