গত দেড় দশকের বেশি সময় ধরে উন্নয়নকাজ চলায় ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক হয়নি। সেসব কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। সব রাস্তা ও ফ্লাইওভার খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে এবারও ঈদযাত্রায় স্বস্তির আশা নেই। গ্রামে যাওয়ার পথে ভোগান্তির কারণ হয়ে উঠতে পারে গাজীপুরের শিল্পকারখানার শ্রমিকরা। ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে, সেই আশঙ্কা তত বাড়ছে।
ঢাকার সঙ্গে উত্তর, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মানুষের সড়ক যোগাযোগ হয় গাজীপুরের মধ্য দিয়ে। ঈদে ৩৬টি জেলার মানুষকে বাড়ি যেতে হয় এই জেলার ওপর দিয়ে। ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে এরই মধ্যে প্রস্তুতি নিয়েছে পুলিশ। তবে তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ এনে দিচ্ছেন শিল্পকারখানার মালিক ও শ্রমিকরা।
ফেব্রুয়ারি-মার্চের বেতন ও ঈদ বোনাসের দাবিতে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ২৫ রোজা পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে। ঈদের আগে এ দাবি কারখানা মালিকরা কতটা পূরণ করতে পারবেন, এর ওপর মহাসড়কের পরিস্থিতি নির্ভর করছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
শিল্প পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গতকাল সোমবার ভোগড়া বাইপাসে বেতন-বোনাসের দাবিতে একটি কারখানার শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে আসেন। তাৎক্ষণিকভাবে আশপাশের ১২টি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। শ্রীপুরে দুই মাসের বকেয়া বেতন, বোনাস ও কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করেন শ্রমিকরা।
গত এক সপ্তাহে অন্তত ১২টি কারখানার শ্রমিক ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে বিক্ষোভ করেছেন। আর বকেয়া বেতনসহ নানা দাবি নিয়ে গত সাত মাসে (৫ আগস্টের পর) অন্তত ১০০ বার শ্রমিকরা এ দুই মহাসড়ক অবরোধ করেছেন।
মহানগরের ভোগড়া বাইপাস এলাকায় টিএনজেড গ্রুপের পাঁচটি ও কলম্বিয়ার দুটি কারখানা রয়েছে। প্রতি মাসে এসব কারখানার শ্রমিকরা মহাসড়কে নেমে আন্দোলন করার পর বেতন পরিশোধ করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
কয়েকটি কারখানার শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যে কোনো উপায়ে তারা ফেব্রুয়ারির পুরো বেতন, মার্চের অর্ধেক বেতন ও ঈদ বোনাস পুরোটা নিয়ে বাড়ি যাবেন। এর ব্যত্যয় হলে আন্দোলন হবে।
টিএনজেড গ্রুপের একটি কারখানার শ্রমিক জাহেদুল ইসলাম গতকাল বলেন, ‘আমার বেতন-বোনাসের টাকার ওপর কতগুলো মানুষ নির্ভর করে জানেন? স্ত্রী-সন্তান, বাবা-মা, বাসার মালিক, বাকিতে যে দোকানি মালপত্র দেন তিনি। এবার বলুন, বেতন ও বোনাস না দিলে রাস্তায় নামা ছাড়া আর কী করার থাকে?’ তিনি আরও বলেন, ‘আশা করছি, ঝামেলা ছাড়াই বেতন ও বোনাস পাব। এবার আমরাও যানজটমুক্ত সড়ক দিয়ে গ্রামে যাব।’
চান্দনা চৌরাস্তার অটোরিকশার চালক আবুল কাশেম জানান, সব রাস্তা ভালো। তবে এই মোড়ের অবস্থা ভয়ংকর। এ অংশ সংস্কার হয়নি। খানাখন্দে ভরা। এ জন্য চারটি রাস্তায় ভয়াবহ যানজট তৈরি হতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ট্রাফিক পুলিশ সদস্য বলেন, গাজীপুরে যানজটের অন্যতম কারণ ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা। ঈদের আগে মহাসড়কে তিন চাকার যান চলাচল বন্ধ করতে হবে। তা ছাড়া তাকওয়া পরিবহনের অন্তত ৩০০ অবৈধ মিনিবাস চলাচল বন্ধ করলে ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক হতে পারে।
গাজীপুর শিল্প পুলিশ-২-এর সুপার (এসপি) এ কে এম জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা চাই, মহাসড়ক যানজটমুক্ত থাকুক। ঈদে স্বস্তি নিয়ে যাতে মানুষ বাড়ি ফিরতে পারে, সে জন্য চেষ্টা করছি। কিন্তু যানজটের আশঙ্কাকে উড়িয়ে দিচ্ছি না। শ্রমিকরা যদি রাস্তায় নেমে পড়ে, তাহলে তা স্বস্তির হবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘ঈদের আগে শ্রমিকদের তিনটি দাবি। ফেব্রুয়ারির পুরো ও মার্চের অর্ধেক বেতন এবং পুরো ঈদ বোনাস। গাজীপুরে ২ হাজার ১৭৬টি শিল্প প্রতিষ্ঠান। গত সাত মাসে অর্থনৈতিক সংকটে ৫০ কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। টিকে থাকাগুলোর মধ্যে যদি ১ শতাংশ কারখানায় ঝামেলা হয়, তবু তো ২১টিতে ঝামেলা হবে। সে ক্ষেত্রে পুরোপুরি বলা যাচ্ছে না যে ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক হবে।’
তিনি জানান, গতকাল পর্যন্ত ৭২ শতাংশ কারখানায় ফেব্রুয়ারির বেতন পরিশোধ করা হয়েছে। বাকি রয়েছে ২৮ শতাংশ (প্রায় ৬০০) কারখানা। এর ওপর মার্চের অর্ধেক বেতন ও বোনাসের দাবি রয়েছে। মালিকরা যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শ্রমিকদের পাওনা বুঝিয়ে দেন, তাহলে ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক হতে পারে।
শিল্প পুলিশের আরেকজন কর্মকর্তা জানান, এরই মধ্যে বোনাস পুরোটা ও মার্চের অর্ধেক বেতন দিয়েছে ৩৫টি কারখানা। তাদের মতো যদি সব কারখানা শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দিয়ে দেয়, তাহলে আর কোনো ঝামেলা নেই। স্বস্তির ঈদ হতে পারে সবার জন্য।
সার্বিক বিষয়ে গাজীপুরের এসপি চৌধুরী মো.
তবে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর হিসাব বলছে, গতকাল পর্যন্ত গাজীপুরের ১২৪ কারখানায় ফেব্রুয়ারির বেতন পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। বাকি দুই হাজার কারখানায় ইতোমধ্যে মজুরি পরিশোধ করা হয়েছে। জানতে চাইলে বিজিএমইএ সহায়ক কমিটির সদস্য এবং সংগঠনের সাবেক সহসভাপতি শহীদ উল্লাহ আজিম সমকালকে বলেন, ‘বাকি কারখানাগুলোও যাতে দু-এক দিনের মধ্যে মজুরি পরিশোধ করতে পারে, এ ব্যাপারে সহায়তা করছে বিজিএমইএ।’ শ্রম আইন অনুযায়ী, সমাপ্ত মাসের মজুরি পরের মাসের প্রথম ১০ কার্যদিবসের মধ্যে পরিশোধ করার কথা। ১৭ তারিখেও কেন এত কারখানা মজুরি পরিশোধ করেনি– এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সব কারখানার সামর্থ্য সমান নয়। ছোট অনেক কারখানার পরিস্থিতি ভালো যাচ্ছে না। এ কারণে মজুরি পরিশোধে কিছুটা সময় লাগছে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ঈদয ত র পর শ ধ ক ঈদয ত র র জন য গতক ল র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
র্যাংকিংয়ে বড় লাফ জ্যোতি-শারমিনের
আইসিসি নারী ওয়ানডে র্যাংকিংয়ে বড় লাফ দিয়েছেন নিগার সুলতানা জ্যোতি ও শারমিন আক্তার। আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের আসরে দুই ব্যাটসম্যান ব্যাট হাতে দ্যুতি ছড়িয়েছেন। তাতে র্যাংকিংয়ে ব্যাটসম্যানদের তালিকায় ক্যারিয়ার সেরা অবস্থানে উঠে এসেছেন তারা।
বাংলাদেশের অধিনায়ক জ্যোতি র্যাংকিংয়ে ১৭তম স্থানে আছেন। যা বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থান। ৪১তম স্থান থেকে ২৪ ধাপ এগিয়েছেন তিনি। এছাড়া শারমিনের অবস্থান ২৯তম। ৩৯তম স্থান থেকে ১০ ধাপ এগিয়েছেন এই ব্যাটার। র্যাংকিংয়ে সাপ্তাহিক হালনাগাদ মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) প্রকাশ করেছে আইসিসি।
বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের দুই ম্যাচে দারুণ জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। থাইল্যান্ডকে প্রথম ম্যাচে হারানোর নায়ক ছিলেন জ্যোতি। ১০১ রানের ইনিংস খেলেন। তার ইনিংসে ভর করে ওয়ানডেতে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ পায়। ৭৮ বলে তিন অংকে পৌঁছে গিয়ে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ডও গড়েছিলেন টাইগ্রেস অধিনায়ক। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে তার ব্যাট থেকে আসে ৫১ রানের আরেকটি ইনিংস।
আরো পড়ুন:
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে দুদকের অভিযান
আগস্টে বাংলাদেশে আসছে ভারত ক্রিকেট দল
শারমিন থাইল্যান্ডের বিপক্ষে ৯৪ রানের পর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ২৪ রান করেন। তাতে তার উন্নতি হয়েছে ভালোই। এছাড়া ১৬ ধাপ এগিয়ে রিতু মনি এসেছেন ৮৮তম স্থানে। বোলিংয়ে ফাহিমা খাতুন ৩ ধাপ এগিয়ে ৪৮তম স্থানে এসেছেন। থাইল্যান্ডের বিপক্ষে ৫ ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ২ উইকেট পেয়েছিলেন তিনি।
থাইল্যান্ডের বিপক্ষে ৫ উইকেট পেয়েছিলেন জান্নাতুল ফেরদৌসু সুমনা। তাতেও সেরা একশতে ঢুকতে পারেননি এ স্পিনার। বোলিংয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে সেরা অবস্থান নাহিদা আক্তারের। ২ ধাপ অবনমনের পরও তার অবস্থান ১২তম স্থানে। এরপর ২৩তম স্থানে আছেন রাবেয়া খান। ৭ ধাপ এগিয়েছেন তিনি।
ঢাকা/ইয়াসিন/নাভিদ