আফগানিস্তানে মুজাহিদিনদের সঙ্গে ১০ বছরের যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর ১৯৮৯ সালে দেশটি থেকে তাদের সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করে নেয় সোভিয়েত ইউনিয়ন। এর দুই বছর পর সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বাধীন ওয়ারশ চুক্তিটি ভেঙে যায় (এর মধ্য দিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হয়)। সাম্রাজ্যের কবরস্থান হিসেবে আফগানিস্তানের যে পরিচিতি, সেটা আরও সংহত হয়।

এর ৩০ বছর পর ২০২১ সালে তালেবানের সঙ্গে ২০ বছরের যুদ্ধ সমাপ্তি ঘোষণা করে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেয় যুক্তরাষ্ট্র। তালেবান হলো মুজাহিদিনের উত্তরসূরি। চার বছর পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এমন একটা পদক্ষেপ নিলেন, যেটা কার্যকরভাবে আটলান্টিক জোট বা ন্যাটোর পরিসমাপ্তি ঘটাচ্ছে।

পরাশক্তির মধ্যে শীতল যুদ্ধ আফগানিস্তানের বাইরে বাকি বিশ্বজুড়ে সমান্তরালে চলেছিল। ১৯৮০-এর দশকে সোভিয়েত অর্থনীতিতে স্থবিরতা নেমে আসে এবং এতে সমাজতন্ত্রের প্রতি ব্যাপক মোহভঙ্গ ঘটে। এর প্রতিক্রিয়ায় সোভিয়েত সমাজ পুনর্গঠনের জন্য প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচেভ পেরেস্ত্রোইকা চালু করেন।

একইভাবে রোনাল্ড রিগ্যানের জামানা অবসানের পর মার্কিন ভোটারদের একটা অংশের মধ্যে প্রচলিত ব্যবস্থা নিয়ে সংশয় বাড়তেই থাকে। বৈষম্য বাড়তে থাকে। মনে হতে থাকে, আমেরিকান ব্যবস্থাটিতে শাসকশ্রেণির অভিজাত অংশ ভোটের ফলাফল কারচুপি করেন। মার্কিন ব্যবস্থাটিকে খোলনালচে বদলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে  ২০১৬ সালে ডোনাল্ঢ ট্রাম্প প্রথম দফায় নির্বাচিত হন।

মতাদর্শ ভেঙে ফেলা

১৯৭৯ সালে পেরেস্ত্রোইকা ধারণাটি প্রথম প্রস্তাব করেন সোভিয়েত নেতা লিওনিদ ব্রেজনেভ। স্থবির হয়ে পড়া সোভিয়েত ব্যবস্থার আধুনিকায়নের লক্ষ্য থেকে তিনি এ ধারণা উপস্থাপন করেছিলেন। ১৯৮০-এর দশকে সোভিয়েত নাগরিকদের রুটির জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হতো। প্রায়ই তাঁরা রেশনের দোকানগুলোর তাক শূন্য পেতেন। ফলে সমাজতন্ত্রের প্রতি তাদের বিশ্বাস মুছে যেতে থাকে।

সোভিয়েত সরকার আবাসন, শিক্ষা, পরিবহন ও বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা দিত। কিন্তু সামরিক খাতে ব্যয় ছিল জাতীয় বাজেটের ১২ থেকে ১৭ শতাংশ। ফলে ভোগ্যপণ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের যে বাজেট, সেখান থেকে সম্পদ সামরিক খাতে চলে যাচ্ছিল। একই সঙ্গে উদ্যোক্তাদের প্রতি যে দমনমূলক নীতি নেওয়া হয়েছিল, তাতে পুঁজিপতিদের জীবন নিস্তেজ ও প্রেরণাহীন হয়ে পড়েছিল।

ব্রেজনেভের উত্তরসূরি মিখাইল গর্বাচেভ পেরেস্ত্রোইকার পাশাপাশি ‘গ্লাসনস্ত’ বা ‘খোলা নীতি’ প্রবর্তন করেন। যাহোক, তাঁর আমলারা ক্ষমতা হারানোর ভয়ে সংস্কারে বাধা দেন এবং সোভিয়েত রাষ্ট্রকে দুর্বল করে দেন।

গর্বাচেভ সমাজতন্ত্রের সঙ্গে বাজার উদারীকরণের যে প্রচেষ্টা শুরু করেছিলেন, সেটা উল্টো ফল নিয়ে আসে। অনিশ্চয়তা ও পণ্য সরবরাহে ঘাটতি তৈরি হয়। মূল্যস্ফীতি দেখা যায় এবং জীবনযাপনের মান খারাপ হয়। গর্বাচেভের উত্তরসূরি বরিস ইয়েলৎসিন মার্কিন অর্থনীতিবিদদের নির্দেশনায় রাশিয়াকে হঠাৎ করে কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা থেকে পুরোপুরি বাজার অর্থনীতিতে রূপান্তরিত করেন। এর পরিণতি ছিল ভয়াবহ। ১৯৯০-এর দশকে রাশিয়ার অর্থনীতি ৫০ শতাংশ সংকুচিত হয় এবং লাখ লাখ মানুষ গরিব হয়ে পড়েন।

ট্রাম্প ও পুতিন দুজনেই নয়া উদারবাদী বিশ্বায়নের উত্তরসূরি। তাঁরা দুজনেই এখন নতুন যে বহুমেরুকেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থার রূপান্তর ঘটছে, তার মূল খেলোয়াড়। বিশ্বায়ন শেষ হচ্ছে না, কিন্তু বিশ শতকের পুঁজিবাদ বনাম সমাজতন্ত্র, বাম বনাম ডান, রংক্ষণশীল বনাম প্রগতিশীল—মতাদর্শিক লড়াই চলমান থাকবে। ফলে রাষ্ট্রগুলোর জন্য একটি বাস্তববাদী ও জাতীয় স্বার্থ অক্ষুণ্ন থাকে—এমন একটি কৌশল দরকার হবে।

রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি রাতারাতি বেসরকারীকরণ করতে গিয়ে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের হাতে শিল্পগুলো চলে যায়। বিপুল পরিমাণ সম্পদ তাঁরা বিদেশে পাচার করে দেন। জাতীয় সম্পদের এই অবাধ লুটপাট ভ্লাদিমির পুতিন ক্ষমতা গ্রহণের পর বন্ধ হয়। তিনি নব্য উদারীকরণকে উল্টে দেন এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য ‘সবার আগে রাশিয়া’ নীতি চালু করেন।

রাশিয়া এই সংস্কার উদ্যোগ নেওয়ার তিন দশক পর ডোনাল্ড ট্রাম্প আমলাতন্ত্রের রাশ টেনে ধরার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় আসেন। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি ১৯৮০-এর দশক থেকে সেখানকার মানুষদের মোহভঙ্গ বাড়তে থাকে। সাম্প্রতিক জরিপ থেকে দেখা যাচ্ছে, ৬০ শতাংশের বেশি মার্কিন মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র ঠিক পথে চলছে না।

রিগ্যানের নেতৃত্বে যে নব্য উদারবাদী নীতি চালু হয়েছিল, সেখানে বিশ্বায়নের ব্যাপারটি ছিল সীমাহীন। এই নীতি মার্কিন অর্থনীতির মূল ভিত্তি শিল্প খাতকে শিল্পশূন্য করে তোলে। যেখানে সোভিয়েত ইউনিয়ন উদ্যোক্তাদের প্রান্তিক করে ফেলে শ্রমিকদের ঊর্ধ্বে তুলে ধরা হয়েছিল, সেখানে যুক্তরাষ্ট্র উল্টোটা করেছে। ফলে সম্পদ ওপরের স্তরে কেন্দ্রীভূত হয়েছে এবং শ্রমিকদের মজুরিতে স্থবিরতা নেমে আসে।

২০০০ সাল নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রের লাখ লাখ শ্রমিককে তাঁদের জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে দুটি করে কাজ করতে হয়েছে। আর অন্যদিকে নির্বাহীরা শ্রমিকদের চেয়ে গড়ে ৩০০ গুণ বেশি মজুরি পেয়েছেন।

বৈশ্বিক ব্যবসার স্বার্থের একজন শতকোটিপতি হওয়া সত্ত্বেও ট্রাম্প শ্রমজীবীশ্রেণির হতাশাকেই প্রতিধ্বনিত করেছেন। ২০২৪ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর আমলাতন্ত্রের বিরুদ্ধে তিনি তার পুরোনো যুদ্ধ জোরালো করেছেন, সরকারি চাকরির সংখ্যা কমিয়েছেন, মন্ত্রণালয়গুলো পুনর্গঠন করেছেন এবং অভূতপূর্ব ধরনের খরচ কমানোর আন্দোলন শুরু করেছেন।

পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে ট্রাম্প ইউক্রেন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছেন। প্রথম মেয়াদে তিনি ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা পাঠালেও এ মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর তিনি পুতিনের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে একমত যে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করা নিরর্থক হবে।

মিখাইল গর্বাচেভ.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আফগ ন স ত ন ব যবস থ কর ছ ন র জন য ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

‘বৈশাখ ঘিরে আমার কোনো স্মৃতি নেই, উন্মাদনাও নেই’

পহেলা বৈশাখ বাঙালির সর্বজনীন উৎসব। এ দিন বাঙালি জাতিসত্তার মানুষ অতীত ভুলে নতুনের আবাহনে মেতে ওঠে। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য পালনের মধ্য দিয়ে বরণ করে নেয় নতুন বছর। ফলে সৃষ্টি হয় উৎসবমুখর পরিবেশ।

নববর্ষের উৎসবে একাত্ম হন রূপালি ভুবনের বাঙালি তারকারাও। তবে ব্যতিক্রম কলকাতার জনপ্রিয় অভিনেতা ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত। কারণ বাঙালি হলেও পহেলা বৈশাখ নিয়ে কোনো স্মৃতিই নেই তার।

পহেলা বৈশাখ নিয়ে স্মৃতিচারণের প্রসঙ্গ উঠতেই ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত বলেন, “আমি কী বলব? এই দিন ঘিরে আমার কোনো স্মৃতি নেই, উন্মাদনাও নেই! বাংলার বাইরে বেড়ে উঠলে যা হয়। তাই পহেলা বৈশাখ আর বছরের অন্য দিনের মাঝে কোনো তফাত নেই।”

আরো পড়ুন:

অবশেষে শ্রাবন্তীর বিবাহবিচ্ছেদ

ছোট পোশাক পরলেই মা খারাপ না, এটা আমার ছেলে জানুক: প্রিয়াঙ্কা

কয়েক দিন আগে মুক্তি পেয়েছে ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত অভিনীত ‘পুরাতন’ সিনেমা। এ উপলক্ষে নতুন পোশাক উপহার পেয়েছেন তিনি। তা স্মরণ করে এই অভিনেতা বলেন, “এ বছর নতুন সিনেমা উপলক্ষে নতুন জামা পেয়েছি। সিনেমাটির প্রযোজক-নায়িকা ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত দিয়েছেন। উনার বাড়িতে পেট ভরে বাঙালি খাবার খেয়েছি। কলকাতাতেও থাকলাম বেশ কিছু দিন।”

১৯৭৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ভারতের আসামের একটি বাঙালি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ইন্দ্রনীল। কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করে পাড়ি জমান ব্রিটেনে। ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে ভারতে ফিরেন ইন্দ্রনীল।

মডেলিংয়ের মাধ‌্যমে শোবিজ অঙ্গনে পা রাখেন ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত। পরবর্তীতে টিভি সিরিয়ালে অভিনয় শুরু করেন। ২০০৪ সালে হিন্দি ভাষার ‘শুকরিয়া: টিল ডেথ ডু আস অ্যাপার্ট’ সিনেমার মাধ‌্যমে বড় পর্দায় পা রাখেন। ২০০৯ সালে ‘অংশুমানের ছবি’ সিনেমার মাধ‌্যমে টলিউড চলচ্চিত্রে পা রাখেন। পরবর্তীতে খল চরিত্রে অভিনয় করে দারুণ খ‌্যাতি কুড়ান এই অভিনেতা। ২০১২ সালে বাংলাদেশের ‘চোরাবালি’ সিনেমায়ও দেখা যায় তাকে।

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ