কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছেন না ঢাকার দোহার ও আশপাশের এলাকার ইটভাটার মালিকেরা। ইট প্রস্তুত ও ভাটা নিয়ন্ত্রণ আইনে কৃষিজমিতে কোনো ইটভাটা স্থাপন করায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। পাশাপাশি উল্লেখ রয়েছে, নির্ধারিত সীমারেখার (ফসলি জমি) এক কিলোমিটারের মধ্যেও কোনো ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। তবে দোহার ও আশপাশের এলাকায় গড়ে তোলা ২০টির বেশি ভাটার অবস্থানই কৃষিজমিতে। ভাটামালিকেরা কৃষিজমির মালিকদের প্রলোভনে ফেলে ওপরিভাগের (টপ সয়েল) উর্বরা মাটি পুড়িয়েই তৈরি করছেন ইট। এতে জমির স্থায়ী ক্ষতি হচ্ছে বলে জানান কৃষি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। 
কয়েকদিন ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার ইউসুফপুর চক, রসুলপুর চক, সাহেবখালী চক, সুতারপাড়া  মিজাননগর, ডাইয়ারকুম-আলআমিন বাজার পদ্মা বাইপাস সড়ক এলাকা, মৌড়া-ধীৎপুর, হাসির মোড়, সাইনপুকুর তদন্তকেন্দ্রের আওতাধীন ও মেঘুলা ভূমি কার্যালয়ের আওতাধীন শিমুলিয়া-জালালপুর আড়িয়ল বিল, জালালপুর-টিকরপুর পদ্মা বাইপাস সড়কের পাশে প্রায় আধা-কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কৃষিজমির মাটি কাটা চলছে। এসব জায়গা এখন একরকম পুকুরে পরিণত হয়েছে। ফলে তিনটি নবনির্মিত সেতু ও সড়ক ঝুঁকিতে পড়েছে।
এলাকাবাসী জানিয়েছে, এসব এলাকার কৃষিজমি থেকে দিন-রাতে অবাধে কাটা হচ্ছে মাটি। পরে সেই মাটি মাহেন্দ্রা ও ড্রাম ট্রাকবোঝাই করে নেওয়া হচ্ছে ইটভাটায়। এসব ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে গ্রামীণ সড়কগুলো ভেঙে খানখান হয়ে যাচ্ছে। মাটিবাহী এসব যানবাহন থেকে ছিটকে পড়া মাটি সড়কে পড়ে থাকে। সামান্য বৃষ্টি হলেও সড়কগুলো কাদায় মাখামাখি হয়ে যায়। এতে দুর্ঘটনা ঘটছে প্রায়ই।
শুক্রবার সকালে দোহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এমনই দুর্ঘটনার শিকার হয়ে চিকিৎসা নিতে আসেন এক দম্পতি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, তারা গোবিন্দপুর থেকে অটোরিকশায় করে দোহার আসছিলেন। পিচ্ছিল সড়কে অটোরিকশাটির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন চালক। এতে দু’জনই সড়কে ছিটকে আঘাত পান। 
নবাবগঞ্জ উপজেলার আগলা ইউনিয়নের বাসিন্দা আজহার উদ্দিনের ভাষ্য, সম্প্রতি একটি বিয়ের দাওয়াত খেতে তারা ১০-১২টি মোটরসাইকেলে দোহারে রওনা দেন। গোবিন্দপুর-জালালপুর পদ্মা বাইপাস সড়কে তাদের বহর দুর্ঘটনায় পড়ে। কয়েকজন আহত হন। বিষয়টি তারা দোহার থানায় জানিয়েছেন।
মাসখানেক ধরেই কৃষিজমির উর্বরা মাটি কাটা বেশি মাত্রায় চলছে বলে জানান আল-আমিন বাজার এলাকার বাসিন্দা আমিন মুন্সি। তিনি বলেন, দিন-রাতে কৃষিজমির মাটি কেটে ইটভাটায় নেওয়া হচ্ছে। এতে জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্যও। পরিবেশ আইনের তোয়াক্কাও করছেন না ভাটামালিকেরা। 
এলাকাবাসীর অভিযোগ, পরিবেশ অধিদপ্তর বা প্রশাসনের অন্যান্য দপ্তরও রহস্যজনক কারণে নীরব। এভাবে মাটি কাটতে থাকায় কৃষিজমির ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা শঙ্কিত। নারিশা ইউনিয়নে মাটি ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য দিন দিন বেড়ে চলেছে বলে অভিযোগ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ইব্রাহীম খলিল সবুজ। তাঁর ভাষ্য, রাতে ঘরে ঘুমাতেও বেগ পেতে হয় তাদের। কারণ মাটি বহনকারী যানবাহনের আওয়াজ যন্ত্রণা হয়ে দাঁড়িয়েছে। 
কৃষিজমি থেকে মাটি কেনার বিষয় শিকার করেন পিভিসি ইটভাটার পরিচালক লিটন দেওয়ান। তাঁর ভাষ্য, যারা মাটি বিক্রি করছেন, তারা জেনেশুনেই বিক্রি করছেন। সেই মাটি কিনে নিয়ে ইটভাটায় কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করেন। দোহারের আড়িয়ল বিলের মাটি ইট তৈরির জন্য খুবই উপযোগী। এ কারণে ওই এলাকার মাটির চাহিদা ইটভাটায় সবচেয়ে বেশি।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে পদ্মা ব্রিক, ডিবিএফ ও কেবিএম ব্রিক ফিল্ডের এমডি জসিম উদ্দিনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও ধরেননি তিনি। বিবিএফ ও এসবিএফ ইটভাটার পরিচালক আবুল কাশেমের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি কথা বলতে অস্বীকার করেন। এ প্রতিবেদককে দেখে বিবিএফ ইটভাটার অফিস বন্ধ করে দেন। একতা ব্রিক ইন্ডাস্ট্রিজের কর্মকর্তারা কথা না বলেই চলে যান।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো.

তুরাজ বলেন, ফসলি জমির ওপরিভাগের ১০-১২ ইঞ্চির মধ্যে মাটির জৈব উপাদান থাকে। সেই মাটি কাটা হলে জমির জৈব উপাদান চলে যায়। এতে জমির স্থায়ী ক্ষতি হয়। ফসলি জমির মাটি কাটা তাই বেআইনি ও দণ্ডনীয় অপরাধ।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. তাসফিক সিবগাত উল্লাহ বলেন, কয়েকদিন আগেও তারা এর বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ১ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করেন। টপ সয়েল লুটকারীদের বিরুদ্ধে শিগগির বড় অভিযানের ঘোষণা দেন তিনি। ইউএনও তানিয়া তাবাসসুমও বলেন, অভিযান চালিয়ে অবৈধ ইটভাটাগুলো গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইট ভ ট ইটভ ট য় ইটভ ট র এল ক র র এল ক উপজ ল করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলা একাডেমিতে চলছে সাত দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) ও বাংলা একাডেমির যৌথ আয়োজনে বাংলা একাডেমিতে শুরু হয়েছে সাত দিনব্যাপী ‘বৈশাখী মেলা-১৪৩২’।

সোমবার (১৪ এপ্রিল) রাজধানী ঢাকার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে এ মেলার উদ্বোধন করেন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান এবং সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিসিক চেয়ারম্যান মো. সাইফুল ইসলাম।

বৈশাখী মেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, “পাহাড় থেকে সমতল, সারা দেশে আজ নববর্ষের আমেজ। বাংলাদেশের মানুষ আজ এক হয়ে পালন করছে নববর্ষ। সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমে বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা চলছে সারা দেশে। আমরা একটা ঐক্যবদ্ধ জাতি হিসেবে ফ্যাসিবাদোত্তর বাংলাদেশে দাঁড়িয়েছি। আমরা এই উৎসব ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে চাই।”

উপদেষ্টা আরো বলেন, “বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, হস্তশিল্প, খাদ্যজাত পণ্যের বিদেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। উদ্যোক্তারা এই মেলার মাধ্যমে এসকল পণ্য বিদেশে রপ্তানিযোগ্য করে তুলবে। উদ্যোক্তারা যেভাবে ৫ আগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, তাতে আরেকটি শিল্প বিপ্লবের দিকে এগিয়ে যাবে দেশ।” 

বাংলা একাডেমি আয়োজিত এই মেলা উদ্যোক্তাদের উন্নয়নের ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, “আমরা ৫ আগস্ট পরবর্তী নতুন বাংলাদেশে প্রবেশ করেছি। আজকের র‌্যালিতে সব জাতিগোষ্ঠী একসাথে অংশগ্রহণ করেছে এবং একসাথে আনন্দ করছে। এটা একটা অন্তর্ভূক্তিমূলক ও রঙিন উৎসব। মেলা এমন একটা জায়গা যেখানে দুইপক্ষ খুশি থাকে। একজন ক্রয় করে এবং অন্যজন বিক্রি করে। মেলার সাংস্কৃতিক গুরুত্ব রয়েছে।”

বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, “বৈশাখী মেলার আয়োজন আমাদের জন্য একটা ভালো উদ্যোগ। বাংলা নববর্ষ আমরা উদ্‌যাপন করবো জাতীয় সংস্কৃতির অংশ হিসেবে। আমাদের উজ্জ্বল অতীত ছিল, সমৃদ্ধ আগামী গড়ার লক্ষ্য নিয়ে আমাদের পহেলা বৈশাখ উদ্‌যাপন করতে হবে।”

এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ওবায়দুর রহমান, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মফিদুর রহমান।

ঢাকা/এএএম/টিপু

সম্পর্কিত নিবন্ধ