হিলসব্রো থেকে ম্যানচেস্টার, সেখান থেকে ফ্লাইটে চেপে ঢাকা। গায়ে সেই আগের দিন মাঠে নামা শেফিল্ড ইউনাইটেডের জ্যাকেট। লম্বা আকাশ ভ্রমণের ক্লান্তি হয়তো ছিল চোখে। কিন্তু বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে যখন সামনে দেখেন কয়েকশ ভক্ত-সমর্থক অপেক্ষা করে আছেন তাঁর জন্য, তখন মুখে সেই চেনা হাসি হামজা দেওয়ান চৌধুরীর। সিলেটের এই ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তো আগেও ছেলেবেলায় এসেছেন কত! প্রতিবারই ইমিগ্রেশন পার হতে হয়েছে ব্রিটিশ পাসপোর্টে অ্যারাইভাল সিল নিয়ে। গতকাল বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে বাংলাদেশের পাসপোর্টেই মাতৃভূমিতে পা রাখলেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের তারকা ফুটবলার হামজা। এ আগমন তাঁর জন্য যেমন নতুন কিছু, তেমনি বাংলাদেশ ফুটবলেরও জন্যও। এর আগে জিদান, মেসিদের মতো অনেক বৈশ্বিক ফুটবল তারকাই এসেছেন বাংলাদেশে, বিমানবন্দরে তাদের দেখার জন্য ভিড়ও হয়েছে বড় ধরনের; কিন্তু হামজা যে ঘরের ছেলে আপনজনা। তাঁর মতো বৈশ্বিক তারকা যখন ঘরে ফেরেন, তখন সংবর্ধনায় বিশুদ্ধ আবেগ জড়িয়ে থাকে বৈকি। বিমানবন্দরের বাইরে সমর্থকদের ঢাকঢোলের আনন্দ আয়োজন, মিডিয়ার শত শত কৌতূহলী ক্যামেরা, মুঠোফোন; উৎসুক জনতার বাড়িয়ে দেওয়া ভালোবাসার হাত– কোনো আহ্বানই এড়িয়ে যেতে চাননি হামজা। সবাই কিছু শুনতে চাইছিলেন তাঁর কাছ থেকে। বাংলায় জিজ্ঞাসা করছিলেন কিছু। উত্তর বাংলাতেই দিয়েছেন তিনি, তবে সিলেটি উচ্চারণে। ‘ইনশাআল্লাহ আমরা উইন খরমু। আমার বড় স্বপ্ন আছে। আমরা উইন খরিয়া প্রোগেস খরতে পারমু.
২৫ মার্চ ভারতের বিপক্ষে শিলংয়ে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচ। সেই ম্যাচেই লাল-সবুজের জার্সি গায়ে অভিষেক হবে তাঁর। হামজা সেই ম্যাচের দিকে ইঙ্গিত দিয়েছেন বিমানবন্দরে নেমেই। বাংলাদেশের ফুটবলকে একটা জায়গায় নিয়ে যেতেই যে এসেছেন তিনি, সেটি বুঝিয়ে দেন সিলেটে পা রেখেই। তাঁর এই সফরে মা রাফিয়া দেওয়ান চৌধুরী, দুই ভাই, স্ত্রী অলিভিয়া ফাউন্টেইন, তিন সন্তান ছাড়াও ব্যক্তিগত ফিজিও এবং এক অফিসিয়ালকে নিয়ে এসেছেন হামজা। বাবা মোর্শেদ দেওয়া চৌধুরী বিমানবন্দরে নিতে আসেন তাঁকে। ‘শেকড় যাতে ভুলে না যায়, সে কারণেই তাকে এখানে নিয়ে এসেছি। আমি তাকে জোর করিনি। সে নিজের ইচ্ছাতেই এসেছে।’ আবিষ্কার করা যায় একজন গর্বিত বাবাকে। এদিন বিমানবন্দরের বাইরে সকাল ১০টা থেকেই সিলেটের ভক্ত-সমর্থকরা তাঁকে বরণ করতে ফুল, ব্যানার, ঢাকঢোল নিয়ে হাজির। হামজার নামে স্লোগানে মুখরিত হয়ে যায় পুরো এলাকা। বিমানবন্দর থেকে হবিগঞ্জের পথে যাওয়ার সময় জিপ গাড়ির হুড খুলে ভক্তদের বাড়িয়ে দেওয়া হাত স্পর্শ করে যান। ভীষণ একটা ভালোলাগা কাজ করছিল বোধ হয় তাঁর মধ্যে। তাই বিমানবন্দরের ভিড় দেখে নিজের উচ্ছ্বাসের কথা লুকাননি হামজা। ‘অ্যামাজিং, অ্যামাজিং। অনেক দিন পর ফিরলাম, আমি রোমাঞ্চিত।’ সন্ধ্যায় হবিগঞ্জের স্নানঘাটে নিজের বাড়ির উঠানে মিডিয়ার সামনে আসেন হামজা। কখনও কল্পনা করেছেন কি বাড়িতে এত মানুষ আসবে? উত্তরে হামজা– ‘আমি বাংলাদেশের। সব কিছুই ভালো লাগছে। আমি ভাবতে পারিনি এত মানুষ আসবে। আমার স্ত্রী বাংলাদেশে আসতে পেরে খুশি।’
গ্রামের বাড়িতে গ্রামের মানুষের সঙ্গে
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি রাসেল চৌধুরী জানান, দেশে ফিরেই হবিগঞ্জের বাহুবলে নিজ বাড়িতে সব বয়সের মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন তিনি। দুপুর সাড়ে ৩টায় মোটরসাইকেল শোডাউনের মাধ্যমে তাঁকে বাড়িতে নিয়ে আসে গ্রামবাসী। পরে বাড়ির পশ্চিম দিকে সংবর্ধনার মঞ্চে ওঠেন। চলে ফুলেল শুভেচ্ছা বিনিময়। ১ মিনিটের বক্তব্যের শুরুতেই সবাই কেমন আছেন জানতে চান হামজা। এ সময় হামজার নামে স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে মঞ্চ। পথে পথে তোরণ ও আর ফুলেল শুভেচ্ছায় তাঁকে বরণ করে নিয়েছেন এলাকার সব বয়সের মানুষ। হামজাকে কাছে পেয়ে আনন্দে উচ্ছ্বসিত ভক্তরাও। দীর্ঘদিন পর এই ফুটবলারকে কাছে পেয়ে যেন মহাখুশি তারা। কয়েক দিন আগেও যাদের মনে ছিল মেসি, রোনালদোর মতো তারকারা। এখন তাদের মনে বাস করছেন শুধু হামজা চৌধুরী।
হামজা ভক্ত শায়েস্তাগঞ্জের ফুটবল খেলোয়াড় সাজিদুর রহমান মামুন বলেন, হামজাকে কাছ থেকে দেখেছি, এতে বুঝতে পেরেছি তিনি নম্র-ভদ্র মানুষ। আমি তাঁর খেলার ভক্ত, আশা করছি জাতীয় ফুটবল দলে খেলে আমাদের ভালো কিছু উপহার দেবেন। বাহুবলের রাজু সরকার বলেন, এতদিন শুনেছি, এই ফুটবলার ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলেন। এখন তিনি দেশের মাটিতে খেলবেন, এটা আমাদের জন্য আনন্দের। তাঁকে দেখতেই এখানে ছুটে এসেছি।
ফুটবল ভক্ত খুদে আরিয়ান বলেন, আমি আর্জেন্টিনা সাপোর্ট করি, ফুটবল খেলা আমার খুব ভালো লাগে। হামজা ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে টুপি ও জার্সি নিয়ে এসেছি।
হামজার বাবা দেওয়ান মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, আমার ছেলে দেশে এসেছে এই সংবাদে সকাল থেকে মানুষ বাড়িতে ভিড় করেন। এটা আমার জন্য সৌভাগ্য। গ্রামবাসীর আয়োজিত সংবর্ধনা হামজা উপভোগ করে খুবই খুশি হয়েছে। হামজার জাতীয় দলে অংশ নেওয়ার পেছনে আমার অনেক অবদান রয়েছে। আমি চাই, সে দেশের মাটিতে অবদান রাখুক। হামজা দেওয়ান চৌধুরী বলেন, ‘দেশের মাটিতে এসে আমি খুবই আনন্দিত। দীর্ঘদিন পর আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা হলো। এই প্রথম স্ত্রী সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে এসেছি। আমি সবাইকে খুব ভালোবাসি। বাংলাদেশকে জয় উপহার দেওয়ার চেষ্টা করব। আমরা ভারতকে নিয়ে আপাতত এতটা ভাবছি না।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ফ টবল ফ টবল র র জন য এস ছ ন আনন দ
এছাড়াও পড়ুন:
ময়মনসিংহে বর্ণাঢ্য র্যালি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বর্ষবরণ উদযাপন
পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপন উপলক্ষে ময়মনসিংহে বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার সকালে জেলা প্রশাসন ও বাংলা ১৪৩২ বর্ষবরণ উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে পৃথক পৃথক বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়। এছাড়াও বিভিন্ন দল-মত ও প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
বর্ষবরণ সফল করতে বিভাগীয় নগরী ময়মনসিংহে সকাল ৮ টায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নগরীর ময়মনসিংহ মহাবিদ্যালয় থেকে বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা বের করা হয়। এদিকে নববর্ষ উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে রেলওয়ে কৃষ্ণচূড়া প্রাঙ্গণ থেকে আরেকটি বিশাল বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রা দুটি নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শিল্পচার্য জয়নুল আবেদিন পার্কের বৈশাখী মঞ্চে গিয়ে শেষ হয়।
র্যালি শেষে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিভাগীয় কমিশনার মোখতার আহমেদ, অতিরিক্ত রেঞ্জ ডিআইজি আবু বকর সিদ্দিক, জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম, পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম, সিভিল সার্জন ডা. সাইফুল ইসলাম, জেলা জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর কামরুল হাসান মিলন, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবু ওয়াহাব আকন্দ, মাহবুবুর রহমানসহ রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
র্যালি শেষে উপস্থিত সবাইকে সঙ্গে নিয়ে বিভাগীয় কমিশনার মোখতার আহমেদ বেলুন উড়িয়ে শুভ নববর্ষের ঘোষণা করেন। শোভাযাত্রা দেখতে রাস্তার দু’ধারে শতশত উৎসুক নগরবাসী ভিড় জমান। পরে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন উদ্যানে বৈশাখী মঞ্চে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের পরিবেশনায় অনুষ্ঠিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
এছাড়াও পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের উদ্যোগে পদযাত্রা ও নানা আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়। সকালে উপস্থিত ক্লাব সদস্যদেরকে বিনামূল্যে পুরস্কার প্রদান করা হয়। বিকেলে সার্কিট হাউজ মাঠে বাংলার ঐতিহ্য ঘুড়ি উড়ানো, লাঠি খেলা, রশি টানাটানি ও হা-ডু-ডু প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত হবে।