শিশু ধর্ষণের বিচারে হবে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল
Published: 18th, March 2025 GMT
ধর্ষণ ও শিশু নির্যাতনের বিচার দ্রুত করতে আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সংশোধিত আইনটি আগামী বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদন পাবে। এতে শিশু ধর্ষণের বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিধান রাখা হবে।
গতকাল সোমবার উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভা শেষে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, দেশে যেভাবে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন বেড়ে যাচ্ছে, সেই বিবেচনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন করতে আইনটি সংশোধনের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, মাগুরা ও বরগুনায় ধর্ষণ ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। সবকিছু বিবেচনায় রেখে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০’-এর বেশ কিছু সংশোধন প্রস্তাব করেছে আইন মন্ত্রণালয়। প্রস্তাবগুলো যাচাই-বাছাই শেষে বৃহস্পতিবার উপদেষ্টামণ্ডলী অনুমোদন দেবে বলে আশা করছি।
আইনটির বিষয়ে কিছু মতামত পাওয়া গেছে জানিয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, সেগুলো আজ মঙ্গলবার ও আগামীকাল বুধবার যাচাই-বাছাই করা হবে। বৃহস্পতিবারের মধ্যে অধ্যাদেশ চূড়ান্ত হবে।
ধর্ষণের বিচারের ক্ষেত্রে বিলম্বের অন্যতম কারণ পর্যাপ্ত সংখ্যক ডিএনএ ল্যাব না থাকা বলে উল্লেখ করেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে একটি ডিএনএ ল্যাব আছে ঢাকায়। চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে আরও দুটি ডিএনএ ল্যাব স্থাপন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া বিশেষ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে দ্রুত কিছু বিচারক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।
আইনে কী পরিবর্তন
আইন উপদেষ্টা ড.
নারী ও শিশু আদালতে ধর্ষণের মামলার জট লেগে থাকার কথা জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘এখানে দুই ধরনের মামলা আসছে। একটি হচ্ছে, সম্মতিসহ বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ। এগুলোর অনেক আধিক্য ছিল। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সম্মতিতে প্রতারণামূলকভাবে হোক বা যেভাবে হোক ধর্ষণের ঘটনাগুলোর বিচার একটি আলাদা অপরাধ। সম্মতি ব্যতিরেকে যে ধর্ষণ, সেটার ক্ষেত্রে বিচার ও তদন্তের সময় কমিয়ে আনা হচ্ছে। এ ধরনের মামলায় আমরা বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি। এগুলো প্রয়োজনে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হচ্ছে।’
ধর্ষণ মামলার সংজ্ঞা পরিবর্তন করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, শুধু পুরুষ কর্তৃক নয়, যে কোনো ব্যক্তি কর্তৃক ধর্ষণকে শাস্তিযোগ্য করা হচ্ছে। বলাৎকারকেও এখানে যুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া অন্য কোনো বস্তু (যৌনসামগ্রী ব্যবহার) ব্যবহার করা হলে; পায়ুপথ বা যে কোনোভাবে ধর্ষণ করা হলে, তাও শাস্তির আওতায় আনছি।
চাঞ্চল্যকর ধর্ষণের ক্ষেত্রে ডিএনএ টেস্টের রিপোর্টের অপেক্ষায় না থেকে পারিপার্শ্বিকতা বিবেচনায় সাক্ষ্যর ভিত্তিতে রায় দিতে বিচারককে সুযোগ দেওয়া হবে বলে জানান আইন উপদেষ্টা। আইনের সংশোধনীতে এ ব্যবস্থাটা যুক্ত করা হবে। তিনি বলেন, ডিএনএ রিপোর্ট পাওয়ার অপেক্ষায় অনেক মামলা ঝুলে থাকত। আদালত যদি মনে করেন, মেডিকেল রিপোর্ট ও পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্যের ভিত্তিতে বিচার করা যায়, তাহলে সেটা পারবেন। ডিএনএ রিপোর্টের অপেক্ষায় থাকতে হবে না।
নতুন আইনে ধর্ষণের উদ্দেশ্যে কারও ওপর আক্রমণ করে ব্যর্থ হওয়ার পর যদি ভিকটিমকে শারীরিকভাবে ক্ষতি করা হয়, সেটাও শাস্তির আওতায় রাখা হচ্ছে বলে জানান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ভিকটিমের সুরক্ষার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা করেছি। ধর্ষণকালে ধর্ষণ করার উদ্দেশ্যে যদি জখম করা হয়, সেটাকে শাস্তির আওতায় রেখেছি।
মাগুরায় শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও নির্যাতনে নিহত হওয়ার ঘটনাটি প্রচলিত আইনে দ্রুত বিচার করা হবে বলে জানান আইন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘সংশোধিত আইনের সঙ্গে মাগুরায় ধর্ষণের ঘটনার সম্পর্ক নেই। মাগুরার সেই ঘটনায় কয়েক দিনের মধ্যে বিচার শুরু হয়ে যাবে এবং খুব দ্রুত বিচার শেষ করা হবে। কারণ এখানে অনেক অকাট্য প্রমাণ রয়েছে।’
আইনের অপব্যবহার বিষয়ে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, মিথ্যা মামলার ক্ষেত্রে কঠোর বিধানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আগে মিথ্যা মামলার ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে অভিযোগ জানাতে হতো। এ ক্ষেত্রে বিধান করা হয়েছে, বিচার শেষের পরে কোনো বিচারকের যদি মনে হয় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মামলা দেওয়া হয়েছে, তিনি স্বপ্রণোদিত হয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আইন উপদ ষ ট ন উপদ ষ ট র জওয় ন ব যবস থ ড এনএ ন আইন র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
পাওনা টাকা চাওয়ায় ছুরিকাঘাত, যুবক নিহত
চট্টগ্রামের আনোয়ারায় ছুরিকাঘাতে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। তাঁর নাম মোহাম্মদ মানিক (৩২)। তিনি উপজেলার পরৈকোড়া ইউনিয়নের ভিংরোল গ্রামের মোহাম্মদ ছৈয়দের ছেলে। গতকাল সোমবার রাতে পরৈকোড়া ইউনিয়ন পূর্ব কৈন্যারা গ্রামের ভেন্ডারঘাটা এলাকায় এ ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটে।
নিহত যুবকের ভাই মোহাম্মদ বাবুল বলেন, তাঁর ভাই মানিক স্থানীয় মো. রাসেল (৩০) নামের এক ব্যক্তির কাছে এক লাখ টাকা পাওনা রয়েছেন। পাওনা টাকা নিয়ে দুজনের মধ্যে তর্কাতর্কি হয়।
এর একপর্যায়ে মানিককে ছুরিকাঘাত করেন রাসেল। আহত অবস্থায় মানিককে প্রথমে আনোয়ারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দিবাগত রাত দুইটার দিকে মানিকের মৃত্যু হয়েছে।
আনোয়ারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মনির হোসেন বলেন, ‘পাওনা টাকা নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে মানিককে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে বলে শুনেছি। তাঁর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।’