ইসরায়েল-হামাসের যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর দ্বিতীয় ধাপ শুরুর কথা থাকলেও, বেঁকে বসে ইসরায়েল। তারা  দ্বিতীয় ধাপের বাস্তবায়ন নয়, প্রথম ধাপের মেয়াদ বাড়াতে আগ্রহী। এ প্রস্তাব হামাস মেনে না নেওয়ায় মানবিক ত্রাণসহ গাজায় সব ধরনের পণ্যের প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল।

ফলে টানা ১৬ দিন ধরে প্রয়োজনীয় উপকরণ থেকে বঞ্চিত গাজাবাসী রয়েছে চরম দুর্দশায়। ফুরিয়ে এসেছে পানি, খাবার ও ওষুধ। সোমবার এক সতর্কবার্তায় জাতিসংঘ শিশু তহবিল ইউনিসেফ বলছে, লাখ লাখ ফিলিস্তিনি শিশু ‘বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করছে’। তাই ইসরায়েলের এই নিষেধাজ্ঞার অবসান ঘটানোর আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। 

আলজাজিরা জানায়, সম্পূর্ণ অবরোধের কারণে গাজার হাজার হাজার মানুষ বিশুদ্ধ পানি ও ন্যূনতম স্যানিটেশনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। চরম ক্ষুধার যন্ত্রণায় ধুঁকছে গাজার ১০ লাখ শিশু।  এমন সংকটাপন্ন অবস্থায় গাজায় ‘শিশুদের জীবন বাঁচাতে অবিলম্বে কিছু পানি ও বিদ্যুৎ প্রবেশ করতে দিতে হবে’ বলে আহ্বান জানান দেইর আল-বালাহ থেকে ইউনিসেফের আঞ্চলিক পরিচালক এদুয়ার্দ বাইগবেদার। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার ফলে গাজার প্রধান পানি পরিশোধন কেন্দ্রটি পানি উৎপাদন করতে পারছে না। এরই মধ্যে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ১৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইয়েমেনে মার্কিন বিমান হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহী রণতরীতে দুই দফা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইয়েমেন। দুই দেশের এই পাল্টাপাল্টি হামলার পরিপ্রেক্ষিতে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বেড়ে গেছে। ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা জাহাজ চলাচলের ওপর হামলা বন্ধ না করা পর্যন্ত তাদের ওপর হামলা চালাবে যুক্তরাষ্ট্র। রোববার এমন ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ।

অন্যদিকে রোববার টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে হুতি নেতা আব্দুল মালিক আল-হুতি বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেনে আক্রমণ চালিয়ে যাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তারাও লোহিত সাগরে মার্কিন জাহাজগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল

এছাড়াও পড়ুন:

'গরিবের ছাওয়াক যে সম্মান কইরলেন, মনটা ভরি গেইল'

‘বাহে, শনিবার রাইত ১০টার সময় ছাওয়াটার ব্যথা ওঠে। সে কি ব্যথা, আতালি পাতালি। গ্রামের দাই আসি অনেক চেষ্টা করিল। কই, কিছুই তো হইল না। এলা কি করং, অতো রাইতত হাসপাতাল যাইম কেমন করি! গাড়ি, ঘোড়া, রিকশা-কিছুই নাই। তারপর একখান অটোরিকশা জোগাড় করি ভোর ৫টার সময় ফুলবাড়ি থাকি লালমনিরহাট রওনা হইনো। শহরের সাপটানা বাজারের ক্লিনিকে হাজির হই হামরাগুলা। ক্লিনিকের লোকজন অপারেশন করি মোর ছোট নাতনিক দুনিয়ার মুখ দেখায়ছে।'

নববর্ষের প্রথম প্রহরে জন্ম নেওয়া নাতনির সম্পর্কে বলতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন জমিলা বেগম। বলতে থাকেন, ''বাহে, হামরা গরিব মানুষ, অতো কিছু বুঝি না, তোমরাগুলা এই গরিবের ছাওয়াক যে সম্মান কইরলেন, তাতে মনটা ভরি গেইল। হাউস করি নাতনির নাম রাখমো ‘বৈশাখি’।’’

লালমনিরহাট শহরের খোদেজা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সোমবার সকাল ৬টায় শাহ আলম ও হামিদা দম্পতির কোলজুড়ে আসে কন্যাশিশু। বাংলা বছরের প্রথম দিনে সন্তান উপহার পেয়ে তাদের পরিবারে বইছে খুশির বন্যা। এটি তাদের দ্বিতীয় কন্যাসন্তান। বড় মেয়ে শিমু নার্সারি শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে।

পার্শ্ববর্তী কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ি উপজেলার নাওডাঙ্গা কুমারপাড়া গ্রামের শাহ আলম মিয়া বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে পুরোনো খাতাপত্র, পত্রিকা, ভাঙ্গা টিন কিনে শহরে তা বিক্রি করেন। দিনে তিন থেকে চারশ টাকা আয় হয়। তা দিয়েই চলে সংসার। পাঁচ শতকের বসতভিটায় তিন ভাইয়ের পরিবারের সঙ্গে তিনি বসবাস করেন। বসতভিটার ওইটুকু জায়গা ছাড়া আর কিছুই নেই তার। তাই সন্তানকে ক্লিনিকে রেখে টাকার সন্ধানে ছুটছেন। কারো কাছ থেকে টাকা নিয়ে ক্লিনিকের বিল পরিশোধ করতে হবে। শাহ আলম বলেন, ‘মুই বাহে হকার, দিন আনি দিন খাই। হামার নববর্ষ বলি কিছু নাই। দোয়া কইরবেন ছাওয়াক মুই নেখাপড়া শিখাইম। দুই বেটি নিয়া হামার কোনো কষ্ট নাই। আল্লাহ সুস্থ রাখছে, তাতে হামরা খুশি।'

শাহ আলমের এসব কথা শুনে ক্লিনিকের বিছানায় শুয়ে থাকা নবজাতকের মা হামিদা বেগম বলেন, ‘আমি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত করেছি। বাবা অটোরিকশা চালান। অভাবের সংসারে ইচ্ছা থাকার পরও লেখাপড়া করতে পারিনি। ২০১৪ বিয়ে হয়। পরের বছর প্রথম সন্তানের জন্ম হয়।' দুই মেয়েকে লেখাপড়া শেখানোর ইচ্ছা রয়েছে বলে জানান তিনি। 

ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিশ্বজিৎ জানান, বাড়িতে অনেক চেষ্টা করেও হামিদার নরমাল ডেলিভারি করাতে পারেনি পরিবার। সময় ক্ষেপণ করায় বেশ সমস্যা হয়েছিল। পরে অস্ত্রোপচার করেন বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রাক্তন প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. ভোলানাথ ভট্টাচার্য্য। তাকে সহায়তা করেন ডা. হাবিব। ডা. ভোলানাথ ভট্টাচার্য্য জানান, মা ও শিশু এখন সুস্থ রয়েছে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ